এস এস সি বাংলা ১ম পত্র পল্লিজননী জসীমউদ্দীন

 

 পল্লিজননী

জসীমউদ্দীন
কবি-পরিচিতি



সূচীপত্র


জসীমউদ্দীন ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মৌলবি আনসার উদ্দিন মোল্লা ও মা আমিনা খাতুন। ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আইএ, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিএ ও এমএ পাশ করেন। ১৯৩৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক নিযুক্ত হন এবং পরে সরকারি তথ্য ও প্রচার বিভাগে উচ্চপদে যোগদান করেন। কলেজে পড়ার সময় তিনি রচনা করেন বিখ্যাত ‘কবর’ কবিতা এবং এই কবিতা তাঁর ছাত্রজীবনেই ম্যাট্রিক পরীক্ষার বাংলা পাঠ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।

জসীমউদ্দীনের কবিতায় বাংলার মাঠ, ঘাট, নদী-নালা, বালুচর, চাষীর কুটির, ফুল-পাখি, গ্রামের সাধারণ মানুষ ও তাদের সুখ-দুঃখের চিত্র জীবন্ত হয়ে উঠেছে। সেজন্য তাঁকে বলা হয় ‘পল্লিকবি’। তিনি গান, নাটক ও গদ্যরচনাতেও অবদান রেখেছেন। ১৯৬৯ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিলিট উপাধি প্রদান করে। এছাড়া সাহিত্য-সাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদকসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৭৬ সালের ১৪ মার্চ তিনি  মৃত্যুবরণ করেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা 

কাব্যগ্রন্থ : রাখালী, নকসী কাঁথার মাঠ, বালুচর, সোজন বাদিয়ার ঘাট, এক পয়সার বাঁশী;

উপন্যাস : বোবাকাহিনী;

গদ্যরচনা : চলে মুসাফির, বাঙালির হাসির গল্প, জীবন কথা, হলদে পরির দেশে।

ভুমিকা

পল্লিকবি জসীমউদ্দীনের ‘রাখালী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে ‘পল্লিজননী’ কবিতাটি সংকলন করা হয়েছে। কবিতাটিতে পল্লির আর্থ- সামাজিক করুণ অবস্থার পাশাপাশি মায়ের স্নেহার্দ্রতার কথা বলা হয়েছে। এখানে সন্তানের প্রতি মায়ের অকৃত্রিম ভালোবাসা, মুমূর্ষু সন্তানকে ঘিরে মাতৃহৃদয়ের আকুতি কবি তুলে ধরেছেন।

সাধারণ উদ্দেশ্য

জসীমউদ্দীনের ‘পল্লিজননী’ কবিতা পড়ে তুমি-

  •  গ্রাম-বাংলার দরিদ্র মানুষের জীবনচিত্র অঙ্কন করতে পারবে;
  • সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসার স্বরূপ বিশ্লেষণ করতে পারবে;
  • পল্লিবালকের আশা-আকাক্সক্ষা ও সুখ-দুঃখের বিবরণ দিতে পারবে;
  • গ্রাম-বাংলার নিপুণ উপস্থাপনায় জসীমউদ্দীনের কৃতিত্বের পরিচয় দিতে পারবে।

পাঠভিত্তিক উদ্দেশ্য

এই পাঠটি পড়া শেষে তুমি

  • গ্রামের গরিব মায়ের মুমূর্ষু সন্তানের অবস্থা বর্ণনা করতে পারবে;
  • সেবারত মায়ের উদ্বেগের ধরন বিশ্লেষণ করতে পারবে।

মূলপাঠ

রাত থম থম স্তব্ধ নিঝুম, ঘোর-ঘোর-আন্ধার,

নিশ্বাস ফেলি তাও শোনা যায় নাই কোথা সাড়া কার।

রুগ্ন ছেলের শিয়রে বসিয়া একেলা জাগিছে মাতা,

করুণ চাহনি ঘুম ঘুম যেন ঢুলিছে চোখের পাতা।

শিয়রের কাছে নিবু নিবু দীপ ঘুরিয়া ঘুরিয়া জ্বলে,

তারি সাথে সাথে বিরহী মায়ের একেলা পরাণ দোলে।

ভন ভন ভন জমাট বেঁধেছে বুনো মশকের গান

এদো ডোবা হতে বহিছে কঠোর পচান পাতার ঘ্রাণ।

ছোট কুঁড়েঘর, বেড়ার ফাঁকেতে আসিছে শীতের বায়ু,

শিয়রে বসিয়া মনে মনে মাতা গণিছে ছেলের আয়ু।

ছেলে কয়, ‘মারে, কত রাত আছে, কখন সকাল হবে,

ভালো যে লাগে না, এমনি করিয়া কেবা শুয়ে থাকে কবে।’

