এস এস সি বাংলা ১ম পত্র মানুষ মুহম্মদ (স.) মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী
মানুষ মুহম্মদ (স.)
মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী
লেখক পরিচিতি
সূচীপত্র
১৮৯৬ সালে মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী সাতক্ষীরা জেলার বাঁশদহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯১৬ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন ও ১৯১৮ সালে কলকাতা বঙ্গবাসী কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএ পাশ করেন। বিএ পড়াকালীন মওলানা আকরম খাঁর প্রভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভ আর হয়নি। এরপর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। তিনি ‘মাসিক মোহাম্মদী’, ‘দৈনিক মোহাম্মদী’, ‘নবযুগ’ ‘দৈনিক সেবক’, ‘সাপ্তাহিক সওগাত’, ‘সাপ্তাহিক খাদেম’, ইংরেজি ‘দি মুসলমান’ ইত্যাদি পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন।
বিশ শতকের মধ্যভাগে প্রাঞ্জল ভাষায় প্রবন্ধ রচনা করে যাঁরা খ্যাতি অর্জন করেছিলেন ওয়াজেদ আলী তাঁদের অন্যতম। চিৎপ্রকর্ষের সাধনায় অর্জিত প্রজ্ঞাবলে উন্নতমানের জীবনী, নকশা, সম্পাদকীয় নিবন্ধ প্রভৃতি রচনা করে তিনি খ্যাতি অর্জন তিনি খুব পরিচ্ছন্ন চিন্তা ও যুক্তিবাদী মন নিয়ে সবকিছুর বিচার করতেন। সহজ সরল প্রকাশভঙ্গি তাঁর রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাঁর গদ্যশৈলী ঋজু, রচনা সাবলীল। ১৯৫৪ সালের ৮ই নভেম্বর স্বগ্রামে মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী মৃত্যুবরণ করেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ
মরুভাস্কর, মহামানুষ মুহসীন, সৈয়দ আহমদ, ছোটদের হযরত মুহম্মদ।
ভূমিকা
মানুষ মুহাম্মদ’ প্রবন্ধটি মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী রচিত ‘মরুভাস্কর’ গ্রন্থ থেকে সঙ্কলিত। এ প্রবন্ধে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মুহম্মদের মানবীয় গুণাবলির কথা এবং তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মহৎ হওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে। প্রবন্ধকার ইসলাম ধর্মে মানবাধিকারের ধরন এবং মহানবীর প্রতি বিধর্মীদের নিষ্ঠুরতা ও তাঁর ত্যাগের মহিমা বর্ণনা করেছেন।
সাধারণ উদ্দেশ
মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী রচিত ‘মানুষ মুহম্মদ (স.)’ প্রবন্ধ পাঠ শেষে তুমি-
- মানুষ হিসেবে হযরত মুহম্মদ (স.)-এর শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় দিতে পারবে;
- হযরতের জীবন-সাধনার তাৎপর্য বিশ্লেষণ করতে পারবে;
- মুহম্মদ (স.)-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী লিখতে পারবে ।
এই পাঠটি পড়া শেষে তুমি
- হযরত মুহম্মদ (স.)-এর মানবিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে পারবে;
- হযরত মুহম্মদ (স.)-এর সাফল্যের কারণগুলো লিখতে পারবে।
- হযরত মুহম্মদ (স.)-এর চারিত্রিক গুণাবলি ব্যাখ্যা করতে পারবে;
- দশের মধ্যে থেকেও তিনি কীভাবে সবার অনুকরণীয় হয়ে উঠলেন, তা বিশ্লেষণ করতে পারবেন।
- হযরত মুহম্মদ (স.)-এর চারিত্রিক গুণাবলি ব্যাখ্যা করতে পারবে;
- দশের মধ্যে থেকেও তিনি কীভাবে সবার অনুকরণীয় হয়ে উঠলেন, তা বিশ্লেষণ করতে পারবে।
মূলপাঠ
হযরতের মৃত্যুর কথা প্রচারিত হইলে মদিনায় যেন আঁধার ঘনাইয়া আসিল। কাহারও মুখে আর কথা সরে না; কেহবা পাগলের মতো কান্ড শুরু করে। রাসুলুল্লাহর পীড়ার খবর শুনিবার জন্য বহুলোক জমায়েত হইয়াছে। কে একজন বলিলেন, তাঁহার মৃত্যু হইয়াছে। বীরবাহু ওমর উলঙ্গ তরবারি হাতে লইয়া লাফাইয়া উঠিলেন, যে বলিবে হযরত মরিয়াছেন, তাহার মাথা যাইবে।
