এইচ এস সি বাংলা ১ম পত্র আমার পথ কাজী নজরুল ইসলাম || Admission test Lecture sheet bangla 1st Paper Amr Poth||

 আমার পথ

 কাজী নজরুল ইসলাম

লেখক-পরিচিতি




সূচিপত্র

কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালের ২৫ মে (বাংলা ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ডাক নাম দুখু মিয়া। তাঁর পিতার নাম কাজী ফকির আহমদ এবং মাতার নাম জাহেদা খাতুন। নজরুল অল্প বয়সেই পিতামাতা দুজনকেই হারান। শৈশব থেকেই দারিদ্র্য আর দুঃখ-কষ্ট ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। স্কুলের ধরাবাধা জীবনে কখনোই তিনি আকৃষ্ট হননি। ছেলেবেলায় তিনি লেটো গানের দলে যোগ দেন। 

পরে বর্ধমানে ও ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার দরিরামপুর হাইস্কুলে লেখাপড়া করেন। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ১৯১৭ সালে ৪৯ নং বাঙালি পল্টনে যোগ দিয়ে করাচি যান। যুদ্ধশেষে নজরুল কলকাতায় ফিরে আসেন ও সাহিত্যসাধনায় মনোনিবেশ করেন। তিনি কিছুদিন মসজিদে ইমামতিও করেন।সাপ্তাহিক বিজলি পত্রিকায় ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রকাশের পর সাহিত্যক্ষেত্রে তিনি বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হন। 

তাঁর লেখায় তিনি বিদেশি শাসক, সামাজিক অবিচার ও অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। নজরুল সাহিত্য রচনা ছাড়াও কয়েক হাজার গানের রচয়িতা। তিনি বেশ কয়েকটি পত্রিকাও সম্পাদনা করেন। তিনি গজল, খেয়াল ও রাগপ্রধান গান রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। আরবি ফারসি শব্দের সার্থক ব্যবহার তাঁর কবিতাকে বিশিষ্টতা দান করেছে। তিনি রবীন্দ্রনাথের তৈরি করা পথে না চলে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে নিজেকে বিকশিত করেছেন।

 সাহিত্যে এনেছেন সাম্যবাদ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা। গল্প, উপন্যাস, নাটক ও প্রবন্ধ রচনায়ও তিনি কুশলতার পরিচয় দিয়েছেন। সম্পাদক এবং সমালোচক হিসেবেও নজরুল খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।নজরুলের উপন্যাসগুলোর পটভুমি গড়ে উঠেছে বিপ্লব ও স্বাধীনতা-আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। দেশপ্রেম এবং নির্যাতিত মানুষের কথা উপন্যাসগুলোতে বাস্তবসম্মতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। নজরুলের ছোটগল্প বেশিরভাগই প্রেমকেন্দ্রিক। 

তিনি মূলত যৌবনের কবি। যৌবনের ধর্মই হল একদিকে যেমন বিদ্রোহ এবং প্রতিবাদ, অন্যদিকে প্রেম। এ দুটো অনুভ‚তিরই সূচনা হয় আবেগের প্রাবল্য থেকে। নজরুলের ভাষণ, সম্পাদকীয়, সমালোচনা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, ছোটগল্প প্রতিটি ক্ষেত্রই ভাষার কাব্যিক ব্যঞ্জনা এবং বলিষ্ঠতায় পূর্ণ। তিনিদৈনিক নবযুগ, ধূমকেতু ও লাঙল পত্রিকায় সম্পাদকের কাজ করেছেন। মাত্র তেতাল্লিশ বছর বয়সে তিনি দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। ১৯৭২ সালে কবিকে ঢাকায় আনা হয় এবং তাঁকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে জাতীয় কবির মর্যাদায় অভিষিক্ত করা হয়।

 কবিকে ঢাকা ও রবীন্দ্র-ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ডিলিট, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’, ভারত সরকার ‘পদ্মভূষণ’ ও বাংলাদেশ সরকার ‘একুশে পদক’ প্রদান করে। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। কাজী নজরুল ইসলামের প্রধান সাহিত্যকর্ম :

