এইচ এস সি পদার্থবিজ্ঞান ২য় পত্র ৭ম অধ্যায় ভৌত আলোকবিজ্ঞান
ভৌত আলোকবিজ্ঞান
Physical Optics
সূচীপত্র
ভূমিকা (Introduction)
১৮৬৪ সালে বিজ্ঞানী জেম্স ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল আলোর তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গ তত্ত্বের প্রবর্তন করেন। তার মতে তড়িৎ ক্ষেত্র তরঙ্গ ও চৌম্বক ক্ষেত্র তরঙ্গের সমন্বয়ে গঠিত তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গ আকারে আলো সঞ্চালিত হয়। ১৮৮৭ সালে বিজ্ঞানী হেনরিক হার্জ ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্বের পরীক্ষামূলক প্রমাণে সমর্থ হন। এর প্রায় দু’শ বছর আগে ডাচ্ বিজ্ঞানী ক্রিষ্টিয়ান হাইগেন্স (Christian Huygens) ১৬৭৮ সালে আলোর তরঙ্গ তত্ত্বের উপস্থাপন করেন।
তার মতে মহাবিশ্বে সর্বত্র এবং সকল বস্তুর মধ্যে ইথার নামক এক প্রকার মাধ্যম বাহিত হয়ে আলো অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গাকারে সঞ্চালিত হয়। আলোক তরঙ্গ যখন রেটিনার উপর আপতিত হয় তখন দৃষ্টির অনুভূতি জন্মে। তরঙ্গ দৈর্ঘ্যরে ভিন্নতা থেকে বিভিন্ন বর্ণের অনুভূতি সৃষ্টি হয়। তরঙ্গ তত্ত্বের সাহায্যে প্রতিফলন, প্রতিসরণ, ব্যতিচার, অপবর্তন ইত্যাদি আলোকীয় ঘটনার ব্যাখ্য প্রদান করা সম্ভব হয়।
পাঠ ৭.১: তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গ
Electromagnetic Waves
এ পাঠের শেষে তুমি-
- তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করতে পারবে।
৭.১.১ তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গ (Electromagnetic Waves): বিজ্ঞানী জেম্স ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল (James
Clerk Maxwell) ১৮৬৫ সালে আলোকে তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গরূপে উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন আলো
তড়িৎক্ষেত্র (Electric field) ও চৌম্বক ক্ষেত্রের (Magnetic field) চলতরঙ্গ অর্থাৎ আলো একটি তড়িৎচুম্বক তরঙ্গ। এই সময় দৃশ্যমান আলো, অবলোহিত ও অতিবেগুনী রশ্মি ছাড়া অন্য কোনো তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গের অস্তিত্ব জানা ছিল না।
ম্যাক্সওয়েলের তড়িতচৌম্বক তত্ত্ব অনুসারে, যে কোনো তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গের গতি পথের প্রতিটি বিন্দুতে তড়িৎক্ষেত্র ও চৌম্বক ক্ষেত্র বিদ্যমান। এই ক্ষেত্র দুটি সরল ছন্দিত স্পন্দনে কম্পিত হতে থাকে এবং এই কম্পন এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে সঞ্চালিত হয়। এই ভাবে তড়িতচৌম্বক তরঙ্গ বিস্তার লাভ করে। তড়িৎক্ষেত্র ও চৌম্বক ক্ষেত্র কোনো জড় মাধ্যম ছাড়াই চারিদিকে ছড়িয়ে পরতে পারে। অর্থাৎ তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গ সঞ্চালনের জন্য কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না। এই তরঙ্গ শূন্য মাধ্যমেও চলাচল করতে পারে।
