এইচ এস সি বাংলা ১ম পত্র তাহারেই পড়ে মনে সুফিয়া কামাল || Admission test Lecture sheet bangla 1st Paper tahara pora mone
তাহারেই পড়ে মনে
সুফিয়া কামাল
কবি-পরিচিতি
এইচএসসি বাংলা ১ম পত্র সমাধান রাজশাহী বোর্ড 2023(MCQ)
সূচিপত্র
সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস কুমিল্লায়। তাঁর পিতা সৈয়দ আবদুল বারী ও মাতা সাবেরা বেগম। কবির বয়স যখন মাত্র সাত বছর তখন তাঁর পিতা মারা যান। বারো বছর বয়সে সৈয়দ
নেহাল হোসেনের সঙ্গে কবির বিয়ে হয়। আধুনিকমনা ও সাহিত্যানুরাগী স্বামীর উৎসাহে কবির সাহিত্যসাধনা শুরু। ১৯৩২ সালে স্বামীর আকস্মিক মৃত্যু হয়। অতঃপর ১৯৩৯ সালে কামালউদ্দীন আহমেদের সঙ্গে কবির পুনরায় বিয়ে হয়।
পরিবারের নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে তিনি স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন। বেগম রোকেয়ার চিন্তাধারা তাঁর মনে বেশ প্রভাব ফেলেছিল। দেশভাগের পূর্বে তিনি নারীদের জন্য প্রকাশিত ‘বেগম’ পত্রিকার সম্পাদক হন। ভাষা-আন্দোলনে তিনিসক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং এতে অংশ নিতে নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি শিশু-সংগঠন ‘কচিকাঁচার
মেলা’ প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া ১৯৬১-তে তিনি ‘ছায়ানটে’র সভাপতি ও ১৯৬৯-এ ‘মহিলা সংগ্রাম কমিটি’র সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেন। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি নারী
জাগরণ, সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা তথা সকল প্রগতিবাদী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে শুধু কবি হিসেবেই নয়, ‘জননী’ অভিধায়ও
ভূষিত হয়েছেন। তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি স্বাধীনতা দিবস পদক, একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, বেগম রোকেয়া পদক, নাসির উদ্দীন স্বর্ণপদকসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা
কাব্যগ্রন্থ : সাঁঝের মায়া (১৯৩৮), মায়া কাজল (১৯৫১), মন ও জীবন (১৯৫৭), উদাত্ত পৃথিবী (১৯৬৪);
গল্পগ্রন্থ : কেয়ার কাঁটা (১৯৩৭);
ভ্রমণকাহিনি : সোভিয়েতে দিনগুলি (১৯৬৮);
স্মৃতিকথা : একাত্তরের ডায়েরি (১৯৮৯)।
ভূমিকা
‘তাহারেই পড়ে মনে’ শীর্ষক কবিতাটি সুফিয়া কামালের বিখ্যাত কাব্য সাঁঝের মায়া থেকে সংকলিত হয়েছে। এই কবিতাটি প্রথম ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। কবিতাটি একটি সংলাপ নির্ভর রচনা।এই কবিতায় প্রকৃতি ও মানবমনের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক প্রকাশিত হয়েছে। এখানে কবির ব্যক্তিজীবনের বিভিন্ন ঘটনার ছায়াপাত ঘটেছে। সহজ সরল ভাষায় কবি প্রকৃতি এবং তাঁর হৃদয়ের বেদনাকে অপূর্ব শিল্প নৈপুণ্যে প্রকাশ করেছেন।
উদ্দেশ্য
সুফিয়া কামালের ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি পড়ার পর তুমি ---
- প্রকৃতিতে বসন্তের রূপ বর্ণনা করতে পারবে।
- কবির ব্যক্তিজীবনের ঘটনা কীভাবে তাঁকে বসন্তের রূপ আস্বাদনে বিমুখ করেছিল তা আলোচনা করতে পারবে।
মূলপাঠ
“হে কবি, নীরব কেন ফাগুন যে এসেছে ধরায়,
বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?”
