এস এস সি বাংলা ১ম পত্র সাহিত্যের রূপ ও রীতি হায়াৎ মামুদ
সাহিত্যের রূপ ও রীতি
হায়াৎ মামুদ
লেখক পরিচিতি
সূচিপত্র
হায়াৎ মামুদ ২ জুলাই ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে পন্ডিমবঙ্গের হুগলি জেলার মৌড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম মনিরুজ্জামান। তাঁর ছেলেবেলা কেটেছে পশ্চিমবঙ্গে। দেশবিভাগের পর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫০ সালে পিতার সঙ্গে তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং বর্তমানে তিনি ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা। তাঁর পিতা মুহম্মদ শমসের আলী এবং মাতা আমিনা খাতুন। হায়াৎ মামুদ ১৯৫৬ সালে ঢাকার সেন্টগ্রেগরিজ হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা ও ১৯৫৮ সালে তৎকালীন কায়েদে-আজম কলেজ (বর্তমানে সরকারি হোসেন শহীদ সোহওয়ার্দী কলেজ) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিষয়ে সম্মানসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক সাহিত্যে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি কিছুদিন বাংলা একাডেমিতে চাকরি করেন এবং পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন। তিনি একজন আধুনিক কবি, প্রবন্ধকার, গবেষক ও শিশু সাহিত্যিক। শিশুদের নিয়ে জীবনীগ্রন্থ রচনা তাঁর প্রিয় বিষয়। তিনি প্রায় অর্ধ-শতাধিক গ্রন্থের রচয়িতা। শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা
স্বগত সংলাপ, প্রেম অপ্রেম নিয়ে বেঁচে আছি (কাব্যগ্রন্থ), রবীন্দ্রনাথ: কিশোর জীবনী, নজরুল ইসলাম: কিশোর জীবনী, প্রতিভার খেলা- নজরুল, বাঙালি বলিয়া লজ্জা নাই, বাংলা লেখার নিয়মকানুন, কিশোর বাংলা অভিধান।
ভূমিকা
হায়াৎ মামুদ রচিত ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধে অতি সংক্ষেপে বিচিত্র ধরনের সাহিত্য রীতির পরিচয় দেওয়া হয়েছে। লেখক এখানে সাহিত্যের বিস্তৃতি ও গভীরতার দিকটি এবং সাহিত্যের প্রকৃতি, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন। বাংলা সাহিত্যের কবিতা, নাটক, উপন্যাস, ছোটগল্প ও প্রবন্ধ সম্পর্কে এই লেখায় একটা সাধারণ ধারণা পাওয়া যাবে।
সাধারণ উদ্দেশ্য
‘সাহিত্যের রূপ-রীতি’ প্রবন্ধ পাঠ শেষে তুমি-
- সাহিত্যের প্রধান পাঁচটি শাখার পরিচয় লিখতে পারবে;
- সাহিত্যের প্রধান শাখাগুলোর শ্রেণিবিভাগ করতে পারবে।
পাঠভিত্তিক উদ্দেশ্য
এই পাঠটি পড়া শেষে তুমি-
- কবিতা ও নাটকের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর পরিচয় দিতে পারবে;
- কবিতা ও নাটকের প্রধান ভাগগুলোর বিবরণ লিখতে পারবে।
- ছোটগল্প, উপন্যাস আর প্রবন্ধের রূপ-রীতির পরিচয় লিখতে পারবে;
- ছোটগল্প, উপন্যাস আর প্রবন্ধের বিভিন্ন ভাগের বিবরণ লিখতে পারবে।
মূলপাঠ
সাহিত্য বিশাল পরিধির একটি বিষয়। আমরা সামগ্রিকভাবে ‘সাহিত্য’ বলি বটে, কিন্তু বিচারের সময়ে গদ্য, পদ্য কিংবা গল্প উপন্যাস কবিতা নাটক ইত্যাদি স্বতন্ত্রভাবে ব্যাখ্যা-বিশে−ষণ করে হৃদয়ঙ্গম করি। সার্বিকভাবে সাহিত্যের রূপ বলতে আমরা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা বুঝে থাকি, যেমন- কবিতা, মহাকাব্য, নাটক, কাব্যনাট্য,
ছোটগল্প, উপন্যাস, রম্যরচনা ইত্যাদি। আর ‘রীতি’ হলো ঐ শাখাগুলো কীভাবে নির্মিত হয়েছে সে বিষয়ে পর্যবেক্ষণ ও আলোচনা।
কবিতা
ছন্দোবদ্ধ ভাষায়, অর্থাৎ পদ্যে, যা লিখিত হয় তাকেই আমরা ‘কবিতা’ বলে থাকি। কবিতার প্রধান দুটি রূপভেদ হলো- মহাকাব্য ও গীতিকবিতা। বাংলা ভাষায় মহাকাব্যের চূড়ান্ত সফল রূপ প্রকাশ করেছেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর মেঘনাদ-বধ’ কাব্যে। মহাকাব্য রচিত হয় যুদ্ধবিগ্রহের কোনো কাহিনি অবলম্বন করে। ভারতবর্ষ উপমহাদেশের সর্বপ্রাচীন দুটি কাহিনির একটি হলো ‘রামায়ণ’ আর অন্যটি ‘মহাভারত’। ‘মহাভারত’ সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে- ‘যা নেই ভারতে তা নেই ভারতে’, এর অর্থ : ‘মহাভারত’ গ্রন্থে যা নেই তা ভারতবর্ষেও নেই অর্থাৎ ভারতবর্ষে ঘটেনি বা ঘটতে পারে না।
‘মহাভারত’ আয়তনে বিশাল। ‘রামায়ণ’ তার তুলনায় ক্ষুদ্র; কাহিনি হলো : পত্মী সীতাকে নিয়ে যুবরাজ রামচন্দ্রের বনবাস, তাঁদের অনুগামী হয় কনিষ্ঠ ভ্রাতা লক্ষণ বনবাসে থাকার সময়ে লঙ্কা দ্বীপের রাজা রাবণ তার বোন শূর্পনখার সম্মান রক্ষার জন্য সীতাকে হরণ করে রথে চড়িয়ে আকাশপথে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে লঙ্কায় তার বাগান বাড়িতে বন্দী করে রাখে। সীতাকে উদ্ধারের জন্য রাম ও রাবণের মধ্যে যে যুদ্ধ হয় সেটিই রামায়ণ-কথা। অর্থাৎ এককথা, মহাকাব্য হলো অতিশয় দীর্ঘ কাহিনি-কবিতা। মহাকাব্যের মূল লক্ষ্য গল্প বলা, তবে তাকে গদ্যে না লিখে পদ্যে লিখতে হয়।
