আস্তাগফিরুল্লাহ অর্থ কি
পেজ সূচিপত্র :আস্তাগফিরুল্লাহ অর্থ কি(Astaghfirullah)
আস্তাগফিরুল্লাহ অর্থ কি
আস্তাগফিরুল্লাহ ( أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ ) একটি আরবি শব্দ। দুটি শব্দ মিলে বাক্যটি তৈরি হয়েছে ৷ আস্তাগফিরুল্লাহ এর অর্থ হচ্ছে, 'আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি'। কোন খারাপ কাজ করে পরবর্তীতে অনুতপ্ত হলে এ দোয়াটি পাঠ করা হয়।
আর পড়ুন:ফি আমানিল্লাহ অর্থ কি?
আস্তাগফিরুল্লাহ সঠিক উচ্চারণ কি
আমাদের মধ্যে কেউ উচ্চারণ করেন ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ আবার কেউ উচ্চারণ করেন ‘আস্তাকফিরুল্লাহ’। তবে এর সঠিক উচ্চারণ কোনটি তা জানা আমাদের অত্যন্ত জরুরি। কেননা একাটি শব্দের বা অক্ষরের পরিবর্তনে পুরো দোয়ার অর্থে পার্থক্য দেখা দেয় । তাই এক্ষেত্রে সাবধানত্ অবলম্বন করতে হবে ও এর সঠিক উচ্চারণ সম্পর্কে জানতে হবে।এর সঠিক ও শুদ্ধ উচ্চারণ হলো:
‘আস্তাগফিরুল্লাহ’। আস্তাগফিরুল্লাহ এর অর্থ হচ্ছে, 'আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি'। আর ভুল উচ্চারণ হলো ‘আস্তাকফিরুল্লাহ’ এর অর্থ হচ্ছে, 'হে আল্লাহ,আমি কাফের তথা অস্বীকারকারী হতে চাই'।(অতএব আমাকে কাফের তথা অস্বীকারকারী বানিয়ে দিন)(নাউজুবিল্লাহ)।আল্লাহ আমাদের সঠিক উচ্চারণের মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করার তাওফিক দান করুন।( আমিন)।
আস্তাগফিরুল্লাহ এর ফজিলত
(সহীহ বুখারি ভলিউম ৮, বুক ৭৫, নম্বর ৩৯)।
কখনও কখনও আমরা এমন ভুল করি যেগুলি সম্পর্কে আমরা সচেতনও নই এবং অন্য সময়ে সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতে গিয়ে আমরা কিছু ধরণের ক্ষতি করি৷
তাফসীরে আল-কুরতুবী (১৮/৩০১-৩০২)
এ বলা হয়েছে, “তোমার প্রভুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল; তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি পাঠাবেন। আর তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধি করবে এবং তোমাদের জন্য বাগান দান করবে এবং তোমাদের জন্য নদীসমূহ প্রবাহিত করবে।
ইমাম আহমেদ ইবনে হাম্বল এবং রুটির দোকানি সম্পর্কে একটি বর্ণনা অনুসারে, আস্তাগফিরুল্লাহ একজনের সমস্ত দুআ (আল্লাহর কাছে করা প্রার্থনা) সত্য হওয়ার জন্য উপকারী।
বর্ণনাটি নিম্নরূপ:
ইমাম আহমেদ,একবার সফররত ছিলেন এবং শীতের রাতে কোথাও রাত্রি যাপনের প্রয়োজন ছিল। তিনি যখন মসজিদে যান, তখন প্রহরী (ইমাম আহমেদকে চিনতে পারছেন না) তাকে প্রবেশ করতে দিতে অস্বীকার করেন। ইমাম আহমদ বহুবার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু প্রহরী তার অনুরোধ গ্রহণ করেননি। হতাশ হয়ে ইমাম আহমেদ মসজিদের উঠানে রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নেন। ইমাম আহমেদের বার্ধক্য ও দুর্বলতা সত্ত্বেও প্রহরী ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে টেনে নিয়ে যায়।
একজন রুটির দোকানি, যার দোকান পাশেই ছিল, তিনি এই দৃশ্য দেখে ইমাম আহমদের প্রতি করুণা করলেন। তিনি ইমাম আহমেদকে রাতের জন্য তার সাথে থাকার আমন্ত্রণ জানান। সেখানে থাকাকালীন, ইমাম আহমেদ লক্ষ্য করলেন যে রুটির দোকানি কাজ করার সময় ক্রমাগত ইস্তিগফার (আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা) করছেন এবং সকালে, ইমাম আহমেদ