মহামতি আবুবকর শেষ পর্যন্ত হযরতের মৃত্যুশয্যার পার্শ্বে ছিলেন। তিনি গম্ভীরভাবে জনতার মধ্যে দাঁড়াইলেন। বলিলেন, যাহারা হযরতের পূজা করিত, তাহারা জানুক তিনি মারা গিয়াছেন; আর যাহারা আল্লাহর উপাসক, তাহাদের জানা উচিত আল্লাহ অমর, অবিনশ্বর। আল্লাহর সুস্পষ্ট বাণী : মুহম্মদ (স.) এজন রাসুল বৈ আর কিছু নন। তাঁহার পূর্বে আরওঅনেক রাসুল মারা গিয়াছেন।
রাসুলুল্লা (স.) মরিতে পারেন, নিহত হইতে পারেন; তাই বলিয়া তিনি যেই সত্য তোমাদের দিয়া গেলেন তাহাকে কি তোমরা মাথা পাতিয়া গ্রহণ করিবে না? এই বিশ্বভুবনে ঐ দূর অন্তরীক্ষে যাহা কিছু দেখিতে পাও সবই আল্সৃলাহর ষ্টি, তাঁহারই দিকে সকলের মহাযাত্রা। হযরত আবুবকরের গম্ভীর উক্তিতে সকলেরই চৈতন্য হইল। হযরত ওমরের শিথিল অঙ্গ মাটিতে লুটাইল। তাঁহার স্মরণ হইল হযরতের বাণী : আমি তোমাদেরই মতো একজন মানুষ মাত্র।
তাঁহার মনে পড়িল কুরআনের আয়াত : মুহম্মদ, মৃত্যু তোমারও ভাগ্য, তাহাদেরও ভাগ্য। তাঁহার অন্তরে ধ্বনিয়া উঠিল মুসলিমের গভীর প্রত্যয়ের স্বীকারোক্তি অমর সাক্ষ্য : মুহম্মদ (স.) আল্লাহর দাস (মানুষ) ও রাসুল। শোকের প্রথম প্রচন্ড আঘাতে আত্মবিস্মৃতির পূর্ণ সম্ভাবনার মধ্যে দাঁড়াইয়া স্থিতধী হযরত আবুবকর (রা) রাসুলের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের সীমারেখা সৃষ্টি করিয়া তুলিলেন। তিনি রাসুল, কিন্তু তিনি মানুষ, আমাদেরই মতো দুঃখ-বেদনা, জীবন-মৃত্যুর অধীন রক্ত-মাংসে গঠিত মানুষ- এই কথাই বৃদ্ধ হযরত আবুবকর সিদ্দিক (রা.) মূর্ছিত মুসলিমকে বুঝাইয়া দিলেন।
তিনি মানুষের মন আকর্ষণ করিয়াছিলেন মুখ্যত তাঁহার মানবীয় গুণাবলি দ্বারা। মক্কার শ্রেষ্ঠ বংশে তিনি জন্মিয়াছিলেন। কিন্তু বংশগৌরব হযরতের সচেতন চিত্তে মুহূর্তের জন্যও স্থানলাভ করে নাই। জন্মদুঃখী হইয়া তিনি সংসারে আসিয়াছিলেন। এই দুঃখের বেদনা তাঁহার দেহসৌন্দর্য ও চরিত্র-মাধুরীর সহিত মিলিয়া তাঁহাকে নরনারীর একান্ত প্রিয় করিয়া তুলিয়াছিল। আবাল্য তিনি ছিলেন আল-আমিন- বিশ্বস্ত, প্রিয়ভাষী, সত্যবাদী। তাঁহার অসাধারণ যোগ্যতা, বুদ্ধি, বিচারশক্তি, বলিষ্ঠ দেহ দেখিয়া মানুষ অবাক হইয়া যাইত। এই সকল গুণ বিবি খাদিজাকে আকর্ষণ করিয়াছিল।
বস্তুত হযরতের রূপলাবণ্য ছিল অপূর্ব, অসাধারণ। মক্কা হইতে মদিনায় হিযরতের পথে এক পরহিতব্রতী দম্পতির কুটিরে তিনি আশ্রয় নেন। রাহী-পথিকদের সেবা করাই ছিল তাহাদের ব্রত। হযরত যখন আসিলেন, কুটিরস্বামী আবু মা’বদ মেষপাল চরাইতে গিয়াছিলেন। তাঁহার পত্মী উম্মে মা’বদ ছাগীদুগ্ধ দিয়া হযরতের তৃষ্ণা দূর করিলেন। গৃহপতি ফিরিলে এই নারী স্বামীর কাছে নব অতিথির রূপ বর্ণনা করেন, সুন্দর, সুদর্শন পুরুষ তিনি। তাঁহার শীর্ষে সুদীর্ঘ কুঞ্চিত কেশপাশ, বয়ানে অপূর্ব কান্তশ্রী।
তাঁহার আয়তকৃষ্ণ দুটি নয়ন, কাজল রেখার মতো যুক্ত ভ্রূযুগল, তাঁহার সুউচ্চ গ্রীবা, কালো কালো দুটি চোখের ঢলঢল চাহনি মনপ্রাণ কাড়িয়া নেয়। গুরুগম্ভীর তাঁহার নীরবতা, মধুবর্ষী তাঁহার মুখের ভাষণ, বিনীত নম্র তাঁহার প্রকৃতি। তিনি দীর্ঘ নন, খর্ব নন, কৃশ নন। এক অপূর্ব পুলকদীপ্তি তাঁহার চোখেমুখে, বলিষ্ঠ পৌরুষের ব্যঞ্জনা তাঁহার অঙ্গে। বড় সুন্দর, বড় মনোহর সেই অপরূপ রূপের অধিকারী।
সত্যই হযরত বড় সুদর্শন পুরুষ ছিলেন। তাঁহার চেহারা মানুষের চিত্ত আকর্ষণে যতটুকু সহায়তা করে, তাহার সবটুকু তিনি পাইয়াছিলেন। সত্যের নিবিড় সাধনায় তাঁহার চরিত্র মধুময় হইয়া উঠিয়াছিল। কাছে আসিলেই মানুষ তাঁহার আপনজন হইয়া পড়িত। অকুতোভয় বিশ্বাসে তিনি অজেয় হইয়াছিলেন। শত্রুর নিষ্ঠুরতম নির্যাতন তাঁহার অন্তরের লৌহকপাটে আহত হইয়া ফিরিয়া যাইত। কিন্তু সত্যে তিনি বজ্রের মতো কঠিন, পর্বতের মতো অটল হইলেও করুণায় তিনি ছিলেন কুসুমকোমল।
বৈরীর অত্যাচারে বারবার তিনি জর্জরিত হইয়াছিলেন, শত্রুর লোষ্ট্রাঘাতে-অরাতির হিংস্র আক্রমণে বরাঙ্গের বসন তাঁহার বহুবার রক্তরঙিন হইয়া উঠিয়াছে, তথাপি পাপী মানুষকে তিনি ভালোবাসিয়াছিলেন, অভিশাপ দেওয়ার চিন্তাও তাঁহার অন্তরে উদিত হয় নাই। মক্কার পথে প্রান্তরে পৌত্তলিকের প্রস্তরঘায়ে তিনি আহত হইয়াছেন, ব্যঙ্গবিদ্রূপে বারবার তিনি উপহাসিত হইয়াছেন; কিন্তু তাঁহার অন্তর ভেদিয়া একটি মাত্র প্রার্থনার বাণী জাগিয়াছে; এদের জ্ঞান দাও প্রভু, এদের ক্ষমা কর।
