সালোকসংশ্লেষণ

Science New Shyllabus-2024 Hand Note/ Goudie

নবম শ্রেণীর বিজ্ঞান-2024

2024 সালের নতুন হ্যান্ড নোট বিজ্ঞান

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক জাতীয় শিক্ষাক্রম- ২০২২ অনুযায়ী প্রণীত এবং ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে নবম শ্রেণির জন্য নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তক বিজ্ঞান

অধ্যায় :10

সালোকসংশ্লেষণ

অধ্যায় ১০:সালোকসংশ্লেষণ


এই অভিজ্ঞতায় শিখতে পারবে---

  • সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রুপান্তর
  • উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণের ধাপসমূহ
  • কার্বন সংবন্ধন


৩.১ সালোকসংশ্লেষণ

তোমরা জানো যে বীজ থেকে চারা তৈরি হয়। এই চারাগুলো ধীরে ধীরে বড় হয় এবং দৈহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে পুর্নাঙ্গ উদ্ভিদে পরিণত হয়। সময়ের সাথে সাথে উদ্ভিদের এই দৈহিক বৃদ্ধিতে ঠিক কোন জিনিষগুলো অবদান রাখছে? এটা কি পানি, মাটিতে প্রাপ্ত পরিপোষক পদার্থ (নিউট্রিয়েন্ট), আলো, নাকি অন্যকিছু? এই প্রশ্নগুলো বহু বছর থেকে বিজ্ঞানীদের মনে ছিল, এখন আমরা জেনেছি যে উদ্ভিদ সূর্যের আলো, পানি এবং বাতাসের কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করে নিজেরাই নিজেদের খাবার তৈরি করে নেয়। এই প্রক্রিয়াটির নাম সালোকসংশ্লেষণ এবং এই প্রক্রিয়ায় শুধু যে নিজেদের খাবার তৈরি করে তা নয়, পৃথিবীর সমস্ত জীব জগত প্রত্যক্ষ না হয়ে পরোক্ষ ভাবে এই খাবারের উপর নির্ভরশীল। শুধু তাই নয় এই প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ উদ্বৃত্ত উপজাত হিসেবে যে অক্সিজেন গ্যাস পরিত্যাগ করে পৃথিবীর আমরা সবাই সেই অক্সিজেন গ্রহণ করে বেঁচে থাকি।

পৃথিবী সৃষ্টির প্রাক্কালে আমাদের বায়ুমণ্ডলে তৈরি হয়েছিল নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং মিথেন দিয়ে, সেখানে কোন অক্সিজেন ছিল না। তোমরা আগের একটি অধ্যায় থেকে জেনেছ প্রায় 2.5 বিলিয়ন বছর আগে, সায়ানোব্যাকটেরিয়া নামে প্রথম একটি প্রোক্যারিওট এককোষী জীব সূর্যালোক এবং কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করে সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে অক্সিজেন এবং শর্করা তৈরি করতে শুরু করে। পরবর্তীতে বিবর্তনের ফলে শৈবালে এই ক্ষমতা বিকশিত হয়। শৈবাল, প্ল্যাঙ্কটন এবং পুর্নাঙ্গ উদ্ভিদ এখন আমাদের বায়ুমণ্ডলকে অক্সিজেনে পূর্ণ রাখতে একসাথে কাজ করে। যা আমাদের বায়ুমণ্ডলকে ধীরে ধীরে বর্তমান অবস্থায় রূপান্তরিত করেছিল।এই অধ্যায়ে আমরা সালোকসংশ্লেষণ নামের প্রকৃতির এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াটি বোঝার চেষ্টা করব।

৩.২ সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রুপান্তর:

তোমরা ইতোমধ্যে জেনে গেছ উদ্ভিদের ক্লোরোফিলের কারণে উদ্ভিদের পাতার রং সবুজ হয়। কোন কিছুর রং সবুজ হওয়ার অর্থ সেটি আলোর অন্য রং শোষণ করতে পারলে সবুজ রংটি গ্রহণ করতে পারে না, সেটি ফিরিয়ে দেয়। কাজেই তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ সালোকসংশ্লেষণের সময় গাছের পাতার ক্লোরোফিল আলো থেকে তার প্রয়োজনীয় অন্য রংগুলো শোষণ করে সবুজ রঙ্গটি ফিরিয়ে দেয়। ক্লোরোফিল দ্বারা শোষিত এই আলোক শক্তি সালোকসংশ্লেষণের পরের ধাপগুলো সম্পন্ন করার জন্য রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। 


