এইচ এস সি জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র প্রথম অধ্যায় ,কোষ ও এর গঠন

 কোষ ও এর গঠন(CELL AND ITS STRUCTURE)




সূচীপত্র

ভূমিকা

মাটি, পানি ও বাতাসে বিদ্যমান জীবের মধ্যে কিছু সংখ্যক খালি চোখে দেখা যায়, এরা আকারে বড়। এছাড়া অসংখ্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীব রয়েছে, যাদেরকে খালি চোখে দেখা যায় না। কেবলমাত্র অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে এদেরকে দেখা যায়, তাই এদেরকে আণুবীক্ষণিক জীব বলা হয়। উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে যেমন মিল রয়েছে, তেমন অমিলও। তবে কিছু অকোষীয় জীব যেমন, ভাইরাস, ভিরিয়ন ইত্যাদি ছাড়া প্রতিটি জীব এক বা একাধিক কোষ দ্বারা গঠিত। কোষ হলো জীবদেহের গঠন ও কার্যকরী একক। এ ইউনিটে কোষ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
  

 

পাঠ-২.১  একটি ইলেকট্রন অণুবীক্ষণে দৃষ্ট উদ্ভিদ কোষের গঠন ।

উদ্দেশ্য
এ পাঠ শেষে তুমি-
  • একটি আদর্শ উদ্ভিদ কোষের চিহ্নিত চিত্র অঙ্কণ করতে পারবে।
  • একটি আদর্শ উদ্ভিদ কোষের গঠন উল্লেখ করতে পারবে। 
 

একটি আদর্শ উদ্ভিদ কোষের গঠন : একটি উদ্ভিদ কোষে যখন সব উপাদান ও ক্ষুদ্রাঙ্গ উপস্থিত থাকে, তখন তাকে আদর্শ উদ্ভিদ কোষ বলা হয়। 


একটি কোষে যে সকল উপাদান ও কোষ অঙ্গাণুসমূহ রয়েছে সেগুলোকে মূলতঃ দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (ক) জড় বস্তুসমূহ ও (খ) কোষস্থ সজীব বস্তু (প্রোটোপ্লাজম)। জড় বস্তুসমূহের মধ্যে রয়েছে কোষ প্রাচীর এবং কোষস্থ নির্জীব পদার্থসমূহ। সজীব পদার্থগুলোকে মূলতঃ কোষঝিল্লী, সাইটোপ্লাজম ও নিউক্লিয়াস এ তিন ভাগে ভাগ করা যায়। নিচে একটি ছকের মাধ্যমে একটি আদর্শ উদ্ভিদ কোষের গাঠনিক উপাদানসমূহ উপস্থাপন করা হলো-



সারসংক্ষেপ

উদ্ভিদ কোষে সব উপাদান ও ক্ষুদ্রাঙ্গ উপস্থিত থাকে তাকে আদর্শ উদ্ভিদ কোষ বলা হয়। একটি আদর্শ উদ্ভিদ কোষে যে সকল অঙ্গ এবং অঙ্গাণু থাকে তা হলো- ১। কোষ প্রাচীর, ২। কোষ ঝিল্লী, ৩। সাইটোপ্লাজম (এতে থাকে প্লাস্টিড, মাইটোকন্ড্রিয়া, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম, রাইবোসোম, গলগি বডি, লাইসোসোম, সেন্ট্রোসোম, গ্যাইঅক্রিসোম, মাইক্রোটিউবিউলস ইত্যাদি ক্ষুদ্রাঙ্গ এবং বৃহৎ কোষ গহবর), ৪। নিউক্লিয়াস (এতে থাকে নিউক্লিয়ার মেমব্রেন, নিউক্লিয়োপ্লাজম, নিউক্লিয়োলাস ও ক্রোমোসোম) এবং ৫। কোষস্থ জড়বস্ত (সঞ্চিত খাদ্য, নিঃসৃত পদার্থ এবং বর্জ্য পদার্থ)

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১। নিচের কোনটি সজীব-
(ক) নিউক্লিয়াস (খ) বর্জ্য পদার্থ (গ) নিঃসৃত পদার্থ (ঘ) কোষ প্রাচীর
২। নিচেরগুলো নির্জীব পদার্থ-
i. বর্জ্য পদার্থ ii. নিঃসৃত পদার্থ iii. কোষ প্রাচীর
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) i ও ii (খ) i ও iii (গ) ii ও iii (ঘ) i, ii ও iii


পাঠ-২.২ (কোষ প্রাচীর ও কোষ ঝিল )


এ পাঠ শেষে তুমি-
  • কোষ প্রাচীরের অবস্থান, ভৌত ও রাসায়নিক গঠন এবং কাজ বর্ণনা করতে পারবে।
  • কোষ ঝিল্লীর অবস্থান, ভৌত ও রাসায়নিক গঠন এবং কাজ বর্ণনা করতে পারবে।

কোষ প্রাচীর : প্রতিটি উদ্ভিদ কোষ সাধারণত বাইরের দিকে একটি নির্জীব জড় আবরণী দিয়ে পরিবেষ্টিত থাকে। একে কোষ প্রাচীর বলে। এ কোষ প্রাচীর প্রোটোপ্লাজমেরই নিঃসৃত দ্রব্য দিয়ে গঠিত। কোষের আকার ও আয়তন প্রধানত কোষ প্রাচীরের উপরই নির্ভর করে। কোষের কার্য, অবস্থান ও বয়স ভেদে কোষ প্রাচীর সূক্ষ্ম অথবা স্থল, মসৃণ অথবা বিভিন্ন ধরনের কারুকার্যময় হতে পারে। এটি উদ্ভিদ
কোষের অনন্য একটি বৈশিষ্ট্য।


ভৌত গঠন : প্রোটোপ্লাজমের নিঃসৃত দ্রব্য দিয়ে কোষ প্রাচীর গঠিত হলেও এটি নির্জীব বা জড় পদার্থ। পরিণত কোষে কোষ প্রাচীর সাধারণত তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। যথা-
মধ্যপর্দা, প্রাথমিক প্রাচীর ও সেকেন্ডারি প্রাচীর।
মধ্যপর্দা- দুটি কোষের মধ্যবর্তী সাধারণ পর্দাকে মধ্য পর্দা বলে। মধ্য পর্দা দু’টি কোষকে সংযুক্ত রাখে। এটি বিগলিত হলে দুটি কোষ পৃথক হয়ে যায়।
প্রাথমিক প্রাচীর- এটি কোষ প্রাচীরের দ্বিতীয় স্তর। মধ্যপর্দার উপর সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ, গ্লাইকোপ্রোটিন ইত্যাদি জমা হয়ে এ স্তর তৈরি হয়। এ স্তরটি পাতলা। সেকেন্ডারি পর্দা এবং মধ্যপর্দার ভেতরের দিকে অবস্থিত। 

সেকেন্ডারি প্রাচীর- কোষের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রাথমিক কোষ প্রাচীরের উপর বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ জমা হয়ে আর একটি স্তর তৈরি হয়। এ স্তরটি অধিকতর পুরু। এতে সাধারণত সুবেরিন, মোম, ক্যালসিয়াম অক্রালেট ইত্যাদি জমা হয়। তিনটি অংশ ছাড়াও কোষ প্রাচীরে পিট এলাকা বিদ্যমান। পিট এলাকাটি হলো কোষ প্রাচীরের সবচেয়ে পাতলা এলাকা। দুটি পাশাপাশি কোষের কূপ একটি অপরটির মুখোমুখি ও উল্টোদিকে অবস্থিত। কূপ দু’টির মাঝখানে কেবলমাত্র একটি মধ্যপর্দা থাকে যাকে পিট মেমব্রেন বলে। মুখোমুখি দুটি কূপকে পিট পেয়ার বলে। আসলে কূপ অঞ্চলে প্রাথমিক প্রাচীর গঠিত হয় না।
সূক্ষ্ম গঠন : প্রারম্ভিক পর্যায়ে কোষ প্রাচীরের অসংখ্য দীর্ঘ শৃঙ্খলিত সেলুলোজ অণু থাকে। এসব অণু সমান্তরালভাবে বিন্যস্ত থাকে এবং একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে প্রথম পর্যায়ে পাকানো সূতা অথবা ফিতার ন্যায় মাইসেলি গঠন করে। প্রতিটি মাইসেলির সর্বাধিক ব্যাস ১০০ A এবং এতে প্রায় ১০০টি সেলুলোজ অণু থাকে। প্রায় ২০টি মাইসেলি মিলে একটি মাইক্রোফাইব্রিল গঠন করে এবং প্রায় ২৫০টি মাইক্রোফাইব্রিল মিলিতভাবে একটি ম্যাক্রোফাইব্রিল বা পূর্ণ সেলুলোজ সূত্রক গঠন করে।
রাসায়নিক গঠন : মধ্যপর্দায় অধিক পরিমাণ পেকটিক অ্যাসিড থাকে। এছাড়া ক্যালসিয়াম পেকটেট এবং ম্যাগনেসিয়াম পেকটেট থাকে। একে পেকটিন বলা হয়। অল্প পরিমাণে প্রোটোপেকটিনও মধ্যপর্দায় থাকে। প্রাথমিক প্রাচীরে প্রধানত সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ এবং গ্লাইকোপেকটিন থাকে সেকেন্ডারি কোষ প্রাচীরে লিগনিন (Lignin), কিউটিন, সুবেরিন মোম, ক্যালসিয়াম অক্সালেট ইত্যাদি থাকে।
কোষ প্রাচীরের কাজ
১। কোষের নির্দিষ্ট আকৃতি প্রদান করে,
২। বাইরের প্রতিক‚ল পরিবেশ থেকে প্রোটোপ্লাজমকে রক্ষা করে,
৩। প্রয়োজনীয় শক্তি ও দৃঢ়তা প্রদান করে,
৪। কোষের ভেতরে ও বাইরে পানি ও খনিজ লবণ যাতায়াত কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করে এবং
৫। কোষগুলোকে পরস্পর থেকে পৃথক রাখে।
কোষ ঝিল্লী: (Plasma membrane) : কোষ প্রাচীরের নিচে সমস্ত প্রোটোপ্লাজমকে ঘিরে যে স্থিতিস্থাপক ও অর্ধভেদ্য সজীব পর্দা থাকে তাকে প্লাজমা মেমব্রেন, সেল মেমব্রেন, সাইটোমেমব্রেন বা কোষ ঝিলী বলে। মেমব্রেনটি স্থানে স্থানে ভাঁজবিশিষ্ট হতে পারে। প্রতিটি ভাঁজকে মাইক্রোভিলাস (বহুবচনে মাইক্রোভিলাই) বলে। কোষের ভেতরের দিকে ভাঁজ হয়ে থাকা মাইক্রোভিলাসকে বলা হয় পিনোসাইটিক ফোস্কা।
কোষ ঝিল্লীর গঠন- কোষ ঝিল্লী প্রধানত লিপিড ও প্রোটিন দিয়ে তৈরি। এর গঠন বিন্যাস সম্পর্কে বিভিন্ন বিজ্ঞানী ভিন্ন ভিন্ন মডেল প্রস্তাব করেছেন তবে অধিকাংশ বিজ্ঞানীদের মতে লিপিড-এর অণুগুলো দুটি স্তরে সজ্জিত হয়ে ঝিল্লী এর কাঠামো গঠন করে এবং দু’স্তর লিপিড কাঠামোর মধ্যে প্রোটিন অণুগুলো অবস্থান করে। বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের দেয়া মডেলগুলো (যেমন  Danielli- Daveson Model, Fluid Mosaic Model, Unit- Membrane Model I Benson`s Mode উল্লেখযোগ্য। এসমস্ত মডেলগুলোর মধ্যে  Fluid- Mosaic Mode টি সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। এখানে সংক্ষেপে  Fluid- Mosaic
Mode এর বর্ণনা দেয়া হলো 
ফ্লইড-মোজাইক মডেল : কোষ ঝিল্লীর গঠন সম্পর্কে ১৯৭২ সনে বিজ্ঞানী এস. জে. সিঙ্গার (S.J.Singer) এবং জি.এল.নিকলসন  (G.L. Nicolson) এর প্রস্তাবিত ফ্লুইড মোজাইক মডেলটি বর্তমানে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। এ মডেল অনুযায়ী কোষ ঝিল্লীটি হচ্ছে ফসফোলিপিড ও প্রোটিন এর মোজাইক এবং এর উপাদানগুলো হলো-
(ক) ফসফোলিপিড বাইলেয়ার- এটি দ্বিস্তরবিশিষ্ট ফসফোলিপিড দিয়ে গঠিত এবং এর মধ্যে প্রোটিন অণুগুলো বিক্ষিপ্ত অবস্থায় থাকে। ফসফোলিপিড স্তরের বাইরের দিকে পোলার প্রান্তে একটি ফসফেট মাথা এবং ভেতরের দিকে নন পোলার প্রান্তে দু’টি ফ্যাটি অ্যাসিড লেজ থাকে। দুস্তরের ফসফোলিপিডের লেজগুলো পানি বিদ্বেষী এবং পরস্পর মুখোমুখি অবস্থান করে কিন্তু মাথাগুলো পানিগ্রাহী এবং এরা দু’সারিতে ঝিল্লীর ভেতরে ও বাইরে অবস্থান করে ।

(খ) মেমব্রেন প্রোটিন-
কোষ ঝিল্লীতে তিন ধরনের প্রোটিন পাওয়া যায়। এগুলো হলো-
 i. লিপিড সম্পৃক্ত প্রোটিনএগুলো লিপিড কোর-এ সম্পৃক্ত থাকে।                                                                                
ii. পেরিফেরাল প্রোটিনফসফোলিপিড স্তরে আংশিকভাবে বা সম্পূর্ণ প্রবিষ্ট থাকে। এ প্রোটিন অণুগুলো আংশিকভাবে পানিগ্রাহী এবং আংশিক পানি বিদ্বেষী। ফলে পানিগ্রাহী প্রান্তটি কোষ ঝিল্লী বাইরের দিকে বেরিয়ে থাকে এবং পানি বিদ্বেষী অংশটি লিপিড স্তরের মধ্যে ডুবে থাকে ।

iii. ইনটিগ্রাল প্রোটিন- ফসফোলিপিড বাইলেয়ারের দু’স্তর জুড়েই থাকে।



(গ) অন্যান্য উপাদান- অনেক ফসফোলিপিড অণুর সাথে ক্ষুদ্র কার্বোহাইড্রেট শৃঙ্খল লেগে থাকে, একে গ্লাইকোপ্রোটিন বলে। অধিকাংশ প্রোটিন অণুর সাথে ক্ষুদ্র কার্বোহাইড্রেট শৃঙ্খল লেগে থাকে। একে গ্লাইকোপ্রোটিন নামে অভিহিত করা হয়। এদের মিলিতভাবে গ্লাইকোক্যালিক্র বলে। এছাড়াও ফসফোলিপিড অণুর ফাঁকে ফাঁকে কোলেস্টেরল অণু থাকে। ফসফোলিপিড অণুগুলো সর্বদাই কম্পমান, সচল, স্থান পরিবর্তনে সক্ষম এবং পরস্পরের সাথে ঠোকাঠুকি করে লাফিয়ে উঠে বলে একে তরল পদার্থ বা ‘Fluid এর ন্যায় মনে হয়। অন্যদিকে প্রোটিন অণুগুলো এর মধ্যে অবস্থান করে বলে
উপর থেকে দেখলে একে ফ্লোরের মোজাইকের ন্যায় মনে হয়। এ কারণেই এ মডেলকে ‘ফ্লুইড মোজাইক মডেল’ নামকরণ করা হয়েছে। রাসায়নিকভাবে কোষ ঝিল্লী ৬০-৮০% প্রোটিন, ২০-৪০% লিপিড, ৪-৫% কার্বোহাইড্রেট এবং পানি ও লবণ দিয়ে গঠিত ।