এর বাইরে আছে সংক্ষিপ্ত আকারের কবিতা, যা ‘গীতিকবিতা’ হিসেবে পরিচিত। ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র কিছু গান ও কবিতা রচনা করলেও তা তাঁর প্রধান সৃষ্টিকর্ম নয়। তিনি বলেছিলেন : ‘বক্তার ভাবোচ্ছসের পরিস্ফূটন মাত্র যাহার উদ্দেশ্য, সেই কাব্যই গীতিকাব্য।’ এই মন্তব্য সর্বাংশে সত্য। গীতিকবিতা কবির অনুভূতির প্রকাশ হওয়ায় সাধারণত দীর্ঘকায় হয় না। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে যদি দীর্ঘও হয় তাতেও অসুবিধে নেই, যদি কবির মনের পূর্ণ অভিব্যক্তি সেখানে প্রকাশিত হয়ে থাকে। বাংলা সাহিত্যে গীতিকবিতার আদি নিদর্শন বৈষ্ণব কবিতাবলি।
যদি গীতিকবিতাকে শ্রেণিবিভাজনের অন্তর্গত করতেই হয়, তাহলে এ রকম শ্রেণিবিভাগ করা যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয় : ভক্তিমূলক (যেমন- রবীন্দ্রনাথ, অতুলপ্রসাদ, রামপ্রসাদ, রজনীকান্তের রচনা), স্বদেশপ্রীতিমূলক (যেমন- বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বন্দে মাতরম’, রবীন্দ্রনাথের অসংখ্য কবিতা-গান), প্রেমমূলক, প্রকৃতিবিষয়ক চিন্তামূলক বা দর্শনাশ্রয়ী কবিতা। শোক-গাথা বা শোক আশ্রয় করে লিখিত কবিতাও এর সমপর্যায়ভুক্ত। বাংলা কবিতায় বিশেষ দুটি ধারার জনক কাজী নজরুল ইসলাম ও জসীমউদ্দীন। প্রথম জন আমাদের সাহিত্যে ‘বিদ্রোহী কবি’ ও দ্বিতীয় জন ‘পলি−কবি’ হিসেবে স্থায়ী আসন লাভ করেছেন। নজরুলের কবিতায় যে উদ্দীপ্ত কণ্ঠস্বর ও দৃপ্ত ভাবের দেখা মেলে তা পূর্বে বাংলা কাব্যে ছিল না। জসীম উদ্দীনের ‘নকশীকাঁথার মাঠ’ ও ‘সোজনবাদিয়ার ঘাট’ জাতীয় কোনো কাব্য পূর্বে কেউ রচনা করেন নি এবং এক্ষেত্রে তাঁর অনুসারীও কেউ নেই।
নাটক
বিশ্বসাহিত্যে নাটক সর্বাপেক্ষা প্রাচীন। তবে মনে রাখা দরকার, নাটক সেকালে পুস্তকাকারে মুদ্রিত হয়ে (তখন তো ছাপাখানা ছিল না) ঘরে ঘরে পঠিত হত না, নাটক অভিনীত হতো। নাটকের লক্ষ্য পাঠক নয়, নাটকের লক্ষ্য সর্বকালেই দর্শকসমাজ। তার কারণ সাহিত্যের সকল শাখার ভিতরে নাটকই একমাত্র যা সরাসরি সমাজকে ও পাঠকগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করতে চায় এবং সক্ষমও হয়। সংস্কৃত আলঙ্কারিকবৃন্দ নাট্যসাহিত্যকে কাব্যসাহিত্যের মধ্যে গণ্য করেছেন। প্রাচীনকালে সে রকমই প্রথা ছিল। যেমন,
শেক্সপীয়রও তাঁর সকল নাটক কবিতায় রচনা করেছেন। সংস্কৃত আলঙ্কারিকদের মতে কাব্য দুই ধরনের : দৃশ্যকাব্য ও শ্রাব্যকাব্য। নাটক প্রধানত দৃশ্যকাব্য, সেহেতু নাটকের অভিনয় মানুষজনকে দর্শন করানো সম্ভবপর না হলে নাট্যরচনার মূল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়।
নাটক সচরাচর পাঁচ অঙ্কে বিভক্ত থাকে : ১. প্রারম্ভ, ২. প্রবাহ (অর্থাৎ কাহিনির অগ্রগতি), ৩. উৎকর্ষ বা Climax, ৪. গ্রন্থিমোচন (অর্থাৎ পরিণতির দিকে উত্তরণ), ৫. উপসংহার। কাহিনির বিষয়বস্তু ও পরিণতির দিক থেকে বিচার করলে নাটককে প্রধানত ট্র্যাজেডি (Tragedy বা বিয়োগান্ত নাটক), কমেডি (Comedy বা মিলনান্ত নাটক) এবং প্রহসন (Farce)-এই তিনটি বিভাগে বিভক্ত করা যায়। এদের মধ্যে ট্র্যাজেডিকেই সর্বশ্রেষ্ঠ গণ্য করা হয়। ট্র্যাজেডির ভিতরে দুইটি অংশ ক্রিয়াশীল থাকে : প−ট (চষড়ঃ বা নাটকের আখ্যানভাগ), চরিত্রসৃষ্টি, সংলাপ, চিন্তা বা জীবনদর্শনের পরিস্ফুটন, মঞ্চায়ন, সমস্ত কিছুর সমন্বয়ে সুরসঙ্গতি। গ্রিক দার্শনিক ও সাহিত্যবেত্তা আরিস্টটল বলতে চেয়েছেন, রঙ্গমঞ্চে নায়ক বা নায়িকার জীবনকাহিনির দৃশ্যপরম্পরা
উপস্থাপনের মাধ্যমে যে নাটক দর্শকের হৃদয়ের ভয় ও করুণা প্রশমিত করে তার মনে করুণ রসের আনন্দ সৃষ্টি করে, তাই হলো ট্র্যাজেডি। কমেডি বিষয়ে আরিস্টটলের বক্তব্য এ রকম : মানবচরিত্রের যে কৌতুকপ্রদ দিক কাউকে পীড়ন করে না, ব্যথা দেয় না, হাস্যরস সৃষ্টি করে, তা-ই কমেডির উপজীব্য। এই কৌতুকের জন্ম ইচ্ছার সঙ্গে বাস্তব অবস্থার, আকাক্সক্ষার সঙ্গে প্রাপ্তিযোগের, উদ্দেশ্যের সঙ্গে উপায়ের বা কথার সঙ্গে কাজের অসঙ্গতির মধ্যে। কমেডি আমাদের মানবসুলভ ত্রæটিবিচ্যুতি ও নির্বুদ্ধিতার পরিণাম প্রদর্শন করে অশোভন দুর্বলতার হাত থেকে মুক্তি দিয়ে আমাদেরকে সুস্থ ও স্বাভাবিক করে তোলে। শ্রেণিবিন্যাসের বিবেচনায় নাটককে বহু শ্রেণিতে বিভক্ত করা সম্ভব। যেমন-ধ্রুপদী (বা ক্ল্যাসিক্যাল) নাটক, রোম্যান্টিক নাটক।
অথবা ধরা যাক- কাব্যধর্মী নাটক, সামাজিক নাটক, চক্রান্তমূলক নাটক, ঐতিহাসিক নাটক, পৌরাণিক নাটক, প্রহসন। এসব ব্যতিরেকেও হতে পারে গীতিনাট্য, নৃত্যনাট্য, চরিতনাটক, উপন্যাসের নাট্যরূপ, সাঙ্কেতিক নাটক, সমস্যাপ্রধান নাটক, একাঙ্কিকা ইত্যাদি। ট্র্যাজেডি ও কমেডি-মোটা দাগে এই দুইটি বিভাজন তো রয়েছেই। বাংলা নাটকের ক্ষেত্রে প্রথম যুগান্তকারী প্রতিভা মাইকেল মধুসূদন দত্ত এবং দীনবন্ধু মিত্র। মাইকেলের লেখনীতেই সর্বপ্রথম ট্র্যাজেডি, কমেডি ও প্রহসন বাংলা ভাষায় সৃষ্টি হয়। তারপর দীনবন্ধু আবির্ভূত হন সামাজিক নাটক নিয়ে। তাঁর ‘নীলদর্পণ’ নাটক এর শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। পরবর্তী সময়ে গিরিশচন্দ্র ঘোষ (১৮৪৩-১৯১১) একইসঙ্গে নাট্যকার ও অভিনেতা ছিলেন।