কাব্যগ্রন্থ : 

অগ্নিবীণা (১৯২২), বিষের বাঁশী (১৯২৪), ছায়ানট (১৯২৪), সাম্যবাদী (১৯২৫), সর্বহারা

(১৯২৬), সিন্ধু-হিন্দোল (১৯২৭), চক্রবাক (১৯২৯), ফণি-মনসা (১৯২৯), প্রলয়-শিখা (১৯৩০);

উপন্যাস : 

বাঁধনহারা (১৯২৭), মৃত্যুক্ষুধা (১৯৩০), কুহেলিকা (১৯৩১);

গল্পগ্রন্থ : 

ব্যথার দান (১৯২২), রিক্তের বেদন (১৯২৫), শিউলিমালা (১৯৩১);

প্রবন্ধগ্রন্থ :

 যুগবাণী (১৯২২), রাজবন্দীর জবানবন্দী (১৯২৩), দুর্দিনের যাত্রী (১৯২৬), রুদ্রমঙ্গল (১৯২৬)। 


ভূমিকা

‘আমার পথ’ প্রবন্ধটি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত ‘রুদ্র-মঙ্গল’ প্রবন্ধগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে। এ প্রবন্ধে লেখক এমন এক ‘আমি’র প্রত্যাশা করেছেন যে সত্য প্রকাশে নির্ভীক ও অসংকোচ। একই সঙ্গে, এক মানুষকে আরেক মানুষের সঙ্গে মিলিয়ে ‘আমরা’ করে গড়ে তুলতে চেয়েছেন। তিনি পরনির্ভরতা ও সংকোচ থেকে বের হয়ে মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্প্রীতি স্থাপনের মধ্যে দিয়ে উৎকৃষ্ট মানব সমাজ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।


উদ্দেশ্য 

কাজী নজরুল ইসলামের ‘আমার পথ’ প্রবন্ধটি পড়ার পর তুমি-

১.‘আমার পথ’ প্রবন্ধ অনুসরণে নজরুলের ধর্মীয় চেতনা সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে পারবেন।

২.নজরুল ‘আমার সত্য’ বলতে কী বুঝিয়েছেন তা আলোচনা করতে পারবেন।

৩. দেশ উদ্ধার করতে হলে আত্মনির্ভরতার প্রয়োজন কেন হয় সে-সম্পর্কে লিখতে পারবেন।

৪. ‘মানবধর্মই যে সবচেয়ে বড় ধর্ম’ প্রবন্ধটির আলোকে তা বিশদ ব্যাখ্যা করতে পারবেন। 

মূলপাঠ

আমার কর্ণধার আমি। আমার পথ দেখাবে আমার সত্য। আমার যাত্রা-শুরুর আগে আমি সালাম জানাচ্ছি--নমস্কার করছি আমার সত্যকে। যে-পথ আমার সত্যের বিরোধী, সে পথ আর কোনো পথই আমার বিপথ নয়। রাজভয়-লোকভয় কোনো ভয়ই আমার বিপথে নিয়ে যাবে না। আমি যদি সত্যি করে আমার সত্যকে চিনে থাকি, আমার অন্তরে মিথ্যার ভয় না থাকে, তাহলে বাইরের কোনো ভয়ই আমার কিছু করতে পারবে না। যার ভিতরে ভয়, সে-ই বাইরে ভয় পায়।

 এতএব যে মিথ্যাকে চেনে, সে মিছামিছি তাকে ভয়ও করে না। যার মনে মিথ্যা, সে-ই মিথ্যাকে ভয় করে। নিজকে চিনলে মানুষের মনে আপনা-আপনি এত বড় একটা জোর আসে যে, সে আপন সত্য ছাড়া আর কাউকে কুর্নিশ করে না- অর্থাৎ কেউ তাকে ভয় দেখিয়ে পদানত রাখতে পারে না। এই যে, নিজকে চেনা, আপনার সত্যকে আপনার গুরু, পথপ্রদর্শক কান্ডারি বলে জানা, এটা দম্ভ নয়, অহংকার নয়। এটা আত্মকে চেনার সহজ স্বীকারোক্তি।