তায়েফে সত্য প্রচার করিতে গিয়া তাঁহাকে কী ভীষণ পরীক্ষার সম্মুখীন হইতে হইয়াছিল; আমরা দেখিয়াছি। পথ চলিতে শত্রুর প্রস্তরঘায়ে তিনি অবসন্ন হইয়া পড়িতেছিলেন; তখন তাহারাই আবার তাঁহাকে তুলিয়া দিতেছিল। তিনি পুনর্বার চলা শুরু করিলে দ্বিগুণ তেজে পাথরবৃষ্টি করিতেছিল। রক্তে রক্তে তাঁহার সমস্ত বসন ভিজিয়া গিয়াছে, দেহ নিঃসৃত রুধিরধারা পাদুকায় প্রবেশ করিয়া জমিয়া শক্ত হইয়াছে, মৃত্যুর আবছায়া তাঁহার চৈতন্যকে সমাচ্ছন্ন করিবার চেষ্টা করিতেছে, তথাপি অত্যাচারীর বিরুদ্ধে তাঁহার বিন্দুমাত্র অভিযোগ নাই।
রমণীর রূপ, গৃহস্থের ধনসম্পদ, নেতৃত্বের মর্যাদা, রাজার সিংহাসন সব কিছুকে তুচ্ছ করিয়া সেই সত্যকে তিনি জীবনের শ্রেষ্ঠতম সম্বল জ্ঞানে আশ্রয় করিয়াছিলেন; তাঁহাকে উপহাসিত, অবহেলিত, অস্বীকৃত দেখিয়াও ক্রোধ, ঘৃণা বা বিরক্তির একটি শব্দও তাঁহার মুখে উচ্চারিত হয় নাই। অভিসম্পাত করিতে অনুরুদ্ধ হইয়াও তিনি বলিলেন : না না, তাহা কখনই সম্ভব নয়। এই পৃথিবীতে আমি ইসলামের বাহন, সত্যের প্রচারক।
মানুষের দ্বারে দ্বারে সত্যের বাণী বহন করা আমার কাজ। আজ যাহারা সত্যকে অস্বীকার করিতেছে, তাঁহাকে মারিতে উদ্যত হইয়াছে, হয়তো কাল তাহারা-তাহাদের অনাগত বংশধরেরা ইসলাম কবুল করিবে। আপনার আঘাত জর্জরিত দেহের বেদনায় তিনি কাতর। সত্যকে ব্যাহত দেখিয়া মনের ব্যথা তাঁহার সেই কাতরতাকে ছাপাইয়া উঠিল। তিনি ঊর্ধ্বদিকে বাহু প্রসারণ করিয়া বলিলেন : তোমার পতাকা যদি দিয়াছ প্রভু, হীন আমি, তুচ্ছ আমি, নির্বল আমি, তাহা বহন করিবার শক্তি আমায় দাও।
বিপদাবরণ তুমি অশরণের শরণ তুমি, তোমার সত্য মানুষের দ্বারে পৌঁছাইয়া তাহাকে উন্নীত করিলেন যাঁহারা-তাঁহাদের পংক্তিতে আমার স্থান দাও। মক্কাবাসীরা হযরতের নবিত্ব লাভের শুরু হইতেই তাঁহার প্রতি কী নির্মম অমানুষিক অত্যাচার চালাইয়াছিল, আমরা দেখিয়াছি। যখন তাহাদের নির্যাতন সহনাতীত হইল, যখন দেখা গেল, কোরেশরা সত্যকে গ্রহণ করিবে না, হযরত মদিনায় চলিয়া গেলেন। পথে তাঁহাকে হত্যা করিবার জন্য, তাঁহার ও হযরত আবুবকরের ছিন্ন মুন্ড আনিবার জন্য বিপু পুরস্কারের লোভ দেখাইয়া, শত শত ঘাতক ক্ষুধার্ত ব্যাঘ্রের মতো হিংস্র ঘাতক পাঠানো হইল।
বদর, ওহোদ ও আহযাব (বা খন্দক) যুদ্ধে মক্কার বাসিন্দা এবং তাহাদের মিত্রজাতিরা সম্মিলিত হইয়া ইসলামের ও মুসলিমের চিহ্নটুকু পর্যন্ত ধরাপৃষ্ঠ হইতে মুছিয়া ফেলিবার জন্য প্রাণপণ করিল। খয়বরের যুদ্ধে হযরতের পরাজয়ের মিথ্যা সংবাদ শুনিয়া হযরতের মৃত্যু সম্ভাবনায় আনন্দে আত্মহারা হইয়া পড়িল। হুদায়বিয়া সন্ধিতে হযরতের শান্তিপ্রিয়তার সুযোগ লইয়া মুসলিমের স্কন্ধে ঘোর অপমানের শর্ত চাপাইয়া দেওয়ার পরও তাহাদের সহিত বিশ্বাসঘাতকতা করিতে চাহিল এবং তারপর হযরত যেই দিন বিজয়ী বেশে মক্কায় প্রবেশ করিলেন, সেই দিনও তাঁহার সহিত যুদ্ধকামনা করিয়া খালিদের সহিত হাঙ্গামা বাঁধাইয়া দিল।
এইভাবে শেষ পর্যন্ত যাহারা পদে পদে আনিয়া দিল লাঞ্ছনা, অপমান, অত্যাচার, নির্যাতন, প্রত্যেক সুযোগে যাহারা হানিল বৈরিতার বিষাক্ত বাণ; হযরত তাঁহাদের সহিত কী ব্যবহার করিলেন? জয়ীর আসনে বসিয়া ন্যায়ের তুলাদন্ড হাতে লইয়া বলিলেন : ভাইসব, তোমাদের সম্বন্ধে আমার আর কোনো অভিযোগ নাই, আজ তোমরা সবাই স্বাধীন, সবাই মুক্ত।
মানুষের প্রতি প্রেমপুণ্যে উদ্ভাসিত এই সুমহান প্রতিশোধ সম্ভব করিয়াছিল হযরতের বিরাট মনুষ্যত্ব। শুধু প্রেম-করুণায় নয়, মানুষ হিসেবে আপনার তুচ্ছতাবোধ আপনার ক্ষুদ্রতার অনুভূতি তাঁহার মহিমাগৌরবকে মুহূর্তের জন্যও ছাপাইয়া উঠিতে পারে নাই। মক্কাবিজয়ের পর হযরত সাফা পর্বতের পার্শ্বে বসিয়া সত্যান্বেষী মানুষকে দীক্ষা দান করিতেছেন, এমন সময় একটি লোক তাঁহার কাছে আসিয়া ভয়ে কাঁপিতে লাগিল। হযরত স্মিতমুখে তাহাকে বলিলেন, কেন তুমি ভয় পাইতেছ? ভয়ের কিছুই এখানে নাই। আমি রাজা নই, সম্রাট নই, মানুষের প্রভু নই।