কহিল সে ন্সিগ্ধ আঁখি তুলি
“দক্ষিণ দুয়ার গেছে খুলি?
বাতাবি নেবুর ফুল ফুটেছে কি? ফুটেছে কি আমের মুকুল?
দখিনা সমীর তার গন্ধে গন্ধে হয়েছে কি অধীর আকুল?”
“এখনো দেখনি তুমি?” কহিলাম, “কেন কবি আজ
এমন উন্মনা তুমি? কোথা তব নব পুষ্পসাজ?”
কহিল সে সুদূরে চাহিয়া-
“অলখের পাথার বাহিয়া
তরী তার এসেছে কি? বেজেছে কি আগমনী গান?
ডেকেছে কি সে আমারে? শুনি নাই, রাখি নি সন্ধান।”
কহিলাম, “ওগো কবি! রচিয়া লহ না আজও গীতি,
বসন্ত-বন্দনা তব কণ্ঠে শুনি- এ মোর মিনতি।”
কহিল সে মৃদু মধু-স্বরে-
“নাই হলো, না হোক এবারে-
আমারে গাহিতে গান, বসন্তেরে আনিতে বরিয়া-
রহেনি, সে ভুলেনি তো, এসেছে তা ফাগুনে স্মরিয়া।”
কহিলাম : “ওগো কবি, অভিমান করেছ কি তাই?
যদিও এসেছে তবু তুমি তারে করিলে বৃথাই।”
কহিল সে পরম হেলায়-
“বৃথা কেন? ফাগুন বেলায়
ফুল কি ফোটেনি শাখে? পুষ্পারতি লভেনি কি ঋতুর রাজন?
মাধবী কুঁড়ির বুকে গন্ধ নাহি? করে নাই অর্ঘ্য বিরচন?”
“হোক, তবু বসন্তের প্রতি কেন এই তব তীব্র বিমুখতা?”
কহিলাম, “উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা?”
কহিল সে কাছে সরে আসি-
“কুহেলি উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী-
গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে
রিক্ত হস্তে! তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোনো মতে।”
শব্দের অর্থ
অগোচর-- দেখা যাবে না এমন, অপ্রত্যক্ষ।
অনুৎসুক-- আগ্রহ নেই এমন।
অলখ-- অলক্ষ, দৃষ্টির অগোচরে।
অর্ঘ্য-- পূজারউপকরণ।
অর্ঘ্য বিরচন-- অঞ্জলি বা উপহার রচনা। প্রকৃতি বিচিত্র সাজে সজ্জিত হয়ে ফুল ও তার সৌরভ উপহার
দিয়েবসন্তকে বরণ করে।
উত্তরী-- চাদর, উত্তরীয়।
উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা-- কবিভক্ত বুঝতে পারছেন না, কবি যথারীতি সানন্দে বসন্ত বন্দনা না করে তার দিকে মুখ ফিরিয়ে রয়েছেন কেন।
এখনো দেখনি তুমি?-- কবিভক্তের এ কথায় আমরা নিশ্চিত হই প্রকৃতিতে বসন্তের সব লক্ষণ মূর্ত হয়ে
উঠেছে। অথচ কবি তা লক্ষ করছেন না।
কুহেলি--কুয়াশা।
কুহেলি উত্তরী হলে মাঘের সন্ন্যাসী-- কবি শীতকে মাঘের সন্ন্যাসীরূপে কল্পনা করেছেন। বসন্ত
আসার আগে সর্বত্যাগী সর্বরিক্ত সন্ন্যাসীর মত মাঘের শীত যেন
কুয়াশার চাদরে মিলিয়ে গেছে।
কোথা তব বন পুষ্পসাজ-- বসন্ত এসেছে অথচ কবি নতুন ফুলে ঘর সাজাননি। নিজেও ফুলের
অলংকারে সাজেননি।
করিলে বৃথাই-- ব্যর্থ করলে। অর্থাৎ কবিভক্তের অনুযোগ-বসন্তকে কবি বরণ না করায় বসন্তের
আবেদন গুরুত্ব হারিয়েছে।
তব বন্দনায়-- তোমার রচিত বন্দনাগানের সাহায্যে। অর্থাৎ বন্দনা-গান রচনা করে বসন্তকে কি তুমি
বরণ করে নেবে না?