তরঙ্গগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন নাম দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যরে পালার একটি তালিকা এবং এর বিভিন্ন অংশের বর্ণনা নিচে দেয়া হলো তবে তরঙ্গদৈর্ঘ্যরে এই পালা খুব সুনির্দিষ্ট নয়।
সারসংক্ষেপ
বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
পাঠ ৭.১ ১গ ২খ
পাঠ ৭.২:তরঙ্গ : হাইগেনস্ এর নীতি
Waves : Huygens’ Principles
এ পাঠের শেষে তুমি-
- তরঙ্গ ও তরঙ্গমুখের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারবে।
- তরঙ্গ সঞ্চালন সংক্রান্ত হাইগেনস্ এর নীতি ব্যাখ্যা করতে পারবে।
৭.২.১ তরঙ্গ ও তরঙ্গমুখের ধারণা (Concept of Wavefront):
স্থির পানিতে ঢিল ফেললে তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। ঢিলটি যেখানে পড়ে সেই স্থান থেকে নির্দিষ্ট বেগে পানির তলের উপর চারিদিকে এই তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে। পনির কণা কিন্তু তরঙ্গের সাথে অনুভূমিক ভাবে ছড়ায় না বরং একই স্থানে থেকে উলম্ব বরাবর কম্পিত হতে থাকে। ধরা যাক, আলোড়নের কেন্দ্র থেকে কিছু দূরে অবস্থিত একটি পানির কণার উলম্ব সরণ সর্বাধিক। সে সময় আলোড়ন কেন্দ্র অর্থৎ তরঙ্গ উৎস থেকে ঐ কণার দূরত্বের সমান ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট বৃত্তের পরিধি উপর অবস্থিত অন্য সব উলম্ব সরণ সর্বাধিক। সুতরাং তরঙ্গ উৎস থেকে সমদূরত্বে থাকা প্রতিটি কণা যে কোনো মুহূর্তে সম দশা সম্পন্ন।
কোনো উৎস থেকে তরঙ্গ যখন শূন্য বা কোনো মাধ্যমে মধ্য দিয়ে সঞ্চালিত হয় তখন শূন্য বা কোনো মাধ্যমের বিন্দুগুলো কম্পিত হতে থাকে। যেকোনো মুহূর্তে একই দশা স¤পন্ন বিন্দুগুলো যে রেখায় বা তলের উপর অবস্থিত থাকে তাকে তরঙ্গমুখ বলে।
ত্রিমাত্রিক স্থানে কোনো বিন্দু কম্পিত হলে যে তরঙ্গের সৃষ্টি হয় সেটি ত্রিমাত্রিক তরঙ্গ। এই ক্ষেত্রে সেই বিন্দুকে কেন্দ্র করে একটি গোলক কল্পনা করলে ঐ গোলকের পৃষ্ঠের উপর অবস্থিত বিন্দুগুলি সমদশা সম্পন্ন। সুতরাং এই ক্ষেত্রে গোলকীয় তরঙ্গমুখ পাওয়া যাবে। আর যদি গোলকের ব্যাসার্ধ খুব বড় হয় তবে সেক্ষেত্রে গোলকীয় তরঙ্গমুখের ক্ষুদ্র অংশকে সমতল তরঙ্গমুখ হিসাবে বিবেচনা করা যাবে।
তরঙ্গমুখ সাধারণত তিন প্রকারের হয়;
(ক) গোলীয় তরঙ্গমুখ: কোনো বিন্দুউৎস বা ক্ষুদ্র ছিদ্র থেকে আলোক তরঙ্গ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে যে তরঙ্গমুখ অগ্রসর হয় সেটি গোলাকার তরঙ্গমুখ।
(খ) চোঙাকৃতি তরঙ্গমুখ: কোনো রেখা থেকে বা চিড় থেকে আলোক তরঙ্গ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে যে তরঙ্গমুখ অগ্রসর হয় সেটি চোঙাকৃতি তরঙ্গমুখ। কারণ কোনো রেখা উৎস থেকে সমদূরত্বে অবস্থিত বিন্দুগুলো একটি চোঙের তলে অবস্থান করে।
(গ) সমতল তরঙ্গমুখ: অসীমে অবস্থিত উৎস থেকে যে রশ্মিগুলো আসে সেগুলো সমান্তরাল হওয়ায় এর তরঙ্গমুখ সমতল হয়। ফলে সমতল তরঙ্গমুখ সৃষ্টি হয়।
৭.২.২ তরঙ্গমুখের বৈশিষ্ট (Properties of Wavefront):
তরঙ্গমুখের কতকগুলি বৈশিষ্ট আছে, তা নীচে দেয়া হলো।