তিনি পৌরাণিক নাটক (‘জনা’, ‘বুদ্ধদেব’), ঐতিহাসিক নাটক (‘কালাপাহাড়’), সামাজিক নাটক (‘প্রফুল−’) ইত্যাদি রচনা করেছেন।এরপর দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের (১৮৬৩-১৯১৩) ঐতিহাসিক নাটক ‘চন্দ্রগুপ্ত’ ও ‘শাজাহান’ বাঙালি দর্শকদের হৃদয় জয় করে নেয়। তাঁর সমসাময়িকগণের মধ্যে অমৃতলাল বসু, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ উলে−খযোগ্য। আর তার পরেই আবির্ভাব কবি রবীন্দ্রনাথের, যিনি বাংলা নাটকেরও মোড় ঘুরিয়ে দেন নানা দিকে : রক্তকরবী, ডাকঘর, অরূপরতন প্রতীকধর্মী নাটক হিসেবে বাংলা সাহিত্যে কালজয়ী হয়ে রয়েছে।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর একটি কবিতায় যা বলেছিলেন সে-কথাটি ছোটগল্পের প্রকৃতি সম্পর্কে এখনও প্রামাণ্য ব্যাখ্যা হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। তিনি লিখেছিলেন : ছোট প্রাণ, ছোট ব্যথা ছোট ছোট দুঃখ কথা নিতান্তই সহজ সরল
সহস্র বিস্মৃতি রাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি
তারি দুচারিটি অশ্রুজল।
নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা
নাহি তত্ত নাহি উপদেশ
অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে
শেষ হ’য়ে হইল না শেষ।
‘শেষ হয়ে হইল না শেষ’-কথাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ-কথার ভিতরেই বলে দেওয়া হলো যে, ছোটগল্প কখনোই কাহিনির ভিতরে ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বলে দেয় না- যেমনটা ঘটে উপন্যাসের ক্ষেত্রে। বাংলা সাহিত্যে ‘ছোটগল্প’ শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে চলি−শ-পঞ্চাশ বৎসরের বেশি নয়। তার পূর্বে শুধু ‘গল্প’ বলা হতো। বড়ো আকারের গল্প হলে ‘উপন্যাসিকা’ কথা চল ছিল, অর্থাৎ ছোট উপন্যাস। সাহিত্যের যত শাখা আছে, যেমন কাব্য মহাকাব্য নাটক উপন্যাস ইত্যাদি, সে-সবের মধ্যে ছোটগল্পই হচ্ছে বয়সে সর্বকনিষ্ঠ। ছোটগল্পেও থাকে উপন্যাসের মতোই কোনো-না-কোনো কাহিনির বর্ণনা, তবে তা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নয়, কাহিনির ভিতরে থেকেই বেছে নেওয়া কোনো অংশ থাকে মাত্র।
ইংরেজি সাহিত্যের উদাহরণ অনুসরণ করে বাংলায় যেমন উপন্যাস লিখিত হয়েছে, ছোটগল্পেরও অনুপ্রেরণা এসেছে পাশ্চাত্য সাহিত্য থেকেই। ‘ছোটগল্প’ বলতে কোন ধরনের কাহিনি বোঝাবে সে বিষয়ে বিশ্ববিখ্যাত মার্কিন ছোটগল্পকার এডগার অ্যালান পো (১৮০৯-১৮৪৯) মনে করতেন আধ ঘণ্টা থেকে দু-এক ঘণ্টার মধ্যে পড়ে ওঠা যায় এমন কাহিনিই ছোটগল্প’। ইংরেজ লেখক এইচ. জি. ওয়েল্স্ বলতেন যে ছোটগল্পের আয়তন এমন হওয়া সঙ্গত যেন ১০ থেকে ৫০ মিনিটের ভিতরে পড়া শেষ হয়। ইংরেজি ভাষায় পো-কে ছোটগল্পের জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি লিখেছেন :
In the whole composition there should be no word written of which the tendency, direct or indirect, is not to the one pre-established design. ... undue brevity is just as exceptional here as in the poem, but undue length is yet more to be avoided
বলাই বাহুল্য, উপন্যাসে যেমন বিস্তারিতভাবে কাহিনি বর্ণনা থাকে, ছোটগল্পের পরিধি ক্ষুদ্র হওয়ার কারণে ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ উপস্থাপন সেখানে সম্ভব নয় এবং অপ্রয়োজনীয়ও বটে। সাহিত্য গবেষক শ্রীশচন্দ্র দাশ যথার্থই বলেছেন : ‘আসল কথা এই যে, ছোটগল্প আকারে ছোট হইবে বলিয়া ইহাতে জীবনের পূর্ণাবয়ব আলোচনা থাকিতে পারে না, জীবনের খন্ডাংশকে লেখক যখন রস-নিবিড় করিয়া ফুটাইতে পারেন, তখনই ইহার সার্থকতা। জীবনের কোনো একটি বিশেষ মুহূর্ত কোনো বিশেষ পরিবেশের মধ্যে কেমন ভাবে লেখকের কাছে প্রত্যক্ষ হইয়াছে, ইহা তাহারই রূপায়ণ।
আকারে ছোট বলিয়া এখানে বহু ঘটনা-সমাবেশ বা বহু পাত্রপাত্রীর ভিড় সম্ভবপর নহে। ছোটগল্পের আরম্ভ ও উপসংহার নাটকীয় হওয়া চাই। সত্য কথা বলিতে কি, কোথায় আরম্ভ করিতে হইবে এবং কোথায় সমাপ্তির রেখা টানিতে হইবে, এই শিল্পদৃষ্টি যাহার নাই তাহার পক্ষে ছোটগল্প লেখা লাঞ্ছনা বই কিছুই নহে।’ বাংলা ভাষায় সার্থক ছোটগল্পকারের অনন্য দৃষ্টান্ত রবীন্দ্রনাথ।
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে ছোটগল্প বহুপ্রকার হতে পারে। সাধারণত শ্রেণিবিভাগ হিসেবে এগুলোকে উলে−খ করা যায় :