মা কয়, ‘বাছারে ! চুপটি করিয়া ঘুমোত একটি বার’,

ছেলে রেগে কয়, ‘ঘুম যে আসে না কি করিব আমি তার।’

পান্ডুর চুমো খায় মাতা। সারা গায়ে দেয় হাত,

পারে যদি বুকে যত স্নেহ আছে ঢেলে দেয় তারি সাথ।

নামাজের ঘরে মোমবাতি মানে, দরগায় মানে দান,

ছেলেরে তাহার ভালো করে দাও কাঁদে জননীর প্রাণ।

ভালো করে দাও আল্লা রসুল ভালো করে দাও পীর,

কহিতে কহিতে মুখখানি ভাসে বহিয়া নয়ন নীর !

বাঁশ বনে বসি ডাকে কানা কুয়ো, রাতের আঁধার ঠেলি,

বাদুড় পাখার বাতাসেতে পড়ে সুপারির বন হেলি।

চলে বুনো পথে জোনাকি মেয়েরা কুয়াশা কাফন ধরি,

দুঃ ছাই! কিবা শঙ্কায় মার পরাণ উঠিছে ভরি।

যে কথা ভাবিতে পরাণ শিহরে তাই ভাসে হিয়া কোণে,

বালাই বালাই, ভালো হবে যাদু মনে মনে জাল বোনে।

ছেলে কয়, ‘মাগো, পায়ে পড়ি বল ভালো যদি হই কাল,

করিমের সাথে খেলিবারে গেলে দিবে নাত তুমি গাল।

আচ্ছা মা বলো, এমন হয় না রহিম চাচার ঝাড়া,

এখনি আমারে এত রোগ হতে করিতে পারেত খাড়া ?’

মা কেবল বসি রুগ্ন ছেলের মুখ পানে আঁখি মেলে,

ভাসা ভাসা তার যত কথা যেন সারা প্রাণ দিয়ে গেলে।

‘শোন মা, আমার লাটাই কিন্তু রাখিও যতন করে,

রাখিও ঢ্যাঁপের মোয়া বেঁধে তুমি সাত-নরি সিকা ভরে।

খেজুরে গুড়ের নয়া পাটালিতে হুড়–মের কোলা ভরে।

ফুলঝুরি সিকা সাজাইয়া রেখো আমার সমুখ পরে।’