কোষ ঝিল্লী এর কাজ

১। কোষকে নির্দিষ্ট আকার দান করে।
২। কোষ এর আভ্যন্তরীণ সকল বস্তুকে বেষ্টন করে রাখে।
৩। বাইরের সকল প্রতিক‚ল অবস্থা থেকে অভ্যন্তরীণ বস্তুকে রক্ষা করে।
৪। কোষের বাইরে এবং ভেতরে পদার্থের স্থানান্তর নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় করে (ভেদ্য, অভেদ্য বা অর্ধভেদ্য        হিসেবে)।
৫। বিভিন্ন বৃহদাণু সংশ্লেষ করতে পারে।
৬। বিভিন্ন রকম কোষ অঙ্গাণু (যেমন- মাইটোকন্ড্রিয়া, গলগি বডি, নিউক্লিয়ার মেমব্রেন ইত্যাদি) সৃষ্টিতে সহায়তা করে।

সারসংক্ষেপ 

প্রতিটি উদ্ভিদ কোষ সাধারণত বাইরের দিকে একটি নির্জীব জড় আবরণী দিয়ে পরিবেষ্টিত থাকে। একে কোষ প্রাচীর বলে। প্রোটোপ্লাজমের নিঃসৃত দ্রব্য দিয়ে কোষ প্রাচীর গঠিত হলেও এটি নির্জীব বা জড় পদার্থ। পরিণত কোষে কোষ প্রাচীর সাধারণত তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। যথা- মধ্যপর্দা, প্রাথমিক প্রাচীর ও সেকেন্ডারি প্রাচীর। কোষ প্রাচীরের নিচে সমস্ত প্রোটোপ্লাজমকে ঘিরে যে স্থিতিস্থাপক ও অর্ধভেদ্য সজীব পর্দা থাকে তাকে প্লাজমা মেমব্রেন, সেল মেমব্রেন, সাইটোমেমব্রেন বা কোষ ঝিল্লী বলে। ঝিল্লীটি স্থানে স্থানে ভাঁজবিশিষ্ট হতে পারে। প্রতিটি ভাঁজকে মাইক্রোভিলাস (বহুবচনে মাইক্রোভিলাই) বলে। কোষ ঝিল্লী প্রধানত লিপিড ও প্রোটিন দিয়ে তৈরি।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১। পূর্ণ বিকশিত উদ্ভিদ কোষের কোষ প্রাচীর কয়টি স্তর নিয়ে গঠিত ?
(ক) ৩টি (খ) ৪টি (গ) ৫টি (ঘ) ৬টি
২। কোষ প্রাচীরের সাথে প্লাজমা মেমব্রেনের পার্থক্য হলো কোষ প্রাচীর
i. জড় পদার্থ নির্মিত
ii. সাইটোপ্লাজম দ্বারা সংশ্লেষিত
iii. কোষ ঝিল্লীর অন্তঃত্বকের অতিরিক্ত স্তর
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) i ও ii (খ) i ও iii (গ) ii ও iii (ঘ) i, ii ও iii
৩। কোষ প্রাচীর অনুপস্থিত-
i. ব্যাকটেরিয়া কোষে ii. মাছে iii. জনন কোষে
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) i ও ii (খ) i ও iii (গ) ii ও iii (ঘ) i, ii ও iii

পাঠ-২.৩ (সাইটোপ্লাজম)

এ পাঠ শেষে তুমি-
  • সাইটোপ্লাজম সম্পর্কে বলতে পারবে।
  • সাইটোপ্লাজমের রাসায়নিক উপাদান ও প্রকৃতি উল্লেখ করতে পারবে।
  • সাইটোপ্লাজমের বিপাকীয় ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে পারবে।
  • সাইটোপ্লাজমে বিরাজমান অঙ্গাণুসমূহ চিহ্নিত করতে পারবে।
  • সাইটোপ্লাজমের কাজ সম্পর্কে বলতে পারবে।


সাইটোপ্লাজম : (গ্রিক শব্দ Cytos = কোষ এবং  (Plasma) = সংগঠন)নিউক্লিয়াসের বাইরে অবস্থিত এবং কোষ ঝিল্লী দিয়ে পরিবেষ্টিত প্রোটোপ্লাজমীয় অংশই হলো সাইটোপ্লাজম। এটি জেলির ন্যায় অর্ধতরল হওয়ায় এবং প্রাণের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী বিভিন্ন ধরনের অঙ্গাণু ও উপাদান ধারণ করায় একে বাংলাতে কোষের প্রাণপঙ্ক বলা হয়। সাইটোপ্লাজম এবং এর মধ্যস্থ বিভিন্ন প্রকার সজীব ও নির্জীব বস্তুর প্রকৃতি অনুসারে সাইটোপ্লাজমকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- (ক) সাইটোপ্লাজমীয় মাতৃকা (Matrix) বা হায়ালোপ্লাজম, (খ) সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণুসমূহ এবং (গ) নির্জীব বা জড়বস্তু।

(ক) সাইটোপ্লাজমীয় মাতৃকা : এটি সাইটোপ্লাজমের ভিত্তি পদার্থ। মাতৃকা একটি অর্ধতরল, দানাদার, অর্ধস্বচ্ছ, সমধর্মী, কলয়ডাল পদার্থ। একে হায়ালোপ্লাজমও বলে। বর্তমানে একে সাইটোসল বলা হয়। এতে অজৈব এবং জৈব এ দু’ধরনের দ্রব্য বিরাজ করে। মাতৃকায় অপেক্ষাকৃত ঘন ও কম দানাদার বহিঃস্থ ঘন অঞ্চলকে এক্টোপ্লাজম (Endoplasm) বলে এবং কেন্দ্রস্থ অপেক্ষাকৃত কম ঘন অঞ্চলকে এন্ডোপ্লাজম (Endoplasm) বলে। সাইটোপ্লাজমের আপেক্ষিক গুরুত্ব পানি অপেক্ষা বেশি।

(খ) সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণুসমূহ : সাইটোপ্লাজমে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গাণু বিরাজ করে। এগুলো হলো- প্লাস্টিড, মাইটোকন্ড্রিয়া, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম, রাইবোসোম, গলগি বডি, লাইসোসোম, সেন্ট্রোসোম, গ্লাইঅক্রিসোম, মাইক্রোটিউবিউলস ইত্যাদি ক্ষুদ্রাঙ্গ এবং উদ্ভিদ কোষের ক্ষেত্রে বৃহৎ কোষ গহবর।
(গ) নির্জীব বা জড় বস্তু : কোষের সাইটোপ্লাজমে সাধারণত তিন ধরনের নির্জীব বস্তু বিদ্যমান থাকে। যথা- সঞ্চিত বস্তু, নিঃসৃত পদার্থ ও বর্জ্য পদার্থ।
সাইটোপ্লাজমের রাসায়নিক উপাদান ও প্রকৃতি : সাইটোপ্লাজমের রাসায়নিক উপাদানকে অজৈব এবং জৈব এ দু’শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। অজৈব দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে পানি, খনিজ লবণ, আয়ন, পানিতে দ্রবীভূত গ্যাস প্রভৃতি এবং জৈব দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে শর্করা, জৈব অ্যাসিড, লিপিড, প্রোটিন, হরমোন, ভিটামিন, রঞ্জক পদার্থ। পানির পরিমাণ কোষভেদে ৬৫- ৯৬%।

সাইটোপ্লাজমের বিপাকীয় ভূমিকা : যে কোনো জীবদেহে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের বিপাকীয় ক্রিয়া বিক্রিয়া চলে যার অধিকাংশই সাইটোপ্লাজম নির্ভর। বিপাকীয় ক্রিয়াগুলোর কতক সাইটোপ্লাজমে সংঘটিত হয় এবং কতক সাইটোপ্লামজের অঙ্গাণুগুলোতে সংঘটিত হয়। জীবের জন্য সবচেয়ে বড় শারীরবৃত্তীয় কাজ হলো শ্বসন। শ্বসনের প্রথম পর্যায় সংঘটিত হয়।কোষের সাইটোপ্লাজমে। এছাড়া সাইটোপ্লাজম হলো বিভিন্ন এনজাইমের আধার। আবার সকল জৈবিক ক্রিয়া বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে বিভিন্ন ধরনের এনজাইম। কাজেই পরোক্ষভাবে জীবের সকল বিপাকীয় কাজের নিয়ন্ত্রকও সাইটোপ্লাজম।

সাইটোপ্লাজমের কাজ : সাইটোপ্লাজমের কাজগুলো হলো
১। কোষের আকার বজায় রাখতে সহায়তা করে।
২। বিভিন্ন ক্ষুদ্রাঙ্গ ধারণ করে, কতিপয় জৈবিক কাজ করে।
৩। কোষের অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব নিয়ন্ত্রণ করে।
৪। রেচন প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনে সাহায্য করে।
৫। উত্তেজনায় সাড়া দিয়ে জীবিয় বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে।
৬। পানি পরিশোষণে সাহায্য করে।
৭। আবর্তনের মাধ্যমে অঙ্গাণুসমূহকে নড়াচড়ায় সহায়তা করে।

সারসংক্ষেপ

নিউক্লিয়াসের বাইরে অবস্থিত এবং কোষ ঝিল্লী দিয়ে পরিবেষ্টিত প্রোটোপ্লাজমীয় অংশই হলো সাইটোপ্লাজম। এটি জেলির ন্যায় অর্ধতরল হওয়ায় এবং প্রাণের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী বিভিন্ন ধরনের অঙ্গাণু ও উপাদান ধারণ করায় একে বাংলাতে কোষের প্রাণপঙ্ক বলা হয়। সাইটোপ্লাজম এবং এর মধ্যস্থ বিভিন্ন প্রকার সজীব ও নির্জীব বস্তুর প্রকৃতি অনুসারে সাইটোপ্লাজমকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- (ক) সাইটোপ্লাজমীয় মাতৃকা (Matrix) বা হায়ালোপ্লাজম, খ) সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণুসমূহ এবং (গ) নির্জীব বা জড়বস্তু। মাতৃকায় অপেক্ষাকৃত ঘন ও কম দানাদার বহিঃস্থ শক্ত অঞ্চলকে এক্টোপ্লাজম বলে এবং কেন্দ্রঃস্থ অপেক্ষাকৃত কম ঘন অঞ্চলকে এন্ডোপ্লাজম বলে। সাইটোপ্লাজমের আপেক্ষিক গুরুত্ব পানি অপেক্ষা বেশি।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১। সাইটেপ্লাজমের তরল অংশকে কী বলে ?
(ক) সাইটোপ্লাজমীয় মাতৃকা (খ) মাইসেলিয়াম
(গ) মেসোসোম (ঘ) মাইক্রোবিলাস
২। সাইটোপ্লাজমের অংশ নয় i. কোষ প্রাচীর ii. নিউক্লিয়াস iii. মাইটোকন্ড্রিয়া
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) i ও ii (খ) i ও iii (গ) ii ও iii (ঘ) i, ii ও iii


পাঠ-২.৪(রাইবোসোম, গলগি বডি, লাইসোসোম এবং সেন্ট্রিয়োল)

এ পাঠ শেষে তুমি-
  • রাইবোসোম এর অবস্থান, গঠন ও কাজ বর্ণনা করতে পারবে।
  • গলগি বস্তুর অবস্থান, গঠন ও কাজ বর্ণনা করতে পারবে।
  • লাইসোসোম এর অবস্থান, গঠন, উৎপত্তি ও কাজ বর্ণনা করতে পারবে।
  • সেন্ট্রিয়োল এর অবস্থান, গঠন ও কাজ বর্ণনা করতে পারবে।

রাইবোসোম : এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এর উভয় দিকে অথবা নিউক্লিয়ার মেমব্রেন এর গায়ে, মাইটোকন্ড্রিয়া ও ক্লোরোপ্লাস্টের অভ্যন্তরে অথবা সাইটোপ্লাজমে মুক্তভাবে অবস্থিত গোলাকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানার মত অঙ্গাণুকে রাইবোসোম বলে। সাইটোপ্লাজমে একাধিক রাইবোসোম মুক্তার মালার মত অবস্থান করলে তাকে পলিরাইবোসোম বলে।
১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে রবিনসন ও ব্রাউন উদ্ভিদ কোষে এদের আবিষ্কার করেন। পরে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে জি. ই. প্যালাডে প্রাণী কোষে এদের দেখতে পান। প্রোক্যারিয়োটিক কোষে রাইবোসোম আদি ক্রোমোসোম (অর্থাৎ ডিঅক্রিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) থেকে উৎপন্ন হয় কিন্তু ইউক্যারিয়োটিক কোষে নিউক্লিয়োলাসে উৎপন্ন হয়।
গঠন : রাইবোসোমের ব্যাস ৯০-১৬০ A। এরা দু’টি অসমান উপ একক (Sub unit) দিয়ে গঠিত এবং গোলাকার। এদের রাসায়নিক উপাদান হচ্ছে শতকরা ৫০ ভাগ রাইবোনিউক্লিকঅ্যাসিড (RNA)এবং ৫০ ভাগ হিস্টোন জাতীয় প্রোটিন।
প্রকারভেদ : আকার ও সেডিমেন্টেশন সহগ (কো-এফিসিয়েন্ট) হিসেবে রাইবোসোম মূলত 70s এবং 80s এই দু’প্রকার। 70s রাইবোসোম, 50s এবং 30s এই দুই সাব ইউনিটে বিভক্ত থাকে। 80s রাইবোসোম, 60s এবং 40sঝ এই দুই সাব-ইউনিটে বিভক্ত থাকে। প্রোটিন সংশ্লেষণের সময় আদি কোষে 50s ও 30s
সাব-ইউনিট একত্রিত হয়ে 70s একক গঠন করে এবং প্রকৃত কোষে 60s এবং 40s সাব-ইউনিট একত্রিত হয়ে 80s একক গঠন করে।
কাজ
১। রাইবোসোম এর প্রধান কাজ হলো প্রোটিন সংশ্লেষণে সাহায্য করে।
২। এছাড়া স্নেহ জাতীয় পদার্থের বিপাক সাধন করে। 



দু’প্রকার রাইবোসোম

গলগি বডি : নিউক্লিয়াসের নিকটে অবস্থিত দু’স্তরবিশিষ্ট ঝিল্লী দিয়ে বেষ্টিত নালিকা, জালিকা, ফোস্কা, থলি ইত্যাদি আকৃতির সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণুকে গলগি বডি বলা হয়। ইতালীয় স্নায়ুতত্তবিদ ক্যামিলো গলগি (১৮৯৮) পেঁচা ও বিড়ালের মস্তিষ্কের কোষে গলগি বডি আবিষ্কার করেন এবং তাঁর নামানুসারেই এ ক্ষুদ্রাঙ্গের নাম রাখা হয়।
অবস্থান : গলগি বডি প্রাণী কোষের একটি অনন্য সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণু। উদ্ভিদ কোষে এরা সংখ্যায় কম থাকে। অধিকাংশ কোষে সাধারণত নিউক্লিয়াসের কাছাকাছি দলবদ্ধ অবস্থায় গলগি বডি দেখা যায়। নিন্মে শ্রেণির উদ্ভিদের সাইটোপ্লাজমে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় গলগি বডি বিদ্যমান থাকে।
গঠন : এর গঠনকে দু’ভাবে আলোচনা করা হয়। যথা- (ক) ভৌত গঠন এবং (খ) রাসায়নিক গঠন।
(ক) ভৌত গঠন- গলগি বডিতে তিন ধরনের উপাদান বিদ্যমান থাকে। যথা- সিস্টার্নি, ভ্যাকুওল ও ভেসিকল।
সিস্টার্নি- অসমান দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট ও সমান্তরালভাবে অবস্থিত লম্বা ও চ্যাপ্টা নালিকাসদৃশ বস্তুগুলো সিস্টার্নি নামে পরিচিত।
সম্ভবত মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা হতে সিস্টার্নির উৎপত্তি হয়।
ভ্যাকুওল- এগুলো সিস্টার্নির কাছে অবস্থিত গোলাকৃতির থলির ন্যায় অংশ। সিস্টার্নির প্রাচীর চওড়া হয়ে ভ্যাকুওলের সৃষ্টি করে।
ভেসিকল- সিস্টার্নির নিচের দিকে অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র থলির ন্যায় বস্তুগুলোকে ভেসিকল বলে।
(খ) রাসায়নিক গঠন- গলগি বডির ঝিল্লী লিপোপ্রোটিন দিয়ে গঠিত। লিপিডের মধ্যে রয়েছে প্রধানত লেসিথিন ও কেফালিন জাতীয় ফসফোলিপিড। এছাড়া এতে ক্যারোটিনয়েড, ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন সি প্রভৃতিও রয়েছে। গলগি বডি এনজাইমে পরিপূর্ণ থাকে। 