১। তরঙ্গমুখের যেকোনো বিন্দুতে অঙ্কিত অভিলম্ব ঐ বিন্দুতে তরঙ্গের বেগের দিক নির্দেশ করে।
২। কোনো তরঙ্গের বেগ বলতে প্রকৃত পক্ষে তরঙ্গমুখের বেগকে বোঝায়। অথাৎ, তরঙ্গের বেগ v হলে তরঙ্গমুখের বেগও v ।
৩। তরঙ্গমুখ সমতল বা গোলীয় যাই হোক না কেন,পরস্পর দুটি সমদশা সম্পন্ন তরঙ্গমুখের লম্ব দূরত্বকে ঐ তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য বলে।
৪। একই তরঙ্গমুখের উপর অবস্থিত যে কোনো দুটি বিন্দুর মধ্যে দশা পার্থক্য সর্বদাই শূন্য।
৭.২.৩ হাইগেনস্রে নীতি (Huygens’ Principles):
ডাচ বিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান হাইগেন্স (Christian Huygens) ১৬৭৮ সালে তরঙ্গমুখের সঞ্চালন বিষয়ে একটি জ্যামিতিক পদ্ধতির অবতারণা করেন। তার এই পদ্ধতি প্রয়োগ করলে আলেকের প্রতিফলন, প্রতিসরণ, ব্যাতিচার, অপবর্তন ইত্যাদি খুব সহজেই ব্যাখ্যা করা যায় এবং অনুভব করা যায়। অর্থাৎ আলোকীয় ঘটনাগুলো ব্যাখ্যার জন্য খুব উপযোগী। হাইগেন্সের নীতির সাহায্যে একটি তরঙ্গমুখের আকৃতি ও অবস্থান থেকে পরবর্তী তরঙ্গমুখের আকৃতি ও অবস্থান খুব সহজেই নির্ণয় করা যায়।
হাইগেন্সের নীতিঃ একটি তরঙ্গমুখের উপর অবস্থিত প্রতিটি বিন্দু এক একটি আন্দোলনের ক্ষুদ্র উৎস (গৌণ উৎস) এবং ঐ বিন্দুগুলো থেকে গৌণ তরঙ্গমালা নির্গত হয়ে একই বেগে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ সব গৌণ তরঙ্গমালা সম্মুখ দিকে মোড়ক বিবেচনা করলে বা ঐ সব তরঙ্গমালার সম্মুখ দিক স্পর্শ করে একটি তল অঙ্কন করলে তরঙ্গ মুখের নতুন অবস্থান পাওয়া যায়। এটিই হাইগেন্সের নীতি।
সারসংক্ষেপ :
তরঙ্গমুখ: কোনো উৎস থেকে তরঙ্গ যখন শূন্য বা কোনো মাধ্যমে মধ্য দিয়ে সঞ্চালিত হয় তখন শূন্য বা কোনো মাধ্যমের বিন্দুগুলো কম্পিত হতে থাকে। যেকোনো মুহূর্তে একই দশা সম্পন্ন বিন্দুগুলো যে রেখার বা তলের উপর অবস্থিত থাকে তাকে তরঙ্গমুখ বলে।
গোলীয় তরঙ্গমুখ: কোনো বিন্দু উৎস বা ক্ষুদ্র ছিদ্র থেকে আলোক তরঙ্গ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে যে তরঙ্গমুখ অগ্রসর হয় সেটি গোলাকার তরঙ্গমুখ।
চোঙাকৃতি তরঙ্গমুখ: কোনো রেখা থেকে বা চিড় থেকে আলোক তরঙ্গ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে যে তরঙ্গমুখ অগ্রসর হয় সেটি চোঙাকৃতি তরঙ্গমুখ। কারণ কোনো রেখা উৎস থেকে সমদূরত্বে অবস্থিত বিন্দুগুলো একটি চোঙের তলে অবস্থান করে।
সমতল তরঙ্গমুখ: অসীমে অবস্থিত উৎস থেকে যে রশ্মিগুলো আসে সেগুলো সমান্তরাল হওয়ায় এর তরঙ্গমুখ সমতল হয়। ফলে সমতল তরঙ্গমুখ সৃষ্টি হয়।
হাইগেন্সের নীতি: একটি তরঙ্গমুখের উপর অবস্থিত প্রতিটি বিন্দু এক একটি আন্দোলনের ক্ষুদ্র উৎস (গৌণ উৎস) এবং ঐ বিন্দুগুলো থেকে গৌণ তরঙ্গমালা নির্গত হয়ে একই বেগে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ সব গৌণ তরঙ্গমালা সম্মুখ দিকে মোড়ক বিবেচনা করলে বা ঐ সব তরঙ্গমালার সম্মুখ দিক স্পর্শ করে একটি তল অঙ্কন করলে তরঙ্গ মুখের নতুন অবস্থান পাওয়া যায়। এটিই হাইগেন্সের নীতি।
বহুনির্বাচনী প্রশ্ন:
১। কোনটি আলোর তরঙ্গমুখ নয়?