তাহারেই পড়ে মনে-- প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও কবির মন জুড়ে আছে শীতের রিক্ত ও বিষণু ছবি। কবির
মন দুঃখ ভারাক্রান্ত। তার কণ্ঠ নীরব। শীতের করুণ বিদায়কে তিনি কিছুতেই
ভুলতে পারছেন না। তাই বসন্ত তার মনে কোনো সাড়া জাগাতে পারছে না।
বসন্তের সৌন্দর্য তার কাছে অর্থহীন, মনে কোনো আবেদন জানাতে পারছে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তাঁর প্রথম স্বামী ও কাব্যসাধনার প্রেরণা--পুরুষের আকস্মিক মৃত্যুতে কবির অন্তরে যে বিষণুতা জাগে তারই সুস্পষ্ট প্রভাব ও ইঙ্গিত এ কবিতায় ফুটে উঠেছে।
দক্ষিণ দুয়ার গেছে খুলি?-- কবির জিজ্ঞাসা বসন্তের দখিনা বাতাস বইতে শুরু করেছে কি না।
উদাসীন কবি যে তা লক্ষ করেননি তার এই জিজ্ঞাসা থেকে তা স্পষ্ট হয়।
দিগি¦দিক-- সর্বদিক।
নীরব কেন-- উদাসীন হয়ে আছেন কেন? কেন কাব্য ও গান রচনায় সক্রিয় হচ্ছে না।
পাথার-- সমুদ্র। পুষ্পারতি ফুলের বন্দনা বা নিবেদন।
পুষ্পারতি লভেনি কি ঋতুর রাজন?--ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ ও বন্দনা করার জন্য গাছে গাছে ফুল
ফোটেনি? অর্থাৎ বসন্তকে সাদর অভ্যর্থনা জানানোর
জন্যেই যেন ফুল ফোটে।
পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে-- শীত প্রকৃতিতে দেয় রিক্ততার রূপ। গাছের পাতা যায় ঝরে। গাছ হয়
ফুলহীন। শীতের এ রূপকে বসন্তের বিপরীতে স্থাপন করা হয়েছে। প্রকৃতি বসন্তের আগমনে ফুলের সাজে সাজলেও কবির মন জুড়ে আছে শীতের রিক্ততার ছবি। শীত যেন সর্বরিক্ত সন্ন্যাসীর মতো কুয়াশার চাদর গায়ে পত্রপুষ্পহীন দিগন্তের পথে চলে গেছে।
ফাগুন যে এসেছে ধরায়-পৃথিবীতে ফাল্গুন অর্থাৎ বসন্তের আবির্ভাব ঘটেছে।
বরিয়া-- বরণ করে।
বসন্তেরে আনিতে... ফাগুন স্মরিয়া-- কবি বন্দনা-গান রচনা করে বসন্তকে বর্ণনা করলেও বসন্ত
অপেক্ষা করেনি। ফাল্গুন আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিতে বসন্ত এসেছে।
বাতাবি নেবুর ফুল --অধীর আকুল-- বসন্তের আগমনে বাতাবি লেবুর ফুল ও আমের মুকুলের গন্ধে দখিনা বাতাস দিগি¦দিক সুগন্ধে ভরে তোলে। কিন্তু উন্মনা কবি এসব কিছুই লক্ষ করেননি। কবির জিজ্ঞাসা তাঁর উদাসীনতাকেই স্পষ্ট করে।
মাধবী-- বাসন্তী লতা বা তার ফুল।
রিক্ত-- শূন্য, নিঃস্ব।
রচিয়া-- রচনা করে।
লহ--নাও ।
লবে -- নেবে।
হে কবি-- কবিভক্ত এখানে কবিকে সম্বোধন করেছেন।
সমীর-- বাতাস।
স্মরিয়া-- স্মরণ করে।
সারসংক্ষেপ
