এইচ এস সি পদার্থবিজ্ঞান ৩য় পত্র চল তড়িৎ Current Electricity
চল তড়িৎ
Current Electricity
ভূমিকা (Introduction)
পদার্থ বিজ্ঞানের যে শাখায় তড়িৎ ও তড়িৎ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়, তাকে তড়িৎবিদ্যা বলা হয়। মানব সভ্যতার বিকাশে তড়িৎ বিদ্যার ভূমিকা অপরিসীম। দৈনন্দিন জীবনে আমাদের ঘরে লাইট জ্বলা থেকে শুরু করে শিল্প কলকারখানায় বিভিন্ন সামগ্রী উৎপাদনের ক্ষেত্রে তড়িতের ব্যবহার হয়ে থাকে। বৈদ্যুতিক পাখা, এসি, টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর, বৈদ্যুতিক চুলা ইত্যাদি ছাড়া আজকাল আমাদের দৈনন্দিন জীবন কল্পনা করতে পারি না। এ অধ্যায়ে আমরা রোধ, তাপ উৎপাদনে জুলের সূত্র, যান্ত্রিক সমতা, তড়িৎ কোষ, তড়িচ্চালক শক্তি, কোষের সমবায় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
সূচীপত্র
পাঠ-২.১ : রোধের উপর তাপমাত্রার প্রভাব: জুলের তাপীয় ক্রিয়া
এ পাঠ শেষে তুমি-
- রোধের উপর তাপমাত্রার প্রভাব ব্যাখ্যা করতে পারবে।
- রোধের উষ্ণতা সহগ ব্যাখ্যা করতে পারবে।
- জুলের তাপীয় ক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে পারবে।
২.১.১ রোধের উপর তাপমাত্রার প্রভাব (Effect of Temperature on Resistance)
পরিবাহীর যে ধর্মের জন্য এর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহকালে বাধার সৃষ্টি হয় তাকে পরিবাহীর রোধ বলে।
পরিবাহীর বিভিন্ন ধর্মের উপর রোধ নির্ভর করে। যেমন- পরিবাহীর দৈর্ঘ্য, প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল, উপাদান ইত্যাদি। তাপমাত্রা বাড়লে পরিবাহীর রোধ বাড়ে। আবার তাপমাত্রা কমে গেলে পরিবাহীর রোধ কমে যায়। তবে পরিবাহীতে রোধ তাপমাত্রার সমানুপাতিক নয়। রোধের উষ্ণতা সহগ দ্বারা তাপমাত্রার সাথে রোধের সম্পর্ক নির্ধারণ করা হয়। তড়িৎ প্রবাহের ফলে তড়িৎ বর্তনীতে তাপের উদ্ভব হয়। তড়িৎ বর্তনীতে তাপ উৎপাদনের কারণ ইলেকট্রন মতবাদের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায়। পরিবাহীতে বহু সংখ্যক মুক্ত ইলেক্ট্রন থাকে।
পরিবাহীর মধ্যে মুক্ত ইলেকট্রনের প্রবাহের দরুণ তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি হয়। পরিবাহীতে দুই বিন্দুর মধ্যে বিভব পার্থক্য সৃষ্টি হলে মুক্ত ইলেকট্রনগুলো অণু পরমাণুর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ফলে পরিবাহীতের রোধের সৃষ্টি হয়। এভাবে তাপমাত্রা যদি আরও বৃদ্ধি করা হয়, তাহলে পরিবাহীর অণু পরমাণুগুলো অতিরিক্ত শক্তি অর্জন করে অতিমাত্রায় কাঁপতে থাকে। ফলে মুক্ত ইলেকট্রনের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বৃদ্ধি পায় এবং চলার পথে বেশী বাধাপ্রাপ্ত হয়। এতে করে পরিবাহীর রোধও বাড়তে থাকে এবং পরিবাহী গরম হয়।
২.১.২ জুলের তাপীয় ক্রিয়া (Joule's Heating Effect)