ক. গোলীয় তরঙ্গমুখ খ. সমতল তরঙ্গমুখ গ. চোঙাকৃতি তরঙ্গমুখ ঘ. রৈখিক তরঙ্গমুখ
২। তরঙ্গমুখের বৈশিষ্ট হিসাবে বলা যায়,
i. তরঙ্গমুখের কোনো বিন্দুতে অঙ্কিত অভিলম্ব ঐ বিন্দুতে তরঙ্গের বেগের দিক নির্দেশ করে।
ii. পরস্পর দুটি সমদশা সম্পন্ন তরঙ্গমুখের লম্ব দূরত্বকে ঐ তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য বলে।
iii. একই তরঙ্গমুখের উপর অবস্থিত যে কোনো দুটি বিন্দুর মধ্যে দশা পার্থক্য সর্বদাই শূন্য।
কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. ii ও iii গ. i ও iii ঘ. i, ii ঘ iii
পাঠ ৭.২ ১ঘ ২ঘ
পাঠ ৭.৩ :হাইগেনস্ এর নীতির সাহায্যে আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরণ ব্যাখ্যা
Explanation of Reflection and Refraction of Light by Huygens’ Principles
সারসংক্ষেপ
বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
পাঠ ৭.৩ ১ঘ ২খ
পাঠ ৭.৪ : আলোর ব্যতিচার : ইয়ং এর দ্বি-চিড় পরীক্ষা
Interference: Young’s Double Slit Experiment
এ পাঠের শেষে তুমি-
- আলোর ব্যতিচার ব্যাখ্যা করতে পারবে।
- ইয়ং এর দ্বিÑচিড় পরীক্ষা বর্ণনা করতে পারবে।
৭.৪.১ উপরিপাতন নীতি (Superposition Principle):
তরঙ্গ প্রবাহের ফলে মাধ্যমের কণাগুলো আন্দোলিত হয়। মাধ্যমের যেকোনো কণার উপর একটি তরঙ্গ এসে আপতিত হলে কণাটির স্বাভাাবিক অবস্থান থেকে সরণ ঘটে। ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গের জন্য সরণ ভিন্ন ভিন্ন। ধরা যাক, মাধ্যমের যেকোনো কণার উপর এক যোগে একাধিক তরঙ্গ আপতিত হলো। এখন, প্রত্যেকটি তরঙ্গ পৃথক পৃথক ভাবে আপতিত হলে মাধ্যমের কণাটির স্বাভাাবিক অবস্থান থেকে পৃথক পৃথক সরণ হত। যেহেতু এক যোগে একাধিক তরঙ্গ আপতিত হয়েছে সেহেতু কণাটির এই সরণগুলো সব একসাথে ঘটেছে। সুতরাং কণাটির একটি লব্ধি সরণ ঘটবে (যেহেতু সরণ একটি ভেক্টর রাশি)। অর্থাৎ কণাটির লব্ধি সরণ হলো পৃথক পৃথক সরণগুলোর ভেক্টর যোগফলের সমান। একেই উপরিপাতন নীতি বলে।
৭.৪.৩ ব্যতিচার (Interference):
দুটি আলোক উৎস থেকে একই বিস্তারের এবং একই তরঙ্গ দৈর্ঘ্যরে আলো নির্গত হয়ে কোনো বিন্দুতে আপতিত হলে উপরিপাতনের ফলে কোথাও উজ্জ্বল এবং কোথাও অন্ধকার সৃষ্টি হয়। আলোর এই উজ্জ্বলতার হ্রাস-বৃদ্ধির ঘটনাকে ব্যতিচার বলে। সমদশা সম্পন্ন আলো রশ্মির উপরিপাতনের ফলে উজ্জ্বল বা চরম এবং বিপরীত দশা সম্পন্ন আলো রশ্মির উপরিপাতনের ফলে অন্ধকার বা অবম-এর সৃষ্টি হয়। এটি একটি অবস্থানিক ঘটনা।
ব্যতিচারের শর্তঃ
১। উৎস দুটি সুসঙ্গত হতে হবে।
২। একই তরঙ্গদৈর্ঘ্যরে আলোক উৎস হতে হবে।