১. প্রেমবিষয়ক, ২. সামাজিক, ৩. প্রকৃতি ও মানুষ সম্পর্কে, ৪. অতিপ্রাকৃত কাহিনি, ৫. হাস্যরসাত্মক, ৬. উদ্ভট কল্পনাশ্রয়ী, ৭. সাঙ্কেতিক বা প্রতীকধর্মী, ৮. ঐতিহাসিক, ৯. বিজ্ঞানভিত্তিক, ১০. গার্হস্থ্য বিষয়ক, ১১. মনস্তাত্তিক, ১২. মনুষ্যেতর প্রাণিজগৎ, ১৩. বাস্তবনিষ্ঠ, ১৪. গোয়েন্দাকাহিনি বা ডিটেকটিভ গল্প, ১৫. বিদেশি পটভূমিকায় রচিত গল্প। আমাদের জন্য গর্বের বিষয় এটাই যে, বাংলা ভাষায় উপরোক্ত সব ক’টি শ্রেণির গল্পই বাঙালি গল্পলেখকবৃন্দ লিখে গেছেন ও এখনো লিখছেন।
উপন্যাস
সাহিত্যের শাখা প্রশাখার মধ্যে উপন্যাস অন্যতম। শুধু তাই নয়, পাঠক সমাজে উপন্যাসই সর্বাধিক বহুল পঠিত ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে। উপন্যাসে কোনো একটি কাহিনি বর্ণিত হয়ে থাকে এবং কাহিনিটি গদ্যে লিখিত হয়। কিন্তু পূর্বে এমন এক সময় ছিল যখন কাহিনি পদ্যে লেখা হতো; তখন অবশ্য তাকে উপন্যাস বলা হতো না। যেমন বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে সব ধরনের মঙ্গলকাব্যই ছন্দে রচিত এবং তাতে গল্প বা কাহিনিই প্রকাশিত হয়েছে, তবু তাকে উপন্যাস না বলে কাব্যই বলা হতো- যেহেতু কবিতার ন্যায় তা ছন্দে রচিত হয়েছে। উপন্যাস রচিত হয় গদ্যভাষায়, এই তথ্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
ছন্দোবদ্ধ রচনার অনেক পরে যেহেতু গদ্যের আবির্ভাব তাই অপেক্ষাকৃত আধুনিক কালেই গদ্যে কাহিনি লেখা হয়েছে, যেমন- গল্প বা ছোটগল্প, উপন্যাস, রম্যকাহিনি ইত্যাদি। উপন্যাসের প্রধান উপজীব্য হলো পল্ট (Plot)। ঐ
প্লট বা আখ্যানভাগ তৈরি হয়ে ওঠে গল্প ও তার ভিতরে উপস্থিত বিভিন্ন চরিত্রের সমন্বয়ে। বাংলা ভাষায় প্রথম সার্থক ও কালজয়ী (এবং অনেকের মতে এখন পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ) ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। উনিশ শতকের পূর্বে বাংলায় কোনো উপন্যাস রচিত হয়নি। ইংরেজি উপন্যাস পাঠ করে অনুপ্রাণিত হয়ে বঙ্কিম উপন্যাস রচনায় হাত দেন। তাঁর কপালকুন্ডলা, বিষবৃক্ষ, চন্দ্রশেখর ইত্যাদি কালজয়ী কথাসাহিত্য। বঙ্কিমচন্দ্রের পরে মহৎ ঔপন্যাসিক বলতে আমরা প্রধানত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে বুঝি।
একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পৃথিবীতে যেখানে যত বাঙালি রয়েছে তাদের ভিতরে শরৎচন্দ্রই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি পঠিত ও জনপ্রিয়। বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগে অবশ্য তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বনফুল, সমবেশ বসু, শহীদুলণ্ঢা কায়সার, আবু ইসহাক, হাসান আজিজুল হক প্রমুখ বিভিন্ন গল্পকার ও ঔপন্যাসিক খ্যাতি অর্জন করেছেন। উপন্যাস বহু রকমের হতে পারে। যেমন ঐতিহাসিক উপন্যাস, সামাজিক উপন্যাস, কাব্যধর্মী উপন্যাস, ডিটেকটিভ উপন্যাস, মনোবিশে−ষণধর্মী উপন্যাস ইত্যাদি। বঙ্কিমচন্দ্রের সমকালে ঐতিহাসিক উপন্যাস খুব জনপ্রিয় ছিল।
তাঁর সমসাময়িক রমেশচন্দ্র দত্ত তাঁরই মতো বহু ইতিহাসআশ্রিত উপন্যাস রচনা করেছিলেন- যেমন মাধবী-কঙ্কণ, রাজপুত-জীবনসন্ধ্যা, মহারাষ্ট্র-জীবনপ্রভাত ইত্যাদি। তবে তাঁর সমসাময়িক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যেভাবে বাঙালি পাঠকসমাজকে মন্ত্রমুগ্ধ করে জয় করে নেন, তার সমকক্ষ আর কাউকে দেখা যায় না। প্রবন্ধ আমরা সকলেই অস্পষ্টভাবে বুঝি ‘প্রবন্ধ’ কাকে বলে বা কী রকম। গদ্যে লিখিত এমন রচনা যার উদ্দেশ্য পাঠকের জ্ঞানতৃষ্ণাকে পরিতৃপ্ত করা।
কোনো সন্দেহ নেই, এ জাতীয় লেখায় তথ্যের প্রাধান্য থাকবে যার ফলে অজ্ঞাত তথ্যাদি পাঠক জানতে পারবে। ধরা যাক, সংবাদপত্রের যাবতীয় খবরাখবর-দেশের, বিদেশের, মহাকাশের ইত্যাদি। সবই গদ্য ভাষায় রচিত এবং যার লক্ষ্য পাঠকের অজানা বিষয় পাঠককে জানানো। গদ্যসাহিত্যের অন্তর্গত হলেও তথ্যবহুল রচনা হলেই তাকে প্রবন্ধসাহিত্যের উদাহরণরূপে গণ্য করা চলবে না, যদি-না লেখাটি সাহিত্য পদবাচ্য হয়। সাহিত্যের প্রধান লক্ষণ সৃজনশীলতা।
লেখকের সৃজনীশক্তির কোনো পরিচয় যদি পরিস্ফূটিত না হয়, তো তেমন কোনো লেখাকে প্রবন্ধসাহিত্যের লক্ষণযুক্ত বলা যাবে না। এ-কারণে খবরের কাগজে প্রকাশিত সমস্ত লেখাই গদ্যে রচিত হলেও তাদেরকে প্রবন্ধসাহিত্যের নমুনা হিসেবে বিবেচনা করা সঙ্গত নয়। তাহলে তো জ্ঞানবিজ্ঞান সংক্রান্ত সকল রচনাই প্রবন্ধসাহিত্য বলে গণ্য হতে পারত। তা না হওয়ার কারণ ঐ সৃজনশীলতার অভাব। মনে রাখা প্রয়োজন : সাহিত্যের যা চিরন্তন উদ্দেশ্য- সৌন্দর্যসৃষ্টি ও আনন্দদান, প্রবন্ধের সেই একই উদ্দেশ্য।