কোনো পরিবাহীর দুই প্রান্তে বিভব পার্থক্য থাকলে এর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি হয়। এই তড়িৎ প্রবাহের কিছু তড়িৎশক্তি পরিবাহীর রোধকে অতিক্রম করার কাজে ব্যয়িত হয়। এই ব্যয়িত শক্তিই পরিবাহীতে তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। ফলে পরিবাহী উত্তপ্ত হয়। এই প্রক্রিয়াকে তড়িৎ প্রবাহের তাপীয় ক্রিয়া বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ যদি বৈদ্যুতিক কেট্লিতে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হয়, তাহলে কেট্লির কয়েল উত্তপ্ত হয়। ফলে তাপ উৎপন্ন হয় এবং কেট্লির পানি ধীরে ধীরে গরম হতে থাকে। এছাড়া বৈদ্যুতিক হিটার, বৈদ্যুতিক বাতি, ইস্ত্রি ইত্যাদি হচ্ছে তড়িৎ প্রবাহের তাপীয় ক্রিয়ার ব্যবহারিক রূপ। ১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞানী জেম্স প্রেসকট জুল এই প্রক্রিয়াটি আবিষ্কার করেন।
একে জুলের তাপীয় ক্রিয়া বলা হয়। তড়িৎ বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহের ফলে তাপ উৎপন্নের কারণ ইলেকট্রন মতবাদের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায়। পরিবাহীতে কিছু সংখ্যক মুক্ত ইলেকট্রন থাকে। পরিবাহীতে দুই বিন্দুর মধ্যে বিভব পার্থক্য সৃষ্টি হলে মুক্ত ইলেকট্রনসমূহ আন্তঃআণবিক স্থানের মধ্য দিয়ে নিম্ন বিভব বিন্দু হতে উচ্চ বিভব বিশিষ্ট বিন্দুর দিকে চলতে থাকে। ফলে তড়িৎ প্রবাহের
সৃষ্টি হয়। মুক্ত ইলেকট্রনগুলো চলার সময় পরিবাহীর পরমাণুর সাথে ধাক্কা খায়। এর ফলে ইলেকট্রনের গতিশক্তি পরমাণুতে সঞ্চালিত হয় এবং পরমাণুর গতিশক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই অতিরিক্ত গতিশক্তি তাপে রূপান্তরিত হয় এবং পরিবাহীর তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এই কারণে তড়িৎ প্রবাহের ফলে বর্তনীতে তাপ উৎপন্ন হয়।
সারসংক্ষেপ
পরিবাহীর রোধ: পরিবাহীর যে ধর্মের জন্য এর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহকালে বাধার সৃষ্টি হয় তাকে পরিবাহীর রোধ বলে। পরিবাহীর বিভিন্ন ধর্মের উপর রোধ নির্ভর করে।
অতিপরিবাহী: অতি নিম্ন তাপমাত্রায় যে সব পরিবাহীর রোধ শূন্যে নেমে আসে তাদেরকে অতিপরিবাহী বা Super
Conductor বলা হয়।
জুলের তাপীয় ক্রিয়া: কোনো পরিবাহীর দুই প্রান্তে বিভব পার্থক্যের কারণে তড়িৎ প্রবাহের সৃষ্টি হয়। এই সৃষ্ট তড়িৎ প্রবাহের কিছু তড়িৎ শক্তি পরিবাহীর রোধকে অতিক্রম করার কাজে ব্যয়িত হয়। এই ব্যয়িত শক্তিই পরিবাহীতে তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। ফলে পরিবাহী উত্তপ্ত হয়। এই প্রক্রিয়াকে তড়িৎ প্রবাহের তাপীয় ক্রিয়া বলা হয়।
বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
২.১: ১। (ক) ২। (গ)
পাঠ-২.২ :জুলের তাপ উৎপাদন সূত্র
এ পাঠ শেষে তুমি-
- জুলের তাপ উৎপাদনের সূত্রগুলো বর্ণনা ও ব্যাখ্যা করতে পারবে।
- তাপের যান্ত্রিক সমতা ব্যাখ্যা করতে পারবে।
- তড়িৎ প্রবাহের দরুন উৎপন্ন তাপের হিসাব জুল ও ক্যালরি এককে প্রকাশ করতে পারবে।
২.২.১ জুলের তাপীয় ক্রিয়ার সূত্র (Joule's Laws of Heating Effect)