৩। তরঙ্গ দুটির বিস্তার সমান হতে হবে।
৪। তরঙ্গ উৎস দুটি খুব কাছাকাছি হতে হবে।
সারসংক্ষেপ
উপরিপাতন নীতি: তরঙ্গ প্রবাহের ফলে মাধ্যমের কণাগুলো আন্দোলিত হয়। কোন মাধ্যমের মধ্য দিয়ে একাধিক তরঙ্গ সঞ্চালিত হলে কোনো কণা বা বিন্দুর লব্ধি-সরণ ঘটবে। এ লব্ধি-সরণ তরঙ্গগুলো কর্তৃক পৃথক পৃথক সরণের ভেক্টর যোগফলের সমান। একে তরঙ্গের উপরিপাতন নীতি বলে।
সুসঙ্গত উৎস: যদি দুটি আলোক উৎস থেকে সব সময় একই দশার বা একই দশা পার্থক্যের তরঙ্গ নির্গত হয় তবে আলোক উৎস দুটিকে সুসংগত উৎস বলে।
ব্যতিচার: দুটি আলোক উৎস থেকে একই বিস্তারের এবং একই তরঙ্গ দৈর্ঘ্যরে আলো নির্গত হয়ে কোন বিন্দুতে আপতিত হলে উপরিপাতনের ফলে কোথাও উজ্জ্বল এবং কোথাও অন্ধকার সৃষ্টি হয়। আলোর এই উজ্জ্বলতার হ্রাস-বৃদ্ধির ঘটনাকে ব্যতিচার বলে। সমদশা সম্পন্ন আলো রশ্মির উপরিপাতনের ফলে উজ্জ্বল বা চরম এবং বিপরীত দশা সম্পন্ন আলো রশ্মির উপরিপাতনের ফলে অন্ধকার বা অবম-এর সৃষ্টি হয়। এটি একটি অবস্থানিক ঘটনা।
বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
১। একই তরঙ্গদৈর্ঘ্যরে দুটি আলোক উৎসে দশা পার্থক্য সর্বদা সমান থাকলে তাকে বলে
ক. গৌণ উৎস খ. সুসংগত উৎস গ. অসমবর্তিত উৎস ঘ. সমবর্তিত উৎস
২। উপরিপাতনের ফলে ব্যাতিচার ঘটানোর শর্তানুসারে
i. আলোক উৎস দুটি একই তরঙ্গদৈর্ঘ্যরে সুসংগত হতে হবে।
ii. তরঙ্গ দুটির বিস্তার সমান হতে হবে।
iii. তরঙ্গ উৎস দুটি খুব কাছাকাছি হতে হবে।
কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. ii ও iii গ. i ও iii ঘ. i, ii ও iii
পাঠ ৭.৪ ১খ ২ঘ
পাঠ ৭.৫ :ব্যতিচার ডোরার প্রস্থ
Interferance Fringe Width
এ পাঠের শেষে তুমি-
- আলোর ব্যতিচারের শর্তসমূহ বিশ্লেষণ করতে পারবে।
- আলোর ব্যতিচার ডোরার প্রস্থ নির্ণয় করতে পারবে।
সারসংক্ষেপ
বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
পাঠ ৭.৫ ১ঘ ২গ
পাঠ ৭.৬ :আলোর অপবর্তন ও সমবর্তন
Diffraction and polarisation of light
এ পাঠের শেষে তুমি-
- আলোর অপবর্তন ব্যাখ্যা করতে পারবে।
- আলোর সমবর্তন ব্যাখ্যা করতে পারবে।
অপবর্তনঃ আলোক রশ্মির সম্মুখে কোনো তীক্ষ্ম ধার বিশিষ্ট অস্বচ্ছ বস্তু থাকলে বা কোনো সু² চির বা ছিদ্র থাকলে বাধা বা ছিদ্রের ধার ঘেঁষে বাঁক ঘুরে জ্যািমতিক ছায়ার মধ্যে আলোর অনুপ্রবেশ ঘটে। বাঁক ঘুরে জ্যািমতিক ছায়া অঞ্চলে আলোর অনুপ্রবেশের ঘটনাকে আলোর অপবর্তন বলে।
অপবর্তনের শর্তঃ
১। তীক্ষ্ম ধারের ক্ষেত্রে ধার খুব তীক্ষ্ম হতে হবে যেন এর বেধ বা প্রস্থ আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যরে সাথে তুলনীয় হয়।