আমি এমন এক নারীর সন্তান, সাধারণ শুষ্ক মাংসই ছিল যাঁহার নিত্যকার আহার্য। মহামহিমার মাঝখানে আপনার সামান্যতম এই অনুভূতিই হযরতের চরিত্রকে শেষ পর্যন্ত সুন্দর ও স্বচ্ছ রাখিয়াছিল। মানুষ ত্রুটির অধীন, হযরতও মানুষ, সুতরাং তাঁহারও ত্রুটি হইতে পারে এই যুক্তির বলে নয়, বরং তাঁহার অনাবিল চরিত্রের স্বচ্ছ সহজ প্রকাশ মর্যাদাহানির আশঙ্কা তুচ্ছ করিয়া, লোকচক্ষে সম্ভাবিত হেয়তার ভয় অবহেলায় দূর করিয়া তিনি অকুতোভয়ে আত্মদোষ উদঘাটন করিয়াছেন। একদিন তিনি মক্কার সম্ভ্রান্ত লোকদের কাছে সত্য প্রচারে ব্রতী।
মজলিসের এক প্রান্তে বসিয়া একটি অন্ধ। সম্ভবত সে হযরতের দুই একটি কথা শুনিতে পায় নাই। বক্তৃতার মাঝখানে একটি প্রশ্ন করিয়া সে হযরতকে থামাইল। বাধা পাইয়া হযরতের মুখে ঈষৎ বিরক্তির আভাস ফুটিয়া উঠিল, তাঁহার ললাট সামান্য কুঞ্চিত হইল। ব্যাপারটি এমন কিছুই গুরুতর নয়। বক্তৃতায় বাধা হইলে বিরক্তি অতি স্বাভাবিক। আবার দুঃখী দুর্বল লোকদের হযরত বড় আদর করিতেন, কাহারও ইহা অজ্ঞাত নয়। সুতরাং তিনি অন্ধকে ঘৃণা করিয়াছেন, কাঙাল বলিয়া তাহাকে হেলা করিয়াছেন, এই কথা কাহারও মনে আসে নাই।
কিন্তু তাঁহার এই তুচ্ছতম ত্রুটির প্রতি ইঙ্গিত আসিল কুরআনের একটি বাণীতে। তিনি বিনা দ্বিধায়, বিনা সঙ্কোচে তাহা সকলের কাছে প্রচার করিলেন। মানুষ হিসেবে যে ক্ষুদ্রতাবোধ, মানুষের সহজ দৈন্যের যে নির্মল অনুভূতি হযরতকে আপনার দোষত্রæটি সাধারণের চক্ষে এমন নির্বিকারভাবে ধরাইয়া দিতে প্ররোচিত করিয়াছিল, তাহাই আবার তাঁহার মহিমান্বিত জীবনে ইচ্ছা-স্বীকৃতি দারিদ্র্যের মাঝখানে প্রদীপ হইয়া জ্বলিয়াছিল। অনাত্মীয় পরিপার্শ্বের মধ্যেও নিবিড় নির্বিচার ভক্তি, শ্রদ্ধা, স্বীকৃতি ও আনুগত্য তিনি বড় অল্প পান নাই।
শত শত, বরং সহস্র সহস্র মুসলিম তাঁহার ব্যক্তিগত পারিবারিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের উপকরণ সংগ্রহ করিয়া দিতে সর্বদা শুধু ইচ্ছুক নয়, সমুৎসুক ছিল। কিন্তু হযরত আপনাকে দশজন মানুষের মধ্যে একজন গণনা করিলেন, সকালের সঙ্গী সহচররূপে সহোদয় ভাইয়ের মতাদর্শ প্রয়াসী নেতার কর্তব্য পালন করিলেন। সত্যের জন্য অত্যাচার নির্যাতন সহিলেন, দুঃখে-শোকে অশ্রুনীরে তিতিয়া আল্লাহর নামে সান্ত¡না মানিলেন, দেশের রাজা-মানুষের মনের রাজা হইয়া স্বেচ্ছায় দারিদ্র্যের কণ্টক মুকুট মাথায় পরিলেন।
তাই তাঁহার গৃহে সকল সময় অন্ন জুটিত না, নিশার অন্ধকারে প্রদীপ জ্বালিবার মতো তৈলটুকুও সময় সময় মিলিত না। এমনি নিঃস্ব কাঙালের বেশে মহানবী মৃত্যু রহস্যের দেশে চলিয়া গেলেন। স্বামীর মহাপ্রয়াণে বিয়োগবিধুরা আয়েশার বক্ষ ভেদিয়া শোকের মাতম উঠিল, মানুষের মঙ্গল সাধনায় যিনি অতন্দ্র রজনী যাপন করিলেন, সেই সত্যাশ্রয়ী আজ চলিয়া গেলেন। নিঃস্বতাকে সম্বল করিয়া যিনি বিশ্বমানবের জন্য আপনাকে বিলাইয়া দিলেন, তিনি আজ চলিয়া গেলেন। সাধনার পথে শত্রুর আঘাতকে যিনি অম্ঢান বদনে সহিলেন।
হায়, সেই দয়ার নবী, মানুষের মঙ্গল বহিয়া আনিবার অপরাধে প্রস্তরঘায়ে যাঁহার দাঁত ভাঙিয়াছিল, প্রশস্ত ললাট রুধিরাক্ত হইয়াছিল, আর সেই আহত জর্জরিত মুমূর্ষু দশাতেও যিনি শত্রুকে প্রেমভরে আশীর্বাদ করিয়াছিলেন, তিনি আজ জীবন-নদীর ওপারে চলিয়া গেলেন। দুই বেলা পূর্ণোদর আহারও যাঁহার ভাগ্যে হয় নাই, ত্যাগ ও তিতিক্ষার মূর্ত প্রকাশ মহানবী আজ চলিয়া গেলেন। বিবি আয়েশার মর্মছেঁড়া এই বিলাপ সমস্ত মানুষের, সমগ্র বিশ্বের।