সাধারণত কল্পনাশক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিকে আশ্রয় করে লেখক কোনো বিষয়বস্তু সম্পর্কে যে আত্মসচেতন নাতিদীর্ঘ সাহিত্য-রূপ সৃষ্টি করেন তাকেই ‘প্রবন্ধ’ নামে অভিহিত করা হয়। প্রবন্ধের ভাষা ও দৈর্ঘ্য নানা রকম হতে পারে ঠিকই, তবে তা গদ্যে ও নাতিদীর্ঘ আকারে লিখিত হয়। প্রবন্ধের দুটি মুখ্য শ্রেণিবিভাগ আছে : তন্ময় (objective) প্রবন্ধ ও মন্ময় (subjective) প্রবন্ধ। বিষয়বস্তুর প্রাধান্য স্বীকার করে যে-সকল বস্তুনিষ্ঠ প্রবন্ধ লিখিত হয় সেগুলোকে তন্ময় বা বস্তুনিষ্ঠ প্রবন্ধ বলে। এ ধরনের প্রবন্ধ কোনো সুনির্দিষ্ট সুচিন্তিত চৌহদ্দি বা সীমারেখার মধ্যে আদি, মধ্য ও অন্ত-সমন্বিত চিন্তাপ্রধান সৃষ্টি। এ জাতীয় রচনায় লেখকের পান্ডিত্য, বুদ্ধি ও জ্ঞানের পরিচয়ই মুখ্য হয়ে দেখা দেয়।
আরেক শ্রেণির রচনাও সম্ভব যেখানে লেখকের মেধাশক্তি অপেক্ষা ব্যক্তিহৃদয়ই প্রধান হয়ে ওঠে। এদেরকে মন্ময় প্রবন্ধ বলে। রবীন্দ্রনাথের অধিকাংশ প্রবন্ধ এই পর্যায়ের। ফরাশি ভাষায় বেল্ লের্ৎ (belle letre) বলে একটি শব্দ আছে, ইংরেজিতেও বেল্ লের্ৎই বলে। এর বাংলা নেই। বাংলায় বলা যেতে পারে চারুকথন। বেল্ শব্দের অর্থ-সুন্দর, চমৎকার।
আর লের্ৎ অর্থ- letter, অক্ষর। বেল্ লের্ৎ মন্ময় প্রবন্ধের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। রবীন্দ্রনাথের ‘বিচিত্র প্রবন্ধ’ বইটির সকল রচনাই এ জাতীয় মন্ময় প্রবন্ধের পর্যায়ভুক্ত। অনেকে এ ধরনের লেখাকে ‘ব্যক্তিগত প্রবন্ধ’ বলারও পক্ষপাতী। ‘রম্য রচনা’ নামে একটা কথা অনেক দিন যাবত ব্যক্তিগত প্রবন্ধ বোঝাতে ‘রম্য রচনা’ ব্যবহার করা ঠিক নয়। কারণ ‘রম্য রচনা’ শব্দদ্বয়ের ‘রম্য’ শব্দের ভিতরে এমন ইঙ্গিত রয়ে যায় যে, লেখাটি সিরিয়াস বা গুরুগম্ভীর বিষয় নিয়ে নয়, অথচ রম্যরচনার বিষয় খুবই গুরুগম্ভীর হতে পারে, কিন্তু প্রকাশভঙ্গি ও ভাষা গুরুগম্ভীর হলে চলবে না।
বাংলা ভাষায় রচিত প্রবন্ধ সাহিত্য আয়তনে বিশাল এবং গুণগত মানে অতি উত্তম। রাজা রামমোহন রায় থেকে শুরু করে অদ্যাবধি তার প্রবহমাণতা কখনো ব্যাহত বা বাধাপ্রাপ্ত হয় নি।
নির্বাচিত শব্দের অর্থ
অতুলপ্রসাদ সেন (১৮৭১-১৯৩৪)-- জন্ম ঢাকায় ১৮৭১ এর ২০ অক্টোবর এবং মৃত্যু লখ্নৌ শহরে ১৯৩৪ সালের ২৬ আগস্ট। তিনি ব্রাহ্মণ ছিলেন। ব্যারিস্টারি পাস করে স্বাধীনভাবে ওকালতি ব্যবসা শুরু করেন। সংগীত রচনার জন্য বাঙালির সংস্কৃতিজগতে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর ভক্তিগীতি ও দেশাত্মবোধক গান অদ্যাবধি জনপ্রিয়।
অনুগামী--অনুসরণকারী; সহচর; সহযাত্রী।
অভিব্যক্তি-- প্রকাশ; বিকাশ।
অরূপরতন-- রবীন্দ্রনাথের সাংকেতিক নাটক;
এইচ.জি.ওয়েল্স্--(১৮৬৬-১৯৪৬)-- ইংরেজ ঔপন্যাসিক, সাংবাদিক ও ঐতিহাসিক; বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির স্রষ্টা।
একাঙ্কিকা-- এক অঙ্কের নাটক।
এর্ড্গা অ্যালান পো (১৮০৯-৪৯)-- আমেরিকার কবি; গল্পকার ও সমালোচক।
এরিস্টোট্ল্ (খ্রিষ্টপূর্ব ৩৮৪-৩২২ অব্দ)-- গ্রিক দার্শনিক, বিজ্ঞানী ও সাহিত্যতাত্তিক; দার্শনিক পে−টোর শিষ্য ছিলেন।
কপালকুন্ডলা-- ঊনবিংশ শতাব্দির অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি উপন্যাস; উপন্যাসের নামকরণ হয়েছে নায়িকার নামে।
কালাপাহাড়-- একটি ঐতিহাসিক চরিত্র। হিন্দুধর্মবিদ্বেষী এক সেনাপতি; তিনি দুর্ধর্ষ ও নিষ্ঠুরপ্রকৃতির ছিলেন। গিরিশচন্দ্র ঘোষ (১৮৪৪-১৯১২)Ñ বাংলা নাটকের যুগন্ধর পুরুষ। নাট্যরচনার পাশাপাশি অভিনয়ও করতেন।
গীতিকবিতা-- আত্মনিষ্ঠ কবিতা।
চন্দ্রগুপ্ত--প্রাচীন ভারতবর্ষের এক বিখ্যাত নৃপতি; রাজত্বকাল ৩২০ থেকে ৩৩০ খ্রিস্টাব্দ; কবি ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের (১৮৬৩-১৯১৩) বিখ্যাত নাটক ‘চন্দ্রগুপ্ত’ ১৯১১ সালে প্রকাশিত হয়।
চন্দ্রশেখর-- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি উপন্যাস।
ছন্দোবদ্ধ-- ছন্দে রচিত।
জনা-- পৌরাণিক নাটক।
ডাকঘর-- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত নাটক।
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৮-১৯৭১)-- আধুনিক বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত ঔপন্যাসিক ও গল্পকার। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩-১৯১৩)-- কবি, নাট্যকার ও সংগীত রচয়িতা; তাঁর ‘শাজাহান’ ও ‘চন্দ্রগুপ্ত’ অত্যন্ত জনপ্রিয় নাটক।
পদ্য-- ছন্দবদ্ধ রচনা; ছন্দযুক্ত বাক্য বা শ্লোক।
পরিস্ফুটন--স্পষ্টভাবে প্রকাশিত; সুস্পষ্ট।
প্রশমিত-- নিবারিত; শান্ত; দমিত।
বনবাস-- অরণ্যে নির্বাসন।
ভাবোচ্ছাস--ভাব বা আবেগের প্রাবল্য।
মহাকাব্য-- পুরাণ বা ইতিহাস থেকে বৃত্তান্ত নিয়ে রচিত দেবতা, রাজা বা বীরকে নায়ক করে বিশেষ নিয়মে ও রীতিতে রচিত কাব্য, যে কাব্যে জীবন ও জগৎ ব্যাপকভাবে চিত্রিত হয়।
মেঘনাদ-বধ--কবি ও নাট্যকার মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত আধুনিক বাংলা মহাকাব্য।
মহাভারত-- প্রাচীন ভারতবর্ষে রচিত মহাকাব্য।
রথ-- প্রাচীন অশ্বাদি বাহিত যান; প্রাচীন যুদ্ধ শকট বা যান।
রামায়ণ-- প্রাচীন ভারতবর্ষে রচিত মহাকাব্য।
লঙ্কা দ্বীপ-- সিংহল দ্বীপ; বর্তমান নাম শ্রীলঙ্কা।
হরণ-- চুরি; বলপূর্বক কেড়ে নেওয়া।