কাজ

১। গলগি বডি লাইসোসোম তৈরি করে।
২। এরা হরমোনসহ বিভিন্ন প্রকার বিপাকীয় দ্রব্য ক্ষরণ ও নিঃসরণ করে।
৩। এরা শুক্রাণু গঠনে সহায়তা করে।
৪। কোষ প্রাচীর ও প্লাজমা মেমব্রেন গঠনে সাহায্য করে।
৫। এরা প্রোটিন সঞ্চয় করে।
৬। মাইটোকন্ড্রিয়ায় এটিপি (ATP) সৃষ্টির জন্য দরকারী এনজাইম সৃষ্টি করে।


গলগি বডির বিভিন্ন উপাদান
লাইসোসোম (Lyso = হজমকারী ; Somo = বস্তু) : সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত কতগুলো হাইড্রোলাইটিক এনজাইম একটি পাতলা পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে। এদের লাইসোসোম বলে। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে দ্য দু'বে এদের আবিষ্কার করেন। কিছু স্লাইম মোল্ড, ছত্রাক, শৈবালসহ অধিকাংশ প্রাণী কোষে লাইসোসোম পাওয়া যায়। তবে বেশির ভাগ উদ্ভিদ কোষে লাইসোসোম অনুপস্থিত। সাধারণত দু’ধরনের লাইসোসোম পাওয়া যায়। যথা- ১। ডাইজেসটিভ গহবর এবং ২। রেসিডিউয়াল বস্তু।
গঠন : লাইসোসোম সাধারণত গোলাকার তবে অসমানও হতে পারে। এদের আকার অনিয়মিত এবং পরিবর্তনশীল। এদের আয়তন সাধারণত ০.২-০.৮ মাইক্রন। প্রতিটি লাইসোসোম লিপোপ্রোটিন নির্মিত আবরণ দিয়ে আবৃত থাকে। এর ভেতরে গাঢ়, দানাদার গহবরযুক্ত পদার্থ থাকে। এতে টিস্যু বিগলনকারী এনজাইম ছাড়াও প্রায় ৪০ ধরনের এনজাইম থাকে। একেকটি লাইসোসোম একেক ধরনের এনজাইমে সমৃদ্ধ।
উৎপত্তি : এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম থেকে লাইসোমের উৎপত্তি।

কাজ

১। ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় আক্রমণকারী জীবাণু ভক্ষণ।
২। তীব্র খাদ্যাভাব দেখা দিলে কোষস্থ উপাদান ও অঙ্গাণুকে বিগলিত করে ধ্বংস করে যাকে অটোফ্যাগি  (Autophagy) বলে।
৩। পর্যাপ্ত পরিমাণ এনজাইম থাকায় এরা প্রায় সব ধরনের জৈবিক বস্তু হজম করতে পারে।
৪। এরা জীবদেহের অকেজো কোষকে অটোলাইসিস (Autolysis) প্রক্রিয়ায় ধ্বংস করে। ফলে সম্পূর্ণ কোষটিই পরিপাক হয়ে যেতে পারে।
৫। বিভিন্ন ধরনের বস্তু নিঃসরণ করে।
৬। বিগলনকারী এনজাইমসমূহকে আবদ্ধ করে রেখে কোষের অন্যান্য ক্ষুদ্রাঙ্গকে রক্ষা করে।
৭। পরিপাক কাজে সাহায্য করে।



সেন্ট্রিয়োল : নিন্মে শ্রেণির উদ্ভিদে ও বহুকোষী প্রাণী কোষে নিউক্লিয়াসের কাছাকাছি দু’টি বেলনাকার অথবা দন্ডাকার স্বপ্রজননক্ষম অঙ্গাণু থাকে। এদের সেন্ট্রিয়োল বলে।
অবস্থান : শৈবাল, ছত্রাক, ব্রায়োফাইট, টেরিডোফাইট, জিমনোস্পার্ম প্রভৃতি এবং অধিকাংশ প্রাণীতে সেন্ট্রিয়োল পাওয়া যায়। প্রোক্যারিয়োটিক কোষ, ডায়াটম, ঈস্ট ও অ্যানজিওস্পার্মে এটি অনুপস্থিত। সাধারণত নিউক্লিয়াসের কাছাকাছি এটি অবস্থান করে। সংখ্যায় এক জোড়া।
সেন্ট্রিয়োলের গঠন :সেন্ট্রিয়োল নলাকৃতির, প্রায় ০.২৫ মাইক্রোমিটার ব্যাস সম্পন্ন ও ৩.৭ মাইক্রোমিটার লম্বা। এরা দেখতে বেলনাকার, দু’মুখ খোলা পিপার ন্যায়। প্রত্যেক
সেন্ট্রিয়োল প্রধানত তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। যথা- (ক) প্রাচীর বা সিলিন্ডার ওয়াল, (খ) ত্রয়ী অণুনালিকা বা ট্রিপলেটস এবং (গ) যোজক বা লিংকার। সেন্ট্রিয়োল প্রাচীর ৯টি ত্রয়ী অণুনালিকা দিয়ে গঠিত। প্রতিটি
অণুনালিকা সমদূরত্বে অবস্থিত এবং প্রত্যেকে তিনটি করে উপনালিকা নিয়ে গঠিত। পরস্পর সংলগ্ন তিনটি উপনালিকাকে যথাক্রমে A, B  এবং C নামে চিহ্নিত করা হয়। উপনালিকাগুলো পার্শ্ববর্তী অণুনালিকার সঙ্গে এক ধরনের ঘন তন্তুর সাহায্যে যুক্ত থাকে। সেন্ট্রিয়োলের চারপাশে অবস্থিত গাঢ় তরলকে সেন্ট্রোস্ফিয়ার এবং সেন্ট্রোস্ফিয়ারসহ সেন্ট্রিয়োলকে সেন্ট্রোসোম বলে।
রাসায়নিক উপাদান : সেন্ট্রিয়োল প্রধানত প্রোটিন, লিপিড ও ATP নিয়ে গঠিত।


কাজ

১। কোষ বিভাজনের সময় ক্রোমোসোমের প্রান্তীয় গমনে সহায়তা করে।
২। কোষ বিভাজন-এর সময় মাকুতন্তু (Astral ray) গঠন করে।
৩। কোষ বিভাজন-এর সময় মেরুনির্দেশ করে।
৪। সিলিয়া ও ফ্ল্যাজেলাযুক্ত কোষে সিলিয়া ও ফ্ল্যাজেলা সৃষ্টি করে।
৫। শুক্রাণুর লেজ গঠন করতে সহায়তা করে। 

সারসংক্ষেপ

এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের উভয় দিকে অথবা নিউক্লিয়ার মেমব্রেন এর গায়ে, মাইটোকন্ড্রিয়া ও ক্লোরোপ্লাষ্টের অভ্যন্তরে অথবা সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত গোলাকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানার মত অঙ্গাণুকে রাইবোসোম বলে। রাইবোসোম দুই প্রকার। যথা- (ক) 70S মানের যা আদি কোষে পাওয়া যায় এবং (খ) 80S মানের যা প্রকৃত কোষে পাওযা যায়। 1953 খ্রিস্টাব্দে রবিনসন ও ব্রাউন উদ্ভিদ কোষে এদের আবিষ্কার করেন। নিউক্লিয়াসের নিকটে অবস্থিত দু’স্তরবিশিষ্ট ঝিল্লী দিয়ে বেষ্টিত নালিকা, জালিকা, ফোস্কা, থলি ইত্যাদি আকৃতির সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণুকে গলগি বডি বলা হয়। ইতালীয় স্নায়ুতত্ত্ববিদ ক্যামিলো গলগি (1898) পেঁচা ও বিড়ালের মস্তিষ্কের কোষে গলগি বডি আবিষ্কার করেন। সাইটোপ্লাজমে
অবস্থিত কতগুলো হাইড্রোলাইটিক এনজাইম একটি পাতলা পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে। এদের লাইসোসোম বলে। 1955 খ্রিস্টাব্দে দ্য দু’বে এদের আবিষ্কার করেন। নিম্নে শ্রেণির উদ্ভিদে ও বহুকোষী প্রাণী কোষে নিউক্লিয়াসের কাছে দু’টি বেলনাকার অথবা দন্ডাকার অঙ্গাণু থাকে। এদের সেন্ট্রিয়োল বলে। সেন্ট্রিয়োল এর দৈর্ঘ্য প্রায় 1500A এবং বেধ 500A।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১। রাইবোসোম প্রথম কে আবিষ্কার করেন ?
(ক) বেন্দা ও ব্রাইন       (খ) স্লাইখার ও কলিখার
(গ) রবিনসন ও ব্রাউন    (ঘ) রবার্টসন ও ব্রদেন
২। লাইসোসোম 
i. অকেজো কোষকে ধ্বংস করে
ii. বিভিন্ন ধরনের বস্তু নিঃসরণ করে
iii. পরিপাক কাজে সাহায্য করে
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) i ও ii (খ) i ও iii (গ) ii ও iii (ঘ) i, ii ও iii
৩। নিচের কোনগুলো সেন্ট্রিয়োল এর কাজর. শুক্রাণু
i. লেজ গঠনে সহায়তা করে 
ii. কোষ বিভাজন এর সময় মেরুনির্দেশ করে
iii. কোষ বিভাজনের সময় মাকুতন্তু গঠন করে
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) i ও ii (খ) i ও iii (গ) ii ও iii (ঘ) i, ii ও iii

পাঠ-২.৫ (মসৃণ ও অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমকি রটেকিুলাম)

এ পাঠ শেষে তুমি-
  •  এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের উৎপত্তি ও বিস্তৃতি বলতে পারবে।
  • গঠনগতভাবে এবং কাজের ভিত্তিতে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের প্রকারভেদ উল্লেখ করতে পারবে।
  • এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের গঠন বর্ণনা করতে পারবে।
  • গঠন ও কাজের ভিত্তিতে মসৃণ ও অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এর মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করতে পারবে।
  •  এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের কাজ উল্লেখ করতে পারবে।


এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম : পরিণত কোষের সাইটোপ্লাজমে যে জালিকা বিন্যাস দেখা যায় তাকে
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম বা অন্তঃপ্লাজমীয় জালিকা বলা হয়। পোর্টার এবং তাঁর সঙ্গীরা (1945) সর্বপ্রথম যকৃত কোষে এটি আবিষ্কার করেন। সাইটোপ্লাজমীয়োঝিল্লী, নিউক্লিয়োঝিল্লী অথবা কোষ ঝিল্লী হতে এদের উৎপত্তি। অধিকাংশ কোষে এ অঙ্গাণু পাওয়া যায়। তবে যকৃত, অগ্ন্যাশয় এবং অন্তঃকলা কোষে বেশি থাকে।
প্রকারভেদ : মূলত গঠন ও কাজের ভিত্তিতে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামকে ভাগ করা হয়। (ক) গঠনগতভাবে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম তিন প্রকার। যথা- সিস্টার্নি, ভেসিকল এবং টিউবিউল।
সিস্টার্নি : এরা লম্বা, চ্যাপ্টা, অশাখান্বিত, নলের ন্যায় এবং মোটামুটি সমান্তরালভাবে বিন্যস্ত। এদের ব্যাস সাধারণত 40-50 মিলিমাইক্রন।
ভেসিকল্স : এরা গোলাকার বা ডিম্বাকার এবং সাইটোপ্লাজমে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো থাকে।। সাধারণত 25-50 মিলিমাইক্রন ব্যাসবিশিষ্ট।
টিউবিউল : এরা নলাকার এবং শাখা-প্রশাখাযুক্ত। এরা 30-100 মিলিমাইক্রন ব্যাসবিশিষ্ট।
(খ) কাজের ভিত্তিতে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম দু’প্রকার। যথা- মসৃণ এবং অমসৃণ। এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের গায়ে রাইবোসোম থাকলে তাকে অমসৃণ এবং রাইবোসোম না থাকলে তাকে মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম বলা হয়। অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম প্রোটিন সংশ্লেষণ ও পরিবহনে সাহায্য করে। 

বিভিন্ন প্রকার এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম (ক) ত্রিমাত্রিক গঠন, (খ) সিস্টার্নি, (গ) ভেসিকল এবং (ঘ) টিউবিউল :
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের গঠন : নিউক্লিয়ো ঝিল্লী হতে কোষ ঝিল্লী পর্যন্ত এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের বিস্তৃতি এটি দিস্তরবিশিষ্ট আংশিক অনুপ্রবেশ্য ঝিল্লী দ্বারা আবৃত ফাঁকা স্থান বিশেষ। এরা সাধারণত শাখান্বিত তবে সমান্তরালভাবেও অবস্থান করতে পারে। রাসায়নিকভাবে লিপিড ও প্রোটিন দ্বারা এ ঝিল্লী গঠিত। অমসৃণ রেটিকুলামে আরএনএ এবং গাইঅক্রিসম নামক ক্ষুদ্রাকার কণা থাকতে পারে। অমসৃণ রেটিকুলামের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিচ্ছিন্ন অংশকে মাইক্রোসোম বলে।
গঠন ও কাজের ভিত্তিতে মসৃণ ও অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এর মধ্যে পার্থক্য : গঠন এবং কাজে দু’প্রকার এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ছকের মাধ্যমে পার্থক্যগুলো তুলে ধরা হলো-


এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের কাজ
১। এটি প্রোটোপ্লাজমের কাঠামো হিসেবে কাজ করে প্রোটোপ্লাজমকে দৃঢ়তা প্রদান করে।
২। অমসৃণ রেটিকুলাম প্রোটিন সংশ্লেষণে সহায়তা করে।
৩। মসৃণ রেটিকুলামে লিপিড, গ্লাইকোজেন, হরমোন ইত্যাদি সংশ্লেষিত হয়।
৪। এনজাইম বিক্রিয়ার ক্ষেত্র বিস্তৃত করে।
৫। নালিকার অভ্যন্তরে বিভিন্ন ক্ষরিত বস্তু সঞ্চিত থাকে।
৬। নালিকার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন পদার্থ কোষের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সঞ্চালিত হয়।
৭। লিপিড ও প্রোটিনের অন্তঃবাহক হিসেবে কাজ করে।
৮। কোষ প্রাচীরের জন্য সেলুলোজ তৈরি করে।

সারসংক্ষেপ

পরিণত কোষে সাইটোপ্লাজমে যে জালিকা বিন্যাস দেখা যায় তাকে এন্ডাপ্লাজমিক রেটিকুলাম বা অন্তঃপ্লাজমীয় জালিকা বলা হয়। পোর্টার এবং তাঁর সঙ্গীরা ১৯৪৫ সালে সর্বপ্রথম যকৃত কোষে এটি আবিষ্কার করেন। সাইটোপ্লাজমীয়োঝিল্লী, নিউক্লিয়োঝিল্লী অথবা কোষ ঝিল্লী হতে এদের উৎপত্তি। অধিকাংশ কোষে এ অঙ্গাণু পাওয়া যায়। তবে যকৃত, অগ্ন্যাশয় এবং অন্তঃকলা কোষে বেশি থাকে। গঠনগতভাবে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম তিন প্রকার। যথা- সিস্টার্নি, ভেসিকল এবং টিউবিউল। কাজের ভিত্তিতে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম দু’প্রকার। যথা- মসৃণ এবং অমসৃণ। রেটিকুলামের গায়ে
রাইবোসোম থাকলে তাকে অমসৃণ এবং রাইবোসোম না থাকলে তাকে মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম বলা হয়।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১। এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম কোন কোষে সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত হয় ?
(ক) যকৃত কোষে (খ) পেশি কোষে (গ) হৃদপিন্ড কোষে (ঘ) স্নায়ু কোষে
২। এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের সিস্টার্নি-
i. লম্বা, চ্যাপ্টা 
ii. সাধারণত ৪০-৫০ মিলি মাইক্রন ব্যাসবিশিষ্ট
iii. সাইটোপ্লাজমে সমান্তরালভাবে বিন্যস্ত থাকে
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) i ও ii (খ) i ও iii (গ) ii ও iii (ঘ) i, ii ও iii
৩। এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম
i. কোষ প্রাচীরের জন্য সেলুলোজ তৈরি করে 
ii. এনজাইম বিক্রিয়ার ক্ষেত্র বিস্তৃত করে
iii. প্রোটোপ্লাজমকে দৃঢ়তা প্রদান করে
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) i ও ii (খ) i ও iii (গ) ii ও iii (ঘ) i, ii ও iii