শুধু সত্য সাধনায় নয়, শুধু ঊর্ধ্ব লোকচারী মহাব্রতীর তত্তানুসন্ধানে নয়, মানুষের সঙ্গে মানুষের ব্যবহারে হযরত মোস্তফা ইতিহাসের একটি অত্যন্ত অসাধারণ চরিত্র। ত্যাগ, প্রেম, সাধুতা, সৌজন্য, ক্ষমা, তিতিক্ষা, সহজ, শৌর্য, অনুগ্রহ, আত্মবিশ্বাস, তীক্ষè দৃষ্টি ও সমদর্শন-চরিত্র সৌন্দর্যের এতগুলি দিকের সমাহার ধুলোমাটির পৃথিবীতে বড় সুলভ নয়। তাই মানুষের একজন হইয়াও তিনি দুর্লভ, আমাদের অতি আপনজন হইয়াও তিনি অনুকরণীয়, বরণীয়।
শব্দের অর্থ
অকুতোভয়--নির্ভয়।
অনুরুদ্ধ-- অনুরোধ করা হয়েছে এমন।
অবিনশ্বর-- অক্ষয়; অবিনাশী।
অরাতি-- শত্রু।
অন্তরীক্ষে--আকাশে, গগনে।
ওমর-- ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা) ছিলেন একজন তেজস্বী বীরযোদ্ধা। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে কোরেশ বংশোদ্ভূত তরুণ বীর ওমর মহানবীকে হত্যা করার সংকল্প নিয়ে যখন যাচ্ছিলেন তখন তাঁর ভগ্নীর কণ্ঠে পবিত্র কুরআনের বাণী শুনে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। হযরত ওমর (রা) ছিলেন ন্যায়পরায়ণ শাসক ও মহানবীর বিশ্বাসভাজন সাহাবা।
কেশপাশ-- চুলের গোছা।
কান্তশ্রী-- সুন্দর; মনোরম।
কুটিরস্বামী-- গৃহের মালিক।
কুসুমকোমল-- ফুলের মতো নরম।
গ্রীবা-- ঘাড়।
চৈতন্য-- চেতনা।
তিতিয়া--ভিজে।
তায়েফ-- সৌদি আরবের দক্ষিণাঞ্চলের একটি উর্বর প্রদেশ।
ধী--বুদ্ধি।
নির্যাতন-- অত্যাচার; জুলুম।
পরহিতব্রতী--পরের উপকারে নিয়োজিত।
পুলকদীপ্তি-- আনন্দের উদ্ভাস।
পূর্ণোদর--ভরপেট।
প্রস্তরঘায়ে-- পাথরের আঘাতে।
পৌত্তলিক-- মূর্তিপূজক।
বয়ান-- বর্ণনা; বিবরণ।
বীরবাহু-- শক্তিধারী।
লোষ্ট্রাঘাত-- ঢিলের আঘাত।
বৈরী-- শত্রু।
মহামতি আবুবকর--ইসলামের প্রথম খলিফা এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারীদের মধ্যে প্রথম পুরুষ ব্যক্তি। তিনি ছিলেন মহানবীর হিযরতকালীন সঙ্গী এবং সারাজীবনের বিশ্বস্ত সহচর। তিনি ছিলেন সত্যনিষ্ঠ, আদর্শবাদী ও ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ।
মক্কা--সৌদি আরবের অন্যতম প্রধান নগরী। এখানে আল্লাহর ঘর কাবা শরিফ বিদ্যমান। এই নগরীতে রাসুলুল্লাহ জন্মগ্রহণ করেন।
মদিনা--সৌদি আরবে অবস্থিত মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় সম্মানিত নগরী। এখানে হযরত মুহম্মদ (স.) এবং হযরত আবু বকরের (রা.) মাজার রয়েছে।
মহামতি-- উদার হৃদয়; অতি উন্নত চরিত্র।
মূর্ছিত-- অচেতন; জ্ঞানহারা।
রাসুল-- আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ।
রুধিরাক্ত-- রক্তাক্ত, রক্তরঞ্জিত।
রাহী-- পথিক, মুসাফির।
হিজরত-- শাব্দিক অর্থ পরিত্যাগ। এখানে মক্কা ত্যাগ করে মদিনা যাত্রা বোঝানো হয়েছে।
স্থিতধী-- স্থিরবুদ্ধিসম্পন্ন।
সমাচ্ছন্ন-- অভিভূত।
সারসংক্ষেপ
হযরত মুহম্মদ (স.)-এর মৃত্যুর খবরে মদিনায় শোকের আঁধার নেমে এসেছিল। হযরত ওমর (রা.) সহ অনেকেই তাঁর মৃত্যু মেনে নিতে পারছিলেন না। তখন হযরত আবু বকর (রা.) আল্লাহর বাণী স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন, তিনি মানুষই বটে, তাই তাঁর মৃত্যুই স্বাভাবিক। আসলে কোনো অলৌকিক ক্ষমতাবলে হযরত সাফল্য পাননি। মানবিক গুণাবলিই তাঁকে বিজয়ী করেছিল। তাঁর অপূর্ব দৈহিক সৌন্দর্য মানুষকে আকর্ষণ করত।
ভালোবাসা দিয়েই তিনি মানুষকে জয় করেছিলেন। সত্যের বাণী প্রচারে অসীম ধৈর্য আর সাহসই তাঁকে লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়েছিল।সত্য প্রচারের জন্য হযরত মুহম্মদ (স.) যে নির্যাতন সহ্য করেছিলেন, তার কোনো তুলনা হয় না। কিন্তু প্রতিশোধ নেবার কথা তিনি কখনো ভাবেননি। ক্ষমাই ছিল তাঁর আদর্শ। নিজেকে তিনি কখনো উঁচুতে তুলতে চাননি। বরং দশের মধ্যে থেকেই সবার জন্য কাজ করেছেন। নিজের সুখের কথা ভাবেননি। জীবনপাত করেছেন মানুষের কল্যাণে। তাই মানবসমাজের একজন হয়েও তিনি মহামানব; তাই মানুষের অতি আপনজন হয়েও তিনি চির-অনুকরণীয়।
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১. ‘মরুভাস্কর’ গদ্যগ্রন্থের রচয়িতা কে?