কবি সুফিয়া কামাল প্রকৃতি ও মানবমনের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রকৃতির সঙ্গে মানবমনের রং বদলায়। প্রকৃতিতে বসন্ত এলে, প্রকৃতি অপরূপরূপে সজ্জিত হলে তার ঢেউ
মানব মনেও এসে পড়ে। বসন্তে প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য কবিমনে খুশির জোয়ার আনবে, কবিকে ভাবে-ছন্দে-সুরে ফুটিয়ে তুলবেন এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু কোনো কারণে কবির মনে বসন্তের আগমন কোনো প্রভাব ফেলেনি, বসন্ত কবির
হৃদয়কে আন্দোলিত করতে পারছে না। তাঁর দৃষ্টি এখনো শীতের দিকে, শীতকে তিনি কোনোভাবেই ভুলতে পারছেন না।
কবি সুফিয়া কামালের সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক ও উৎসাহদাতা ছিলেন স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেন, যাঁর আকস্মিক মৃত্যু ঘটেছে। তিনি সর্বত্যাগী সর্বরিক্ত সন্ন্যাসীর মতো বিদায় নিয়েছেন- যা শীতের সঙ্গে তুলনীয়। যার
উৎসাহ-উদ্দীপনায় কবি বর্তমানের একজন সফল কবি- যা বসন্তের সঙ্গে তুলনীয়। শীত রিক্তহস্তে চলে যাবার কারণেই বসন্ত এসেছে ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়ে। কিন্তু যে শীত তথা প্রথম স্বামীর কারণেই বসন্ত তথা বর্তমান সফলতারআগমন, সেই শীতকে তিনি কোনো ভাবেই ভুলতে পারছেন না। ফলে প্রকৃতিতে যে বসন্ত তা কবিকে স্পর্শ করছে
শীতরূপে। শীতের রিক্ততার হাহাকার যেন কবির জীবনে স্বজন হারানোর বেদনাকেই প্রতিধ্বনিত করে। এ কবিতায় কবির ব্যক্তিজীবনের ছায়াপাত ঘটেছে।
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১. পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে কে চলে গেছে?
ক.কবির স্বামী খ. মাঘের সন্ন্যাসী
গ. বসন্ত ঋতু ঘ. বসন্তের কোকিল
২.দখিনা সমীর ফুলের গন্ধে আকুল হয়েছে কেন?
ক. নবান্ন উৎসবে খ. শীতের আগমনে
গ. বসন্তের আগমনে ঘ. নববর্ষের উৎসবে
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
ভুলিতে পারি না তারে ভোলা যায় না,
বারে বারে মনে পড়ে কেন জানি না।
৩. উদ্দীপকের চরণদ্বয়ের সঙ্গে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কোন চরণের সাদৃশ্য রয়েছে?
ক. আসিবে এবার ঋতুরাজ বুঝি। খ. তাহারেই পড়ে মনে ভুলিতে পারি না কোনোমতে।
গ. তরী তার এসেছে কি? বেজেছে কি আগমনী গান? ঘ. রহেনি, সে ভুলে নিতে এসেছে ফাগুন স্মরিয়া।
৪. উদ্দীপক ও ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে-
i. স্মৃতিকাতরতা
ii. প্রিয়জন বিচ্ছেদ
iii. জীবন প্রবাহ
নিচের কোনটি সঠিক?
ক.i খ. ii
গ. iii ঘ. i ও iii
৫. ‘পাথার’ শব্দের অর্থ কী?