আর যদিই এটাকে কেউ ভুল করে অহংকার বলে মনে করেন, তবু এটা মন্দের ভালো- অর্থাৎ মিথ্যা বিনয়ের চেয়ে অনেক বেশি ভালো। অনেক সময় খুব বেশি বিনয় দেখাতে গিয়ে নিজের সত্যকে অস্বীকার করে ফেলা হয়। ওতে মানুষকে ক্রমেই ছোট করে ফেলে, মাথা নিচু করে আনে। ও রকম বিনয়ের চেয়ে অহংকারের পৌরুষ অনেক-অনেক ভালো।

অতএব এই অভিশাপ-রথের সারথির স্পষ্ট কথা বলাটাকে কেউ যেন অহংকার বা স্পর্ধা বলে ভুল না করেন। স্পষ্ট কথা বলায় একটা অবিনয় নিশ্চয় থাকে; কিন্তু তাতে কষ্ট পাওয়াটা দুর্বলতা। নিজকে চিনলে, নিজের সত্যকেই নিজের কর্ণধার মনে জানলে নিজের শক্তির ওপর অটুট বিশ্বাস আসে। এই স্বাবলম্বন, এই নিজের ওপর অটুট বিশ্বাস করতেই শেখাচ্ছিলেন মহাত্মা গান্ধীজি। কিন্তু আমরা তাঁর কথা বুঝলাম না, “আমি আছি” এই কথা না বলে সবাই বলতে লাগলাম “গান্ধীজি আছেন”। 

এই পরাবলম্বনই আমাদের নিষ্ক্রিয় করে ফেললে। একেই বলে সবচেয়ে বড় দাসত্ব। অন্তরে যাদের এত গোলামির ভাব, তারা বাইরের গোলামি থেকে রেহাই পাবে কী করে? আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে। এই আত্মনির্ভরতা যেদিন সত্যি সত্যিই আমাদের আসবে, সেই দিনই আমরা স্বাধীন হব, তার আগে কিছুতেই নয়। নিজে নিষ্ক্রিয় থেকে অন্য একজন মহাপুরুষকে প্রাণপণে ভক্তি করলেই যদি দেশ উদ্ধার হয়ে যেত, তাহলে এই দেশ এতদিন পরাধীন থাকত না। আত্মকে চেনা নিজের সত্যকে বড় মনে করার দম্ভ- আর যাই হোক ভন্ডামি নয়। এ-দম্ভ শির উঁচু করে, পুরুষ করে, মনে একটা ‘ডোন্ট কেয়ার’ -ভাব আনে। আর যাদের এই তথাকথিত দম্ভ আছে, শুধু তারাই অসাধ্য সাধন করতে পারবে।

যার ভিত্তি পচে গেছে, তাকে একদম উপড়ে ফেলে নতুন করে ভিত্তি না গাঁথলে তার ওপর ইমারত যতবার খাড়া করা যাবে, ততবারই তা পড়ে যাবে। দেশের যারা শত্রু, দেশের যা-কিছু মিথ্যা,  ভন্ডামি, মেকি তা সব দূর করতে প্রয়োজন হবে আগুনের সম্মার্জনা! আমার এমন গুরু কেউ নেই, যার খাতিরে সে আগুন-সত্যকে অস্বীকার করে কারুর মিথ্যা বা ভন্ডামিকে প্রশ্রয় দেবে। আমি সে-দাসত্ব হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। আমি কোনো দিনই কারুর বাণীকে বেদবাক্য বলে মনে নেব না, যদি তার সত্যতা প্রাণে তার সাড়া না দেয়। না বুঝে বোঝার  ভন্ডামি করে পাঁচ জনের শ্রদ্ধা আর প্রশংসা পাবার লোভ আমি কোনো দিনই করব না।