তড়িৎ প্রবাহের ফলে পরিবাহীতে তাপ উৎপন্ন হয়। এখন আমরা কিভাবে উৎপন্ন তাপ পরিমাপ করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করব।
সারসংক্ষেপ
বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
২.২: ১। (খ) ২। (খ) ৩। (ক)
পাঠ-২.৩ :তড়িৎ কোষ: কোষের সন্নিবেশ
এ পাঠ শেষে তুমি-
- তড়িৎ কোষ ও তড়িচ্চালক শক্তি ব্যাখ্যা করতে পারবে।
- কোষের তড়িচ্চালক শক্তি ও অভ্যন্তরীণ রোধের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে।
- বর্তণীতে কোষের শ্রেণি ও সমান্তরাল সন্নিবেশে তড়িৎ প্রবাহের রাশিমালা নির্ণয় করতে পারবে।
২.৩.১ তড়িৎ কোষ (Electric Cell)
রাসায়নিক শক্তি থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে তড়িৎ প্রবাহ পাওয়ার জন্য যে যন্ত্র ব্যবহার করা হয়, তাকে তড়িৎ কোষ বলা হয়। কোনো কোনো কোষ বিভিন্ন বস্তুর রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন শক্তি থেকে সরাসরি তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি করে। এ ধরনের কোষকে মৌলিক কোষ বলা হয়। যেমন, লেকল্যান্স কোষ, শুষ্ক কোষ। আবার কোনো কোনো কোষ বাইরে থেকে পাঠানো তড়িৎ প্রবাহকে রাসায়নিক শক্তিরূপে সঞ্চিত করে, পরে এই রাসায়নিক শক্তিকে পুনরায় তড়িৎ শক্তিতে পরিণত করে প্রবাহ সৃষ্টি করে। এই ধরনের কোষকে গৌণ কোষ বলা হয়। যেমন, সীসা-এসিড সঞ্চয়ক কোষ।
২.৩.২ কোষের তড়িচ্চালক শক্তি (Electromotive Force or e.m.f. of Cell)
বর্তনীতে একক আধান প্রবাহে তড়িৎ উৎস যে পরিমাণ শক্তি সরবরাহ করে তাকে ঐ তড়িৎ উৎসের তড়িচ্চালক শক্তি বলা হয়।অন্যভাবে বলা যায়, একক আধানকে তড়িৎ কোষ দ্বারা তৈরী কোনো বর্তনীর এক বিন্দু থেকে সম্পূর্ণ বর্তনী ঘুরিয়ে আবার ঐ বিন্দুতে নিয়ে আসতে যে পরিমাণ কাজ সম্পাদন করতে হয়, তাকে ঐ কোষের তড়িচ্চালক শক্তি বলা হয়। একে ε বা E দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
কোনো কোষের বা কোনো তড়িৎ উৎসের তড়িচ্চালক শক্তি হিসাব করা যায়, তড়িৎ উৎস একটি কোষ বা ব্যাটারী বা জেনারেটর হতে পারে। তড়িৎ উৎসের কাজ হচেছ বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহ চালনা করা অর্থাৎ বর্তনীর মধ্য দিয়ে আধান চালনার জন্য প্রয়োজনীয় তড়িৎ সরবরাহ করা।
২.৩.৩ কোষের অভ্যন্তরীণ রোধ (Internal Resistance of a Cell)
তড়িৎ কোষসহ কোনো বর্তনীতে যখন তড়িৎ প্রবাহ চালনা করা হয় তখন প্রবাহ কোষের মধ্যে তরল বা অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। কোষের অভ্যন্তরে এই তড়িৎ প্রবাহের দিক ঋণাত্মক থেকে ধনাত্মক পাতের দিকে হয়। এই পাতদ্বয়ের মধ্যকার বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ তড়িৎ প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করে। এই বাধাকেই কোষের অভ্যন্তরীণ রোধ বলা হয়। একে 'r' দ্বারা সূচিত করা হয়।
২.৩.৪ তড়িচ্চালক শক্তি ও অভ্যন্তরীণ রোধের মধ্যে সম্পর্ক (Relation between Electromotive Force and Internal Resistance)