এই রাসায়নিক শক্তি ATP (এডিনোসিন ট্রাইফসফেট) এবং NADPH (নিকোটিনামাইড অ্যাডেনিন ডাইনিউক্লিওটাইড ফসফেট) নামক দুটি অণুতে সঞ্চিত হয়।জীবদেহে ATP সকল বিক্রিয়ার জন্য শক্তি জমা রাখে এবং চাহিদা অনুসারে সরবরাহ করে থাকে, একারণে ATP কোষের জৈবমুদ্ৰা (Biological coin) নামেও পরিচিত। তুমি যখন তোমার মাংসপেশি ব্যবহার কর সেই শক্তিটিও ATP নামের এই শক্তিসঞ্চিত জৈবঅণু সরবরাহ করে। ATP তে তিনটি ফসফেট গ্রুপ শক্তিশালী রাসায়নিক বন্ধন দিয়ে যুক্ত থাকে, এই রাসায়নিক বন্ধনে শক্তি সঞ্চিত থাকে। এই রাসায়নিক বন্ধন ভেঙ্গে একটি ফসফেট গ্রুপকে মুক্ত করা হলে রাসায়নিক বিক্রিয়া করার জন্য শক্তি বের হয়ে আসে। (ছবি) তখন তিনটির পরিবর্তে দুইটি ফসফেট থাকে বলে এটিকে ADP (এডিনোসিন ডাইফসফেট) বলা হয়। কাজেই আমরা বলতে পারি সালোকসংশ্লেষণের একটি 
গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে ADPকে ATP তে রূপান্তর করার মাধ্যমে সৌর শক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তর করা।NADPH এর বেলায় ক্লোরোপ্লাস্টের সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তর করার জন্য NADP এর সাথে হাইড্রোজেন (H) সংযুক্ত করা হয় এবং এখানেও NADPH এর হাইড্রোজেনকে (H) অবমুক্ত করে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি পাওয়া যায়।

৩.৩ সালোকসংশ্লেষণ কোথায় ঘটে? (Where photosynthesis occurs ?)

পাতার মেসোফিল টিস্যু সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার প্রধান স্থান। স্থলজ সবুজ উদ্ভিদ মাটি থেকে মূলের মাধ্যমে পানি শোষণ করে পাতার মেসোফিল টিস্যুর ক্লোরোপ্লাস্টে পৌঁছায় এবং স্টোমাটা বা পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে বায়ু থেকে CO2 গ্রহণ করে, যা মেসোফিল টিস্যুর ক্লোরোপ্লাস্টে পৌঁছে।সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ক্লোরোপ্লাস্ট নামক সাইটোপ্লাজমিক অঙ্গাণুতে ঘটে থাকে, এটি মোটামুটি ১-২ um পুরু এবং এর ব্যাস ৫-৭ um। ক্লোরোপ্লাস্ট আকার ডিম্বাকৃতির এবং এটিতে দুটি ঝিল্লি আছে: একটি বাইরের ঝিল্লি এবং একটি অভ্যন্তরীণ ঝিল্লি। বাইরের এবং অভ্যন্তরীণ ঝিল্লির মধ্যে প্রায় ১০-২০ nm চওড়া আন্তঃঝিল্লি স্থান। অভ্যন্তরীণ ঝিল্লির মধ্যবর্তি স্থানটিই হল স্ট্রোমা, এখানেই সালোকসংশ্লেষণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, CO2 থেকে কার্বহাইড্রেটের রূপান্তর ঘটে থাকে। সবুজ শৈবাল, ব্রায়োফাইটস, টেরিডোফাইটস, জিমনোস্পার্ম এবং অ্যানজিস্পার্ম  নামক উদ্ভিদে ক্লোরোপ্লাস্ট পাওয়া যায়।

ক্লোরোপ্লাস্টের গঠন:

উপরের ছবিতে ক্লোরোপ্লাস্টের গঠন দেখানো হয়েছে। ক্লোরোপ্লোস্টে স্ট্রোমা (stroma) এবং গ্রানা (grana) নামক দুটি অংশ আছে। গ্রানা অঞ্চলে সালোকসংশ্লেষনের আলো শোষণ করে রাসায়নিক শক্তি উৎপাদন এবং স্ট্রোমা অঞ্চলে সেই রাসায়নিক শক্তি ব্যবহার করে কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে শর্করা গঠনের বিক্রিয়াটি ঘটে। সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় ক্লোরোপ্লাস্টের ভেতরে কয়েকটি অঙ্গাণু হচ্ছে:

ক্লোরোফিল:

 একটি সবুজ সালোকসংশ্লেষী রঞ্জক এবং রঞ্জক হওয়ার কারণে এটি সৌরশক্তি হিসেবে নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোক শোষণ করে।

থাইলাকয়েডঃ 

এগুলো ক্লোরোপ্লাস্টের চ্যাপ্টা থলির মতো কাঠামো নিয়ে গঠিত। এগুলো স্ট্রোমার ভেতর ঝুলে থাকে। যেখানে আলোক শক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। থাইলাকয়েডের পৃষ্ঠে ক্লোরোফিল থাকে। উল্লেখ্য যে সায়ানোব্যাকটেরিয়াতে ক্লোরোপ্লাস্ট নেই, কিন্তু সেখানে থাইলাকয়েড আছে এবং তার পৃষ্ঠদেশে ক্লোরোফিল এবং আলো সংবেদী অন্য রঞ্জক রয়েছে। 

গ্র্যানাম (বহুবচন গ্রানা) : 

অনেকগুলো (১০ থেকে ২০) থাইলাকয়েড একত্রিত হয়ে গ্র্যানাম গঠন করে যা আলোক শক্তির রাসায়নিক রূপান্তরের স্থান।

৩.৪ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া (The process of photosynthesis):

তোমরা জান যে সবুজ উদ্ভিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো যে এরা সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সূর্যালোকের উপস্থিতিতে কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) এবং পানি থেকে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাজাতীয় খাদ্য তৈরি করে। এটি একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া যেখানে সজীব উদ্ভিদ কোষস্থ ক্লোরোফিল আলোক শক্তিকে ATP এবং NADPH নামক জৈব অণুতে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে এবং ঐ রাসায়নিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে CO2 বিজারণের মাধ্যমে কার্বোহাইড্রেট (শর্করা) জাতীয় খাদ্য প্রস্তুত ও উপজাত হিসেবে O2 নির্গত করে। নিচের রাসায়নিক বিক্রিয়াটির মাধ্যমে উচ্চতর উদ্ভিদে সংঘটিত সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে দেখানো যায়।

6CO2 + 12H2O (আলো/ক্লোরোফিল) ⇔C6H12O6 + 602 + 6H2O

তোমরা উপরের রাসায়নিক বিক্রিয়াটি থেকে দেখতে পাচ্ছ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ১ অণু হেক্সোজ শর্করা (গ্লুকোজ) তৈরি করতে ৬ অণু CO2 ও ১২ অণু H2O প্রয়োজন পড়ে। গ্লুকোজে শক্তি সঞ্চিত থাকে, এবং এই শক্তিটি আসে আলোক রশ্মির ৫০-৬০টি ফোটন কণা থেকে। এখানে H2O জারিত হয়ে সেখান থেকে O2 মুক্ত হয়, অন্যদিকে কার্বন ডাই অক্সাইড বিজারিত হয়ে তার সাথে হাইড্রোজেন সংযুক্ত হয় । একারণে সালোকসংশ্লেষণকে একটি জটিল জারণ-বিজারণ প্রক্রিয়া বলা হয়। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার অনেকগুলো ধাপ থাকলেও এটিকে আলোকনির্ভর (Light dependent) এবং আলোক নিরপেক্ষ (Light independent) এ দুটি মূল পর্যায়ে ভাগ করা যায়।

৩.৪.১ আলোকনির্ভর পর্যায় (Light dependent phase) :

সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার যে অধ্যায়ে আলোক শক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে ATP ও NADPH তে সঞ্চারিত হয়, তাকে আলোকনির্ভরঅধ্যায় বলে। এ অংশের জন্য আলোক অপরিহার্য। এই রাসায়নিক বিক্রিয়াটি নিচে দেখানো হল :

2ADP + 2Pi + 2NADP + 4H20 (সূর্যালো/ক্লোরোফিল) ⇔2ATP + 2NADPH + H+ + 2H2O + O2

উপরের বিক্রিয়ায় অজৈব ফসফেটকে Pi হিসেবে দেখানো হয়েছে।
সালোকসংশ্লেষের আলোকনির্ভর পর্যায়ের বিক্রিয়াগুলি আলোর উপস্থিতিতে ক্লোরোপ্লাস্টিডের গ্রানার মধ্যে সংঘটিত হয়। এই পর্যায়ের মূল ঘটনাগুলি হল :

ক্লোরোফিলের সক্রিয়তা : 