২। সূক্ষ্ম চিড়ের ক্ষেত্র চিড়ের বেধ খুব সু² হতে হবে যেন এর বেধ বা প্রস্থ আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যরে সাথে তুলনীয় হয় এবং ছিদ্রের ক্ষেত্রে ছিদ্র খুব ক্ষুদ্র হতে হবে যেন এর বেধ আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যরে সাথে তুলনীয় হয়।
৭.৬.২ ব্যতিচার ও অপবর্তনের মধ্যে তুলনা (Comparison between Interference and Diffraction of Light):
(ক) সাদৃশ্য: আলোর ব্যাতিচার ও অপবর্তন উভয় ঘটনাই আলোকতরঙ্গের উপরিপাতনের ঘটনা। অপবর্তনে ঝালর গঠনের কারণ হলো ব্যাতিচার।
(খ) বৈসাদৃশ্য: সাধারণ ব্যাতিচারের সঙ্গে অপবর্তনের কিছু পার্থক্য আছে। ব্যতিচার ও অপবর্তনের মধ্যে পার্থক্য নিম্নে দেয়া হলো।
৭.৬.৩ অপবর্তনের প্রকার (Type of Diffraction):
অপবর্তন দ্ইু প্রকার, যথা: ক) ফ্রনহপার শ্রেণী অপবর্তন এবং (খ) ফ্রেনেল শ্রেণী অপবর্তন।
ফ্রনহফার শ্রেণী অপবর্তনঃ যে সব অপবর্তনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক বা চিড় বা ছিদ্র থেকে আলোক উৎস এবং পর্দা উভয়ই কার্যকরভাবে অসীম দূরত্বে থাকে তাদেরকে ফ্রনহফার শ্রেণী অপবর্তন বলে। এক্ষেত্রে আপতিত তরঙ্গমুখ সমতল হয়।
ফ্রেনেল শ্রেণী অপবর্তনঃ যে সব অপবর্তনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক বা চিড় বা ছিদ্র থেকে আলোক উৎস এবং পর্দা উভয়ই কার্যকরভাবে সসীম দূরত্বে থাকে তাদেরকে ফ্রেনেল শ্রেণী অপবর্তন বলে। এক্ষেত্রে আপতিত তরঙ্গমুখ গোলীয় বা চোঙ আকৃতির হয়।
৭.৬.৪ একক চিড়ের জন্য ফ্রনহফার অপবর্তন (Fraunhofer Diffraction by Single Slit):
সারসংক্ষেপ
অপবর্তনঃ আলোক রশ্মির সম্মুখে কোনো তীক্ষ্ম ধার বিশিষ্ট অস্বচ্ছ বস্তু থাকলে বা কোনো সূ² চিড় বা ছিদ্র থাকলে বাধা বা ছিদ্রের ধার ঘেঁষে বাঁক ঘুরে জ্যািমতিক ছায়ার মধ্যে আলোর অনুপ্রবেশ ঘটে। বাঁক ঘুরে জ্যািমতিক ছায়া অঞ্চলে আলোর অনুপ্রবেশের ঘটনাকে আলোর অপবর্তন বলে।
ফ্রনহফার শ্রেণী অপবর্তনঃ যে সব অপবর্তনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক বা চিড় বা ছিদ্র থেকে আলোক উৎস এবং পর্দা উভয়ই কার্যকরভাবে অসীম দুরত্বে থাকে তাদেরকে ফ্রনহফার শ্রেণী অপবর্তন বলে। এক্ষেত্রে আপতিত তরঙ্গমুখ সমতল হয়।
ফ্রেনেল শ্রেণী অপবর্তনঃ যে সব অপবর্তনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক বা চিড় বা ছিদ্র থেকে আলোক উৎস এবং পর্দা উভয়ই কার্যকরভাবে সসীম দুরত্বে থাকে তাদেরকে ফ্রেনেল শ্রেণী অপবর্তন বলে। এক্ষেত্রে আপতিত তরঙ্গমুখ গোলীয় বা চোঙ আকৃতির হয়।