যখন বহি:বর্তনীর রোধ R ক্ষুদ্র মানের হয় তখন প্রান্তীয় বিভব (v) তড়িচ্চালক শক্তির তুলনায় অনেক ছোট হয়। আবার R যখন খুব বড় মানের হয় তখন প্রান্তীয় বিভব তড়িচ্চালক শক্তির প্রায় সমান হয়। বর্তনী খোলা অবস্থায় থাকলে কোষের দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য ঐ কোষের তড়িচ্চালক শক্তির সমান হয়।
সমীকরণ (২.৫) হতে প্রতীয়মান হয় যে, রোধ R নির্দিষ্ট হলে তড়িৎ প্রবাহ I কেবলমাত্র কোষের তড়িচ্চালক শক্তি, E এর উপর নির্ভর করেনা, এর অভ্যন্তরীণ রোধ (r) এর উপরও নির্ভর করে।
কাজেই কোনো কোষ হতে উচ্চ মাত্রায় তড়িৎ প্রবাহ পেতে হলে কোষের অভ্যন্তরীণ রোধ স্বল্প হওয়া প্রয়োজন।
২.৩.৫ তড়িৎ কোষের সমবায় (Combination of Cells)
শক্তিশালী প্রবাহ পাওয়ার জন্য বা বিভব বৈষম্য পরিবর্তনের জন্য একাধিক কোষকে একত্রে যুক্ত করে ব্যবহার করা হয়। একে কোষের সমবায় বা সন্নিবেশ বলা হয়। একাধিক কোষ একত্রে ব্যবহার করলে তাকে ব্যাটারীও বলা হয়। বৈদ্যুতিক কোষের সমবায় দুই প্রকার। যথা
ক) শ্রেণি সমবায় (Series Combination)
খ) সমান্তরাল সমবায় (Parallel Combination)
ক) শ্রেণি সমবায় (Series Combination)
যদি কতকগুলো তড়িৎ কোষ পর পর এমনভাবে যুক্ত করা হয় যে, প্রথম কোষের ঋণাত্মক পাতের সাথে দ্বিতীয়টির ধনাত্মক পাত, দ্বিতীয়টির ঋণাত্মক পাতের সাথে তৃতীয়টির ধনাত্মক পাত এবং এভাবে বাকিগুলো যুক্ত থাকে তবে তড়িৎ কোষগুলোর এই সমবায়কে শ্রেণি সমবায় (Series Combination) বলে।
ক) সমান্তরাল সমবায় (Parallel Combination)
যদি কতকগুলো তড়িৎ কোষকে এমনভাবে সাজানো হয় যে, তাদের ধনাত্মক পাতগুলো একটি সাধারণ বিন্দুতে এবং ঋণাত্মক পাতগুলো অপর একটি সাধারণ বিন্দুতে যুক্ত থাকে তাহলে কোষগুলোর এই সমবায়কে সমান্তরাল সমবায় (Parallel Combination) বলা হয়।
সারসংক্ষেপ
তড়িৎ কোষ: রাসায়নিক শক্তি থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে তড়িৎ প্রবাহ পাওয়ার জন্য যে যন্ত্র ব্যবহার করা হয়, তাকে তড়িৎ কোষ বলা হয়।
তড়িচ্চালক শক্তি: বর্তনীতে একক আধান প্রবাহে তড়িৎ উৎস যে পরিমাণ শক্তি সরবরাহ করে তাকে ঐ তড়িৎ উৎসের তড়িচ্চালক শক্তি বলা হয়।
শ্রেণি সমবায়: যদি কতকগুলো তড়িৎ কোষ পর পর এমনভাবে যুক্ত করা হয় যে, প্রথম কোষের ঋণাত্মক পাতের সাথে দ্বিতীয়টির ধনাত্মক পাত, দ্বিতীয়টির ঋণাত্মক পাতের সাথে তৃতীয়টির ধনাত্মক পাত এবং এভাবে বাকিগুলো যুক্ত থাকে তবে তড়িৎ কোষগুলোর এই সমবায়কে শ্রেণি সমবায় বলে।
সমান্তরাল সমবায়: যদি কতকগুলো তড়িৎ কোষকে এমনভাবে সাজানো হয় যে, তাদের ধনাত্মক পাতগুলো একটি সাধারণ বিন্দুতে এবং ঋণাত্মক পাতগুলো অপর একটি সাধারণ বিন্দুতে যুক্ত থাকে তাহলে কোষগুলোর এই সমবায়কে সমান্তরাল সমবায় বলা হয়।
বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
২.৩: ১। (খ) ২। (গ) ৩। (ঘ)
পাঠ-২.৪ :কির্শফের সূত্র: হুইটস্টোন ব্রীজ নীতি