আবু ইসহাক-- (১৯২৬-২০০৩) বাংলাদেশের বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক।
উপজীব্য--জীবিকার বা প্রয়োজনের জন্য গ্রহণযোগ্য।
দৃশ্যকাব্য-- প্রাচীন অলংকারশাস্ত্রে নাটককে দৃশ্যকাব্য বলা হত।
দীনবন্ধু মিত্র (১৮৩০-৭৩)-- বাংলা নাট্যসাহিত্যের যুগস্রষ্টা লেখক; ‘নীলদর্পণ’ (১৮৬০) তাঁর সর্বাধিক খ্যাত নাটক, ‘সধবার একাদশী’ তাঁর বিখ্যাত প্রহসন।
নকশীকাঁথার মাঠ-- পলি−কবি জসীম উদ্দীন রচিত আখ্যান কাব্য।
নীলদর্পণ-- দীনবন্ধু মিত্রের নাটক; দেশের তৎকালীন শাসনকর্তা ব্রিটিশদের হুকুমে বাধ্যতামূলক নীলচাষ করানোর সমালোচনা করে এই নাটক রচিত হয়েছিল। প্রামাণ্য- বিশ্বাসযোগ্য; দলিলসিদ্ধ।
প্রফুল্ল-- নাট্যকার ও অভিনেতা গিরিশচন্দ্র ঘোষের লেখা নাটক।
প্রহসন-- উপন্যাস বা নাটকের রচনাশৈলী অবলম্বনে হাস্যরসাত্মক রচনা।
প্লট-- গল্প, উপন্যাস বা নাটকের কাহিনিসজ্জাকে পন্ঢট বলা হয়। পৌরাণিক
নাটক--পুরাণের কোনো কাহিনি অবলম্বনে রচিত নাটক।
বনফুল-- গল্পকার ও ঔপন্যাসিক বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের ছদ্মনাম বা লেখক নাম।
বন্দে মাতরম-- এই দু শব্দের অর্থ জননীকে অর্থাৎ মাকে বন্দনা করি; বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসে স্বরচিত এই গানটি যুক্ত করেছেন। বিচিত্র প্রবন্ধÑ রবীন্দ্রনাথ রচিত একটি প্রবন্ধ সংকলনগ্রন্থ।
বিষবৃক্ষ--বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত উপন্যাস।
বৈষ্ণব কবিতা-- মধ্যযুগের বাংলাদেশে প্রচলিত গীতিকবিতা ও গান।
মঙ্গলকাব্য-- বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে রচিত এক ধরনের কাহিনি-কাব্য।
মহাভারত-- প্রাচীন ভারতবর্ষে দুটি মহাকাব্যের একটি, অন্যটি রামায়ণ, মূল রচনা সংস্কৃত ভাষায় লিখিত হয়েছিল, কয়েকশত বৎসর পরে বাংলায় অনূদিত হয়।
মহারাষ্ট্র জীবনপ্রভাত-- উনিশ শতকের ঔপন্যাসিক রমেশচন্দ্র দত্ত রচিত ঐতিহাসিক উপন্যাস।
মাধবী কঙ্কণ-- রমেশচন্দ্র দত্ত রচিত উপন্যাস।
মেঘনাদবধ কাব্য-- কবি ও নাট্যকার মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-৭৩) রচিত আধুনিক বাংলা মহাকাব্য।
রক্তকরবী-- রবীন্দ্রনাথ রচিত সাংকেতিক নাটক।
রজনীকান্ত সেন (১৮৬৫-১৯১০)-- সিরাজগঞ্জের ভাঙাবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্বরচিত গানের সুকণ্ঠ গায়ক ছিলেন। তাঁর দেশাত্মবোধক গান বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। রমেশচন্দ্র দত্ত (১৮৪৮-১৯০৯)-- কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম বাঙালি কমিশনার এবং খ্যাতনামা ঔপন্যাসিক। বঙ্গবিজেতা, মাধবীকঙ্কন, জীবন-প্রভাত, জীবন-সন্ধ্যা, সংসার, সমাজ তাঁর উলে−খযোগ্য উপন্যাস, ‘রাজপুত-জীবনসন্ধ্যা’ রমেশচন্দ্র দত্ত রচিত ঐতিহাসিক উপন্যাস।
রাজপুত জীবনসন্ধ্যা-- রমেশচন্দ্র দত্ত রচিত ঐতিহাসিক উপন্যাস। রাজা রামমোহন রায় (১৭৭২-১৮৩৩৪)-- পন্ডিতমবঙ্গের হুগলিতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। সমাজ-সংস্কারক, ধর্মসংস্কারক ও বহু ভাষাবিদ পন্ডিত। বাংলা গদ্যের প্রস্তুতিপর্বের শিল্পী। ‘বেদন্তগ্রন্থ’, ‘বেদান্তসার’, ‘গৌড়ীয় ব্যাকরণ’ তাঁর উলে−খযোগ্য গ্রন্থ। রামপ্রসাদ সেন (আনু:১৭২৩-৮১)-- কবি ও সংগীত রচয়িতা; ভক্তিগীতি রচনার জন্য বিখ্যাত; এঁর গানকে ‘রামপ্রসাদী’ আখ্যা দেওয়া হয়। শহীদুল্লা কায়সার (১৯২৭-৭১)-- ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে শহিদ হন।
শাজাহান-- নাট্যকার ও কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
সারসংক্ষেপ
সাহিত্যের রূপ বলতে বোঝায় সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা। আর রীতি হল বিভিন্ন শাখার রচনাশৈলী। কবিতা সাহিত্যের খুব গুরুত্বপূর্ণ শাখা। এর প্রধান ভাগ দুটি: মহাকাব্য আর গীতিকবিতা। মহাকাব্যে সাধারণত একটি দীর্ঘ কাহিনি আর অসংখ্য খন্ডকাহিনি ছন্দোবদ্ধভাবে প্রকাশ করা হয়। গীতিকবিতায় থাকে কবির ব্যক্তিগত অনুভূতির প্রকাশ। নাটক অতি প্রাচীন সাহিত্যরূপ। ট্র্যাজেডি, কমেডি আর প্রহসন এর তিন প্রধান ভাগ। মঞ্চে দর্শকদের জন্য উপস্থাপনই নাটকের মূল লক্ষ্য। ছোটগল্প সাহিত্যের নবীনতম শাখা। ছোটগল্পে সাধারণভাবে একটি বাহুল্যবর্জিত ছোট কাহিনি উপস্থাপিত হয়।
ভাবের দিক থেকেও তা একমুখী। অন্যদিকে উপন্যাসে থাকে লম্বা কাহিনি। কাহিনিকে বিশেষভাবে সাজিয়ে চরিত্রের মধ্য দিয়ে উপন্যাস জীবনের পূর্ণ পরিচয় প্রকাশ করতে চায়। ছোটগল্প ধরতে চায় একটি মুহূর্তকে; আর উপন্যাসের লক্ষ্য বিস্তৃত জীবন। প্রবন্ধ অন্য চারটি সাহিত্যরূপ থেকে আলাদা। এতে কল্পনার প্রাধান্যও থাকে না, কাহিনিও থাকে না। তথ্য ও বিশ্লেষণে সাজিয়ে প্রবন্ধে লেখক নিজের চিন্তা, মনোভাব বা অনুভূতি প্রকাশ করতে চান।
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১. সাহিত্যের প্রধান লক্ষণ কোনটি?