এই বিক্রিয়ায় ক্লোরোফিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সূর্যালোকের ফোটন কণা শোষণ করে ক্লোরোফিল অণু সক্রিয় ও তেজোময় হয়ে ওঠে।



ক্লোরোফিলের সক্রিয়তা


ফটোলাইসিস: 

সক্রিয় ক্লোরোফিল অণু পানিকে বিয়োজিত করে অক্সিজেন, হাইড্রোজেন এবং ইলেকট্রন উৎপন্ন করে। এই অক্সিজেন পাতার পত্ররন্ধ্র দিয়ে পরিবেশে নির্গত হয়ে যায়।

ফটোফসফোরাইলেশন : 

এই প্রক্রিয়ায় পাতার কোষে অবস্থিত যৌগ ADP (অ্যাডিনোসিন ডাই ফসফেট) সূর্যালোকের উপস্থিতিতে অজৈব ফসফেট(Pi) সঙ্গে যুক্ত হয়ে উচ্চ শক্তিসম্পন্ন যৌগ ATP (অ্যাডিনোসিন ট্রাইফসফেট) গঠন করে।

ADP +Pi আলো/ ক্লোরোফিল ⇔ATP.

বিজারিত NADPH গঠন : 

পাতার কোষে অবস্থিত যৌগ NADP (নিকোটিনামাইড অ্যাডেনাইন ডাইনিউক্লিওটাইড ফসফেট) হাইড্রোজেন আয়নের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিজারিত NADPH গঠন করে।


৩.৪.২ আলোক নিরপেক্ষ পর্যায় (Light Independent phase):

সালোকসংশ্লেষের আলোক-নিরপেক্ষ পর্যায়' বা অন্ধকার পর্যায়ের বিক্রিয়াগুলি উৎসেচকের সাহায্যে ক্লোরোপ্লাস্টিডের স্ট্রোমার মধ্যে সংঘটিত হয় এবং আলোর উপর নির্ভর করে না। এই চক্রের মাধ্যমে সূর্যালোকে সৃষ্ট ATP এবং NADPH এর সরবরাহ করা শক্তি দিয়ে শর্করা সৃষ্টি করা হয়। এই চক্রটির আবিষ্কারক ড. মেলভিন কেলভিনের নামানুসারে কেলভিন চক্র বলা হয়। ১৯৬১ সালে এই আবিষ্কারের জন্য ক্যালভিন নোবেল পুরস্কার পান৷

চার ধাপের এই চক্রটি নিচের ছবিতে দেখানো হয়েছে।

  • ১। প্রথম ধাপে একটি কার্বন ডাই অক্সাইডের অণু থেকে তার কার্বন অণুটি একটি 5 কার্বন অণু সম্বলিত অণু RuBP এর সাথে সংযুক্ত হয় । 
  • বায়ুমণ্ডলের CO2 থেকে কোষস্থ যৌগে কার্বনের অঙ্গীভূত হওয়াকে আত্তীকরণ বলে। আত্তীকরণের মাধ্যমে গঠিত হওয়া 6 কার্বন অণু
  • বিশিষ্ট অণুটি অস্থিতিশীল হওয়ায় এটি সাথে সাথে ও কার্বন অণুর দুইতই 3-PGA অণুতে বিভক্ত হয়ে যায়।
  • ২। দ্বিতীয় ধাপে 3-PGA অণু গ্লুকোজ ও অন্যান্য শর্করা তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় G3P অণু গঠিত হয়।
  • ৩। তৃতীয় ধাপে কিছু G3P অণু দিয়ে সুগার তৈরি করা হয়। এক অণু গ্লুকোজ তৈরি করার জন্য দুই অণু G3P এর প্রয়োজন হয় ৷
  • ৪। চতুর্থ ধাপে উদ্বৃত্ত G3P অণুগুলো একাধিক চক্রের জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে 5 কার্বন অণু সম্বলিত অণু RuBP গঠন করে। এই RuBP অণু আবার চক্রের প্রথম ধাপ শুরু করে।



সালোকসংশ্লেষণে কার্বনের গ্যাসীয় অবস্থা থেকে কার্বহাইড্রেটে পরিণত করে যা পৃথিবীর অন্যান্য জীব ব্যবহার করতে পারে। একে বলা হয় কার্বন ফিক্সেশন বা কার্বন সংবন্ধন বলে। তোমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে যে পৃথিবীতে জীবন কার্বন ভিত্তিক। অটোট্রফগুলি পৃথিবীর একমাত্র জীব যা কম শক্তির বায়বীয় কার্বন থেকে উচ্চ-শক্তি জৈব যৌগ তৈরি করতে পারে। ক্যালভিন চক্রে কার্বন সংবন্ধন একটি অনন্য এবং জীবন টিকিয়ে রাখার জন্য অন্যতম ঘটনা।