পাঠ-২.৬( মাইটোকন্ড্রিয়া )

এ পাঠ শেষে তুমি-
  • মাইটোকন্ড্রিয়ার গঠন বর্ণনা করতে পারবে।
  • মাইটোকন্ড্রিয়ার রাসায়নিক উপাদান বর্ণনা করতে পারবে।
  • মাইটোকন্ড্রিয়ার কাজ উল্লেখ করতে পারবে।
  • মাইটোকন্ড্রিয়ার গঠনের সাথে এর কাজের আন্তঃসম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে পারবে।


মাইটোকন্ড্রিয়া : মাইটোকন্ড্রিয়া হলো প্রকৃত জীবকোষের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গাণু। কোষের যাবতীয় জৈবনিক কাজের শক্তি সরবরাহ থাকে। তাই মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোষের পাওয়ার হাউস বা শক্তি ঘর বলা হয়। এতে ক্রেবস চক্র, ফ্যাটি অ্যাসিড চক্র, ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম ইত্যাদি সংঘটিত হয়। কলিকার (1850) সাইটোপ্লাজমে এসব অঙ্গাণু আবিষ্কার করেন। অল্টম্যান (1898) মাইটোকন্ড্রিয়ার উপস্থিতি আবিষ্কার করেন। বেন্ডা (1898) মাইটোকন্ড্রিয়ার নামকরণ করেন। বিভাজনের মাধ্যমে এদের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে। কোষে একটিমাত্র মাইটোকন্ড্রিয়া থাকলে তা কোষ বিভাজনের সাথেই বিভাজিত হয়।
সংখ্যা : প্রজাতি ও প্রকারভেদে প্রতি কোষে মাইটোকন্ড্রিয়া এক হতে বহু সংখ্যক হতে পারে। সাধারণত প্রতি কোষে 300-400 মাইটোকন্ড্রিয়া থাকে। তবে যকৃত কোষ 1000 বা ততোধিক থাকে। অ্যামিবাতে আরও বেশি থাকে। আয়তন : আকারভেদে মাইটোকন্ড্রিয়ার আয়তন বিভিন্ন রকম হয়। বৃত্তাকার মাইটোকন্ড্রিয়ার ব্যাস 0.2 থেকে 2.0 মাইক্রোমিটার। সূত্রাকার মাইটোকন্ড্রিয়া 40 মাইক্রোমিটার থেকে 70 মাইক্রোমিটার ও দন্ডাকার মাইটোকন্ড্রিয়ার দৈর্ঘ্য 9 মাইক্রোমিটার ও প্রস্থ 0.5 মাইক্রোমিটার হতে পারে।
মাইটোকন্ড্রিয়ার গঠন : মাইটোকন্ড্রিয়া নিম্ন লিখিত অংশ নিয়ে গঠিত-
(i) ঝিল্লী- প্রতিটি মাইটোকন্ড্রিয়া দু’স্তরবিশিষ্ট ঝিল্লী দিয়ে আবৃত থাকে। এদেরকে বহিঃঝিল্লী ও অন্তঃঝিল্লী বলে। দু’ঝিল্লীর মধ্যে ব্যবধান 6-8nm ।
(ii) প্রকোষ্ঠ- দুটি ঝিল্লীর মাঝখানে অবস্থানকৃত প্রকোষ্ঠকে বহিঃপ্রকোষ্ঠ বলে যা কোএনজাইম-এ (Coenzyme A) সমৃদ্ধ তরল পদার্থ দিয়ে পূর্ণ থাকে। অন্তঃঝিল্লীবেষ্টিত ভেতরের গহবরকে অন্তঃপ্রকোষ্ঠ বলে যাতে দানাদার বস্তু সমন্বিত তরল পদার্থের ধাত্র (Matrix) বিদ্যমান।
(iii) ক্রিস্টি- বাইরের ঝিল্লীটি সোজা কিন্তু ভেতরের ঝিল্লীটি নির্দিষ্ট ব্যবধানে ভেতরের দিকে ভাঁজ হয়ে আঙ্গুলের ন্যায় প্রবর্ধক বা ক্রিস্টি সৃষ্টি করে। এগুলো মাইটোকন্ড্রিয়ার ধাত্রকে কতকগুলো অসম্পূর্ণ প্রকোষ্ঠে বিভক্ত করে। ক্রিস্টির ভেতরকার গহবরকে অন্তঃক্রিস্টি গহবর বলে যা বহিঃপ্রকোষ্ঠের সাথে যুক্ত।
(iv)  ATP সিন্থেসেস ও ETS- ক্রিস্টিতে স্থানে স্থানে  ATP সিন্থেসেস নামক গোলাকার বস্তু থাকে। এতে  ATP সংশ্লেষিত হয়। এছাড়া সমস্ত ক্রিস্টিব্যাপী অনেক ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম অবস্থিত। আগে এদেরকে এক সাথে অক্রিসোম (Oxysome) হিসেবে অভিহিত করা হত।
(v) মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ- মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ একটি বৃত্তাকার দ্বিসূত্রক অণু। স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের জন্য একে মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ বলে।

(vi) রাইবোসোম- মাইটোকন্ড্রিয়াতে এনজাইম সংশ্লেষণের জন্য রাইবোসোম পাওয়া যায়। এ রাইবোসোম প্রকৃতকোষী অপেক্ষা অপ্রকৃতকোষী রাইবোসোমের (70s) সাথে তুলনীয়।
রাসায়নিক উপাদান : মাইটোকন্ড্রিয়ার শুষ্ক ওজনের প্রায় ৬৫% প্রোটিন, ২৯% গিসারাইড, ৪% কোলেস্টেরল থাকে। লিপিডের মধ্যে ৯০% হলো ফসফোলিপিড, বাকি ১০% ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যারোটিনয়েড, ভিটামিন ই এবং কিছু অজৈব পদার্থ। মাইটোকন্ড্রিয়ার ঝিল্লী লিপোপ্রোটিনসমৃদ্ধ। মাইটোকন্ড্রিয়াতে প্রায় ১০০ প্রকারের এনজাইম ও কো-এনজাইম থাকে। 

মাইটোকন্ড্রিয়ার গঠন




মাইটোকন্ড্রিয়ার কাজ
১। কোষের যাবতীয় জৈবিক কাজের জন্য শক্তি উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণ করে।
২। শ্বসনের জন্য বিভিন্ন ধরনের এনজাইম ও কোএনজাইম ধারণ করে।
৩। শ্বসন এর বিভিন্ন পর্যায় যেমন- ক্রেবস চক্র, ইলেকট্রন পরিবহন, অক্সিডেটিভ ফসফোরাইলেশন ইত্যাদি এখানে সম্পন্ন হয়।
৪। কিছু পরিমাণ  DNA ও RNA উৎপন্ন করে।
৫। 5| ADP কে ATP তে রূপান্তর করার মাধ্যমে ATP তে শক্তি সঞ্চয় করে রাখতে সহায়তা করে।
৬।  স্নেহ বিপাকে অংশ গ্রহণ করে।



মাইটোকন্ড্রিয়ার গঠনের সাথে এর কাজের আন্তঃসম্পর্ক : মাইটোকন্ড্রিয়ার বাইরের মেমব্রেনটি মূলত রক্ষণাত্বক ভূমিকা পালন করে। ভেতরের অংশকে রক্ষা করাই এর প্রধান কাজ। শক্তি উৎপাদনের কাজটি সম্পন্ন হয় ভেতরের মেমব্রেন দ্বারা সৃষ্ট ক্রিস্টিতে। ক্রিস্টিতে ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমের সব উপাদান সজ্জিত থাকে এবং এখানেই শক্তি উৎপন্ন হয়।
কাজেই মাইটোকন্ড্রিয়ার বহিঃগঠন রক্ষণাত্বক এবং অন্তঃগঠন কর্মধায়ক। বহিঃগঠন কর্মধায়ক অংশের কাঁচামাল ও উৎপন্ন দ্রব্য আদান প্রদান নিয়ন্ত্রণ করে।


সারসংক্ষেপ


মাইটোকন্ড্রিয়া হলো প্রকৃত জীবকোষের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গাণু। কোষের যাবতীয় জৈবনিক কাজের শক্তি সরবরাহ করে এটি। তাই একে কোষের পাওয়ার হাউস বা শক্তি ঘর বলা হয়। এতে ক্রেবস চক্র, ফ্যাটি অ্যাসিড চক্র, ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম ইত্যাদি সংঘটিত হয়। কলিকার ১৮৫০ সালে সাইটোপ্লাজমে এসব অঙ্গাণু আবিষ্কার করেন।
অল্টম্যান ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে মাইটোকন্ড্রিয়ার উপস্থিতি আবিষ্কার করেন। বেন্ডা ১৮৯৮ সালে মাইটোকন্ড্রিয়ার নামকরণ করেন।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১। মাইটোকন্ড্রিয়া কে আবিষ্কার করেন ?
(ক) কলিকার (খ) বেন্ডা (গ) কলিখার (ঘ) রবিনসন
চিত্রটি লক্ষ করুন এবং ২, ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দিন-
















২। উল্লিখিত চিত্রটি কিসের ?
(ক) মাইটোকন্ড্রিয়ার (খ) ক্লোরোপ্লাস্টের (গ) নিউক্লিয়াসের (ঘ) সেন্ট্রিয়োলের
৩। অঙ্গাণুটিতে প্রোটিনের পরিমাণ কত ?
(ক) ৬৫% (খ) ৬০% (গ) ৬১% (ঘ) ৬২%
৪। জীব কোষে অঙ্গাণুটি -
i. এটিপি সংশ্লেষণ করে ii. প্রোটিন সংশ্লেষণ করে iii. এনজাইম সরবরাহ করে
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) i ও ii (খ) i ও iii 
(গ) ii ও iii (ঘ) i, ii ও iii

পাঠ-২.৭(ক্লোরোপ্লাস্ট )

এ পাঠ শেষে তুমি-
  • ক্লোরোপ্লাস্টের উৎপত্তি ও আকার বলতে পারবে।
  • ক্লোরোপ্লাস্টের গঠন বর্ণনা করতে পারবে।
  • ক্লোরোপ্লাস্টের রাসায়নিক উপাদান ব্যাখ্যা করতে পারবে।
  • ক্লোরোপ্লাস্টের কাজ উল্লেখ করতে পারবে।
  • ক্লোরোপ্লাস্টের গঠনের সাথে এর কাজের আন্তঃসম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে পারবে।



ক্লোরোপ্লাস্ট : সবুজ বর্ণের প্লাস্টিডকে বলা হয় ক্লোরোপ্লাস্ট। উদ্ভিদের জন্য ক্লোরোপ্লাস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গাণু। শিম্পার ১৮৮৩ সালে সর্বপ্রথম উদ্ভিদ কোষে সবুজ বর্ণের প্লাস্টিড লক্ষ করেন এবং নাম দেন ক্লোরোপ্লাস্ট।
উৎপত্তি : নিম্নে শ্রেণির উদ্ভিদে পুরানো ক্লোরোপ্লাস্ট বিভাজনের মাধ্যমে নতুন ক্লোরোপ্লাস্ট এর সৃষ্টি হয়। উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদে আদি প্লাস্টিড থেকে এদের উৎপত্তি হয়। আদি প্লাস্টিড ০.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসবিশিষ্ট একটি গোলাকার বস্তু। প্রতিটি আদি প্লাস্টিডে ঘন স্ট্রোমা একটি দু’স্তরবিশিষ্ট পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে। সূর্যালোকের উপস্থিতিতে ক্লোরোফিল সৃষ্টি হওয়াতে আদি প্লাস্টিড ক্লোরোপ্লাস্টে পরিণত হতে থাকে।
প্রতি কোষে সংখ্যা : প্রতি কোষে এদের সংখ্যা এক বা একাধিক। উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদে প্রতি কোষে ১০-৪০টি ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে।
আকার : উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদ কোষে ক্লোরোপ্লাস্ট সাধারণত লেন্সের ন্যায় যা ৩-৫ মাইক্রোমিটার ব্যাস
বিশিষ্ট। নিম্নে শ্রেণির উদ্ভিদে বিভিন্ন আকারের (যেমন- পেয়ালাকার, সর্পিলাকার, জালিকাকার, তারকাকার, আংটি আকার হয়) ক্লোরোপ্লাস্ট পাওয়া যায়।




ক্লোরোপ্লাস্টের গঠন : ক্লোরোপ্লাস্ট এর গঠন বেশ জটিল। এটি সাধারণত নিম্নে লিখিত অংশগুলো নিয়ে গঠিত- চিত্র ২.৭ : ক্লোরোপ্লাস্ট -এর গঠন
(i) আবরণী (গবসনৎধহব)- প্রতিটি ক্লোরোপ্লাস্ট লিপোপ্রোটিন দিয়ে গঠিত একটি দ্বিস্তরবিশিষ্ট বৈষম্যভেদ্য পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে। গঠনের দিক থেকে পর্দাটি প্লাজমা মেমব্রেনের ন্যায়। পর্দাটি ক্লোরোপ্লাস্টের অভ্যন্তরস্থ বস্তুসমূহকে রক্ষা করে এবং ক্লোরোপ্লাস্টের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন বস্তুর যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করে।
(ii) স্ট্রোমা (Stroma)- পর্দা বেষ্টিত ক্লোরোপ্লাস্টের ভেতরে অবস্থিত স্বচ্ছ, দানাদার, অসবুজ, সমসত্ত¡ অর্ধতরল পদার্থটি হচ্ছে স্ট্রোমা। লিপোপ্রোটিন ও কিছু এনজাইম এর সমন্বয়ে স্ট্রোমা গঠিত। স্ট্রোমা গ্রানার ধাত্র বা মাতৃকা হিসেবে কাজ করে।
(iii) থাইলাকয়েড ও গ্রানাম ( Thylakoid and Granum)- থাইলাকয়েড থলে আকৃতির। স্ট্রোমাতে অসংখ্য থাইলাকয়েড থাকে। প্রতিটি থাইলাকয়েড দু’স্তরবিশিষ্ট ঝিল্লী দিয়ে আবৃত থাকে। কতকগুলো থাইলাকয়েড বা গ্রানাম চক্রে এক সাথে একটির উপর আরেকটি স্তুপের ন্যায় থাকে। থাইলাকয়েডের এ স্তুপকে গ্রানাম (বহুবচনে গ্রানা) বলে। প্রতিটি ক্লোরোপ্লাস্টে সাধারণতঃ ৪০-৬০টি গ্রানা থাকে।
(iv) স্ট্রোমা ল্যামেলি (Stroma lamellae) : দু’টি পাশাপাশি গ্রানার কিছু সংখ্যক থাইলাকয়েড বা গ্রানাম চক্র সূক্ষ নালিকা দিয়ে যুক্ত থাকে। এগুলোকে স্ট্রোমা ল্যামেলি (এক বচনে স্ট্রোমা ল্যামেলাম) বলে।
(v) সালোকসংশ্লেষণকারী একক ও ATP synthases : থাইলাকয়েড ঝিল্লী অসংখ্য গোলাকার বস্তু বহন করে। এদেরকে ATP synthases বলে। এতে ATP তৈরির সব ধরনের এনজাইম থাকে। ঝিল্লীতে সালোকসংশ্লেষণকারী উপাদান বিদ্যমান থাকে। প্রতি ইউনিটে ক্লোরোফিল-ধ, ক্লোরোফিল-ন, ক্যারোটিন, জ্যান্থোফিলের প্রায় ৩০০-৪০০ অণু বিদ্যমান।
এছাড়াও এতে ফসফোলিপিড, সালফোলিপিড, কুইনোন এবং বিভিন্ন ধরনের এনজাইম প্রভৃতি থাকে।
(vi) ক্লোরোপ্লাস্ট ডিএনএ ও রাইবোসোম : এতে 70s মানের আদি কোষীয় রাইবোসোম বিদ্যমান থাকে। এরা ক্লোরোপ্লাস্টের দরকারী এনজাইম সংশ্লেষণ করে। ক্লোরোপ্লাস্টের রাসায়নিক উপাদান : রাসায়নিকভাবে লিপিড (ক্লোরোপ্লাস্টের শুষ্ক ওজনের ১০-২০%), প্রোটিন, ক্লোরোফিল, ক্যারোটিনয়েড, ডিএনএ, আরএনএ, কিছু এনজাইম ও কোএনজাইম এবং খনিজ পদার্থ নিয়ে ক্লোরোপ্লাস্ট গঠিত।
ক্লোরোপ্লাস্টের কাজ
১। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাইঅক্সাইড ও পানির সাহায্যে শর্করা প্রস্তুত করা ক্লোরোপ্লাস্টের প্রধান কাজ।
২। ক্লোরোপ্লাস্টের প্রয়োজনে প্রোটিন ও নিউক্লিক অ্যাসিড তৈরি করে।
৩। সূর্যালোকের সাহায্যে ADP কে ATP তে (ফটোফসফোরাইলেশন) এবং NADP  কে NADPH 2  তে রূপান্তরিত করে।
৪। এনজাইম এর সাহায্যে প্রোটিন ও স্নেহ জাতীয় খাদ্য তৈরি করে।
৫। ফটোরেসপিরেশন ঘটায়।
৬। সাইটোপ্লাজমিক বংশগতি ধারায় সহায়তা করে।
ক্লোরোপ্লাস্টের গঠনের সাথে এর কাজের আন্তঃসম্পর্ক : ক্লোরোপ্লাস্ট দ্বিস্তরবিশিষ্ট আবরণী দ্বারা আবৃত একটি অঙ্গাণু। আবরণটি রক্ষণাত্বক কাজ করে। ভেতরে স্ট্রোমা, থাইলাকয়েড, সালোকসংশ্লেষণকারী এককসমূহ মিলিতভাবে শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করে। ক্লোরোপ্লাস্টের অন্তঃগঠন কর্মধায়ক এবং উৎপাদক। বহিঃগঠন রক্ষণাত্বক এবং অভ্যন্তরে কাঁচামাল পাঠানো এবং অভ্যন্তর থেকে উৎপাদিত দ্রব্য বাইরে পাঠানো নিয়ন্ত্রণ করে।