ক. সৃজনশীলতা খ. গতানুগতিকতা
গ. হাস্যরস ঘ. করুণ রস
২. মানব চরিত্রের যে দিকটি হাস্যরসের সৃষ্টি করে তা যার উপজীব্য-
ক.গ্রুপ থিয়েটার খ.কমেডি
গ. প্রহসন ঘ. ক্যাম্পু থিয়েটার
নিচের উদ্দীপকটি পড়ুন এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দিন :
গীতিকবিতায় কবি হৃদয়ের বিশেষ অনুভূতি অনবদ্যরূপে ফুটে ওঠে। কবি হৃদয়ের ব্যক্তিগত অনুভূতি এর উপজীব্য,
সঙ্গীতের ব্যঞ্জনার মধ্য দিয়ে এর প্রকাশ।
৩. উদ্দীপকটি আপনার পঠিত কোন রচনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ?
ক. বাঙলা শব্দ খ. সাহিত্যের রূপ ও রীতি
গ. বাঁধ ঘ. পালামৌ
৪. উদ্দীপক ও ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধ অনুযায়ী গীতিকবিতার বৈশিষ্ট্য-
i. কবির হৃদয়ের অনুভূতি ii. সমাজ চিত্র iii. কাহিনির রূপায়ণ
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i খ. ii
গ. iii ঘ. i, ii ও iii
১. সাহিত্যের প্রধান লক্ষণ কোনটি?
ক. সৃজনশীলতা খ. গতানুগতিকতা
গ. হাস্যরস ঘ. করুণ রস
২. মানব চরিত্রের যে দিকটি হাস্যরসের সৃষ্টি করে তা যার উপজীব্য-
ক.গ্রুপ থিয়েটার খ.কমেডি
গ. প্রহসন ঘ. ক্যাম্পু থিয়েটার
নিচের উদ্দীপকটি পড়ুন এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দিন :
গীতিকবিতায় কবি হৃদয়ের বিশেষ অনুভূতি অনবদ্যরূপে ফুটে ওঠে। কবি হৃদয়ের ব্যক্তিগত অনুভূতি এর উপজীব্য, সঙ্গীতের ব্যঞ্জনার মধ্য দিয়ে এর প্রকাশ।
৩. উদ্দীপকটি আপনার পঠিত কোন রচনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ?
ক. বাঙলা শব্দ খ. সাহিত্যের রূপ ও রীতি
গ. বাঁধ ঘ. পালামৌ
৪. উদ্দীপক ও ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধ অনুযায়ী গীতিকবিতার বৈশিষ্ট্য-
i. কবির হৃদয়ের অনুভূতি ii. সমাজ চিত্র iii. কাহিনির রূপায়ণ
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i খ. ii
গ. iii ঘ. i, ii ও iii
৫. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত অধিকাংশ প্রবন্ধ-
ক. রম্যরচনা খ. মন্ময় প্রবন্ধ
গ. তন্ময় প্রবন্ধ ঘ. অভিসন্দর্ভ
৬. উপন্যাস জনপ্রিয়তার শীর্ষে কেন?
ক. গদ্যে রচিত খ. পদ্যে রচিত
গ. সুখপাঠ্য ঘ. মনোগ্রাহী
নিচের উদ্দীপকটি পড়ুন এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দিন :
একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে ছোটগল্পের শুরুটা হয় নাটকীয়। আবার এর শেষটাতে রয়ে যায় অতৃপ্তি।
৭. উদ্দীপকটি ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধের কোন বিষয়কে নির্দেশ করে?
ক. কবিতা খ. উপন্যাস
গ. মহাকাব্য ঘ. ছোটগল্প
৮. উদ্দীপক এবং ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধে মিল রয়েছে ছোটগল্পের যে বিষয়টিতে-
i. গঠনরীতিতে ii. শিল্পরীতিতে iii. সমাজ চিত্রে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i খ. ii
গ. iii ঘ. i, ii
৯. ‘বাঙালি বলিয়া লজ্জা নাই’ গ্রন্থটির লেখক কে?
ক. হায়াৎ মামুদ খ. কবির মামুদ
গ. কবীর চৌধুরী ঘ. প্রমথ চৌধুরী
১০. বিষয়বস্তু ও ভাবগত দিক দিয়ে গীতিকবিতা-
i. কবির লিপিকুশলতা ii. কবির অভিব্যক্তি iii. কবির মানবতাবোধ
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i
গ. ii ঘ. iii
১১. ‘যা নেই ভারতে তা নেই ভারতে।’ -মন্তব্যটি করা হয়েছে সাহিত্যের যে রূপ সম্পর্কে-
ক. প্রবন্ধ খ. গীতি কবিতা
গ. ছোটগল্প ঘ. মহাকাব্য
১২. ‘জীবনের খন্ডাংশকে লেখক যখন রস-নিবিড় করিয়া ফুটাইতে পারেন, তখনই উহার সার্থকতা।’ -উদ্দীপক এবং
‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধ অনুসারে উক্তিটি যে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য-
ক. মহাকাব্য খ. ছোটগল্প
গ. উপন্যাস ঘ. নাটক
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তরমালা
১. ক ২. খ ৩. খ ৪. ক ৫. খ ৬. গ ৭. ঘ ৮. ক ৯. ক ১০. ক ১১. ঘ ১২. খ
সৃজনশীল প্রশ্ন-১
সমালোচকের মতে ছোটগল্পে মানব জীবনের ছোট ছোট দুঃখ কথা থাকে। এতে বর্ণনার ছটা নেই, থাকে না ঘটনার ঘনঘটা। জীবনের গূঢ় তত্ত¡ কিংবা উপদেশেরও কোন বালাই নেই ছোটগল্পে। ছোটগল্প পাঠ শেষে অন্তরে অতৃপ্তি রয়ে যাবে এবং মনে হবে যেন শেষ হয়েও শেষ হল না।
ক. বাংলা সাহিত্যে প্রথম সার্থক উপন্যাস রচয়িতা কে?