ছেলে চুপ করে, মাও ধীরে ধীরে মাথায় বুলায় হাত,

বাহিরেতে নাচে জোনাকি আলোয় থম থম কাল রাত।

রুগ্ণ ছেলের শিয়রে বসিয়া কত কথা পড়ে মনে,

কোন দিন সে যে মায়েরে না বলে গিয়াছিল দূর বনে।

সাঁঝ হয়ে গেল তবু আসে নাকো, আই চাই মার প্রাণ,

হঠাৎ শুনিল আসিতেছে ছেলে হর্ষে করিয়া গান।

এক কোঁচ ভরা বেথুল তাহার ঝামুর ঝুমুর বাজে,

ওরে মুখপোড়া কোথা গিয়াছিলি এমনি এ কালি সাঁঝে।

কত কথা আজ মনে পড়ে তার, গরীবের ঘর তার,

ছোটখাট কত বায়না ছেলের পারে নাই মিটাবার।

আড়ঙের দিনে পুতুল কিনিতে পয়সা জোটেনি তাই,

বলেছে আমরা, মোসলমানের আড়ঙ দেখিতে নাই।

করিম যে গেল ? আজিজ চলিল ? এমনি প্রশ্ন মালা,

উত্তর দিতে দুখিনী মায়ের দ্বিগুণ বাড়িত জ্বালা।

আজও রোগে তার পথ্য জোটেনি, ওষুধ হয়নি আনা,

ঝড়ে কাঁপে যেন নীড়ের পাখিটি জড়ায়ে মায়ের ডানা।

ঘরের চালেতে হুতুম ডাকিছে, অকল্যাণ এ সুর,

মরণের দূত এলো বুঝি হায় হাঁকে মায়, দূর-দূর।

পচা ডোবা হতে বিরহিণী ডাক ডাকিতেছে ঝুরি’ ঝুরি’,

কৃষাণ ছেলেরা কালকে তাহার বাচ্চা করেছে চুরি।

ফেরে ভন্ ভন্ মশা দলে দলে, বুড়ো পাতা ঝরে বনে,

ফোঁটায় ফোঁটায় পাতা-চোঁয়া জল ঝরিছে তাহার সনে।

রুগ্ণ ছেলের শিয়রে বসিয়া একেলা জাগিছে মাতা,

সম্মুখে তার ঘোর কুজ্ঝটি মহাকাল রাত পাতা।

পার্শ্বে জ্বলিয়া মাটির প্রদীপ বাতাসে জমায় খেল;

আঁধারের সাথে যুঝিয়া তাহার ফুরায়ে এসেছে তেল।


নির্বাচিত শব্দের অর্থ 

আন্ধার-- অন্ধকার। 

কানাকুয়ো-- এক প্রকারের পাখি। 

গণিছে-- গননা করছে। 

নিঝুম-- সম্পূর্ণ নীরব। 

পরান--প্রাণ। 

মশক-- মশা। 

রুগ্ণ-- পীড়িত; অসুস্থ। 

শঙ্কায়-- আশঙ্কায়; ভীতিতে। 

শিয়রে-- শয়নকারীর মাথার দিকে। 

সাড়া-- শব্দ। 

হিয়া-- হৃদয়; মন। 

আড়ঙের দিনে-- আড়ঙ হলো হাট বা বাজার বা মেলা। আড়ঙের দিনে মানে হলো মেলার দিনে বা হাটের দিনে বা বাজারের দিনে। 

চোঁয়া-- বিন্দু বা ফোঁটা ফোঁটা করে পড়া। 

দূত-- সংবাদ বহনকারী; বার্তাবহ। 

নয়নের নীর-- চোখের পানি।

নামাজের ঘরে মোমবাতি মানে-- নামাজের ঘর হলো মসজিদ, মোমবাতি মানে অর্থ হলো মোমবাতি দেওয়ার মানত করা। কোনো অসুখ-বিসুখ বা বিপদ-আপদ হলে এ দেশের মানুষ তা থেকে উদ্ধার পাওয়ার অভিপ্রায়ে এক ধরনের মানত করে। নামাজের ঘরে মোমবাতি মানে’ অর্থ হলো মসজিদে মোমবাতি দেওয়ার প্রতিজ্ঞা বা মানত করা। 

পচান-- পচে গেছে এমন। 

পথ্য-- রোগির জন্য উপযুক্ত আহার্য। 

বায়না-- আবদার। 

বিরহিণী-- বিরহে কাতর নারী। 

মহাকাল-- ভাবীকাল; অনন্তকাল। 

যতন-- যত্ম। 

রহিম চাচার ঝাড়া-- আমাদের দেশে রোগ-বালাই থেকে মুক্তি লাভের জন্য পানি পড়া, ঝাড়- ফোকের প্রচলন আছে। নানা ধরনের অসুখে অনেকে পানি পড়ে তা রোগিকে খেতে দেয়, রোগ থেকে মুক্তি লাভের উদ্দেশে। ‘রহিম চাচার ঝাড়া’ মানে হলো রহিম চাচার সেই রকম একটি চিকিৎসা পদ্ধতি, যাতে ‘রহিম চাচা’ রোগি ছেলেটিকে ফুঁ দিয়ে সুস্থ করে তুলবে। 