সারসংক্ষেপ

সবুজ বর্ণের প্লাস্টিডকে বলা হয় ক্লোরোপ্লাস্ট। শিম্পার ১৮৮৩ সালে সর্বপ্রথম উদ্ভিদ কোষে সবুজ বর্ণের প্লাস্টিড লক্ষ করেন এবং নাম দেন ক্লোরোপ্লাস্ট। উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদে প্রতি কোষে ১০-৪০টি ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে। এটি সাধারণত আবরণী বা মেমব্রেন, স্ট্রোমা, গ্রানা, সালোকসংশ্লেষণকারী একক ও ATP synthases এবং ক্লোরোপ্লাস্ট ডিএনএ ও রাইবোসোম নিয়ে গঠিত।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১। ক্লোরোপ্লাস্ট কে নামকরণ করেন ?
(ক) শিম্পার (খ) রবিনসন (গ) বেন্ডা (ঘ) কলিকার
২। সালোকসংশ্লেষণ কোথায় ঘটে ?
(ক) ক্লোরোপ্লাস্টে (খ) লাইসোসোমে (গ) মাইটোকন্ড্রিয়ায় (ঘ) প্লাস্টিডে
৩। ক্লোরোপ্লাস্টের
i. মধ্যে ৫০-৬০টি গ্রানা থাকে ii. আকৃতি পেয়ালা, সর্পিলাকার, জালিকার ন্যায় iii. ব্যাস ৩-৫ মাইক্রন
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) i ও ii (খ) i ও iii (গ) ii ও iii (ঘ) i, ii ও iii

পাঠ ২.৮-( নিউক্লিয়াস )

এ পাঠ শেষে তুমি-
  • নিউক্লিয়াসের সংখ্যা ও বিস্তৃতি, আকৃতি, অবস্থান, আকার ও আয়তন বলতে পারবে।
  • নিউক্লিয়াসের গঠন বর্ণনা করতে পারবে।
  • নিউক্লিয়াসের বিভিন্ন অংশের কাজ উল্লেখ করতে পারবে।

নিউক্লিয়াস : একটি উদ্ভিদ কোষের সজীব প্রোটোপ্লাজমের অত্যন্ত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এবং অপরিহার্য অংশ হচ্ছে নিউক্লিয়াস। অল্প সংখ্যক কোষ ছাড়া প্রায় সকল জীবিত কোষেই নিউক্লিয়াস থাকে। আদি কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস না থাকলেও নিউক্লিয়োপদার্থ থাকে। রবার্ট ব্রাউন (Robert Brown) ১৮৩১ সালে অর্কিডের পাতার কোষে নিউক্লিয়াস আবিষ্কার ও নামকরণ করেন। প্রকৃত কোষের প্রোটোপ্লাজম এর সবচেয়ে স্পষ্ট, ঘন, অস্বচ্ছ সজীব অঙ্গাণুটি হচ্ছে নিউক্লিয়াস।
সংখ্যা ও বিস্তৃতি : প্রতি কোষে সাধারণত একটি নিউক্লিয়াস থাকে। আদি কোষে কোন সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে না। কিছু সংখ্যক প্রকৃত কোষ যেমন সিভ কোষ, মানুষের লোহিত রক্ত কণিকা ইত্যাদিতে পরিণত অবস্থায় নিউক্লিয়াস থাকে না।কোন কোন শৈবাল এবং ছত্রাকের কোষে বহুসংখ্যক নিউক্লিয়াস থাকে। যেমন Vaucheria, Mucor ইত্যাদি।
আকৃতি : নিউক্লিয়াস সাধারণত গোলাকার বা উপবৃত্তাকার হয়। তবে কোন কোন সময় এরা লম্বা, মুগুরাকৃতি, অর্ধচন্দ্রাকৃতি, মূলাকৃতি, চাকতি সদৃশ অথবা শাখান্বিত হতে পারে।
অবস্থান : নিউক্লিয়াস সাধারণত কোষের কেন্দ্রস্থলে থাকে কিন্তু পরিণত উদ্ভিদ কোষে কোষ গহবর বড় হলে নিউক্লিয়াস কোষ গহবরের এক পাশে অবস্থান করে। আকার ও আয়তন : নিউক্লিয়াস এর আয়তন বিভিন্ন কোষে বিভিন্ন রকম হতে পারে। এর ব্যাস সাধারণত এক মাইক্রোমিটার বা তার চেয়েও কম। সাধারণত এটি একটি কোষের আয়তনের ১০-১৫% স্থান দখল করে থাকে। শুক্রাণু এর প্রায় ৯০% ই নিউক্লিয়াস।
কাজ : নিউক্লিয়াস কোষের সব ধরনের কার্য কলাপের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। এটি বংশগত বৈশিষ্ট্যসমূহের ধারক অর্থাৎ নিউক্লিয়াসের মাধ্যমে মাতাপিতার জন্মগত বৈশিষ্ট্যাবলী সন্তানদের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়। প্রকৃতপক্ষে নিউক্লিয়াস এর ভেতরে যে ক্রোমোসোম থাকে তারাই বংশগত বৈশিষ্ট্যসমূহের ধারক ও বাহক।



নিউক্লিয়াসের গঠন

রাসায়নিক গঠন- নিউক্লিয়াস প্রধানতঃ নিউক্লিক অ্যাসিড ও প্রোটিন দিয়ে গঠিত। এতে ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিকঅ্যাসিড (DNA), সামান্য পরিমাণ রাইবোনিউক্লিকঅ্যাসিড
(জঘঅ), হিস্টোন ও প্রোটামিন জাতীয় প্রোটিন, কিছু পরিমাণ কোএনজাইম, কোফ্যাকটর, অ্যাসিটাইল-ঈড়অ ও অন্যান্য উপাদান থাকে।
 নিউক্লিয়াসের ভৌত গঠন- নিউক্লিয়াস ভৌতভাবে চারটি অংশ নিয়ে গঠিত। যথা- (ক) নিউক্লিয়ার এনভেলাপ, (খ) নিউক্লিয়োপ্লাজম (গ) নিউক্লিয়োলাস এবং (ঘ) নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম (ক্রোমাটিন তন্তু)। কোষ বিভাজনের সময় ইন্টারফেজ অবস্থায় নিউক্লিয়াসকে সঠিকভাবে আবদ্ধ ও রং করলে উল্লিখিত সবগুলো অংশ দেখা যায়। নিচে এদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো-
১। নিউক্লিয়ার এনভেলাপ- যে সজীব ও স্বচ্ছ পর্দা দিয়ে নিউক্লিয়াস আবৃত এবং সাইটোপ্লাজম থেকে পৃথক থাকে তাকে নিউক্লিয়ার এনভেলাপ বলে। এ পর্দা দু’স্তরবিশিষ্ট। প্রতিটি স্তর প্রায় 90A পুরুএবং স্তর দুটির মাঝখানের পুরুত্ব প্রায় 100- 150A। উপরের স্তরটি অসংখ্য ছিদ্রযুক্ত এবং নিচের স্তরটি ছিদ্রবিহীন। ছিদ্রগুলোকে নিউক্লিয়ার রন্ধ্র বলে। প্রতিটি রন্ধ্রের অভ্যন্তরে আটটি বৃত্তাকার ছোট ছোট কণা অবস্থিত। এসব কণার উপস্থিতির কারণে রন্ধ্রগুলো সংকুচিত ও প্রসারিত হতে পারে। রাসায়নিকভাবে এনভেলাপটি প্রোটিন ও লিপিড দিয়ে গঠিত।
কাজ : এটি নিউক্লিয়াসকে সাইটোপ্লাজম হতে বিচ্ছিন্ন রাখে, নিউক্লিয়ার বস্তুকে সংরক্ষণ করে, এর ছিদ্রের মাধ্যমে নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমের মধ্যে যোগাযোগ ও বিভিন্ন পদার্থের আদান প্রদান নিয়ন্ত্রিত হয় এবং আন্তঃপ্লাজমীয় জালিকার সাথে নিউক্লিয়াসকে সংযুক্ত রাখে।

২। নিউক্লিয়োপ্লাজম- নিউক্লিয়াসের ভেতরে নিউক্লিয়ার এনভেলাপ দিয়ে আবৃত স্বচ্ছ, ঘন, দানাদার ও জেলীর ন্যায় অর্ধতরল পদার্থই হচ্ছে নিউক্লিয়োপ্লাজম। নিউক্লিয়োপ্লাজম প্রোটিন জাতীয় পদার্থ দিয়ে তৈরি। এছাড়াও এখানে বিভিন্ন ধরনের এনজাইম ও খনিজ লবণ থাকে।
কাজ : এটি নিউক্লিয়োলাস ও ক্রোমোসোম ধারণ করে এবং নিউক্লিয়াসের সকল জৈবিক কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।
৩। নিউক্লিয়োলাস- নিউক্লিয়াস এর ভেতরে অবস্থিত ক্ষুদ্র, অপেক্ষাকৃত ঘন, গোলাকার বস্তুটি হচ্ছে নিউক্লিয়োলাস। ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী ফন্টানা (Fontana)) এটি সর্বপ্রথম আবিষ্কার করলেও ১৮৪০ সালে এর নামকরণ করেন বাউম্যান (Bowman)। নিউক্লিয়োলাসের আকার কোষের কর্মক্ষমতার উপর নির্ভর করে। সাধারণত প্রত্যেক কোষে একটি নিউক্লিয়োলাস থাকে তবে প্রজাতি ভেদে এর সংখ্যা দু’ বা এর বেশিও হতে পারে। যে সব কোষ অধিক মাত্রায় প্রোটিন সংশ্লেষ করে সে সব কোষে নিউক্লিয়োলাস বড় এবং একাধিক হয়। নিউক্লিয়োলাস নির্দিষ্ট ক্রোমোসোমের নির্দিষ্ট অংশে সংযুক্ত থাকে। ক্রোমোসোমের যে স্থানটিতে এটি লাগানো থাকে সে স্থানটিকে স্যাটেলাইট (Satellite বা SAT) বলে।
নিউক্লিয়োলাস বহনকারী ক্রোমোসোমটিকে SAT- ক্রোমোসোম বলে। কোষ বিভাজনের মেটাফেজ দশায় নিউক্লিয়োলাস অদৃশ্য হয় এবং বিভাজন শেষে প্রতিটি অপত্য নিউক্লিয়াসে নিউক্লিয়োলাসের আবির্ভাব ঘটে। নিউক্লিয়োলাসকে সাধারণত তন্তুময়, দানাদার এবং ম্যাট্রিক্স এ তিন অংশে ভাগ করা যায়। নিউক্লিয়োলাসের প্রধান রাসায়নিক উপাদান প্রোটিন, RNA এবং সামান্য DNA, এছাড়াও বিভিন্ন এনজাইম, সামান্য লিপিড ও বিভিন্ন প্রকার খনিজ লবণ থাকে।
কাজ : নিউক্লিয়োলাস নিউক্লিক অ্যাসিড এর ভান্ডার হিসেবে কাজ করে, রাইবোসোম প্রস্তুত করে, প্রোটিন ও RNA সংশ্লেষ করে এবং জিন হতে নির্দিষ্ট বার্তা গ্রহণ করে সাইটোপ্লাজমে প্রেরণ করতে সাহায্য করে।
৪। নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম বা ক্রোমাটিন তন্তু- নিউক্লিয়োপ্লাজমে ভাসমান অবস্থায় সরু, লম্বা ও প্যাচানো সূতার ন্যায় যে জালিকা দেখা যায় তাকে নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম, ক্রোমাটিন তন্তু বা ক্রোমোসোম বলে। কোষ বিভাজন এর সময় এ জালিকার প্রতিটি সূত্রক পৃথক হয়ে নির্দিষ্ট আকৃতি ধারণ করে এবং সূক্ষ এ সূত্রকই হচ্ছে ক্রোমোসোম। বিশেষ রঞ্জক পদ্ধতি ব্যবহার করলে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে বিভাজনরত কোষে ক্রোমোসোম দেখা যায়। এ ক্রোমোসোমই নিউক্লিয়াসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কারণ এটি জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্যাবলী ধারণ করে। প্রত্যেক কোষের নিউক্লিয়াসে
প্রজাতি ভেদে নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রোমোসোম থাকে।

সারসংক্ষেপ

একটি উদ্ভিদ কোষের সজীব প্রোটোপ্লাজমের অত্যন্ত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এবং অপরিহার্য অংশ হচ্ছে নিউক্লিয়াস। অল্প সংখ্যক কোষ ছাড়া প্রায় সকল জীবিত কোষেই নিউক্লিয়াস থাকে। আদি কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস না থাকলেও নিউক্লিয়োপদার্থ থাকে। রবার্ট ব্রাউন ((Robert Brown) ১৮৩১ সালে অর্কিডের পাতার কোষে নিউক্লিয়াস আবিষ্কার ও নামকরণ করেন। প্রকৃত কোষের প্রোটোপ্লাজম এর সবচেয়ে স্পষ্ট, ঘন, অস্বচ্ছ সজীব অঙ্গাণুটি হচ্ছে নিউক্লিয়াস। নিউক্লিয়াস ভৌতভাবে
চারটি অংশ নিয়ে গঠিত। যথা- (ক) নিউক্লিয়ার এনভেলাপ, (খ) নিউক্লিয়োপ্লাজম (গ) নিউক্লিয়োলাস এবং (ঘ) নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম। কোষ বিভাজনের সময় ইন্টারফেজ অবস্থায় নিউক্লিয়াসকে সঠিকভাবে আবদ্ধ ও রং করলে উল্লিখিত সবগুলো অংশ দেখা যায়।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১। নিউক্লিয়োপর্দা কয় স্তরবিশিষ্ট ?
(ক) ১ (খ) ২ (গ) ৩ (ঘ) ৪
২। ক্রোমাটিন
i. বংশগতির বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করে
ii. মিউটেশন সৃষ্টিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে
iii. প্রকরণ সৃষ্টিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) i ও ii (খ) i ও iii (গ) ii ও iii (ঘ) i, ii ও iii