আলোর সমবর্তন: আলো কোন মাধ্যমের মধ্য দিয়ে গমনের পর আলোক তরঙ্গের ক¤পন একটি নির্দিষ্ট দিকে বা তলে হওয়ার ঘটনাকে বলা হয় আলোর সমবর্তন। কোন আলোক রশ্মির ক¤পন কেবল মাত্র একটি নির্দিষ্ট দিকে বা তলে হলে ঐ আলোকে বলা হবে সমবর্তিত আলো।
সমবর্তক বা পোলারাইজার: যার সাহায্যে আলোর সমবর্তন ঘটানো হয় তাকে বলা হয় সমবর্তক বা পোলারাইজার। বিশ্লেষক বা এ্যানালাইজার: যার সাহায্যে কোনো আলো সমবর্তিত কি না তা নির্দ্ধারণ করা হয় তাকে বলা হয় বিশ্লেষক বা এ্যানালাইজার।
ম্যালাসের সূত্র: সমবর্তিত আলো বিশ্লেষকের মধ্য দিয়ে গমনের ফলে এর তীব্রতা সমবর্তক ও বিশ্লেষকের নিঃসরণ তলের মধ্যবর্তী কোণের পড়ংরহব-এর সমানুপাতিক।
সমবর্তন তল: কম্পন তলের সাথে লম্বভাবে অবস্থিত তলের উপরে আলোকরশ্মিটি বর্তমান, সেই তলটিকে সমবর্তন তল বলে।
সমবর্তন কোণ: যে বিশেষ আপাতন কোণের জন্য কোনো নির্দিষ্ট প্রতিফলক তল থেকে প্রতিফলিত রশ্মি সম্পূর্ণরূপে সমতল সমবর্তিত হয় সেই কোণকে সমবর্তন কোণ বলে। এই কোণকে ঢ়
র দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
ব্রাস্টারের সূত্র: সমবর্তন কোণের ট্যানজেন্টের মান সংখ্যাগতভাবে প্রতিসারক মাধ্যমের প্রতিসরণাংকের সমান।
বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
১। কোনো প্রতিবন্ধকের ধার ঘেষে বা সরু চিরের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় আলোর বেঁকে যাওয়ার ঘটনাকে কি বলে?
ক. প্রতিসরণ খ. অপবর্তন গ. সমবর্তন ঘ. ব্যাতিচার
২। সমবর্তন ঘটে কোন তরঙ্গের ক্ষেত্রে-
ক. শব্দ তরঙ্গ খ. অনুতরঙ্গ গ. অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ ঘ. তির্যক তরঙ্গ
৩। আলোর কম্পনকে আলোর গতির সাথে সমকোণে একটি নির্দিষ্ট তলে সীমাবদ্ধ করার প্রক্রিয়াকে বলে
ক. আলোর ব্যতিচার খ. আলোর অপবর্তন গ. আলোর সমবর্তন ঘ. অপবর্তন প্রতিসরণ
পাঠ ৭.৬ ১খ ২ঘ ৩গ
চূড়ান্ত মূল্যায়ন
বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
চূড়ান্ত মূল্যায়ন উত্তর
১গ ২ঘ ৩খ ৪খ ৫ক ৬খ ৭গ ৮ক
ক. সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন :
১। তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গ কাকে বলে লিখ।
২। তাড়িতচৌম্বক বিকিরণ কি?
৩। তরঙ্গমুখ কাকে বলে লিখ।
৪। সমতল তরঙ্গমুখ কি?
৫। হাইগেন্সের নীতি লিখ।
৬। আলোর ব্যতিচার বলতে কি বোঝ?
৭। ব্যতিচারের শর্তগুলো লিখ?
৮। অপবর্তনের সংজ্ঞা দাও।
৯। অপবর্তনের শর্তগুলি লিখ?
অর্ডিনেট আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url