ভুলের মধ্য দিয়ে গিয়েই তবে সত্যকে পাওয়া যায়। কোনো ভুল করছি বুঝতে পারলেই আমি প্রাণ খুলে তা স্বীকার করে নেব। কিন্তু না বুঝেও নয়, ভয়েও নয়। ভুল করছি বা করেছি বুঝেও শুধু জেদের খাতিরে বা গোঁ বজায় রাখবার জন্যে ভুলটাকে ধরে থাকব না। তাহলে আমার আগুন সেই দিনই নিভে যাবে। একমাত্র মিথ্যার জলই এই শিখাকে নিভাতে পারবে। তাছাড়া কেউ নিবাতে পারবে না। 

মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম। হিন্দু-মুসলমানের মিলনের অন্তরায় বা ফাঁকি কোনখানে তা দেখিয়ে দিয়ে এর গলদ দূর করা আমার এ পথের অন্যতম উদ্দেশ্য। মানুষে মানুষে যেখানে প্রাণের মিল, আদত সত্যের মিল, সেখানে ধর্মের বৈষম্য, কোনো হিংসার দুশ্মনির ভাব আনে না। যার নিজের ধর্মে বিশ্বাস আছে, যে নিজের ধর্মের সত্যকে চিনেছে, সে কখনো অন্য ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে না। দেশের পক্ষে যা মঙ্গলকর বা সত্য, শুধু তাই লক্ষ্য করে এই আগুনের ঝান্ডা দুলিয়ে পথে বাহির হলাম।


শব্দের অর্থ ও টীকা 

অভিশাপ-রথের সারথি- সমাজের নিয়ম পাল্টাতে গেলে বাধার সম্মুখীন হতে হয়, সমাজরক্ষকদের আক্রমণের শিকার হতে হয়। এ কথা জেনেও নজরুল তাঁর বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি অভিশাপ হয়ে আবিভূত হয়েছেন।  নিজেই বসেছেন রথচালক তথা সারথির আসনে। 

আগুনের ঝানডা-অগ্নিপতাকা, আগুনে সব শুদ্ধ করে

কর্ণধার- প্রধান নেতা, যিনি হাল ধরেন। 

কুর্নিশ- অভিবাদন, সম্মান প্রদর্শন। 

মেকি-মিথ্যা, কপট।  

সম্মার্জনা- মেজে ঘষে পরিষ্কার করা।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. মহাত্মা গান্ধী আমাদের কী শিখিয়েছিলেন?

ক. আত্মপ্রত্যয়   খ. স্বাবলম্বন

গ. নিষ্ঠুরতা       ঘ. বিনয়

২.মানুষের অমর্যাদা হয় কিসে?

ক. অন্তরের ভয়ে       খ. মিথ্যা বিনয়ে

গ. বাইরের ভয়ে         ঘ. আত্ম-অহংকারে

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও :

আপন খবর আপনার হয় না

একবার আপনারে চিনলে 

যায় অচেনারে চেনা

ও যার আপন খবর আপনার হয়না।

৩. উদ্দীপকের সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে যে রচনার-

ক. বিড়াল       খ. আহবান

গ. আমার পথ  ঘ. জীবন ও বৃক্ষ

৪. উদ্দীপকে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের যে বিষয়টি ফুটে উঠেছে-

i. সত্যকে জানা

ii. নিজেকে জানা

iii. অজানাকে জানা

নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i         খ. ii

গ. i ও ii   ঘ. iii

৫. ‘কুর্নিশ’ শব্দের অর্থ কী?

ক. শুভেচ্ছা জানানো খ. ছোট হওয়া

গ. অভিবাদন ঘ. অসম্মান প্রদর্শন

৬. সকল ভয়কে কীভাবে দূর করা যায়?

ক. সত্যকে অর্জন করে খ. আত্মনির্ভরশীল হয়ে

গ. ক্ষমতা দখল করে ঘ. সাহস অর্জন করে

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং ৭ ও ৮ নং প্রশ্নের উত্তর দাও :

সত্য যে কঠিন,

কঠিনেরে ভালোবাসিলাম

সে কখনো করে না বঞ্চনা।

৭. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘আমার পথ’ রচনার যে ভাবটির মিল রয়েছে -

i. সত্য বিভ্রান্ত করে

ii. সত্য আলোর দিশারী

iii. সত্যের পথ অন্ধকার

নিচের কোনটি সঠিক?

