Measures of Dispersion
Math New Shyllabus-2024 Hand Note/ Goudie
নবম শ্রেণীর গণিত-2024
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক জাতীয় শিক্ষাক্রম- ২০২২ অনুযায়ী প্রণীত এবং ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে নবম শ্রেণির জন্য নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তক গণিত
অধ্যায় :৯
বিস্তার পরিমাপ
এই অভিজ্ঞতায় শিখতে পারবে-
- পূর্ব অভিজ্ঞতা ও তার প্রতিফলন
- বস্তুনিষ্ঠ সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিস্তার পরিমাপের প্রয়োজনীয়তা
- বিস্তার পরিমাপের প্রকারভেদ
- বিভিন্ন প্রকার বিস্তার পরিমাপ নির্ণয়
*** পরিসংখ্যানের জনক (RA Fisher ) আর.এ. ফিশার (1890-1962) ছিলেন ব্রিটিশ পরিসংখ্যানবিদ। পরিসংখ্যানে তিনি অনেক অবদান রাখেন।তার মধ্যে ঘটনসংখ্যা বিন্যাসরেখা মিলকরণে গরিষ্ঠ সম্ভাব্য পদ্ধতি, ভেদাঙ্ক বিশ্লেষণ, পরিসংখ্যানে কম্পিউটার পরিচিতি এবং সম্ভাব্যতাকে সিদ্ধাšত গ্রহণের মূল ধারণা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এজন্য তাকে আধুনিক পরিসংখ্যানের জনক বলা হয়।
***আমরা জানি, গুণবাচক নয় এমন সংখ্যাসূচক তথ্যাবলি পরিসংখ্যানের উপাত্ত।অনুসন্ধানাধীন উপাত্ত পরিসংখ্যানের কাঁচামাল। এগুলো অবিন্যস্তভাবে থাকে এবং অবিন্যস্ত উপাত্ত থেকে সরাসরি প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় না। প্রয়োজন হয় উপাত্তগুলো বিন্যস্ত ও সারণিভুক্ত করা। আর উপাত্তসমূহের সারণিভুক্ত করা হলো উপাত্তের উপস্থাপন।
*** আমরা জানি সংখ্যাসূচক তথ্যসমূহ পরিসংখ্যানের উপাত্ত। উপাত্তে ব্যবহৃত সংখ্যাসমূহ হলো চলক। পরিসংখ্যানে ব্যবহৃত চলক দুই প্রকারের হয়। যেমন বিছিন্ন ও অবিছিন্ন চলক।
যে চলকের মান শুধুমাত্র পূর্ণসংখ্যা হয় তা বিছিন্ন চলক, যেমন উদাহরণ ২ এ ব্যবহৃত প্রাপ্ত নম্বর। তদানুরূপ জনসংখ্যা নির্দেশক উপাত্তে পূর্ণসংখ্যা ব্যবহৃত হয়। তাই জনসংখ্যামূলক উপাত্তের চলক হচ্ছে বিছিন্ন চলক।
যেসকল চলকের মান যেকোনো বাস্তব সংখ্যা হতে পারে,সে সকল চলক অবিছিন্ন চলক।এ ছাড়া বয়স,উচ্চতা,ওজন ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট উপাত্তে যেকোনো বাস্তব সংখ্যা ব্যবহার করা যায় তাই এগুলোর জন্য ব্যবহৃত চলক হচ্ছে অবিচ্ছিন্ন চলক।অবিচ্ছিন্ন চলক মনে রাখার উপায়: “ও বউ ”
*** মাঝামাঝি একটি শ্রেণিতে গণসংখ্যা খুব বেশি হয়। বস্তুত উপাত্তসমূহের কেন্দ্রিয় মানের দিকে পুঞ্জিভূত হওয়ার এই প্রবণতাই হলো কেন্দ্রিয় প্রবণতা। কেন্দ্রিয় মান একটি সংখ্যা এবং এই সংখ্যা উপাত্তসমূহের প্রতিনিধিত্ব করে। এই সংখ্যা দ্বারা কেন্দ্রিয় প্রবণতা পরিমাপ করা হয়। সাধারণত কেন্দ্রিয় প্রবণতার পরিমাপ হলো :
- (১) গাণিতিক গড়
- (২) মধ্যক
- (৩) প্রচুরক।
সাধারণত কেন্দ্রিয় প্রবণতার পরিমাপ মনে রাখার উপায়: “প্রগাম”
বিস্তার পরিমাপ
তোমরা ইতোমধ্যেই জেনেছ যে, পরিসংখ্যান নির্দিষ্ট লক্ষ্যে সংগৃহীত উপাত্ত নিয়ে কাজ করে।
সংগৃহীত উপাত্ত বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করে আমরা কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকি।পূর্বের শ্রেণিতে তোমরা উপাত্তের লেখচিত্রে উপস্থাপন সম্পর্কে জেনেছ।
এই ধরনের উপস্থাপনা উপাত্তের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে। নিচের ছবিটি লক্ষ করো :