পাঠ-২.৯(জীবের বিভিন্ন কার্যক্রমে কোষের অবদান )

এ পাঠ শেষে তুমি-
  • জীবের বিভিন্ন কার্যক্রমে কোষের অবদান উল্লেখ করতে পারবে।

জীবের বিভিন্ন কার্যক্রমে কোষের অবদান : জীবের বিভিন্ন কার্যক্রমে কোষ তথা কোষের বিভিন্ন অঙ্গাণুসমূহ উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। নিচে এর কয়েকটি উল্লেখ করা হলো-
(ক) খাদ্য প্রস্তুতিতে- কোষে অবস্থিত ক্লোরোফিল তথা ক্লোরোপ্লাস্ট আলোক শক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরের ২মাধ্যমে সমগ্র জীবকূলের জন্য সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য প্রস্তুত করে থাকে।
(খ) শ্বসনে- কোষস্থ মাইটোকন্ড্রিয়া শ্বসন প্রক্রিয়ায় কোষস্থ খাদ্যদ্রব্যকে (যেমন- গ্লুকোজ) ভেঙ্গে জীবের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি নির্গত করে।
(গ) খাদ্য সঞ্চয়ে- সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় প্রস্তুতকৃত খাদ্যকে ব্যবহারের পর অতিরিক্ত খাদ্যদ্রব্য উদ্ভিদ কোষের অভ্যন্তরে সাইটোপ্লাজমে স্টার্চরূেেপ সঞ্চিত হয়।
(ঘ) প্রোটিন সংশ্লেষণে- কোষে অবস্থিত DNA এর সংকেত অনুযায়ী প্রোটিন সংশ্লেষণে রাইবোসোম বিশেষ ভূমিকা রাখে।
(ঙ) দৈহিক বৃদ্ধিতে- কোষ মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়ে জীবের দৈহিক বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এখানে নিউক্লিয়াস মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
(চ) জনন কোষ সৃষ্টিতে- মায়োসিস প্রক্রিয়ায় কোষ বিভাজনের মাধ্যমে যৌন জননক্ষম জীবে জননকোষ সৃষ্টিতে নিউক্লিয়াস প্রধান ভূমিকা পালন করে।
(ছ) DNA সংশ্লেষণে- কোষ বিভাজনের সময় কোষে বিদ্যমান DNA সংশ্লেষণে কোষ অবদান রাখে।
(জ) জিন নিয়ন্ত্রণে- DNA তে অবস্থিত জিনসমূহকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জীবের বৈশিষ্ট্যসমূহকে নিয়ন্ত্রণে কোষ কাজ করে।
(ঝ) কোষ বিভাজনে- কোষের সামগ্রিক বিভাজন প্রক্রিয়া অর্থাৎ মাইটোসিস ও মায়োসিসের প্রক্রিয়াসমূহ কোষই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
(ঞ) রাসায়নিক বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে- কোষ তথা জীবের অভ্যন্তরে যাবতীয় রাসায়নিক কার্যাবলীসমূহ কোষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
(ট) জৈবনিক কার্যাবলী- জীবের সকল জৈবনিক কার্যাবলীও কোষ কর্তৃকই নিয়ন্ত্রিত হয়।
(ঠ) সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় পরিবহনে- কোষের প্লাজমা মেমব্রেন কোষের ভেতরে ও বাইরে উপাদানসমূহের পরিবহনে ও চলনে ভূমিকা রাখে (যেমন- অভিশ্রবণ, সক্রিয় পরিবহন)।
(ড) অটোফ্যাগিতে- জীবে তীব্র খাদ্যাভাব দেখা দিলে কোষস্থ উপাদান ও অঙ্গাণুকে বিগলিত করে অটোফ্যাগী প্রক্রিয়া ধ্বংস করার মাধ্যমে জীবকে টিকে থাকতে সহায়তা করে লাইসোসোম।
(ঢ) ফ্যাগোসাইটোসিসে- কোষে আক্রমণকারী জীবাণুকে লাইসোসোম ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় ধ্বংস করে।
(ণ) অটোলাইসিসে- জীবদেহের অকেজো কোষকে অটোলাইসিস বা স্ববিগলন প্রক্রিয়ায়ও লাইসোসোম ধ্বংস করে।

সারসংক্ষেপ

জীবের বিভিন্ন কার্যক্রমে কোষ যে সব ক্ষেত্রে অবদান রাখে তা হলো- (ক) খাদ্য প্রস্তুতিতে, (খ) শ্বসনে, (গ) খাদ্য সঞ্চয়ে, (ঘ) প্রোটিন সংশ্লেষণে, (ঙ) দৈহিক বৃদ্ধিতে, (চ) জনন কোষ সৃষ্টিতে, (ছ) DNA সংশ্লেষণে, (জ) জিন নিয়ন্ত্রণে, (ঝ) কোষ বিভাজনে, (ঞ) রাসায়নিক বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে, (ট) জৈবনিক কার্যাবলী, (ঠ) সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় পরিবহনে, (ড) অটোফ্যাগিতে, (ঢ) ফ্যাগোসাইটোসিসে, (ণ) অটোলাইসিসে।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১। জীবের সকল জৈবিক কার্যক্রম কোষের কোনটি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় ?
(ক) নিউক্লিয়াস (খ) ক্লোরোপ্লাস্ট (গ) লাইসোসোম (ঘ) এনজাইম

পাঠ-২.১০(ক্রোমোসোম)

এ পাঠ শেষে তুমি-
  • ক্রোমোসোমের আবিষ্কার, আকৃতি ও অবস্থান বলতে পারবে।
  • ক্রোমোসোমের গঠন বর্ণনা করতে পারবে।
  • ক্রোমোসোমের প্রকারভেদ উল্লেখ করতে পারবে।
  • ক্রোমোসোমের রাসায়নিক উপাদান উল্লেখ করতে পারবে।
  • ক্রোমোসোমের কাজ উল্লেখ করতে পারবে।
  • কোষ বিভাজনে ক্রোমোসোমের ভূমিকা বিশ্লেষণ করতে পারবে।




ক্রোমোসোম : ক্রোমোসোম নিউক্লিয়াসের অন্যতম প্রধান বস্তু। প্রত্যেক নিউক্লিয়াসে প্রজাতির বৈশিষ্ট্যানুসারে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রোমোসোম থাকে। আদি কোষে কোন সুগঠিত নিউক্লিয়াস না থাকাতে তাতে কোন সুগঠিত ক্রোমোসোম থাকে না। তবে এদের কোষে বিশেষ ধরনের নিউক্লিয়ো দ্রব্য প্রো-ক্রোমোসোম বা আদি ক্রোমোসোম মুক্ত অবস্থায় বিদ্যমান থাকে। বিশেষ রঞ্জক ব্যবহার করে আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্রে বিভাজনরত কোষে ক্রোমোসোম দেখা যায়। তাই বলা যায় কোষস্থ নিউক্লিয়াসের মধ্যে অবস্থিত অনুলিপন ক্ষমতাসম্পন্ন, রং ধারণকারী নিউক্লিয়োপ্রোটিন দ্বারা গঠিত যে সব সূত্রাকৃতির ক্ষুদ্রাঙ্গ বংশগতীয় উপাদান, মিউটেশন, প্রকরণ প্রভৃতি কাজে ভূমিকা রাখে
তাকে ক্রোমোসোম বলা হয়।

আবিষ্কার : ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে স্ট্রাসবুর্গার (Strasburger) ক্রোমোসোম আবিষ্কার করেন তবে তিনি এর নামকরণ করেননি। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে ওয়ালডেয়ার (Waldeyer) ‘ক্রোমোসোম’ (Chroma রং, Some-ধারণ) শব্দটি ব্যবহার করেন। সংখ্যা : প্রজাতির বৈশিষ্ট্যভেদে ক্রোমোসোমের সংখ্যা ২ থেকে ১৬০০ পর্যন্ত হয়। পুষ্পক উদ্ভিদে সর্বনিম্ন সংখ্যক
ক্রোমোসোম পাওয়া গেছে Happlopappus gracilis, 2n = 4  এবং সর্বাধিক সংখ্যক Poa littarosa, 2n = 506-530 প্রাণীতে সর্বনিম্ন Ascaris megalocephala, 2n = 2 এবং  Olacantha sp., 2n = 1600|
আয়তন ও আকৃতি : প্রতিটি ক্রোমোসোমের একটি সুনির্দিষ্ট আয়তন থাকে। প্রজাতি অনুসারে ক্রোমোসোমের দৈর্ঘ্য সাধারণত ০.২৫-৫০ মাইক্রোমিটার এবং ব্যাস ০.২-২.০ মাইক্রোমিটার হয়। মানবদেহের ক্রোমোসোমের গড় দৈর্ঘ্য ৪-৬ মাইক্রোমিটার হয়।
অবস্থান : নিউক্লিয়াসে থাকে। কখনও কখনও নিউক্লিয়াসের বাইরে সাইটোপ্লাজমেও থাকতে পারে।
ভৌত গঠন : কোষ বিভাজনের মেটাফেজ পর্যায়ে ক্রোমোসোম অত্যন্ত সুগঠিত থাকে। যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দৃষ্ট একটি আদর্শ ক্রোমোসোমের প্রধান অংশগুলো সংক্ষেপে নিচে বর্ণনা করা হলো-
(ক) ক্রোমাটিড- মেটাফেজ দশায় ক্রোমোসোম লম্বালম্বিভাবে দুটি সুতার ন্যায় অংশে বিভক্ত থাকে যাকে ক্রোমাটিড বলে। ক্রোমাটিডদ্বয় সেন্ট্রোমিয়ার দ্বারা সংযুক্ত থাকে।
(খ) সেন্ট্রোমিয়ার- সেন্ট্রোমিয়ার ক্রোমোসোমের অবিচ্ছেদ্য অংশ যা ক্রোমাটিড দুটিকে সংযুক্ত রাখে। সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থানটি ক্রোমোসোমে একটি খাঁজের সৃষ্টি করে। এ খাঁজকে মুখ্য কুঞ্চন বলে।
(খ) কাইনেটোকোর- সেন্ট্রোমিয়ারের মধ্যে বহির্মূখী বিপরীত দিকে অবস্থিত গোলাকার বস্তুই কাইনেটোকোর। কোষ বিভাজনের সময় কোষের বিপরীত মেরুথেকে আগত স্পিন্ডল তন্তু এসে কাইনেটোকোরের সাথে সংযুক্ত হয়।
 (গ) বাহু- মুখ্য কুঞ্চনের উভয় দিকের লম্বা অংশদ্বয়কে ক্রোমোসোমের বাহু বলে। বাহু দুটি দৈর্ঘ্যে সমান বা অসমান হতে পারে।
 (ঘ) গৌন কুঞ্চন- সেন্ট্রোমিয়ার ছাড়া কোন কোন ক্রোমোসোমের বাহুতে এক বা একাধিক গৌন কুঞ্চন থাকতে পারে।
(ঙ) ক্রোমোমিয়ার- মায়োটিক কোষ বিভাজনের প্রোফেজ দশায় ক্রোমাটিডের গায়ে ছোট ছোট গুটিকার ন্যায় যে বস্তু দেখা যায় তাকে ক্রোমোমিয়ার বলা হয়।
 (চ) পেলিকল- ক্রোমোসোমের দেহ একটি পর্দা দ্বারা আবৃত বলে ধারণা করা হয়। একে পেলিকল বলে।
 (ছ) ধাত্র বা ম্যাট্রিক্স- পেলিকল দ্বারা আবৃত তরল অংশকে ধাত্র বা ম্যাট্রিক্র বলে। তবে ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ম্যাট্রিক্র ও পেলিকলের অস্তিত্ব দেখা যায়নি বলে আধুনিক কোষ বিজ্ঞানীগণ ক্রোমোসোমে এগুলোর উপস্থিতি অস্বীকার করেন।
(জ) স্যাটেলাইট- গৌন কুঞ্চনের পর ক্রোমোসোমের খুব ছোট গোলাকার
অংশকে স্যাটেলাইট বলে। ইহা ক্রোমোসোমের প্রান্তের দিকে থাকে।
(ঝ) টেলোমিয়ার- প্রখ্যাত বিজ্ঞানী এইচ.জে.মুলার ((H.J.Muller) ক্রোমোসোমের প্রান্তদেশে টেলোমিয়ার নামক একটি বিন্দুর অবস্থান কল্পনা করেন। তিনি ধারণা করেন টেলোমিয়ারের অবস্থানের কারণে ক্রোমোসোমের দুটি প্রান্ত পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হতে পারে না। টেলোমিয়ার একটি ক্রোমোসোমের অখন্ডতা রক্ষা করে।
ক্রোমোসোমের প্রকারভেদ : বৈশিষ্ট্যানুসারে কোন কোষের ক্রোমোসোম মূলতঃ দু’প্রকার। যথা- অটোসোম (দৈহিক সকল বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে) এবং সেক্র ক্রোমোসোম (লিঙ্গ নির্ধারণ করে)। এছাড়া ক্রোমোসোমে সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে ক্রোমোসোমকে নিম্নোক্তভাবে ভাগ করা যায়।
মধ্যকেন্দ্রিক: (Metacentric)- যে সকল ক্রোমোসোমের সেন্ট্রোমিয়ারটি মাঝখানে অবস্থিত তাকে মধ্যকেন্দ্রিক ক্রোমোসোম বলে। কোষ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশায় মধ্যকেন্দ্রিক ক্রোমোসোমকে ইংরেজি V অক্ষরের মত দেখায়। মধ্যকেন্দ্রিক ক্রোমোসোমের বাহু দুটির দৈর্ঘ্য মোটামুটি পরস্পর সমান থাকে।
উপমধ্যকেন্দ্রিক (Sub-metacentric)- যে সব ক্রোমোসোমের সেন্ট্রোমিয়ারটি ঠিক মধ্যখানে না থেকে সামান্য দূরে এক পাশে থাকে তাদেরকে উপমধ্যকেন্দ্রিক ক্রোমোসোম বলে। কোষ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশায় উপমধ্যকেন্দ্রিক ক্রোমোসোমকে ইংরেজি L অক্ষরের মত দেখায়। উপমধ্যকেন্দ্রিক ক্রোমোসোমের একটি বাহু অন্যটি থেকে সামান্য বড়।
উপপ্রান্তকেন্দ্রিক (Acrocentric)- যে সকল ক্রোমোসোমের সেন্ট্রোমিয়ারটি কোন এক প্রান্তের কাছাকাছি অবস্থিত থাকে তাকে উপপ্রান্তকেন্দ্রিক ক্রোমোসোম বলে। কোষ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশায় উপপ্রান্তকেন্দ্রিক ক্রোমোসোমকে ইংরেজি J অক্ষরের মত দেখায়। এ সকল ক্রোমোসোমের এক
বাহু অনেক লম্বা এবং অপর বাহু বেশ খাটো।
প্রান্তকেন্দ্রিক (Telocentric)- যে সব ক্রোমোসোমের সেন্ট্রোমিয়ারটি একেবারে প্রান্তে থাকে তাকে প্রান্তকেন্দ্রিক ক্রোমোসোম বলে। কোষ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশায় প্রান্তকেন্দ্রিক ক্রোমোসোমকে ইংরেজি I অক্ষরের মত দেখায়। এ ধরনের ক্রোমোসোম একবাহুবিশিষ্ট।
ক্রোমোসোমের গঠন
বিভিন্ন আকৃতির
ক্রোমোসোম (ধ) মধ্যকেন্দ্রিক,
(A) উপমধ্যকেন্দ্রিক, (B)
উপপ্রান্তকেন্দ্রিক এবং (C) প্রান্ত
কেন্দ্রিক