লাটাই-- নাটাই; যাতে ঘুড়ির সুতা জড়ানো থাকে। 

সমুখ--সামনে। 

হর্ষে-- আনন্দে। 

সারসংক্ষেপ 

থমথমে নিঝুম আঁধার রাত। গাঁয়ের এক ছোট্ট কুঁড়েঘরে মা রুগ্ণ সন্তানের সেবায় রাত জাগছেন। ছেলেটি ঘুমাতে পারছে না। ক্লান্তির রাত আর কাটছে চাইছে না। মাও জেগে আছেন গভীর উদ্বেগ নিয়ে। পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন ছেলের গায়ে। ছেলের রোগমুক্তির জন্য দরগায়-মসজিদে দানের নিয়ত করছেন। বাইরে শীতরাতের প্রতিকূল প্রকৃতি। কুয়াশাঢাকা জোনাকি, বাদুড়ের আওয়াজ, রাতজাগা পাখির ডাক। অজানা আশঙ্কায় মায়ের মন শিহরিত হয়। ভালো হয়ে পরদিনই খেলতে যাবে - মায়ের কাছে এ আবদার জানায় ছেলেটি। তার রোগে ঔষধ-পথ্যের ব্যবস্থা হয়নি। সে আশা করে, রহিম চাচার ঝাড়-ফুঁকে সে সুস্থ হয়ে উঠবে। গ্রামের দুরন্ত কিশোর সে। হৈ-হুল্লোড়ে কাটত তার সারাদিন। অসুস্থ ছেলের সেই চঞ্চলতার সুযোগ নেই। পুত্রের শিয়রে বসে বিমর্ষ মা সেসব কথাই স্মরণ করেন। দারিদ্র্যের কারণে ছেলের অনেক চাওয়া তিনি পূরণ করতে পারেননি। আর এখন তো বিনা চিকিৎসায় সে মরতে বসেছে। রাতের প্রকৃতি মায়ের মনের শঙ্কা বাড়িয়ে দেয় শতগুণ। পাশে রাখা মাটির প্রদীপের তেল ফুরিয়ে এসেছে।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

নিরুপায় মাও যেন ছেলের মৃত্যুর প্রহর গুনছে।

১. ‘পল্লিজননী’ কবিতায় কয়টি পাখির নাম পাওয়া যায়?

ক. তিনটি            খ. দুইটি 

গ. চারটি             ঘ. পাঁচটি

২. ‘পল্লিজননী’ কবিতায় মায়ের কোন ব্যর্থতা প্রকাশ পেয়েছে?

ক. স্নেহের                  খ. সেবার 

গ. অর্থের                   ঘ. শাসনের

নিচের উদ্দীপকটি পড়ুন এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দিন :

‘এই যে মায়ের কোল, ভয় কীরে বাপ

বক্ষে তারে চাপি ধরি তার জ্বরতাপ।’

৩. উদ্দীপকের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ‘পল্লিজননী’র চরণটি হল-

i. বাদুড় পাখার বাতাসেতে পড়ে সুপারির বন হেলি।

ii. করুণ চাহনি ঘুম ঘুম যেন ঢুলিছে চোখের পাতা।

iii. পান্ডুর গালে চুমো খায় মাতা। সারা গায়ে হাত

নিচের কোনটি সঠিক?

ক.  i                      খ. ii 

গ. iii                      ঘ.i, ii ও iii

৪. উদ্দীপক ও ‘পল্লিজননী’ কবিতায় ফুটে ওঠা দিকটি হল-

i. স্বজন হারানোর আশঙ্কা ii. প্রিয়জনের মঙ্গলাকাক্সক্ষা iii. অপত্য স্নেহের অনিবার্য প্রকাশ

নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i                   খ. ii 

গ. ii ও iii           ঘ. i, ii ও iii

৫. অকল্যাণের সুরে কে ডাকে?

ক. হুতোম               খ. শালিক

 গ. জোনাকি            ঘ. কাক

৬. ‘ওরে মুখপোড়া কোথা গিয়েছিলি এমনি এ কালি সাঁঝে?’ এখানে ‘মুখপোড়া’ বলতে বোঝানো হয়েছে-

ক. মিত্রকে            খ. হনুমানকে

গ. শত্রুকে             ঘ. ছেলেকে

নিচের উদ্দীপকটি পড়ুন এবং ৭ ও ৮ নং প্রশ্নের উত্তর দিন :

কিশোর বুধা খেলার ছলে কাকতাড়–য়া সাজে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও তার বাড়ি ফেরার কোনো নাম থাকে না। এদিকে মা অধীর হয়ে পথ চেয়ে থাকেন। একসময় দেখা যায় বুধা তার বন্ধুর সঙ্গে গান গাইতে গাইতে বাড়ি ফিরছে।

৭. উদ্দীপকের সঙ্গে মিল রয়েছে নিন্মের যে চরণটির-

i. বালাই বালাই, ভালো হবে যাদু মনে মনে জাল বোনে।

ii. রাখিও ঢ্যাঁপের মোয়া বেঁধে তুমি সাত-নরি সিকা ভরে।

iii. হঠাৎ শুনিল আসিতেছে ছেলে হর্ষে করিয়া গান।

নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i                        খ. ii 

গ. iii                      ঘ. i, ii ও iii

৮. উদ্দীপক ও ‘পল্লিজননী’ কবিতায় যে বিষয়টি অভিব্যক্ত হয়েছে-

ক. ছেলের বখাটেপনা খ. ছেলের দুরন্তপনা গ. ছেলের অবাধ্য হওয়া ঘ. ছেলের চালাকি

৯. ‘কানাকুয়ো’ কোথায় থাকে?