আমাদের হৃদস্পন্দনের হার ও তার ছন্দ পরীক্ষা করার জন্য চিকিৎসকরা ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম বা ইসিজি করে থাকেন, যার গ্রাফ দেখতে অনেকটা এই রকম। আর এই গ্রাফ দেখে চিকিৎসকরা হার্ট অ্যাটাক, হৃদরোগ, অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন ইত্যাদি শনাক্ত করে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন। তাছাড়া, সংগৃহীত উপাত্তের প্রতিনিধিত্বকারী মান খুঁজে বের করার জন্য তোমরা কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপ সম্পর্কে পূর্বের শ্রেণিগুলোতে ধারাবাহিকভাবে জেনে এসেছ। তবে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় মান আমাদের মোটামুটি একটি ধারণা দেয়। কিন্তু অপেক্ষাকৃত নির্ভুল সিদ্ধান্তের জন্য উপাত্তগুলোকে সূক্ষ্ণভাবে বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে উপাত্তগুলো কেন্দ্রীয় মানের চারপাশে কীভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে, সে সম্পর্কেও আমাদের জানতে হবে।
একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি আলোচনা করা যাক-
তুমিতো জানো, তোমার জেলার স্কুলগুলো নিয়ে প্রতি বছর জেলাভিত্তিক “T - 20 স্কুল ক্রিকেট” প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। বরাবরের মতো এবারও তোমাদের স্কুলের ক্রিকেট দল ওই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ
করে।
ধরো, প্রতিযোগিতায় দশটি ম্যাচে তোমাদের স্কুলের দু'জন ব্যাটসম্যান A ও B করা রান এবং ফাইনাল ম্যাচের নিবেশন সারণি নিম্নরূপ :
ব্যাটসম্যান A: 30, 91, 0, 64, 42, 80, 30, 5, 117, 71
ব্যাটসম্যান B: 53, 46, 48, 50, 53, 53, 58,60, 57, 52
পরামর্শ
তোমার ক্লাসের শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুইটি দল গঠন করে
কয়েকটি ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করো। তারপর যে কোনো দুই বা তিন জন ব্যাটসম্যান বা বোলারের স্কোর সংগ্রহ করো।
উভয় ব্যাটসম্যানের করা রানের গড় ও মধ্যক নির্ণয় করে কী মান পেলে? দু'জনেরই রানের গড় এবং মধ্যক একই। তোমাদের কী মনে হয়, এই দু'জন খেলোয়াড়ের পারদর্শিতা একই? একেবারেই না। কারণ সমান সংখ্যক ম্যাচ খেলে ব্যাটসম্যান A এর রানের পরিসর (0-117) এবং ব্যাটসম্যান B এর রানের পরিসর (46- 60)। ভেবে দেখো তো দু'জন ব্যাটসম্যানের পারদর্শিতার ধারাবাহিকতার মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কি না? যদি থাকে তবে সংক্ষেপে নিচের খালি বক্সে যুক্তিসহ তোমার মতামত লেখো:
তোমার ভাবনাটির সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য চলো উভয় ব্যাটসম্যানের স্কোরগুলো সংখ্যারেখায় বিন্দুর মাধ্যমে বসিয়ে দেখি :
উপরের চিত্র দুটি পর্যবেক্ষণ করে আমরা দেখতে পাই, ব্যাটসম্যান B এর স্কোরের বিন্দুগুলো কেন্দ্রীয় মানের (গড় ও মধ্যক) খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে। অন্য দিকে ব্যাটসম্যান A এর স্কোরের বিন্দুগুলো কেন্দ্রীয় মান (গড় ও মধ্যক) থেকে অনেক দূরে দূরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, যদিও তাদের রানের গড় ও মধ্যক একই।