খ. ‘প্রবন্ধের উদ্দেশ্য পাঠকের জ্ঞানতৃষ্ণাকে পরিতৃপ্ত করা।’ -কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধের কোন বিষয়টি উল্লিখিত হয়েছে? -আলোচনা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধের সমগ্র ভাবকে নয় একটি মাত্র অংশকে তুলে ধরেছে।বিশ্লেষণ কর।
”
সৃজনশীল প্রশ্ন-১ উত্তর
ক. বাংলা সাহিত্যে প্রথম সার্থক উপন্যাস রচয়িতা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
খ. উক্তিটির মাধ্যমে লেখক পাঠকের কাছে প্রবন্ধের গ্রহণযোগ্যতার মানদন্ড ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠার বিষয়কে নির্দেশ করেছেন। জ্ঞানবিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য,শিল্পকলা প্রভৃতি ব্যাপার নিয়ে যেসব তত্ত কেন্দ্রিক, বস্তুগত ও চিন্তামূলক গদ্য নিবন্ধ রচিত হয় সেগুলোকে প্রবন্ধ সাহিত্য বলে।
প্রবন্ধের উদ্দেশ্য পাঠকের জ্ঞানতৃষ্ণাকে পরিতৃপ্ত করা। প্রবন্ধে লেখকের পান্ডিত্য, বুদ্ধি, জ্ঞান ও ব্যক্তি হৃদয়ের পরিচয় ফুটে ওঠে। অজানা তথ্য সম্পর্কে পাঠক মনে জানার আকাক্সক্ষা জাগে। মূলত তা পূরণ করাই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য।
গ. উদ্দীপকটি ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধে সাহিত্যের অন্যতম রূপ ছোটগল্পকে নির্দেশ করে। মহাকাব্য, নাটক, উপন্যাসের তুলনায় ছোটগল্প বাংলা সাহিত্যের নবীন অতিথি তথা আধুনিককালের সৃষ্টি। তবে দেশীয় গল্পকারদের হাতে এটি অল্প সময়ে বাংলা সাহিত্যে বেশ জনপ্রিয় ও সমৃদ্ধ শাখায় পরিণত হয়েছে।
উদ্দীপকে যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্যকেই ধারণ করে। ছোটগল্পের ক্ষেত্রে ‘শেষ হয়েও হইল না শেষ’ কথাটি গুরুত্বপূর্ণ। ছোটগল্পের পরিসমাপ্তি হবে ব্যঞ্জনাময়, অর্থাৎ পাঠকের হৃদয়ে একটা অতৃপ্তির বেদনাবোধ জন্ম নেয়। পাঠক চিন্তায় পড়ে যান, এর পরে যেন কী হয়? এই যে একটি আক্ষেপ তাই ছোটগল্পের প্রাণ। উদ্দীপকে বলা হয়েছে গূঢ় তত্ত কিংবা উপদেশেরও কোন বালাই নেই ছোটগল্পে; শেষ হয়েও শেষ হয় না। গল্পের পাঠক প্রশ্নের উত্তর না পাওয়ার আগেই পরিসমাপ্তি টানা হয়েছে। এটিকে ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধে ছোটগল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য রূপে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধে সাহিত্যের সকল শাখার প্রতিনিধিত্ব করে না। সাহিত্য মানব জীবনের চিত্র। এই চিত্র রূপায়ণে এর বিভিন্ন দিক রয়েছে। যেমন-কবিতা, ছোটগল্প, মহাকাব্য, উপন্যাস, প্রবন্ধ ইত্যাদি। শুধু ছোটগল্প বা মহাকাব্য নয় সাহিত্যের রয়েছে নানা স্তর। এগুলোও আবার নানা শাখাপ্রশাখায় বিভক্ত। সাহিত্য যেন বটবৃক্ষের মত ছায়া বিস্তার করে পাঠকের মনোরঞ্জন করে।
সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধে লেখক সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি উপস্থাপন করেছেন। সাহিত্য বিশাল পরিধির একটি বিষয় বলে তিনি তাঁর প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন। তারপর তিনি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছেন। এই বিবরণে বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন দিক ফুটে উঠেছে। ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধে ছোটগল্প ছাড়াও কবিতা, মহাকাব্য, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ ইত্যাদির রূপ-রীতির সুস্পষ্ট বর্ণনা লেখক দিয়েছেন।
সাহিত্যের কোনো শাখা অন্য শাখার সাথে মিলে না। প্রত্যেক শাখার রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। উদ্দীপকে বলা হয়েছে মানব জীবনে ছোট ছোট দুঃখ-কথা থাকে; বর্ণনার ছটা নেই; অন্তরে অতৃপ্তি রয়ে যাবে; শেষ হয়েও শেষ হবে না- এগুলো ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্য। উদ্দীপকে শুধু ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্যই ফুটে উঠেছে। বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার নাম, সংজ্ঞার্থ, সাধারণ বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ, বিশেষ বিশেষ সাহিত্যকর্ম ও সাহিত্যের ফর্ম লেখক সংক্ষিপ্ত পরিসরে উল্লেখ করেছেন আলোচ্য প্রবন্ধে। এতে শুধু গল্পের আলোচনা প্রাধান্য পায়নি, সাহিত্যের অন্যান্য রূপও আলোচিত হয়েছে। কিন্তু উদ্দীপকটি কেবল ছোটগল্পকেই নির্দেশ করেছে। তাই বলা যায় মন্তব্যটি যথার্থ হয়েছে।
নিজে কর
সৃজনশীল প্রশ্ন-২
ট্র্যাজেডি রসের দিক হতে বিশেষ ধরনের নাটক। এ জাতীয় নাটকে নায়কের ব্যক্তিগত দুর্বলতা বা সামান্য ভুল-ভ্রান্তির জন্য জীবনে অনর্থ এসে পড়ে। কখনো দৈব বা অদৃষ্ট-পীড়িত হয়ে তাকে কালগ্রাসে পতিত হতে হয়। নাট্যকার বিশেষ গুরুগম্ভীর বাণীভঙ্গিতে নায়কের জীবনের নিদারুণ বেদনাকে রূপ দান করেন। নায়ক গভীর অন্তর্দ্ব›দ্ব ও বহির্দ্বন্দ্ব দ্বারা ক্ষতবিক্ষত হতে থাকে, একদিকে তাঁর আপনার সঙ্গে আপনার দ্বন্দ, অপর দিকে বাইরের ঘটনাপুঞ্জের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব ।
ক. মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত মহাকাব্যের নাম কী?
খ. ‘নাটক প্রধানত দৃশ্যকাব্য’- বুঝিয়ে বল।
গ. উদ্দীপকটিতে ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধের কোন শাখার বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে?
ঘ. ‘উদ্দীপকে সব ধরণের নাটক নয়, কেবল একটি বিশেষ শ্রেণির নাটকের বর্ণনা রয়েছে।’ ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধের আলোকে মূল্যায়ন কর।
সৃজনশীল প্রশ্ন :৩
মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে
মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।
এই সূর্যকরে এই পুষ্পিত কাননে
জীবন্ত হৃদয়-মাঝে যদি স্থান পাই!
ক. বেল্ লের্ৎ (belle letre) কী?
খ. ‘ঔপন্যাসিকা’ বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকটি ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধে গীতিকবিতার যে বিষয়টি প্রকাশিত করে তা আলোচনা কর।
ঘ. “‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধে আলোচিত গীতিকবিতার বৈশিষ্ট্যগুলো উদ্দীপকে প্রকাশিত হয়েছে।” বিশ্লেষণ কর।
অর্ডিনেট আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url