ক. এস. ওয়াজেদ আলী খ. মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী
গ. বন্দে আলী মিয়া ঘ. ফররুখ আহমদ
২. হজরত মুহম্মদ (স.) মক্কা ছেড়ে মদিনায় গেলেন কেন?
ক. শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে খ. মক্কাবাসীর নির্যাতনে
গ. মদিনাবাসীর মহত্তে¡ আকৃষ্ট হয়ে ঘ. ভ্রমণের উদ্দেশ্যে
নিচের উদ্দীপকটি পড়ুন এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দিন :
আজগর সাহেব খুবই সৎ ও বিনয়ী একজন মানুষ। কর্মনিষ্ঠায় তিনি তাঁর অফিসে সকলের সেরা। তা সত্তে¡ও তার আদর্শের কারণে সহকর্মীরা তাঁকে বিদ্রূপ ও উত্ত্যক্ত করেন। তিনি নীরবে সব কিছু সহ্য করেন, কাউকে কিছু বলেন না।
৩. উদ্দীপকে প্রকাশিত গুণটি ‘মানুষ মুহম্মদ (স.)’ রচনার যে বাক্যের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে-
ক. আমি তোমাদের মতো একজন মানুষ মাত্র। খ. মুহম্মদ(স.) আল্লাহর দাস(মানুষ) ও রাসুল।
গ. এদের জ্ঞান দাও প্রভু, এদের ক্ষমা কর। ঘ. তাঁহার ললাট সামান্য কুঞ্চিত হইল।
৪. উদ্দীপকের আজগর সাহেব অপমান সহ্য করায় ‘মানুষ মুহম্মদ (স.)’ রচনা অনুযায়ী মুহম্মদ (স.)-এর কোন গুণের অধিকারী হয়েছেন?
i. মহানুভবতা ii. স্বাভাবিকতা iii. উদারতা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i খ. ii
গ. iii ঘ. i, ii ও iii
১. ‘মরুভাস্কর’ গদ্যগ্রন্থের রচয়িতা কে?
ক. এস. ওয়াজেদ আলী খ. মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী
গ. বন্দে আলী মিয়া ঘ. ফররুখ আহমদ
২. হজরত মুহম্মদ (স.) মক্কা ছেড়ে মদিনায় গেলেন কেন?
ক. শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে খ. মক্কাবাসীর নির্যাতনে
গ. মদিনাবাসীর মহত্তে¡ আকৃষ্ট হয়ে ঘ. ভ্রমণের উদ্দেশ্যে
নিচের উদ্দীপকটি পড়ুন এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দিন :
আজগর সাহেব খুবই সৎ ও বিনয়ী একজন মানুষ। কর্মনিষ্ঠায় তিনি তাঁর অফিসে সকলের সেরা। তা সত্তে ও তার আদর্শের কারণে সহকর্মীরা তাঁকে বিদ্রূপ ও উত্ত্যক্ত করেন। তিনি নীরবে সব কিছু সহ্য করেন, কাউকে কিছু বলেন না।
৩. উদ্দীপকে প্রকাশিত গুণটি ‘মানুষ মুহম্মদ (স.)’ রচনার যে বাক্যের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে-
ক. আমি তোমাদের মতো একজন মানুষ মাত্র। খ. মুহম্মদ(স.) আল্লাহর দাস(মানুষ) ও রাসুল।
গ. এদের জ্ঞান দাও প্রভু, এদের ক্ষমা কর। ঘ. তাঁহার ললাট সামান্য কুঞ্চিত হইল।
৪. উদ্দীপকের আজগর সাহেব অপমান সহ্য করায় ‘মানুষ মুহম্মদ (স.)’ রচনা অনুযায়ী মুহম্মদ (স.)-এর কোন গুণের অধিকারী হয়েছেন?
i. মহানুভবতা ii. স্বাভাবিকতা iii. উদারতা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i খ. ii
গ. iii ঘ.i, ii ও iii
৫. সাধারণ শুষ্ক মাংস নিত্য আহার করতেন কে?
ক. হযরত মুহম্মদ (স.) খ. হযরত আবু বকর (রা.)
গ. বিবি আয়েশা (রা.) ঘ. হযরত ওমর (রা.)