এ পাঠ শেষে তুমি-
- কির্শফের সূত্র ব্যাখ্যা করতে পারবে।
- কির্শফের সূত্রের সাহায্যে রোধ পরিমাপের হুইটস্টোন ব্রীজ নীতি প্রতিপাদন করতে পারবে।
২.৪.১ কির্শফের সূত্র (Kirchhof's Law)
ওহ্মের সূত্র প্রয়োগ করে সরল বর্তনীর প্রবাহমাত্রা , রোধের মান প্রভৃতি সহজেই নির্ণয় করা যায়। কিন্তু জটিল বর্তনীর প্রবাহমাত্রা, রোধ নির্ণয় করা ওহ্মের সূত্র দ্বারা সম্ভব নয়। জটিল বর্তনীর প্রবাহমাত্রা, রোধ ইত্যাদি নির্ণয়ের জন্য জার্মান বিজ্ঞানী কির্শফ দুটি সূত্র প্রদান করেন। সরল বর্তনীতেও এই সূত্র দুটি প্রয়োগ করা যায়। নিচে সূত্রগুলো বিবৃত ও ব্যাখ্যা করা হলো।
কর্শফের দ্বিতীয় সূত্রানুসারে, কোনো বদ্ধ বর্তনীর বিভিন্ন অংশে যে পরিমাণ তড়িৎ প্রবাহিত হয়, সেসব প্রবাহমাত্রাকে তাদের আনুষাঙ্গিক রোধ দ্বারা গুণ করলে, গুণফলগুলোর যোগফল ঐ বর্তনীর মোট তড়িচ্চালক শক্তির সমান হবে।
২.৬ নং চিত্রটিতে নিম্নোক্ত নিয়মগুলো অনুসরণ করে কির্শফের উপপাদ্য প্রয়োগ করা হয়।
প্রথমত, আমরা জানি, তড়িৎ উচ্চ বিভব থেকে নিম্ন বিভবের দিকে প্রবাহিত হয়। তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখে কোনো রোধ অতিক্রম করলে বিভবের মান ঋণাত্মক (-IR) ধরা হয় এবং তড়িৎ প্রবাহের বিপরীতে রোধ অতিক্রম করলে বিভবের মান ধনাত্মক (+IR) ধরা হয়।
দ্বিতীয়ত, কোষের ঋণাত্মক পাত থেকে ধনাত্মক পাতের দিকে তড়িচ্চালক শক্তি E কে ধনাত্মক ধরা হয়। আবার কোষের ধনাত্মক পাত থেকে ঋণাত্মক পাতের দিকে E কে ঋণাত্মক ধরা হয়।
২.৪.২ কির্শফের সূত্রের ব্যবহার (Application of Kirchhof's Law)
হুইটস্টোন ব্রীজনীতি প্রতিপাদন
সারসংক্ষেপ
বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
২.৪: ১। (গ) ২। (খ)
পাঠ-২.৫ : শান্ট
এ পাঠ শেষে তুমি-
- শান্ট ব্যাখ্যা করতে পারবে।
- বর্তনীতে শান্টের ব্যবহার ব্যাখ্যা করতে পারবে।
২.৫.১ শান্টের সংজ্ঞা (Defination of Shunt )
বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি যেমন গ্যালভানোমিটার, অ্যামমিটার ইত্যাদি অত্যন্ত সুবেদী ও সূক্ষ যন্ত্র ল্যাবরেটরীতে বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। এসব যন্ত্রপাতি একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত প্রবাহমাত্রা পরিমাপ করতে পারে। গ্যালভানোমিটারের মধ্য দিয়ে এই নির্দিষ্ট সীমারে চেয়ে বেশী মাত্রায় তড়িৎ প্রবাহিত হলে গ্যালভানোমিটার পুড়ে যেতে পারে বা স্প্রিং ছিঁড়ে যেতে পারে। এজন্য গ্যালভানোমিটারকে এই ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্য একটি স্বল্প মাত্রার রোধ গ্যালভানোমিটারের সাথে সমান্তরাল সংযোগে লাগানো হয়। এই রোধকে শান্ট বলা হয়।
শান্ট ব্যবহারের কারণে বর্তনীর মূল প্রবাহ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। শান্টের রোধ গ্যালভানোমিটারের চেয়ে কম হওয়ায় বেশী পরিমাণ প্রবাহমাত্রা শান্টের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং স্বল্প পরিমাণ প্রবাহমাত্রা গ্যালভানোমিটারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়, ফলে গ্যালভানোমিটার নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায় ।