কেলভিন চক্রকে C3 চক্র বলা হয় কারণ এখানে মধ্যবর্তী ধাপে তিন কার্বন সম্বলিত 3 - PGA অণু তরি হয় যেটি পরবর্তীতে সুগারে সংশ্লেষিত হয়। বেশিরভাগ উদ্ভিদ C3 চক্রের মাধ্যমে কার্বন সবন্ধন করলেও এই চক্র ছাড়াও অন্য চক্র রয়েছে যেখানে চার কার্বন সম্বলিত মধ্যবর্তী অণু তইরি করে বলে সেটিকে C4 চক্র বলা হয়। C3 উদ্ভিদের তুলনায় C4 উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষণের হার বেশি এবং উৎপাদন ক্ষমতাও বেশি তাই যেখানেআলো কিংবা পানি কম সেখানে C4 চক্রের উদ্ভিদের আধিক্য দেখা যায়।সালোকসংশ্লেষণ সর্বদা সর্বোচ্চ গতিতে কাজ করে না; আলোর তীব্রতা, কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ, তাপমাত্রা এবং পানির পরিমাণও সালোকসংশ্লেষণের হারকে প্রভাবিত করতে পারে।

৩.৫ সালোকসংশ্লেষণের তাৎপর্য :

সালোকসংশ্লেষের মূল তাৎপর্য বা গুরুত্ব হল তিনটি, যেমন :

১। সৌরশক্তি আবদ্ধকরণ এবং খাদ্যের মধ্যে স্থিতিশক্তিতে রূপান্তরণকরণ: 

সূর্য পৃথিবীর সকল শক্তির উৎস। সালোকসংশ্লেষনের সময় সবুজ উদ্ভিদ সৌরশক্তিকে শোষণ করে এবং তাকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত ক'রে ATP-অণুর মধ্যে আবদ্ধ করে। পরে ঐ শক্তি উৎপন্ন খাদ্যের মধ্যে স্থিতিশক্তি রূপে সঞ্চিত হয়। ঐ শক্তি উদ্ভিদের বিভিন্ন বিপাকীয় কাজে লাগে। পরভোজী প্রাণীরা উদ্ভিদজাত খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় শক্তি অর্জন করে থাকে। কাঠকয়লা, পেট্রোল ইত্যাদির মধ্যে যে শক্তি নিহিত থাকে,তা প্রকৃতপক্ষে অনেক বছর আগেকার উদ্ভিদের মধ্যে আবদ্ধ সৌরশক্তি।

২। গ্লুকোজকে শ্বেতসারে রূপান্তর এবং তাকে সঞ্চয়ী অঙ্গে পরিবহন : 

সালোকসংশ্লেষন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয় সরল শর্করা গ্লুকোজ, যা শ্বেতসারেরূপান্তরিত হয়ে উদ্ভিদের বিভিন্ন সঞ্চয়ী অঙ্গে সঞ্চিত হয়। গ্লুকোজ থেকে প্রোটিন, ফ্যাট ইত্যাদি অন্যান্য খাদ্যবস্তু সংশ্লেষিত হয়। পরভোজী প্রাণীরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই উদ্ভিদজাত খাদ্যই গ্রহণ করে। তাই সালোকসংশ্লেষের ফলে উৎপন্ন খাদ্যই হল খাদ্যের মূল উৎস।

৩। পরিবেশে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের ভারসাম্য রক্ষায় সালোকসংশ্লেষণ: 

বায়ুমণ্ডলে CO2 গ্যাসের স্বাভাবিক পরিমাণ হল ০.০৩% এবং O2-এর স্বাভাবিক পরিমাণ হচ্ছে ২০-৬০%। সালোকসংশ্লেষের সময় সবুজ উদ্ভিদরা কার্বন ডাই- অক্সাইড গ্রহণ এবং অক্সিজেন বর্জনের মাধ্যমে পরিবেশের O2-CO2-এর ভারসাম্য বজায় রাখে।

এইচএসসি ICT৩য় অধ্যায় সংখ্যাপদ্ধতি ডিজিটাল ডিভাইস (১ম অংশ)-QUIZ-3

অর্ডিনেট আইটির আইসিটি(HSC) সকল কোর্সের ফ্রি ভিডিও ক্লাস

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনেট আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url