 ক.i      খ. ii

 গ.iii    ঘ. i ও iii

৮. উদ্দীপকে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের যে বৈশিষ্ট্যটি উপস্থাপিত হয়েছে-

i. আত্মপ্রত্যয়

ii. সত্যানুসন্ধান

iii. দাম্ভিকতা

নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i খ. ii

গ. iii ঘ. i ও ii

Answer : MCQ 

১. গ         ২. খ         ৩. খ          ৪. ক        ৫. ঘ          ৬. ক          ৭. গ         ৮. গ 


সৃজনশীল প্রশ্ন ১ 

পূর্ণ স্বাধীনতা পেতে হলে সকলের আগে আমাদের বিদ্রোহ করতে হবে, সকল কিছু নিয়ম- কানুন, বাঁধন- শৃঙ্খল, মানানিষেধের বিরুদ্ধে। এই বিদ্রোহ করতে হলে সকলের আগে আপনারে চিনতে হবে, বুক ফুলিয়ে বলতে হবে- ‘আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কুর্নিশ।’

ক. মানুষের মধ্যে কখন নির্ভরতা আসে?

খ. ‘আমার কর্ণধার আমি।’ -উক্তিটি কোন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?

গ. উদ্দীপকের ভাবনা ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের সঙ্গে কীভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ? -আলোচনা করুন।

ঘ. “আত্মশক্তির জাগরণই স্বাধীনতা অর্জনের পাথেয়।” -উদ্দীপক ও ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটি বিচার করুন। 

ক.

‘আমার পথ’ প্রবন্ধ অনুযায়ী আত্মাকে চিনলেই মানুষের মধ্যে নির্ভরতা আসে।

খ.

নিজের উপর নিজের আস্থা থাকলে যে কোন কাজ সহজে করা যায় বলে আলোচ্য মন্তব্যটি করা হয়েছে। আমরা সমাজে বাস করি।  সমাজে চলতে গিয়ে আমাদের অনেক সময় এককে অন্যের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। তখন আমাদের নিজেদের উপর কর্তৃত্ব থাকেনা। এই নির্ভরশীলতা স্বাধীন মত প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করে। এক সময় এই নির্ভরতা অন্যের উপর প্রভাব সৃষ্টি করে। বস্তুত ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক কাজী নজরুল ইসলাম ‘আমার কর্ণধার আমি।’ বলতে মানুষের আত্মনির্ভরতা তথা আত্মশক্তিকে বুঝিয়েছেন।

গ.

আত্মশক্তি উন্মোচনের বিষয়ে উদ্দীপক ও ‘আমার পথ’ প্রবন্ধটি সামঞ্জস্যপূর্ণ। মানুষ যখন আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে সত্যশক্তিতে উদ্দীপিত হয় তখন সে যে কাজে অগ্রসর হবে তাতেই সাফল্য লাভ করবে।। আত্মবিশ্বাসী মানুষ নিজের উপর আস্থা রাখতে পারে। সে সমাজের কল্যাণ সাধন করতে পারে। একজন মানুষ আত্মবিশ্বাস, সত্যশক্তি ও মহৎ চিন্তা দ্বারা পরিচালিত হয়ে যে কাজ করে তা দ্বারাই সে স্বাধীনতা ও মুক্তির পথ দেখাতে পারে।

উদ্দীপকে বলা হয়েছে স্বাধীনতা পেতে হলে সকলের আগে বিদ্রোহ করতে হবে। এই বিদ্রোহ হচ্ছে সমাজে প্রচলিত নিয়মশ্ঙ্খৃলা ও বাধা- নিষেধের বিরুদ্ধে। কিন্তু নিয়ম ভাঙার এই কঠিন কাজটি সম্পন্ন করতে আত্মবিশ্বাস ও আত্মশক্তির প্রয়োজন। এই আত্মশক্তি অর্জন করতে হলে আগে নিজেকে জানতে হবে। আর এই সঙ্গে অপরকে ব্যক্তিত্বহীনভাবে কুর্নিশ করার মত নিচু মানসিকতাকে ত্যাগ করতে হবে। ‘আমার পথ’ প্রবন্ধেও মানসিক শক্তির উদ্বোাধনের কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে সত্যের অমিত শক্তি মানুষকে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান করে। এর ফলে মানুষ অসাধ্য সাধন করতে পারে, সুন্দর ও মঙ্গলকে কামনা করতে পারে।

ঘ.