সুতরাং আমরা বলতে পারি, কোনো একটি বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সংগৃহীত উপাত্তের কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপই যথেষ্ট নয়। কেন্দ্রীয় মানের সাপেক্ষে উপাত্তগুলো বিস্তারও পরিমাপ করা প্রয়োজন। কেননা এটি কেন্দ্রীয় মানের যথার্থতা যাচাই করে। যে তথ্যসারির বিস্তার যত কম তার কেন্দ্রীয় মানগুলো ততো বেশি প্রতিনিধিত্বকারী। বিস্তার তথ্যসারির মানগুলোর সামঞ্জস্যতা পরিমাপ করে। যে তথ্যসারির বিস্তার যত বেশি তার মানগুলো ততো বেশি অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
তাই, এই অভিজ্ঞতায় বিস্তার পরিমাপ (Measures of Dispersion) এর গুরুত্ব ও নির্ণয়ের পদ্ধতি সম্পর্কে জানবো।
উপরের আলোচনা থেকে তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারলে, কেন্দ্রীয় মান থেকে উপাত্তের অন্যান্য মানগুলোর ব্যবধানই হলো বিস্তার। এর সাহায্যে উপাত্তের কেন্দ্রীয় মান হতে অন্যান্য মানগুলো কত দূরে অবস্থান করছে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। পরিসংখ্যানবিদ A.L.Bowley এর মতে “Dispersion is the measures of the variation of the items” অর্থাৎ বিস্তার হলো তথ্যসারির উপাদানগুলোর ভিন্নতার পরিমাপ।
সুতরাং যে গাণিতিক পরিমাপের সাহায্যে কোনো নিবেশনের কেন্দ্রীয় মান হতে অন্যান্য মানগুলোর ব্যবধান নির্ণয় করা হয় তাকে আমরা বিস্তার পরিমাপ বলতে পারি।
তোমরা ইতোমধ্যেই জেনেছ, দুই বা ততোধিক তথ্যসারির মধ্যে তুলনা করাই হলো বিস্তার পরিমাপ নির্ণয়ের মূল উদ্দেশ্য। তথ্যসারিগুলোর প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রকার বিস্তার পরিমাপ ব্যবহার করা হয়। তবে এই শ্রেণিতে আমরা বিভিন্ন প্রকার বিস্তার পরিমাপগুলো থেকে পরিসর, গড় ব্যবধান, ভেদাঙ্ক ও পরিমিত ব্যবধান সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিসরে জানার চেষ্টা করব।
পরিসর (Range)
পরিসর হলো কোনো তথ্যরাশির বা নিবেশনের বৃহত্তম মান ও ক্ষুদ্রতম মানের ব্যবধান বা পার্থক্য। তবে শ্রেণি বিন্যস্ত উপাত্তের ক্ষেত্রে সর্বশেষ শ্রেণির উচ্চসীমা ও প্রথম শ্রেণির নিম্নসীমার ব্যবধান হবে পরিসর। পরিসরকে সাধারণত R দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
একক কাজ:
তোমার পরিবারের সদস্যদের উচ্চতা সেমি বা ইঞ্চিতে পরিমাপ করে প্রাপ্ত উপাত্তের পরিসর নির্ণয় করো।
মাথা খাটাও
পরিসর সর্বদাই ধনাত্মক, কেন?
অবিন্যস্ত বা অশ্রেণিকৃত উপাত্তের ক্ষেত্রে:
কোনো চলক x এর n সংখ্যক মান যথাক্রমে X1, X2,X3---------xn। যাদের মধ্যে ক্ষুদ্রতম মান ধরি, xL এবং বৃহত্তম মানxH·
সুতরাং পরিসর R = xH −xL বা R = |xH −xL|
বিন্যস্ত বা শ্রেণিকৃত উপাত্তের ক্ষেত্রে:
ধরি, সর্বশেষ শ্রেণির উচ্চসীমা Lu এবং সর্বনিম্ন শ্রেণির নিম্নসীমা Ll,
সুতরাং পরিসর R = Lu- Ll
নির্দেশনা
কোনো নিবেশনের প্রথম শ্রেণির গণসংখ্যা 0 (শূন্য) হলে, পরিসর নির্ণয়ে প্রথম
শ্রেণির পরবর্তী শ্রেণিকে প্রথম শ্রেণি হিসেবে ধরতে হবে। তারপর পরিসর নির্ণয় করতে হবে।
একক কাজ: ১
ক) −12, – 7, −2, 0, 7, 8 তথ্যসারির পরিসর নির্ণয় করো।
খ) ধরো, গড় মাসে তোমার ক্লাসের 62 জন শিক্ষার্থীর উপস্থিতির শ্রেণি বিন্যস্ত তালিকাটি নিম্নরূপ ছিল।
অর্ডিনেট আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url