ক.নদী খ. সমুদ্র
গ. সমীর ঘ. কুয়াশা
৬. ‘পুষ্পারতি’ বলতে বোঝানো হয়েছে-
ক. পুষ্পের সৌন্দর্য খ. শীতের আগমন
গ. পুষ্পের বন্দনা ঘ. নবান্নের উৎসব
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং ৭ ও ৮নং প্রশ্নের উত্তর দাও:
হিম কুহেলির অন্তর তলে আজিকে পুলক জাগে
রাঙিয়া উঠেছে পলাশ কণিকা মধুর রঙিন রাগে।
৭. উদ্দীপকটিতে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কোন বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে-
ক. বসন্তের আগমন খ. কবির বিদায়
গ. প্রকৃতির সৌন্দর্য ঘ. কবির রিক্ততা
৮. উদ্দীপক ও ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় যে সুর ধ্বনিত হয়েছে-
i. প্রকৃতি ও মানবমনের সৌন্দর্য
ii. প্রকৃতির পরিবর্তনশীলতা
iii. জীবনের প্রবহমাণতা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i খ. ii
গ. iii ঘ. i ও ii
বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর
১. খ ২. গ ৩. খ ৪. ক ৫. খ ৬. গ ৭. ক ৮. ঘ
সৃজনশীল প্রশ্ন
যারে খুব বেসেছিনু ভাল
সে মোরে ছেড়ে চলে গেল
যে ছিল মোর জীবন ছায়া
রেখে গেছে শুধু মায়া।
লাগে না ভালো অপরূপ প্রকৃতি
যতই করুক কেউ মিনতি।
ক. ‘দখিন দুয়ার গেছে খুলি?’ -প্রশ্নটি কে করেছিল?
খ. শীতকে কবি ‘মাঘের সন্ন্যাসী’ বলেছে কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কোন দিকটি উপস্থাপিত হয়েছে? -আলোচনা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার মূলভাবকে ধারণ করেছে।” -মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
ক.
‘দক্ষিণ দুয়ার গেছে খুলি?’ ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় এ প্রশ্নটি কবি করেছিলেন।
খ.
শীতের রিক্ততার সঙ্গে নিজের নিঃসঙ্গ জীবনের তুলনা করে কবি সুফিয়া কামাল শীতকে মাঘের সন্ন্যাসী বলেছেন। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রকৃতির পালাবদলে আগমন ঘটেছে ঋতুরাজ বসন্তের। কিন্তু সৌন্দর্যময় বসন্ত কবির অন্তরে
কোনো সাড়া জাগায়নি। কারণ, কবি অতীত দিনের স্মৃতিচারণে বিভোর রয়েছেন। শীত ঋতু পূর্বেই পুষ্পশূন্য হয়েছে, রিক্ত হস্তে বিদায় নিয়েছে দিগন্তের পথে। মূলত শীতের এ রিক্ততার সঙ্গে কবি তাঁর জীবনের শূন্যতার সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন।
এ কারণে তিনি শীতকে ‘মাঘের সন্ন্যাসী’ বলেছেন।
গ.
উদ্দীপকে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার প্রিয়জনকে হারানোয় বেদনার দিকটি উপস্থাপিত হয়েছে। প্রকৃতির মুক্ত আবহে মহাসমারোহে বসন্ত ঋতুর আগমন ঘটেছে অনিন্দ্য সুন্দর রূপরাশি নিয়ে। কিন্তু কবি বসন্তের এ আগমনে সাড়া দিতে পারছেন না। তিনি বসন্তের প্রতি বিমুখ। কবি শীতের রিক্ত নিরব বিদায়ে দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়েছেন।
কেননা শীতের রিক্ত নিরব প্রস্থান কবিমনে তার প্রিয়জন হারানোর স্মৃতিকে মনে করিয়ে দেয়।উদ্দীপকে কবির প্রিয়জন হারানোর গভীর বেদনা প্রকাশিত হয়েছে। উদ্দীপকের কবি যাকে খুব ভালোবেসেছিলেন সে তাকে ছেড়ে চলে গেছে। কবির জন্য রেখে গেছে শুধু মায়া। ফলে অপরূপ প্রকৃতির প্রতিও কবি বিমুখ। তেমনিভাবে ‘তাহারেই