ইমাম আহমেদ তখন জিজ্ঞেস করলেন যে লোকটি এই অভ্যাস থেকে কোন পুরস্কার পেয়েছে কিনা।রুটির দোকানি উত্তর দিল,
“আল্লাহর কসম! আমি যত দু’আ (আল্লাহর কাছে মিনতি) করেছি সবই আল্লাহ কবুল করেছেন, শুধুমাত্র একটি দু’আ ব্যতীত ।"
" ইমাম আহমদকে জিজ্ঞেস করলেন।"আর সেই দু’আটি কি?
রুটির দোকানি উত্তর দিল,
আমি আল্লাহর কাছে এই দোয়া করেছিলাম যে" আমি যেন প্রসিদ্ধ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের স্বাক্ষাত লাভ করতে পারি!"
ইমাম আহমদ অত্যন্ত আশ্চার্যান্বিত হয়ে বললেন, আমি আহমদ ইবনে হাম্বল!
তারপর তিনি আরো বললেন:
“আল্লাহর কসম! আমাকে আপনার জায়গায় টেনে আনা হয়েছিল যাতে আপনি আপনার দোয়া/ইচ্ছা পূরণ করতে পারেন।”
এভাবে অবিরাম আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এছাড়াও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া তার কাছে খুবই পছন্দনীয়,এটি সহীহ বুখারীতে (খণ্ড ৮, বই ৭৫, নম্বর ৩২১)
আর পড়ুন:নিঃসন্তান দম্পতির নেক সন্তান লাভের পরীক্ষিত আমলসমূহ ও ইসলামিক টিপস
ইস্তিগফার করার বিভিন্ন দোয়া
- أَسْتَغْفِرُ اللهَ
‘আস্তাগফিরুল্লাহ’
অর্থ ‘আমি আল্লাহর ক্ষমাপ্রার্থনা করছি’।
প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর রাসুলুল্লাহ (সা.) এ ইসতেগফারটি ৩ বার পড়তেন।’ (মিশকাত)
- أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।’
অর্থ ‘আমি আল্লাহর ক্ষমাপ্রার্থনা করছি এবং তার দিকেই ফিরে আসছি ’।
নিয়ম : এ ইসতেগফারটি প্রতিদিন ৭০/১০০ বার পড়া। নবী মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন মাসুম (নির্দোষ) এবং জীবিত সবচেয়ে গুণী মানুষ তবুও তিনি দিনে ৭০ বারের বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন (সহীহ বুখারী)।
- رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
উচ্চারণ : 'রাব্বিগ্ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা (আংতাত) তাওয়্যাবুর রাহিম।'
অর্থ : 'হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবাহ কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়।'
নিয়ম : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন।' (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
- أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ : 'আস্তাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলায়হি।'
অর্থ : 'আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তাওবাহ করে) ফিরে আসি।'
নিয়ম : দিনের যে কোনো সময় ক্ষমা প্রার্থনার উদ্দেশ্যে এভাবে তাওবাহ-ইসতেগফার করা। হাদিসে এসেছে- এভাবে তাওবাহ-ইসতেগফার করলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়।' (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত)
সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا
صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্কতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহ্দিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউলাকা বিজাম্বি ফাগ্ফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।'