ক. বটগাছে              খ. বাঁশবনে

 গ. সুন্দরবনে           ঘ. তালগাছে

১০. ‘সাত-নরি’ বলতে যা বোঝানো হয়েছে-

ক. মাটির ঘড়া             খ. ঘড়া রাখার সিকা

 গ. মাটির হাঁড়ি            ঘ. হাঁড়ি রাখার সিকা

নিচের উদ্দীপকটি পড়ুন এবং ১১ ও ১২ নং প্রশ্নের উত্তর দিন :

‘তুই আমার ছেলে,তুই আমার মেয়ে,তুই আমার সব।’ বলিতে বলিতে সে ছেলেকে একেবারে বুকে চাপিয়া ধরিল।

১১. উদ্দীপকে ‘পল্লিজননী’ কবিতার যে বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে-

ক. অনুযোগ খ. অসহায়ত্ব গ. মাতৃস্নেহের ঘ. আকুতি

১২. উদ্দীপকে ফুটে ওঠা দিকটি নিচের যে চরণে বিদ্যমান-

i. পান্ডুর গালে চুমো খায় মাতা। সারা গায়ে দেয় হাত

ii. ভালো করে দাও আলা রাসুল ভালো করে দাও পীর

iii. শিয়রে বসিয়া মনে মনে মাতা গণিছে ছেলের আয়ু

নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i                 খ. ii 

গ.iii                 ঘ. i ও ii

 বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তরমালা 

১. গ ২. গ ৩. গ ৪. গ ৫. ক ৬. ঘ ৭. গ ৮. খ ৯. খ ১০. ঘ ১১. গ ১২. ক

সৃজনশীল প্রশ্ন-১ 

শমসের চৌধুরী দেশের একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি। কিন্তু তার মন ভালো নেই। তার একমাত্র ছেলে আবির দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। দেশের নামকরা ডাক্তার দিয়ে তিনি ছেলের চিকিৎসা করিয়েছেন। দেশ-বিদেশের অনেক ঘাটের পথ্য সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। ছেলের জন্য তিনি নামাজের ঘরে মোমবাতি মানত করেছেন, দরগায় করেছেন দান। মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট তিনি ছেলের জন্য প্রার্থনা করেছেন। রসুলকে স্মরণ ও পিরের নিকট দোয়া কামনা করেছেন।

ক. জসীম উদ্দীন বাংলা সাহিত্যে কোন ধারার কবি হিসেবে খ্যাত?

খ. মা রাত্রি জাগে কেন?

গ. উদ্দীপকটি ‘পল্লিজননী’ কবিতার সঙ্গে কোন দিক থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ? -আলোচনা কর।

ঘ. “উদ্দীপক ও ‘পল্লিজননী’ কবিতায় মিলের চেয়ে অমিলটিই বেশি প্রকাশিত হয়েছে।” উত্তরের সপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন কর।

 সৃজনশীল প্রশ্ন-১ উত্তর 

ক. জসীম উদ্দীন বাংলা সাহিত্যে ‘পল্লিকবি’ হিসাবে খ্যাত।

খ. সন্তানের অসুস্থতার কারণে মা তার শিয়রে বসে আছেন।

‘পল্লিজননী’ কবিতায় ছেলেটি দীর্ঘদিন ধরে রুগ্ণ। সন্তানের অসুস্থতায় মায়ের মন স্বাভাবিকভাবে ভালো থাকে না। তিনি মনোকষ্টে ভোগেন। ছেলের ঘুম আসছে না বলে তিনি ছেলেকে ঘুম পড়ানোর চেষ্টা করেন। ছেলের প্রতি মমত্ববোধের কারণে মা রাত জেগে রুগ্ণ ছেলের শিয়রে বসে আছেন।