ক্রোমোসোমের রাসায়নিক উপাদান : ক্রোমোসোমের প্রধান রাসায়নিক উপাদান হলো- (ক) নিউক্লিক অ্যাসিড ও (খ) প্রোটিন।
(ক) নিউক্লিক অ্যাসিড- ক্রোমোসোমে দু’ধরনের নিউক্লিক অ্যাসিড পাওয়া যায়। যথা- DNA এবং RNA।
বি.দ্র. : পরের পাঠগুলোতে নিউক্লিক অ্যাসিড সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
(খ) প্রোটিন : প্রোটিন হলো ক্রোমোসোমের মূল কাঠামো গঠনকারী রাসায়নিক উপাদান। এ কাঠামোতে নিউক্লিক অ্যাসিডগুলো বিন্যস্ত থাকে। ক্রোমোসোমে প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা 55  ভাগ। ক্রোমোসোমে দু’ধরনের প্রোটিন পাওয়া যায়। যথা- হিস্টোন ও নন হিস্টোন।
 উল্লিখিত উপাদান ছাড়াও ক্রোমোসোমে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, লিপিড, আয়রন, এনজাইম এবং অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান খুব অল্প পরিমাণে থাকে।

ক্রোমোসোমের কাজ
১। ক্রোমোসোম বংশগতির বৈশিষ্ট্যসমূহের ধারক ও বাহক। এ কারণে এরা বংশ পরম্পরায় জীবের বৈশিষ্ট্য ধারণ, বহন ও স্থানান্তর করে।
২। বিভক্তির মাধ্যমে কোষ বিভাজনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে।
৩। সেক্র ক্রোমোসোম জীবের লিঙ্গ নির্ধারণে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৪। ক্রোমোসোমে অবস্থিত বংশগতির বাহক জিন, জীবের ব্লু -প্রিন্ট হিসেবে কাজ করে।
কোষ বিভাজনে ক্রোমোসোমের ভূমিকা : কোষ বিভাজনে ক্রোমোসোম বিশেষ ভূমিকা পালন করে। নিচে কয়েকটি ভূমিকা উল্লেখ করা হলো
১। কোষ বিভাজনের মুখ্য বস্তু ক্রোমোসোম তাই ক্রোমোসোমকে বাদ দিয়ে কোষ বিভাজন অসম্ভব।
২। কোষস্থ ক্রোমোসোমের মধ্যে অবস্থিত জিন বা ডিএনএ কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধাপের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত সংকেত বহন করে।
৩। ক্রোমোসোমে অবস্থিত ডিএনএ অনুলিপনের মাধ্যমে কোষ বিভাজনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয় অর্থাৎ ক্রোমোসোম অনুলিপিত না হলে কোষ বিভাজন আরম্ভ হবে না।
৪। কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় কোষস্থ ক্রোমোসোমের অনুলিপন, দ্বিতন, বিভাজন ও মেরুকরণ সবই আবশ্যকীয় বিষয় যা ক্রোমোসোমবিহীন কোষে অসম্ভব।
৫। কোষ বিভাজনকালে ক্রোমোসোমের বণ্টন যদি নীতিমালা বহির্ভূত হয় তবে কোষের বৈশিষ্ট্য ও অস্তিত্বে বিরূপ প্রভাব পড়ে। কাজেই বলা যায়, কোষ বিভাজনে ক্রোমোসোমের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে।

সারসংক্ষেপ

ক্রোমোসোম নিউক্লিয়াসের অন্যতম প্রধান বস্তু। প্রত্যেক নিউক্লিয়াসে প্রজাতির বৈশিষ্ট্যানুসারে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রোমোসোম থাকে। আদি কোষে কোন সুগঠিত নিউক্লিয়াস না থাকাতে তাতে কোন সুগঠিত ক্রোমোসোম থাকে না। তবে ক্রোমোসোমের প্রধান উপাদান ডিএনএ (কতক ভাইরাসে আরএনএ) বিদ্যমান থাকে। এদেরকে আদি ক্রোমোসোম বলে। বিশেষ রঞ্জক ব্যবহার করে আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্রে বিভাজনরত কোষে ক্রোমোসোম দেখা যায়।
 তাই বলা যায় কোষস্থ নিউক্লিয়াসের মধ্যে অবস্থিত অনুলিপন ক্ষমতাসম্পন্ন, রং ধারণকারী নিউক্লিয়োপ্রোটিন দ্বারা গঠিত যে সব সূত্রাকৃতির ক্ষুদ্রাঙ্গ বংশগতীয় উপাদান, মিউটেশন, প্রকরণ প্রভৃতি কাজে ভূমিকা রাখে তাকে ক্রোমোসোম বলা ।হয়। ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে স্ট্রাসবুর্গার (Strasburger) ক্রোমোসোম আবিষ্কার করেন তবে তিনি এর নামকরণ করেননি। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে ওয়ালডেয়ার ‘ক্রোমোসোম’ শব্দটি ব্যবহার করেন। 
প্রজাতি অনুসারে ক্রোমোসোমের দৈর্ঘ্য সাধারণত ০.২৫-৫০ মাইক্রোমিটার এবং ব্যাস ০.২-২.০ মাইক্রোমিটার হয়। মানবদেহের ক্রোমোসোমের গড় দৈর্ঘ্য ৪-৬ মাইক্রোমিটার হয়। যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রে একটি আদর্শ ক্রোমোসোমে যে সব অংশ দেখা যায় তা হলো- ক্রোমাটিড, সেন্ট্রোমিয়ার, বাহু, গৌন কুঞ্চন, ক্রোমোমিয়ার, পেলিকল, ধাত্র বা ম্যাট্রিক্র, স্যাটেলাইট এবং টেলোমিয়ার। সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুযায়ী ক্রোমোসোম চার প্রকারের। যথা- মধ্যকেন্দ্রিক, উপমধ্যকেন্দ্রিক, উপপ্রান্তকেন্দ্রিক এবং প্রান্তকেন্দ্রিক।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১। ক্রোমোসোম নামকরণ করেন কে ?
(ক) স্ট্রাসবুর্গার (খ) ওয়ালডেয়ার (গ) রবিনসন (ঘ) স্ট্রাসবার্গার
২। মাইটোসিস কোষ বিভাজনে
i মেটাফেজ দশায় ক্রোমোসোমর. সবচেয়ে খাটো ও মোটা থাকে 
ii. সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট থাকে
iii. ফিতা বা দন্ডের ন্যায় দেখায়
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) i ও ii (খ) i ও iii (গ) ii ও iii (ঘ) i, ii ও iii
৩। মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোসোম
i. অ্যানাফেজ পর্যায়ে ঠ এর ন্যায় দেখায় 
ii. মাঝখানে সেন্ট্রোমিয়ার ধারণ করে
iii. টেলোফেজ পর্যায়ে ঠ এর ন্যায় দেখায়
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) i ও ii (খ) i ও iii (গ) ii ও iii (ঘ) i, ii ও iii

পাঠ-২.১১  ডিএনএ ও আরএনএ-এর গঠন ও কাজ 

এ পাঠ শেষে তুমি-
  • ডিএনএ এর গঠন বর্ণনা করতে পারবে।
  • আরএনএ এর গঠন ব্যাখ্যা করতে পারবে।
  • ডিএনএ এবং আরএনএ এর কাজ উল্লেখ করতে পারবে।
ডএনএ ( (DNA)) : ডিঅক্রিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড এর সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ডিএনএ। ডিএনএ এর গাঠনিক একক নিউক্লিয়োটাইড। এটি একটি বৃহদাণুর জৈব অ্যাসিড যা জীবনের আণবিক ভিত্তি। প্রকৃত কোষের ক্রোমোসোমের মূল উপাদান ডিএনএ। কতক ভাইরাসে ডিএনএ থাকে। এটি সাধারণত সূত্রাকার কিন্তু আদি কোষ, মাইটোকন্ড্রিয়া ও ক্লোরোপ্লাস্টে এর আকার বৃত্তের ন্যায়। স্বপ্রজননশীল, পরিব্যক্তিক্ষম, সকল প্রকার জৈবিক কার্যের নিয়ন্ত্রক এবং বংশগত বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক, যা সজীব কোষে অবস্থিত থাকে তাকে  (DNA) বলে।
ডিএনএ-এর ভৌত গঠন :
 J.D. Watson Ges Francis H.C. Crick ডিএনএ অণুর গঠনের যে ডাবল হেলিক্র মডেল প্রস্তাব
করেন তা সর্বাধুনিক এবং সঠিক মডেল হিসেবে সর্বজন গৃহীত ও স্বীকৃত। M.F.H Wilkins রঞ্জক রশ্মির
মাধ্যমে ডিএনএ ডাবল হেলিক্র মডেল প্রমাণ করেন। এর জন্য তিন জন বিজ্ঞানী ১৯৬৩ সালে নোবেল পুরস্কার পান।Watson-Crick প্রদত্ত ডাবল হেলিক্র অনুযায়ী ডিএনএ অণুর গঠন বৈশিষ্ট্য নিম্ন রূপ-
১।DNA দ্বিসূত্রক, বিন্যাস ঘুরানো সিড়ির ন্যায়।
২। সিড়ির দু’দিকের ফ্রেম তৈরি হয় স্যুগার ও ফসফেটের পর্যায়ক্রমিক (Alternate) সংযুক্তির মাধ্যমে।

ডিএনএ-এর কাজ

১। ক্রোমোসোমের গাঠনিক উপাদান হিসেবে কাজ করে।
২। বংশগতির আণবিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
৩। জীবের সকল বৈশিষ্ট্য ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করে।
৪। জীবের বৈশিষ্ট্যসমূহ বংশপরম্পরায় অধঃস্তন প্রজন্মে স্থানান্তর
করে।
৫। জীবের সকল শারীরতাত্তি¡ক ও জৈবিক কাজ কর্মের নিয়ন্ত্রক
হিসেবে কাজ করে।
৬। জীবের পরিবৃত্তির ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
৭। ডিএনএ এবং তার হেলিক্রের কোন অংশে গোলযোগ দেখা দিলে
তা মেরামত করে নিতে সক্ষম।

আরএনএ (RNA) : রাইবোনিউক্লিকঅ্যাসিড এর সংক্ষিপ্ত রূপ হলো
আরএনএ। যে নিউক্লিক অ্যাসিডের পলিনিউক্লিয়োটাইডের মনোমার
এককগুলোতে গাঠনিক উপাদানরূপে রাইবোজ স্যুগার এবং অন্যতম
ক্ষারক হিসেবে ইউরাসিল থাকে তা হলো আরএনএ। সাধারণত
কোষের ৯০ ভাগ আরএনএ সাইটোপ্লাজমে এবং বাকী ১০ ভাগ থাকে
নিউক্লিয়াসে। এছাড়াও রাইবোসোম, ক্রোমোসোম, মাইটোকন্ড্রিয়া এবং
প্লাস্টিডেও আরএনএ পাওয়া যায়। ব্যাকটেরিয়া এবং কিছু ভাইরাসেও
আরএনএ উপস্থিত থাকে।
আরএনএ-এর ভৌত গঠন : আরএনএ এক সূত্রক চেইন বিশেষ। এটি
স্থানে স্থানে কুন্ডলিত অবস্থায় থাকে। এর গঠনে একাধিক ইউ (U)
আকৃতির ফাঁস বা লুপ থাকে। এ লুপগুলো এলোমেলোভাবে সৃষ্টি না
হয়ে একটি বিশেষ নিয়মে সৃষ্টি হয়। কুন্ডলীকৃত অংশগুলোতে
ক্ষারকগুলো হাইড্রোজেন বন্ডের সাহায্যে পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে
কিন্তু কুন্ডলীহীন অংশগুলোতে ক্ষারকগুলো বন্ধনীহীন।
                                   চিত্র ২.১১.২ : আরএনএ অণুর একাংশ
আরএনএ-এর রাসায়নিক গঠন : নিম্নে লিখিত রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে জঘঅ গঠিত হয়।
১। রাইবোজ স্যুগার (পেন্টোজ স্যুগার- এখানে কার্বনের ২নং স্থানে অক্সিজেন উপস্থিত); এটি পাঁচ কার্বনবিশিষ্ট।
২। নাইট্রোজিনাস বেস- অ্যাডিনিন, গুয়ানিন, ইউরাসিল (থাইমিনের পরিবর্তে) এবং সাইটোসিন।
৩। ফসফরিক অ্যাসিড।
৪। উক্ত চারটি বেস ছাড়া কোন কোন ক্ষেত্রে অন্য বেসও থাকতে পারে।
আরএনএ-এর কাজ
  • আরএনএ এর প্রধান কাজ হলো প্রোটিন সংশ্লেষণ করা।
  • অ্যামিনো অ্যাসিড স্থানান্তর করা।
  • রাইবোনিউক্লিয়োপ্রোটিন গঠন করা।
  • ডিএনএ হতে বার্তা বহন করে রাইবোসোমে পৌঁছে দেয়া।

সারসংক্ষেপ

নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষারক, পেন্টোজ সুগার এবং ফসফোরিক অ্যাসিডের সমন্বয়ে গঠিত অ্যাসিডকে বলা হয় নিউক্লিক অ্যাসিড। জীব কোষে দু’প্রকার নিউক্লিক অ্যাসিড পাওয়া যায়। ডিএনএ এবং আরএনএ। ডিঅক্সি রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড এর সংক্ষিপ্ত রূপ ডিএনএ। ডিএনএ এর গাঠনিক একক নিউক্লিয়োটাইড। | J.D. Watson এবং Francis H. C. Crick ডিএনএ অণুর গঠনের যে ডাবল হেলিক্স মডেল প্রস্তাব করেন তা সর্বাধুনিক এবং সঠিক মডেল হিসেবে সর্বজন গৃহীত ও স্বীকৃত।

M. F. H Wilkins  রঞ্জক রশ্মির মাধ্যমে ডিএনএ ডাবল হেলিক্স মডেল প্রমাণ করেন। এর জন্য তিন জন বিজ্ঞানী ১৯৬৩ সালে নোবেল পুরস্কার পান। রাইবোনিউক্লিকঅ্যাসিড এর সংক্ষিপ্ত রূপ আরএনএ। যে নিউক্লিক অ্যাসিডের পলিনিউক্লিয়োটাইডের মনোমার এককগুলোতে গাঠনিক উপাদানরূপে রাইবোজ স্যুগার এবং অন্যতম ক্ষারক হিসেবে ইউরাসিল থাকে তা হলো আরএনএ। আরএনএ এক সূত্রক চেইন বিশেষ। এটি স্থানে স্থানে কুন্ডলিত অবস্থায় থাকে। এর গঠনে একাধিক ইউ (ট) আকৃতির ফাঁস বা লুপ থাকে।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১। ডিএনএতে কত ধরনের নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষারক থাকে?
(ক) ২ (খ) ৩ (গ) ৪ (ঘ) ৫
২। আরএনএ-এর কাজ 
i. প্রোটিন সংশ্লেষ করা ii. রাইবোসোম গঠন করা iii. কোষীয় এনজাইম নিয়ন্ত্রণ করা
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) i ও ii (খ) i ও iii (গ) ii ও iii (ঘ) i, ii ও iii
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দিনবাবুল তার বন্ধুদের সঙ্গে এক ধরনের নিউক্লিক অ্যাসিড নিয়ে আলোচনা করছিলেন। যেখানে ডিঅক্সিরাইবসম ররাইবোজ শর্করা থাকে। এটি সকল জীবের বংশগতীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে।
৩। বাবুল কোন নিউক্লিক অ্যাসিডের কথা বলছিলেন ?
(ক) ডিএনএ (খ) আরএনএ (গ) এমডিএনএ (ঘ) এমআরএনএ
৪। উল্লিখিত নিউক্লিক অ্যাসিডটি
i. দীর্ঘ ও নলাকার ii. স্ববিভাজন ক্ষমতাসম্পন্ন iii. বংশগতীয় তথ্যের বাহক
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) i ও ii (খ) i ও iii (গ) ii ও iii (ঘ) i, ii ঘ iii

পাঠ-২.১২(আরএনএ-এর প্রকারভেদ)

এ পাঠ শেষে তুমি-
  • আরএনএ-এর প্রকারভেদ বর্ণনা করতে পারবে।
  • বিভিন্ন প্রকার আরএনএ-এর কাজ উল্লেখ করতে পারবে।