অর্থ : 'হে আল্লাহ! আপনি আমার পালনকর্তা। আপনি ব্যতীত অন্য কোনো সত্য মাবুদ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছন। আমি আপনার বান্দা/দাস। আমি যথাসাধ্য আপনার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকার প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের অনিষ্ট হতে আপনার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার প্রতি আপনার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি। আর আমি আমার গোনাহের কথাও স্বীকার করছি। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। কেননা আপনি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার আর কেউ নাই।'(সহীহ বুখারী ২৩৩৫)
নিয়ম : এই দোয়াকে ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দোয়া বলা হয়। সকালে ও সন্ধ্যায় এ ইসতেগফার করা। বিশেষ করে ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর এ ইসতেগফার পড়তে ভুল না করা।
কেননা হাদিসে এসেছে- যে ব্যক্তি এ ইসতেগফার সকালে পড়ে আর সন্ধ্যার আগে মারা যায় কিংবা সন্ধ্যায় পড়ে সকাল হওয়ার আগে মারা যায়,তবে সে ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা সরাসরি জান্নাত দান করেন।' (বুখারি)
এ কারণেই কুরআন ও সুন্নাহতে বেশি বেশি তাওবাহ ইসতেগফার করার ব্যাপারে তাগিদ দেয়া হয়েছে। কেননা গোনাহমুক্ত জীবনের অন্যতম উপায় হচ্ছে তাওবাহ ও ইসতেগফার করা। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
'যে গোনাহ করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে, অতপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পায়।' (সুরা নিসা : আয়াত ১১০)
- 'নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে অবস্থান করবে এবং তুমি কখনও তাদের জন্য সাহায্যকারী পাবে না। কিন্তু যারা তওবাহ করে ও সংশোধন হয় তারা ব্যতিত।' (সুরা নিসা : আয়াত ১৪৫-১৪৬)
'হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।'
(সুরা নুর : আয়াত ৩১)
‘আস্তাগফিরুল্লাহ’পড়লে আল্লাহ যে সকল নেয়ামত দান করেন-
- আমাদের পাপের পরিমান যত বেশিই হোক না কেন আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করবেন।
- আল্লাহ আমাদের সকল বিপদ-আপদ থেকে উদ্ধার করবেন।
- অনাবৃষ্টি দূর করে রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করবেন।
- দুঃসচিন্তা থেকে মুক্তি দিবেন।
- রুজি রোজগারে বরকত বাড়িয়ে দিবেন ও অর্থের অভাব দূর করবেন।
- রিযিক বৃদ্ধি করে দিবেন।
- নিঃসন্তান দম্পতি আল্লাহর রহমতে সন্তান লাভ করবেন।
- বেশি বেশি ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’-পড়লে দোয়া করার সাথে সাথে কবুল হয়।
আরো পড়ুন: এইচএসসি বাংলা ১ম পত্র নাটক :সিরাজউদ্দৌলা
এই অধ্যায়ের উপর আরো পড়ুন: এইচএসসি বাংলা ১ম পত্র সিরাজউদ্দৌলা পাঠ ১
এই অধ্যায়ের উপর আরো পড়ুন :এইচএসসি বাংলা ১ম পত্র সিরাজউদ্দৌলা পাঠ-২
এই অধ্যায়ের উপর আরো পড়ুন: এইচএসসি বাংলা ১ম পত্র সিরাজউদ্দৌলা পাঠ-৩
এই অধ্যায়ের উপর আরো পড়ুন: এইচ এস সি বাংলা ১ম পত্র সিরাজউদ্দৌলা পাঠ-৪
এই অধ্যায়ের উপর আরো পড়ুন: এইচ এস সি বাংলা ১ম পত্র সিরাজউদ্দৌলা পাঠ-৫
এই অধ্যায়ের উপর আরো পড়ুন: বাংলা ১ম পত্র নাটক সিরাজউদ্দৌলা সিকান্দার আবু জাফর(Admission Test)
অর্ডিনেট আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url