গ. উদ্দীপক ও ‘পল্লিজননী’ কবিতা উভয়টিতেই সন্তান হারানোর আশঙ্কা ফুটে উঠেছে। এদিক থেকে উদ্দীপকটির সঙ্গে পল্লিজননী’ কবিতার সাদৃশ্য রয়েছে। পিতা-মাতাই জগতে সন্তানের জন্য সবচেয়ে বেশি মমত্ববোধ পোষণ করেন। তারা কখনোই সন্তানের জন্য অমঙ্গল কামনা করেন না। সন্তানের রোগ-শোক-দুঃখ-বেদনায় তারা সব সময় অস্থির থাকেন। সন্তানের জন্য অজানা আশঙ্কায় তাদের মন কেঁপে উঠে। সন্তানের জন্য পিতা-মাতা এক চির কল্যাণের আশ্রয়।

‘পল্লিজননী’ কবিতায় কবি এক দরিদ্র জননীর জীবনের দৃশ্যপট তুলে ধরেছেন। এই মা দরিদ্র। কিন্তু ছেলের জন্য তার অফুরান ভালোবাসা। তিনি তার রুগ্ণ ছেলের শিয়রে বসে রাতের পর রাত কাটিয়ে দিচ্ছেন। পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন ছেলের গালে, মুখে। ছেলের জন্য দরগায় মানত করছেন। আবার অজানা আশঙ্কায় ছেলের জন্য মন গুমরে কেঁদে উঠছে। উদ্দীপকেও আমরা এরকম এক সন্তানবৎসল পিতার পরিচয় পাই। 

তিনি শমসের চৌধুরী। সন্তানের চিকিৎসার জন্য তিনি দেশ-বিদেশে ঘুরেছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে ওষুধপত্র সংগ্রহ করেছেন। সন্তানের সুস্থতা কামনায় তাকে নামাজের ঘরে মোমবাতি এমনকি দরগায় পর্যন্ত দান করতে দেখা যায়। উপরন্তু তিনি নিয়ত আল্লাহর রসুলকে স্মরণ এবং পিরের নিকট দোয়া কামনা করেছেন। এভাবে দেখা যায় ‘পল্লিজননী’ কবিতার মায়ের আর্তি উদ্দীপকের শমসের চৌধুরীর বেদনারূপে প্রকাশিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘পল্লিজননী’ কবিতার মিলের চেয়ে অমিলই বেশি দেখা যায়। সন্তানের নিকট মায়ের স্নেহের অতুল সম্পদ। সন্তানের জন্য পিতা-মাতার মন সব সময় ব্যাকুল থাকে। বিশেষ করে সন্তান অসুস্থ থাকলে মায়ের মন স্বাভাবিক থাকে না। সন্তানের সুখ-দুঃখের সঙ্গে যেন মায়ের সুখ-দুঃখ মিশে থাকে। কেননা সন্তানের অনুভবের সঙ্গে মায়ের অনুভবের একটি নিবিড় যোগসূত্র থাকে। তাই সন্তানের অমঙ্গল আশঙ্কায় মা সবসময় চিন্তিত থাকেন।

উদ্দীপকে শমসের চৌধুরীর ছেলে হারানোর আশঙ্কা প্রকাশিত হযেছে। কিন্তু উদ্দীপকে পল্লি মায়ের মতো জীবনের সামগ্রিক পরিচয় নেই। শমসের চৌধুরী একজন শিল্পপতি। দারিদ্র্যের কশাঘাত তার জীবনে নেই। ছেলের জন্য দেশবিদেশের চিকিৎসক তিনি অবলীলায় ডাকতে পেরেছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে ছেলের জন্য ওষুধ-পত্র সংগ্রহ করেছেন। তিনি কখনো ছেলের শিয়রে বসে রাত জাগেননি। দারিদ্র্য কী জিনিস সে সম্পর্কে তার ছেলের কোনো ধারণা নেই। অবশ্য ছেলের জন্য তিনি দরগায় মানত করেছেন, রসুলের স্মরণ নিয়েছেন। পিরের দোয়াও প্রার্থনা করেছেন। 

অপরদিকে ‘পল্লিজননী’ কবিতায় দারিদ্র্যক্লিষ্ট এক পল্লি মায়ের জীবনের বর্ণনা রয়েছে। তিনি রাত জেগে রোগাক্রান্ত সন্তানের শিয়রে বসে থাকেন। তার কুঁড়েঘরের বেড়ার ফাঁক দিয়ে শীতের বাতাস অবাধে প্রবেশ করে। রোগে তার ছেলের পথ্য জোটে না। শীতের দুরন্ত রাতে কানাকুয়ো পাখির ডাকে মায়ের শঙ্কা বেড়ে যায়।