কাজ : tRNA কোষে অবস্থিত অ্যামাইনো অ্যাসিড সমূহকে অ্যাডেনিন বেসের সাথে
যুক্ত করে রাইবোসোমে নিয়ে যায়। tRNA এর নির্দিষ্ট অ্যান্টিকোডন সজঘঅ এর
নির্দিষ্ট কোডনের সাথে জোড় বেঁধে অবস্থান করে অ্যামাইনো অ্যাসিড সমূহকে যুক্ত
হতে সাহায্য করে।

রাইবোসোমাল আরএনএ (rRNA) : কোষের সমুদয় RNA এর শতকরা প্রায় ৮০-৯০
ভাগ rRNA। কোষের রাইবোসোমে এদের অবস্থান এবং রাইবোসোমের প্রধান গাঠনিক উপাদান হিসেবে কাজ করে। এরা সর্বাপেক্ষা স্থায়ী ও অদ্রবণীয়।
কাজ : rRNA প্রোটিনের সাথে যুক্ত হয়ে রাইবোনিউক্লিয়োপ্রোটিন এর কণা গঠন করে। রাইবোসোমে প্রোটিন সংশ্লেষিত হয় এবং কেউ কেউ মনে করেন যে প্রোটিন সংশ্লেষণের সঙ্গে কোন না কোন ভাবে হয়ত rRNA এ সম্পর্কীত। 

মেসেঞ্জার আরএনএ (mRNA) : (mRNA) গুলো দীর্ঘ, এক সূত্র বিশিষ্ট। (mRNA) এর উৎপত্তি হয় DNA এর দুটি সূত্রের যে কোনো একটি সূত্র হতে এবং উৎপত্তির পর কোষের সাইটোপ্লাজমে বের হয়ে অবস্থিত রাইবোসোম নামক অঙ্গাণুতে অবস্থান নেয়। DNA হতে সংকেত বহন করার কাজ করে mRNA। mRNA এর উপর অবস্থিত পাশাপাশি তিনটি করে বেস মিলে তৈরি করে একেকটি কোডন (যেমন AUG, CCU ইত্যাদি)। প্রতিটি কোডন সারিবদ্ধভাবে প্রোটিন তৈরির সময় কোন জাতীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড কার পরে কে থাকবে তা নির্ধারণ করে অর্থাৎ প্রোটিনে অ্যামাইনো অ্যাসিডের সিকুয়েন্স নির্ধারণ করে।



সারসংক্ষেপ

গঠন এবং কাজের উপর নির্ভর করে আরএনএকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা- (ক) ট্রান্সফার আরএনএ (tRNA)), (খ) রাইবোসোমাল আরএনএ (tRNA)), (গ) মেসেঞ্জার আরএনএ (mRNA), (ঘ) জেনেটিক আরএনএ (gRNA) এবং (ঙ) মাইনর আরএনএ (minorRNA)।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১। আরএনএ কত প্রকার ?
(ক) ২ (খ) ৩ (গ) ৪ (ঘ) ৫
২। মাইনর আরএনএ
i. রাইবোসোম গঠন করে 
ii. এনজাইম হিসেবে কাজ করে
iii. এনজাইমের কাঠামো প্রদান করে
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) i ও ii (খ) i ও iii (গ) ii ও iii (ঘ) i, ii ও iii

পাঠ-২.১৩ (ডিএনএ প্রতিলিপন প্রক্রিয়া)

এ পাঠ শেষে তুমি-
  • ডিএনএ অণুর প্রতিরূপ সৃষ্টির অনুকল্প উল্লেখ করতে পারবে।
  • অর্ধরক্ষণশীল প্রক্রিয়ায় ডিএনএ অণুর প্রতিরূপ সৃষ্টি বর্ণনা করতে পারবে।
  • ডিএনএ অণু কীভাবে কাজ করে তা বিশ্লেষণ করতে পারবে।

যে প্রক্রিয়ায় একটি ডিএনএ ডবল হেলিক্স থেকে একই বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন দুটি ডিএনএ ডবল হেলিক্সের সৃষ্টি হয় তাকে ডিএনএ প্রতিলিপন (Replication) বলে। কোষ বিভাজন আরম্ভ হওয়ার পূর্বে ইন্টারফেজ পর্যায়েই ডিএনএ প্রতিলিপন সম্পন্ন হয়। লেভিয়েন্থাল ও ক্রন (১৯৫৬) ডিএনএ অণুর প্রতিলিপনের সম্ভাব্য পদ্ধতি হিসেবে তিনটি অনুকল্প প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবগুলো হলো-

(ক) সংরক্ষণশীল পদ্ধতি (Conservative) মূল ডিএনএ ডবল হেলিক্সের কোনরূপ পরিবর্তন না ঘটিয়েই নতুন ডিএনএ ডবল হেলিক্স এর সৃষ্টি হয়।

(খ) অর্ধরক্ষণশীল পদ্ধতি (Semiconservative)- নব্য সংশ্লেষিত ডবল হেলিক্স এর প্রতিটিতে একটি পুরাতন ও একটি নতুন হেলিক্স থাকে।

(গ) বিচ্ছুরণশীল পদ্ধতি (Dispersive)-- এক্ষেত্রে নতুন সংশ্লেষিত ও পুরাতন সূত্রের খন্ড খন্ড অংশগুলো এলোমেলোভাবে মিলিত হয়ে নতুন ডবল হেলিক্স তৈরি করে। Mathew Meselon I Franklin Stahl (১৯৫৭) পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করেন যে, ডিএনএ প্রতিলিপন হয় অর্ধরক্ষণশীল পদ্ধতিতে। ডিএনএ প্রতিলিপন কোষ বিভাজনের পূর্ব শর্ত। এ প্রক্রিয়ায় প্রায় ২০ ধরনের প্রোটিন এবং বেশ কয়েক ধরনের এনজাইম জড়িত থাকে। এর মধ্যে ডিএনএ পলিমারেজ এনজাইম অত্যাবশ্যকীয়। নিম্নে লিখিত ধাপগুলোর মাধ্যমে অতিদ্রুত, অবিচ্ছিন্ন ও নিখুঁতভাবে এ পদ্ধতিটি সম্পন্ন হয়-

১। নিউক্লিয়াসে অবস্থিত ডিএনএ অত্যধিক কুন্ডলিত অবস্থা থেকে এনজাইমের উপস্থিতিতে অকুন্ডলিত হয়।
২। অকুন্ডলিত ডবল হেলিক্স এর দুটি সূত্রের মধ্যকার হাইড্রোজেন বন্ধনীগুলো ক্রমান্বয়ে এক দিক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একক হেলিক্স-এ পরিণত হয়।

৩। প্রতিটি একক হেলিক্স-এ নতুন হেলিক্সের সম্পূরক ছাঁচ হিসেবে কাজ করে।

৪। ডিএনএ পলিমারেজ এনজাইম নিউক্লিয়োপ্লাজমে অবস্থিত মুক্ত নিউক্লিয়োটাইড এনে বিচ্ছিন্ন হেলিক্স এর ডিএনএ অণুতে যুক্ত করে সম্পূরক নতুন হেলিক্স সৃষ্টি করে। ডিএনএ পলিমারেজ সর্বদাই মুক্ত নিউক্লিয়োটাইডগুলোকে হেলিক্সের ৫-৩ প্রান্তের দিকে জোড়া লাগায়।
 
৫। প্রতিলিপন শেষে পুরাতন হেলিক্স দুটি নতুন সৃষ্ট হেলিক্স সহ একে অপরের থেকে পৃথক হয়ে পড়ে এবং একটি ডাবল হেলিক্স থেকে দুটি ডাবল হেলিক্স এর সৃষ্টি হয়।এক্ষেত্রে একটি পুরাতন হেলিক্সকে ছাঁচ ধরে একটি নতুন হেলিক্স তৈরি হয় বলেই একে অর্ধরক্ষণশীল প্রতিলিপন বলে।



সারসংক্ষেপ


বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১। ডিএনএ প্রতিরূপ সৃষ্টির কতটি পদ্ধতি আছে ?
(ক) ২ (খ) ৩ (গ) ৪ (ঘ) ৫
২। লাইগেজ এনজাইমের কাজ
i. বন্ধনী সৃষ্টি করা ii. বন্ধনী মেরামত করা iii. বন্ধনী পৃথক করা
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) i ও ii (খ) i ও iii (গ) ii ও iii (ঘ) i, ii ও iii

পাঠ-২.১৪(বংশগতীয় বস্তু হিসেবে ডিএনএ-এর অবদান  )


ডিএনএ বংশগতির ধারক ও বাহক : ডিএনএ বংশগতি বিষয়ক বৈশিষ্ট্যাবলির ধারক ও বাহক। অধিকাংশ জীবের বংশগতির একক অর্থাৎ জিন ডিএনএ ছাড়া অন্য কিছু নয়। নি¤œলিখিত কারণে ডিএনএকে বংশগতির ধারক ও বাহক বলা হয়।
১। ডিএনএ দ্বারা কোষ বিভাজনের সময় এক নির্ভুল প্রতিলিপি সৃষ্টি হয়।
২। ডিএনএ কোষের জন্য নির্দিষ্ট প্রকারের প্রোটিন সংশ্লেষণ করে।
৩। ডিএনএ বংশগতির সব ধরনের জৈবিক সংকেত বহন করার ক্ষমতা রাখে।
৪। ডিএনএ এর গঠন অত্যন্ত স্থায়ী এবং মিউটেশন ছাড়া এর কোন পরিবর্তন হয় না।
৫। জীব কোষের জৈবিক সংকেতের প্রেরক হচ্ছে ডিএনএ।
৬। কোন কারণে ডিএনএ অণুর গঠনে কোন পরিবর্তন হলে পরিবৃত্তির উদ্ভব হয়। আর পরিবৃত্তি হলো বিবর্তনের মূল উপাদান।
জীব কোষের সকল রাসায়নিক বিক্রিয়া ডিএনএ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। তাই ডিএনএ কে মাস্টার মলিকিউল বলা হয়।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১। নিচের কোনটি বংশগতির ধারক ও বাহক ?
(ক) ডিএনএ (খ) আরএনএ (গ) ক্লোরোপ্লাস্ট (ঘ) লাইসোসোম
২। অধিকাংশ জীবের বংশগতি
i. এককর. জিন ii. ডিএনএ iii. আরএনএ
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) i ও ii (খ) i ও iii (গ) ii ও iii (ঘ) i, ii ও iii

পাঠ-২.১৫(ট্রান্সক্রিপশন এবং ট্রান্সলেশন)

এ পাঠ শেষে তুমি-
  • ট্রান্সক্রিপশন সম্পর্কে বলতে পারবে।
  • ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়ার পর্যায়গুলো সংক্ষেপে বর্ণনা করতে পারবে।
  • ট্রান্সলেশন সম্পর্কে বলতে পারবে।
  • ট্রান্সলেশন প্রক্রিয়ার পর্যায়গুলো সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করতে পারবে।
ট্রান্সক্রিপশন : ডিএনএ (DNA) থেকে আরএনএ (RNA) সংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে ট্রান্সক্রিপশন বলে। প্রোটিন সংশ্লেষণের আগে ডিএনএ অণুবহনকারী রাসায়নিক তথ্যগুলোকে আরএনএ অণুতে কপি হয়।
 ডিএনএ (DNA) ট্রান্সক্রিপশন (RNA) আরএনএ




সারসংক্ষেপ

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন


পাঠ-২.১৬(জিন ও জেনেটিক কোড)

এ পাঠ শেষে তুমি-
  • জিন সম্পর্কে বলতে পারবে।
  • জিনের বৈশিষ্ট্য ও কাজ উল্লেখ করতে পারবে।
  • জেনেটিক কোড বর্ণনা করতে পারবে।
  • জেনেটিক কোড এর বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করতে পারবে।
জিন : জিন ক্রোমোসোমস্থ DNA--এর অংশ যা বংশগতির আণবিক একক হিসেবে কাজ করে। অন্যভাবে বলা যায়, জিন হলো ক্রোমোসোমের সুনির্দিষ্ট স্থানে (লোকাসে) অবস্থিত DNA- অণুর সুনির্দিষ্ট সিকুয়েন্স যা জীবের একটি নির্দিষ্ট কার্যকর সংকেত ধারণ করে এবং প্রোটিন হিসেবে বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। জিন প্রকৃতপক্ষে জীবের কোষ গঠন ও নিয়ন্ত্রণে যাবতীয় তথ্য ধারণ করে এবং পরবর্তী প্রজন্মে এ সমস্ত তথ্য স্থানান্তর করে। প্রত্যেকটি জীবের প্রতিটি ক্রোমোসোমে অনেকগুলো জিন থাকে যারা ভিন্ন ভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। এর মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্য তাৎক্ষণিকভাবে দৃশ্যমান (যেমন- মানুষের চোখের রং, ফুলের রং ইত্যাদি), কিছু বৈশিষ্ট্য দৃশ্যমান নয় (যেমন- রক্তের গ্রুপ), আবার কিছু বৈশিষ্ট্য লুক্কায়িত (যেমন- ভবিষ্যতে কোন রোগের সম্ভাবনা)।






জেনেটিক কোডের বৈশিষ্ট্যাবলি : জেনেটিক কোড কিছু বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে। যথা
১। কোডনগুলো ট্রিপলেট।
২। একাধিক কোডন একটি অ্যামাইনো অ্যাসিডকে কোড করে (যেমন- লিউসিন)।
৩। একটি কোডন কখনও একাধিক অ্যামাইনো অ্যাসিডকে কোড করে না।
৪। কোডন তৈরিতে নিউক্লিয়োটাইড কখনও ওভারলেপ করে না বরং ক্রমসজ্জা অনুসরণ করে।
৫। কোডনসমূহ সার্বজনীন অর্থাৎ বিশ্বের সকল প্রজাতির জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য এবং আদিকাল থেকে শত বিবর্তন ধারা
অতিক্রম করে এখনও একই রকম আছে।

সারসংক্ষেপ

জিন ক্রোমোসোমস্থ অংশ যা বংশগতির আণবিক একক হিসেবে কাজ করে। অন্যভাবে বলা যায়, জিন হলো ক্রোমোসোমের সুনির্দিষ্ট স্থানে (লোকাসে) অবস্থিত DNA অণুর সুনির্দিষ্ট সিকুয়েন্স যা জীবের একটি নির্দিষ্ট কার্যকর সংকেত ধারণ করে এবং প্রোটিন হিসেবে বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। কোড হলো গোপন বার্তা বা গোপন সংকেত।

আমরা সকলে জানি যে, উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্য এক বংশধর থেকে পরবর্তী বংশধরে স্থানান্তরিত হয়। এক ধরনের কোড তথা গোপন সংকেতের মাধ্যমে বৈশিষ্ট্যের এ স্থানান্তর ঘটে। বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী এ কোডকে বলা হয় জেনেটিক কোড। DNA তে এ কোড অবস্থান করে। DNA এর নিউক্লিয়োটাইড এ চার ধরনের নাইট্রোজিনাস বেস থাকে। যথা- অ্যাডিনিন (A), গুয়ানিন (G), সাইটোসিন (C) ও থাইমিন (T)।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন



 বহুনির্বাচনী প্রশ্ন উত্তর

২.১ : ১। ক ২। ঘ
২.২ : ১। ক ২। খ ৩। গ
২.৩ : ১। ক ২। ক
২.৪ : ১। গ ২। ঘ ৩। ঘ
২.৫ : ১। ক ২। ঘ ৩। ঘ
২.৬ : ১। ক ২। ক ৩। ক ৪। খ
 ২.৭ : ১। ক ২। ক ৩। গ
 ২.৮ : ১। খ ২। ঘ
 ২.৯ : ১। ক
 ২.১০ : ১। ক ২। গ ৩। ঘ
 ২.১১ : ১। গ ২। ক ৩। ক ৪। ঘ
 ২.১২ : ১। ঘ ২। গ
 ২.১৩ : ১। খ ২। ক
 ২.১৪ : ১। ক ২। ক
 ২.১৫ : ১। খ ২। ক ৩। খ ৪। ক ৫। গ
 ২.১৬ : ১। ক ২। ঘ ৩। ক ৪। গ 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনেট আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url