৬. ‘মানুষের একজন হইয়াও তিনি দুর্লভ,আমাদের অতি আপন জন হইয়াও তিনি বরণীয়।’ বাক্যটিতে বোঝানো হয়েছে-
i. ত্যাগে মহিমান্বিত ii. ক্ষমায় মহান iii. গুণে অনুকরণীয়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i খ. ii
গ. iii ঘ.i, ii ও iii
নিচের উদ্দীপকটি পড়ুন এবং ৭ ও ৮ নং প্রশ্নের উত্তর দিন :
পুণ্যে পাপে, সুখে দুঃখে পতনে উত্থানে
মানুষ হইতে দাও তোমার সন্তানে।
৭. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘মানুষ মুহম্মদ (স.)’ প্রবন্ধের সাদৃশ্য রয়েছে কী?
i. প্রেক্ষাপট ভিন্ন ii.মূলভাবকে ধারণ করে iii. আংশিক প্রতিচ্ছবি
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i খ. ii
গ. iii ঘ. i, iii
৮. উদ্দীপক ও ‘মানুষ মুহম্মদ (স.)’ প্রবন্ধের মৌল প্রত্যাশাi
ক. মঙ্গলাকাক্সক্ষা খ. সাম্য চেতনা
গ. দেশপ্রেম ঘ.অধ্যবসায়
৯. ‘রাহী’ শব্দের অর্থ কী ?
ক. মুসাফির খ. মুসাফির
গ. পথপ্রদর্শক ঘ.পথভ্রষ্ট
১০. পাপ করেছে এমন মানুষদের হজরত মুহাম্মদ (স.) কী করতেন?
ক. নির্যাতন করতেন খ. উপদেশ দিতেন
গ. ঘৃণা করতেন ঘ. রাগ করতেন
নিচের উদ্দীপকটি পড়ুন এবং ১১ ও ১২ নং প্রশ্নের উত্তর দিন :
তোমার মুক্তির জন্য সর্বপ্রযতেœ সেই মুক্তিদাতার নিকট পুনঃ পুনঃ প্রার্থনা করিব। যে পর্যন্ত তোমাকে মুক্ত করাইতে না পারিব সেই পর্যন্ত আমি স্বর্গের সোপানে পা রাখিব না।
১১. উদ্দীপকটি যে রচনাকে ইঙ্গিত করে-
ক. নিমপাতা খ. মানুষ মুহম্মদ (স.)
গ. প্রাণ ঘ. নিয়তি
১২. উদ্দীপকটি মানবীয় গুণাবলির যে দিক প্রকাশ করেÑ
i. ক্ষমা ii. মহানুভবতা iii. উদারতা
নিচের কোনটি সঠিক ?
ক. i খ. ii
গ. iii ঘ. i, ii ও iii
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তরমালা
১. খ ২. খ ৩. গ ৪. ঘ ৫. ক ৬. ঘ ৭. গ ৮. ক ৯. ক ১০. খ ১১. খ ১২. ঘ
সৃজনশীল প্রশ্ন-১
তাঁর শৈশব, কৈশোর ও যৌবন খুবই সততা ও ন্যায়পরায়ণতার মধ্যে অতিবাহিত হয়। শৈশব হতেই তিনি লজ্জাশীলতা ও শালীনতার মূর্ত প্রতীক ছিলেন। একদিকে তিনি আমানতদারী, সত্যকথন ও অন্যান্য প্রশংসনীয় গুণাবলী দ্বারা ভূষিত ছিলেন, অপরদিকে মন্দ ও অশ্লীল কথাবার্তা, সভ্যতাবর্জিত ও রুচিবিগর্হিত আচার-অভ্যাস হতে ছিলেন বহুদূরে। এভাবে মানুষের প্রতি প্রেম-পুণ্যে উদ্ভাসিত হযরতের মধ্যে গড়ে উঠেছিল বিরাট মনুষ্যত্ব।
ক. হজরত মুহম্মদ (স.) কোথায় হিজরত করেছিল?
খ. হজরত আবু বকর (রা.) কী করে সকলের সম্বিৎ ফিরিয়ে এনেছিল?
গ. উদ্দীপকে মানুষ মুহম্মদ (স.) প্রবন্ধের যে দিকটি প্রকাশিত হয়েছে তা আলোচনা কর।
ঘ. “উদ্দীপকে মানুষ মুহম্মদ (স.) প্রবন্ধের সামগ্রিক দিকটি নয়, আংশিক ভাব প্রকাশিত হয়েছে।” মন্তব্যটি বিচার কর।
সৃজনশীল প্রশ্ন-১ উত্তর
ক. হজরত মুহম্মদ (স.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিলেন।
খ. হজরত মুহম্মদ (স.)-এর জীবনাদর্শ সম্পর্কে হজরত আবু বকর (রা.)-এর গম্ভীর উক্তি সকলের সম্বিৎ ফিরিয়ে এনেছিল। হজরত মুহম্মদ (স.)-এর মৃত্যু-সংবাদে তাঁর অনুসারীরা শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন। তখন হজরত আবু বকর (রা.) বলিষ্ঠ কণ্ঠে ঘোষণা করেন: ‘যাহারা হযরতের পূজা করিত, তাহারা জানুক তিনি মারা গিয়াছেন, আর যাহারা আল্লাহর উপাসক তাহাদের জানা উচিত আল্লাহ অমর, অবিনশ্বর।’ তিনি আরো বলেন: ‘রাসুলুল্লাহ (স.) মরিতে
পারেন, নিহত হইতে পারেন। তাই বলিয়া তিনি যে সত্য তোমাদের দিয়া গেলেন তাহাকে কি তোমরা মাথা পাতিয়া গ্রহণ করিবে না?’-এ সংলাপগুলো শ্রবণ করে সকলের বিবেচনা শক্তি ফিরে আসে। এভাবে হজরত আবু বকর (রা.) সকলের সম্বিৎ ফিরিয়ে এনেছিলেন।
গ. উদ্দীপকে হজরত মুহম্মদ (স.) -এর চরিত্রে মনুষ্যত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। হজরত মুহম্মদ (স.) মানুষর প্রাণের নবি। তাঁর অসাধারণ যোগ্যতা, বুদ্ধি, বিচারশক্তি মানুষকে বিস্মিত করত। সত্য ছিল তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তিনি মানুষকে ভালোবেসেছেন। তাই মানুষে মানুষে যে কৃত্রিম ভেদ ও বৈষম্য তা তিনি ধূলিসাৎ করে দিয়েছিলেন।