উদ্দীপক ও ‘পল্লিজননী’ কবিতায় মিল রয়েছে মা ও শমসের চৌধুরীর ছেলে হারানোর আশঙ্কায়। সন্তানের প্রতি প্রবল মমত্ববোধের ক্ষেত্রে। কিন্তু জীবন পরিচর্যায় দুজনের বিস্তর ব্যবধান। এ ব্যবধান আর্থ-সামাজিক সকল বিষয়েই রয়েছে। তাই বলা যায়, ‘উদ্দীপক ও ‘পল্লিজননী’ কবিতায় মিলের চেয়ে অমিলই বেশি প্রকাশিত হয়েছে।’ -মন্তব্যটি যথার্থ ও প্রাসঙ্গিক হয়েছে।


সৃজনশীল প্রশ্ন-২

প্রণমিয়া পাটুনী কহিছে জোড়হাতে।

আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে\

তথাস্তু বলিয়া দেবী দিলা বরদান।

দুধেভাতে থাকিবেক তোমার সন্তান\

ক. ‘হুড়োম’ কী?

খ. ‘রহিম চাচার ঝাড়া’ বলতে কী বোঝায়?

গ. কোন দিক থেকে উদ্দীপকটি ‘পল্লিজননী’ কবিতার সঙ্গে সদৃশ কিংবা বিসদৃশ? -আলোচনা কর।

ঘ. “অকৃত্রিম মমত্ববোধই উদ্দীপক ও ‘পল্লিজননী’ কবিতার বিষয়বস্তু।” বিশ্লেষণ কর।

সৃজনশীল প্রশ্ন-২ উত্তর 

ক. ‘হুড়োম’ শব্দের অর্থ মুড়ি অথবা মুড়ির মত ভাজা চিড়া।

খ. ‘রহিম চাচার ঝাড়া’ একটি গ্রামীণ চিকিৎসা পদ্ধতি। আমাদের দেশে গ্রামীণ সমাজে রোগ-বালাই থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে পানি পড়া এবং ঝাড়-ফুঁকের প্রচলন রয়েছে। এই পদ্ধতিতে যারা চিকিৎসা করেন তারা নানা ধরনের অসুখে রোগ থেকে মুক্তি লাভের জন্য পানি পড়ে রোগিকে খেতে দেয়। কখনো কখনো রোগিকে ফুঁ-ও দিয়ে থাকে। ‘রহিম চাচার ঝাড়া’ বলতে এখানে বোঝানো হয়েছে রহিম চাচার সেই রকম একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যার সাহায্যে তিনি রোগি ছেলেটিকে ফুঁ দিয়ে সুস্থ করে তুলবেন।

গ. ‘পল্লিজননী’ কবিতায় বর্ণিত প্লটটি পার্থিব জীবনের, বাস্তব জীবনের রক্ত-মাংসের মানুষ এর কুশীলব। উদ্দীপকের চরিত্রের একটি অংশ অপার্থিব, এর প্রধান চরিত্রটি ঐশ্বরিক। এখানেই উদ্দীপকের সঙ্গে ‘পল্লিজননী’ কবিতার বিসদৃশ ভাব হয়েছে।

সন্তানের প্রতি অপত্য স্নেহের বাঙালি জননী তুলনারহিত। মা নিজ জীবনের চেয়ে তার সন্তানকে বেশি ভালোবাসেন। সন্তানের সুন্দর জীবনই তার জীবনে পরম আকাক্সিক্ষত। সন্তানের বিপদ-আপদে তার মন অস্থির হয়ে উঠে। মা সন্তানের মাথার উপর পরম মমতাময় ছায়া। যুগ যুগ ধরে আমাদের সংস্কৃতিতে মায়ের এই স্নেহময় রূপটিই প্রাধান্য লাভ করেছে।

‘পল্লিজননী’ কবিতায় এক স্নেহময়ী মায়ের জীবন চিত্র ফুটে উঠেছে। তিনি রাত জেগে পুত্রের শিয়রে বসে থাকেন। ছোট কুঁড়েঘরে শীতের শীতল বায়ু থেকে পুত্রকে আগলে রাখেন। পুত্রের সুস্থতা কামনায় নামাজের ঘরে মোমবাতি মানেন, দরগায় দান-খয়রাত করেন। পুত্রের অমঙ্গল আশঙ্কায় তার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে। 