মানুষ যখন আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয় তখন স্বাধীনতার স্পৃহা তার চেতনায় জাগ্রত হয়। মানুষের চেতনায় আত্মসত্তা সুপ্ত অবস্থায় থাকে। এর ভেতর লুকিয়ে থাকে অপরিমেয় শক্তি। মানুষের মধ্যকার এই আত্মসত্তার জাগরণ ঘটলে সমাজে যে কোন পরিবর্তন আনয়ন সম্ভব। এভাবে আত্মশক্তিতে আস্থাবান হয়ে একসময় পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতাও অর্জন করা যেতে পারে।

উদ্দীপকে বলা হয়েছে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পূর্বশর্ত হচ্ছে আমিত্বের জাগরণ। কারণ এত বড় একটি প্রাপ্তি অর্জন করতে হলে অপরিমেয় শক্তি থাকতে হবে। একারণে আপনাকে চিনতে হবে। আর আত্মশক্তির সন্ধান করে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে হবে। মনে আত্মবিশ্বাস থাকলে অন্যকে কুর্নিশ করার প্রবণতা থাকে না, এর বদলে থাকে আত্মমর্যাদাবোধ। মানুষ যদি এই আত্মমর্যাদাবোধের সত্যে উপনীত হতে পারে তাহলে একসময় স্বাধীনতা আসবে। 

‘আমার পথ’ প্রবন্ধেও বলা হয়েছে আমাদের আত্মনির্ভরতা যেদিন আসবে কেবল সেদিনই আমরা স্বাধীন হব। সেইসঙ্গে প্রাবন্ধিক প্রত্যাশা করেছেন সব বাধা অতিক্রম করে পরাধীনতা থেকে দেশকে মুক্ত করার সম্মিলিত প্রয়াস। 

উদ্দীপক এবং ‘আমার পথ’ প্রবন্ধ উভয়টিতে আত্মবিশ্বাসের উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। নিজেকে জানা ও চেনা, নিজের অন্তরের সত্যকে কর্ণধার হিসেবে গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে দৃঢ়তার পরিচয় পাওয়া যায়। এই দৃঢ়তা ও আমিত্বে রয়েছে অপরিমেয় শক্তি। এভাবে আমিত্বের জাগরণে আসে আত্মবিশ্বাস, আত্মবিশ্বাস নিয়ে আসে স্বাধীনতা। এই ধারাক্রম অর্জনের প্রথম ধাপ হল আমিত্বের জাগরণ। তাই বলা যায়, আমিত্ব তথা আত্মশক্তির জাগরণই হল স্বাধীনতা অর্জনের পাথেয়।


নিজে কর 

বাস্তবিক, ভুল আছে বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দর। ভুল না থাকলে পৃথিবীর দয়া, মায়া, ক্ষমা, ভালোবাসা প্রভৃতি কোমল গুণগুলির এত অবকাশ ও বিকাশ হতো কিনা সন্দেহ। তাছাড়া ভুল না থাকলে এত দিন মানুষের সমস্ত প্রচেষ্টা এবং অগ্রগতি কবে রুদ্ধ হয়ে সমস্ত অসাড় নিষ্পন্দ হয়ে যেত। এখানেই ভুলের মূল্য।

ক. ‘আমার পথ’ প্রবন্ধটি কোন গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে?

খ. ‘মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম।’ -ব্যাখ্যা করুন।

গ. উদ্দীপক ও ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের ‘ভুলের ব্যঞ্জনা’র সাদৃশ্য আলোচনা করুন।

ঘ. “উদ্দীপক ও ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের বিষয়বস্তু আলোকিত পৃথিবীর স্বপ্ন।” -স্বীকার করেন কি? বিচার করুন। 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনেট আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url