সারসংক্ষেপ
শান্ট: গ্যালভানোমিটারের মধ্য দিয়ে এই নির্দিষ্ট সীমারে চেয়ে বেশী মাত্রায় তড়িৎ প্রবাহিত হলে গ্যালভানোমিটার পুড়ে যেতে পারে বা স্প্রিং ছিঁড়ে যেতে পারে। এজন্য গ্যালভানোমিটারকে এই ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্য একটি স্বল্প মাত্রার রোধ গ্যালভানোমিটারের সাথে সমান্তরাল সংযোগে লাগানো হয়। এই রোধকে শান্ট বলা হয়।
অ্যমামিটার: যে যন্ত্রের সাহায্যে বর্তনীর তড়িৎ প্রবাহ সরাসরি অ্যাম্পিয়ার এককে পরিমাপ করা যায়, তাকে অ্যামমিটার বলা হয়। অ্যামমিটারের সাথে অতিরিক্ত শান্ট ব্যবহার করে এর পালা বৃদ্ধি করা যায়।
বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
২.৫: ১। (ক) ২। (গ) ৩। (গ)
পাঠ-২.৬ :মিটার ব্রীজ, পোস্ট অফিস বক্স ও পোটেনশিওমিটার
এ পাঠ শেষে তুমি-
- মিটার ব্রীজের গঠন ও কার্যপ্রণালী ব্যাখ্যা করতে পারবে।
- পোস্ট অফিস বাক্সের গঠন ও কার্যপ্রণালী ব্যাখ্যা করতে পারবে।
- পোটেনশিওমিটারের গঠন ও কার্যপ্রণালী ব্যাখ্যা করতে পারবে।
২.৬.১ মিটার ব্রীজ (Meter Bridge)
যে যন্ত্রের সাহায্যে এক মিটার লম্বা সুষম প্রস্থচ্ছেদের তারের অজানা রোধ নির্ণয় করা যায়, তাকে মিটার ব্রীজ বলা হয়। হুইটস্টোন ব্রীজ নীতি প্রয়োগ করে মিটার ব্রীজ তৈরী করা হয়। পরীক্ষাগারে কোনো পরিবাহীর অজানা রোধ নির্ণয় করার জন্য মিটার ব্রীজ ব্যবহার করা হয়।
যন্ত্রের বর্ণনা
এই যন্ত্রে একটি কাঠের তৈরী লম্বা পাটাতনের উপর তিনটি তামা বা পিতলের পাত a, b, c বসানো থাকে। পাত তিনটি সংযোজন স্ক্রু দ্বারা এমনভাবে বসানো থাকে যেন a ও b এবং b ও c পাতের মাঝখানে ফাঁকা থাকে। পাতগুলোর রোধ নগন্য ধরা হয়।
সারসংক্ষেপ
মিটার ব্রীজ: যে যন্ত্রের সাহায্যে এক মিটার লম্বা সুষম প্রস্থচ্ছেদের তারের অজানা রোধ নির্ণয় করা যায়, তাকে মিটার ব্রীজ বলা হয়।
পোষ্ট অফিস বক্স: এই যন্ত্রের সাহায্যে পোষ্ট অফিসে টেলিগ্রাফের তারের রোধ নির্ণয় করা হতো বলে এটি পোষ্ট অফিস বক্স নামে পরিচিত।
পোটেনশিওমিটার: যে যন্ত্রের সাহায্যে বিভবপতন পদ্ধতিতে বিভব পার্থক্য ও বিদ্যুৎচ্চালক শক্তি সূক্ষ্ম ভাবে নির্ণয় করা যায়, তাকে পোটেনশিওমিটার বলা হয়।
বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
১। পোটেনশিওমিটারের তারের সাথে গ্যালভানোমিটারের তারের সংযোগ ঘটায় কোনটির মাধ্যমে?
ক) অ্যামিটার খ) ভোল্টমিটার গ) জকি ঘ) রিওস্ট্যাট
২। মিটার ব্রীজের সাহায্যে-
i) অজানা রোধ নির্ণয় করা যায়।
ii) কোনো উপাদানের আপেক্ষিক রোধ নির্ণয় করা যায়।
iii) ধারকত্ব নির্ণয় করা যায়।
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) i ও ii খ) i ও iii গ) ii ও iii ঘ) i, ii ও iii
অর্ডিনেট আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url