উদ্দীপকেও আমরা দেখি পাটুনীর সন্তানের জন্য অপত্য স্নেহের প্রকাশ ঘটেছে। উদ্দীপকে দেবী পাটুনীকে বর দিতে চাইলেও সে নিজের জন্য কিছু চায় না। তার জীবনের চাওয়া হলো সন্তানের একটি প্রশান্তিময় সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ। উদ্দীপক ও ‘পল্লিজননী’ কবিতাটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ‘পল্লিজননী’ কবিতার মায়ের চাওয়া বাস্তব জীবনকেন্দ্রিক আর উদ্দীপকে রয়েছে অলৌকিকের ব্যঞ্জনা। তাই বলা যায়, উদ্দীপক ও ‘পল্লিজননী’ কবিতার প্রেক্ষণ বিন্দুতে বিসদৃশ ভাব রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপক ও ‘পল্লিজননী’ কবিতায় অপার মমত্ববোধই প্রকাশিত হয়েছে। সন্তানের মঙ্গল কামনা বাঙালি জননীর চির চাওয়া। তার জীবন আবর্তিত হয় সন্তানকে ঘিরে। সন্তানের সুখের জন্য মা তার নিজের সুখকে বিসর্জন দেন। জীবনের সমস্ত বিপদ-আপদ থেকে মা তার সন্তানকে আগলে রাখেন। বস্তুত মা সন্তানের সুখ-দুঃখ,আনন্দ-বেদনার সঙ্গে একাত্ম হয়ে উঠেন। বাঙালি নারীর এ চিরকালীন রূপটিই চির প্রবহমান।

‘পল্লিজননী’ কবিতায় আমরা সন্তানের জন্য প্রবল মাতৃত্ববোধ ফুটে উঠতে দেখি। একজন মা অসুস্থ ছেলের শিয়রে বসে তার সেবা করছে। তিনি বসে বসে তার শৈশবের কথা স্মরণ করছেন। ছেলের তুচ্ছ আবদারগুলো পূরণ করতে না পারার ব্যর্থতা তাকে কাতর তুলেছে। সন্তানের মঙ্গল কামনায় তার চোখ দিয়ে অশ্রুর ধারা বইছে। তিনি ছেলের সুস্থতা কামনায় নামাজের ঘরে মোমবাতি মানত করেছেন, আর দরগায় করেছেন দান। এত কিছুর পরও সন্তানের অকল্যাণ আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়েছেন।

 উদ্দীপকেও দেখি সন্তানের মঙ্গল কামনায় একটি স্বর্গীয় বাতাবরণ। দেবী পাটুনীকে বর চাইতে বললে সে নিজের জন্য কিছুই চায় না। সে চেয়েছে তার সন্তানের জন্য প্রশান্তিময় জীবন ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ। উদ্দীপকের পাটুনী চরিত্রটি সন্তান স্নেহের চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছে। আমাদের সমাজ জীবনে মা হিসেবে একজন নারীর অকৃত্রিম স্নেহ ও পরম মমত্ববোধ প্রকাশিত হয় তার সন্তানকে আবর্তন করে। বলা যায়, ‘পল্লিজননী’ কবিতা ও উদ্দীপক উভয়টিতে বিষয়টি অনুরণিত হয়েছে।


নিজে কর

সৃজনশীল প্রশ্ন 

অনিন্দ্য জীবনে আজ প্রথম ভাত রাঁধতে গেল। সে না পারল মাড় গালতে, না পারল ভালো করে ভাত বাড়তে। মা একবার নিজে উঠবার চেষ্টা করলেন কিন্তু মাথা সোজা করতে পারলেন না, বিছানায় গড়িয়ে পড়ে গেলেন। অবশেষে মাতা-পুত্রের একরকম ভাত খাওয়া হল। মা পুত্রকে রান্নার নিয়ম শেখাতে গিয়ে থেমে গেলেন। পুত্রের দিকে তাকিয়ে তার চোখ দিয়ে কেবল অঝোর ধারায় অশ্রু বইতে লাগল।

ক. ‘পল্লিজননী’ কবিতায় ঘরের চালে কোন পাখি ডাকে?

খ. ‘আজও রোগে তার পথ্য জোটেনি’ -উক্তিটি বুঝিয়ে বল।

গ. উদ্দীপকটি ‘পল্লিজননী’ কবিতার কোন দিকটির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ? -আলোচনা কর।

ঘ. “উদ্দীপক এবং‘পল্লিজননী’ কবিতা উভয়ক্ষেত্রেই অপত্য মাতৃ স্নেহ প্রকাশিত হয়েছে।” -বিশ্লেষণ কর।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনেট আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url