‘মানুষ মুহম্মদ (স.)’ প্রবন্ধে হজরত মুহম্মদ (স.)-এর মানবীয় গুণাবলি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তাঁর অনেক গুণের একটি হল মানবপ্রেম। তিনি মানুষকে ভালোবেসেছিলেন বলেই নিজেকে কখনো শ্রেষ্ঠ বলে ভাবেননি। বরং অন্য দশজন সাধারণ মানুষের মতো তিনি নিজেকে মানুষ ভেবেছেন। সততা, শালীনতা, ন্যায়পরায়ণতা, প্রেম তথা মনুষ্যত্বে তিনি এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত। উদ্দীপকেও দেখা যায় মানুষের জন্য তাঁর হৃদয় প্রেম ও পুণ্যে পরিপূর্ণ ছিল। তাঁর মধ্যে গড়ে উঠেছিল বিরাট মনুষ্যত্বের অনুকরণীয় নমুনা।
ঘ. উদ্দীপকে মানুষ মুহম্মদ (স.) প্রবন্ধের আংশিক ভাব ফুটে উঠেছে, পূর্ণাঙ্গ রূপটি প্রকাশিত হয়নি। হজরত মুহম্মদ(স.) বিশ্ব মানবের মুক্তির পথিকৃৎ। মানব জীবনের পূর্ণ গুণের সমাবেশ ঘটেছিল তাঁর মধ্যে। তিনি মানুষকে ভালোবাসতেন। মানুষকে বিশ্বাস করতেন। শ্রেষ্ঠ আদর্শ হিসাবে তিনি নিজের জীবনকে রূপায়িত করেছিলেন।
উদ্দীপকে হজরত মুহম্মদ (স.)-এর মানবীয় গুণাবলি প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ছিলেন সত্যের একনিষ্ঠ সৈনিক। শৈশব হতেই তিনি শালীনতাসম্পন্ন জীবন যাপন করতেন। তাঁর নিকট সকল মানুষই সমান ছিল। মানুষের প্রতি প্রেম-প্রীতি উদ্ভাসিত হজরতের (স.) মধ্যে গড়ে উঠেছিল বিরাট মনুষ্যত্ব। ‘মানুষ মুহম্মদ(স.)’ প্রবন্ধেও দেখি তিনি বিপুল ঐশ্বর্যের মধ্যে থেকেও সাধারণ মানুষের মতো জীবন যাপন করেছেন। পৃথিবীর বিপুল কর্মযজ্ঞের মধ্যে তিনি ছিলেন সততা ও ন্যায়পরায়ণতার মূর্ত প্রতীক।
হজরত মুহম্মদ (স.)-এর চরিত্র মানুষের জন্য অনুকরণীয়। তিনি পৃথিবীতে মানবজাতির পথপ্রদর্শক। উদ্দীপকে দেখা যায় মুহম্মদ (স.)-এর জীবনীর একটি অংশই ফুটে উঠেছে। কিন্তু ‘মানুষ মুহম্মদ (স.)’ প্রবন্ধে মুহম্মদ (স.) জীবনীর পুরো পরিচয় পাওয়া যায়। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে মানুষ মুহম্মদ (স.) প্রবন্ধের সামগ্রিক ভাব নয়, আংশিক পরিচয় ফুটে উঠেছে।
নিজে কর
সৃজনশীল প্রশ্ন-২
মহানবি (স.) একটি সুস্থ এবং সম্ভ্রান্ত সাংস্কৃতিক জীবন মুসলমানদের জন্য গড়ে তুলেছিলেন। এ জীবনের লক্ষ্য ছিলবিশ্বাসীগণকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। পরিচ্ছন্নতার মধ্যে, পবিত্রতার মধ্যে, সুস্থতার মধ্যে, বিনয়ের মধ্যে এবং আল্লাহর প্রতি নিবেদিতচিত্ততার মধ্যে তিনি মুসলমানদের নতুন জীবনে দীক্ষিত করেছিলেন। এ জীবনে আনন্দ এবং কৌতুক ছিল। একজন মুসলমান যদি রাসুল (স.)-এর সামগ্রিক জীবনযাপন লক্ষ করে তাহলে সে দেখবে যে তাঁর সে জীবন ছিল একটি পরিপূর্ণ জীবন, একই সঙ্গে সহজ মাধুর্যময় এবং মহার্ঘ্য।
ক. হুদাইবিয়া কী ?
খ. ‘জন্ম দুঃখী হইয়া তিনি সংসারে আসিয়াছিলেন।’ -বুঝিয়ে বল।
গ. উদ্দীপক ও মানুষ মুহম্মদ (স.) প্রবন্ধের সাদৃশ্য তুলে ধর।
ঘ. “উদ্দীপকটিতে মানুষ মুহম্মদ (স.) প্রবন্ধের মর্মার্থ নিহিত রয়েছে।” বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্ন-৩
মহাপুরুষ আরও ছিলেন এবং উচ্চাকাক্সক্ষা আরও অনেকে পোষণ করেছেন কিন্তু তাঁর মতো আর কেউ নিজ কর্তব্য সম্পর্কে এত সজাগ ছিলেন না। অথবা সেই কর্তব্যকে এত বীরত্বের সঙ্গে কেউই সফল করতে পারেননি।
ক. বিনয় ও নম্রতা প্রকৃতি?
খ. ‘আমি রাজা নই, সম্রাট নই, মানুষের প্রভু নই।’ -উক্তিটি বুঝিয়ে বল।
গ. উদ্দীপকের চরিত্রটি ‘মানুষ মুহম্মদ (স.)’ প্রবন্ধের কোন চরিত্রের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ? আলোচনা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের মূলভাবটিই ‘মানুষ মুহম্মদ (স.)’ প্রবন্ধে অনুরণিত হয়েছে।” -মন্তব্যটি বিচার কর।
অর্ডিনেট আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url