পড়ে মনে’ কবিতায় কবি সুফিয়া কামালের প্রেরণাদাতা তাঁর স্বামী তাঁকে ছেড়ে চলে গেছেন। ফলে কবি রিক্ততা ও শূন্যতায় আচ্ছন্ন হয়েছেন। জীবনে এ গভীর শূন্যতার জন্য কবি প্রকৃতি সম্পর্কে উদাসীন হয়ে পড়েছেন। কবি নিজ হৃদয়ের রিক্ততা
উপলব্ধি করেছিলেন শীতের পুষ্পশূন্য দিগন্তের মাঝে। তাই তিনি বসন্তের রাজকীয় আগমনের চেয়ে শীতের রিক্ত প্রস্থান নিয়ে বেশি ভেবেছেন। উদ্দীপক ও ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতা উভয়টিতে কবি হৃদয়ের রিক্ততা ও বিষণœতা প্রকাশিত হয়েছে।
প্রকৃতিতে বসন্ত এসেছে তার নিজস্ব নিয়মে। কিন্তু কবি আনন্দচিত্তে বসন্তকে বরণ করতে পারছেন না। কেননা তাঁর ব্যক্তিজীবন প্রিয়জন হারানোর বেদনায় ভারাক্রান্ত। শীতের রিক্ত বিদায়ে কবি নিজ প্রিয় প্রেরণাকে হারানোর স্মৃতিতে কাতর
হয়েছেন। তাই বসন্তের প্রাণময় আগমনেও তিনি শীতের প্রস্থানে বিরহকাতর। উদ্দীপকে দেখা যায় কবি তার ভালোবাসার মানুষটি চলে যাওযায় বিরহে কাতর। ভালোবাসার এই মানুষটি তার জীবনে ছায়া হয়ে প্রেরণা দিয়েছিল। তাই তার অনুপস্থিতি কবিকে প্রকৃতির সৌন্দর্যের প্রতি উদাসীন করে তোলে। তার মন কেবল
পড়ে থাকে সেই প্রিয় মানুষের স্মৃতিময়তায়। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায়ও এই স্মৃতিকাতরতা প্রকাশিত হয়েছে। কবি নিজ হৃদয়ের রিক্ততা উপলব্ধি করেছিলেন শীতের পুষ্পশূন্য দিগন্তের বলয়ে। তাই প্রকৃতির সবকিছুতেই তার বিমুখতা দেখা দিয়েছে।
উদ্দীপকের কবিতাংশ ও সুফিয়া কামালের ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতা উভয়টিতেই কবির ব্যক্তিজীবনের বিষাদময় ঘটনা রেখাপাত করেছে। শীতের বিদায়ের মুহূর্তে বসন্তের আগমন ঘটলেও কবির মনে কোনো আবেদন সৃষ্টি হয়নি। শীতের
রিক্ততায় প্রিয়জনকে হারিয়েছেন বলে শীতকে কোনোমতেই কবি ভুলতে পারছেন না। জীবনের ক্ষণে ক্ষণে প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা কবিমনকে নিরবধি আচ্ছন্ন করে রাখে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার মূলভাবকে ধারণ করেছে।
নিজে কর
ওরে আয় রে তবে, মাতরে সবে আনন্দে
আজ নবীন প্রাণের বসন্তে।
পিছন-পানের বাঁধন হতে চল ছুটে আজ বন্যা স্রোত
আপনাকে আজ দখিন-হাওয়ায় ছড়িয়ে দে-রে দিগন্তে।
বাঁধন যত ছিন্ন করো আনন্দে
আজ নবীন প্রাণের বসন্তে।
ক. ‘সাঁঝের মায়া’ কাব্যগ্রন্থটি কার লেখা?
খ. ‘হে কবি নীরব কেন?’ -কবি এখানে কোন কারণে নীরব?
গ. উদ্দীপকে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কোন ভাবের প্রতিফলন ঘটেছে? -ব্যাখ্যা কর ।
ঘ. “ উদ্দীপক ও ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার উদ্দিষ্ট বসন্ত-বন্দনা।” মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
অর্ডিনেট আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url